< লুক 20 >

1 একদিন যীশু মন্দির-প্রাঙ্গণে শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং সুসমাচার প্রচার করছিলেন। সেই সময় প্রধান যাজকেরা ও শাস্ত্রবিদরা, প্রাচীনদের সঙ্গে একযোগে তাঁর কাছে এল। 2 তারা বলল, “আমাদের বলো, কোন অধিকারে তুমি এসব কাজ করছ? কে তোমাকে এই অধিকার দিয়েছে?” 3 তিনি উত্তর দিলেন, “আমিও তোমাদের একটি প্রশ্ন করব। তোমরা আমাকে বলো, 4 যোহনের বাপ্তিষ্ম কোথা থেকে হয়েছিল? স্বর্গ থেকে, না মানুষের কাছ থেকে?” 5 তারা নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা করে বলল, “যদি আমরা বলি, ‘স্বর্গ থেকে,’ ও জিজ্ঞাসা করবে, ‘তাহলে তোমরা তাকে বিশ্বাস করোনি কেন?’ 6 কিন্তু যদি আমরা বলি, ‘মানুষের কাছ থেকে,’ তাহলে লোকেরা আমাদের পাথর ছুঁড়ে মারবে, কারণ তারা নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করে যে, যোহন ছিলেন একজন ভাববাদী।” 7 তাই তারা উত্তর দিল, “কোথা থেকে, আমরা তা জানি না।” 8 যীশু বললেন, “আমিও কোন অধিকারে এসব কাজ করছি, তোমাদের বলব না।” 9 তিনি সকলকে এই রূপক আখ্যানটি বলতে লাগলেন: “এক ব্যক্তি একটি দ্রাক্ষাক্ষেত তৈরি করে কয়েকজন ভাগচাষিকে ভাড়া দিয়ে অনেক দিনের জন্য অন্যত্র চলে গেলেন। 10 ফল সংগ্রহের সময় তিনি এক দাসকে ভাগচাষিদের কাছে পাঠালেন, যেন তারা তাকে দ্রাক্ষাক্ষেতের ফলের কিছু অংশ দেয়। কিন্তু ভাগচাষিরা তাকে মারধর করে খালি হাতে তাড়িয়ে দিল। 11 তিনি আর একজন দাসকে পাঠালেন, কিন্তু তাকেও তারা মারধর করল এবং অপমানজনক ব্যবহার করে তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিল। 12 এবার তিনি তৃতীয় জনকে পাঠালেন। তারা তাকে ক্ষতবিক্ষত করল এবং ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিল। 13 “তখন দ্রাক্ষাক্ষেতের মালিক বললেন, ‘আমি কী করি? আমি আমার প্রিয় পুত্রকে পাঠাব, তারা হয়তো তাঁকে সম্মান করবে।’ 14 “কিন্তু ভাগচাষিরা তাঁকে দেখে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল। তারা বলল, ‘এই হচ্ছে উত্তরাধিকারী। এসো আমরা একে হত্যা করি, তাহলে মালিকানা আমাদের হবে।’ 15 তাই তারা তাঁকে দ্রাক্ষাক্ষেতের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হত্যা করল। “দ্রাক্ষাক্ষেতের মালিক তখন তাদের প্রতি কী করবেন? 16 তিনি এসে ওইসব ভাগচাষিদের হত্যা করবেন এবং দ্রাক্ষাক্ষেতটি অন্যদের দেবেন।” লোকেরা এই কাহিনি শুনে বলল, “এরকম যেন কখনও না হয়।” 17 যীশু তাদের দিকে সরাসরি তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, “তাহলে, এই লিখিত বাক্যের অর্থ কী? “‘গাঁথকেরা যে পাথর অগ্রাহ্য করেছিল, তাই হয়ে উঠল কোণের প্রধান পাথর!’ 18 সেই পাথরের উপরে যে পড়বে, সে খানখান হবে, কিন্তু যার উপরে এই পাথর পড়বে, সে চূর্ণবিচূর্ণ হবে।” 19 শাস্ত্রবিদরা ও প্রধান যাজকবর্গ আর দেরি না করে তাঁকে গ্রেপ্তার করার পথ খুঁজতে লাগল। কারণ তারা জানত, এই রূপক কাহিনিটি তিনি তাদের বিরুদ্ধেই বলেছেন, কিন্তু তারা জনসাধারণকে ভয় পেত। 20 যীশুর উপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে তারা কয়েকজন গুপ্তচর পাঠাল যারা যীশুর সঙ্গে সততার ভান করল। তারা আশা করছিল, যীশুর কথায় খুঁত ধরে তাঁকে দেশাধ্যক্ষের ক্ষমতা ও বিচারাধীনে আনতে পারবে। 21 তাই গুপ্তচরেরা তাঁকে প্রশ্ন করল, “গুরুমহাশয়, আমরা জানি, আপনি ন্যায়সংগত কথা বলেন ও শিক্ষা দেন, আপনি পক্ষপাতিত্ব করেন না, কিন্তু ঈশ্বরের পথ সম্বন্ধে যথার্থ শিক্ষা দেন। 22 আপনার অভিমত কী, কৈসরকে কর দেওয়া কি উচিত?” 23 তিনি তাদের দুমুখো আচরণ বুঝতে পেরে বললেন, 24 “আমাকে একটি দিনার দেখাও। এর উপরে কার মূর্তি আর কার নাম আছে?” তারা উত্তর দিল, “কৈসরের।” 25 তিনি তাদের বললেন, “তাহলে, যা কৈসরের প্রাপ্য, তা কৈসরকে দাও, আর ঈশ্বরের যা প্রাপ্য, তা ঈশ্বরকে দাও।” 26 তিনি সেখানে যে কথা প্রকাশ্যে বললেন, সেই কথায় তারা তাঁকে ফাঁদে ফেলতে পারল না। তাঁর উত্তরে তারা চমৎকৃত হয়ে নির্বাক হয়ে গেল। 27 যে সদ্দূকীরা বলে, পুনরুত্থান বলে কিছু নেই, তাদের কয়েকজন একটি প্রশ্ন নিয়ে যীশুর কাছে এল। 28 তারা বলল, “গুরুমহাশয়, মোশি আমাদের জন্য লিখে গেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে সন্তানহীন রেখে মারা যায়, তবে তার ভাই, তার বিধবা পত্নীকে বিবাহ করবে এবং সে তার বড়ো ভাইয়ের জন্য সন্তানের জন্ম দেবে। 29 মনে করুন, সাত ভাই ছিল। প্রথমজন, এক নারীকে বিবাহ করে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেল। 30 দ্বিতীয়জন ও তৃতীয়জন তাকে বিবাহ করল এবং 31 একইভাবে নিঃসন্তান অবস্থায় সেই সাতজনই মারা গেল। 32 সবশেষে, সেই নারীরও মৃত্যু হল। 33 তাহলে, পুনরুত্থানে সে কার স্ত্রী হবে, কারণ সাতজনই তো তাকে বিবাহ করেছিল?” 34 যীশু উত্তর দিলেন, “এই জগতের সন্তানেরা বিবাহ করে এবং তাদের বিবাহ দেওয়া হয়। (aiōn g165) 35 কিন্তু যারা সেই জগতের ও মৃতলোক থেকে পুনরুত্থানে অংশীদার হওয়ার যোগ্যরূপে বিবেচিত হয়েছে, তারা বিবাহ করবে না বা তাদের বিবাহও দেওয়া হবে না। (aiōn g165) 36 তাদের কখনও মৃত্যু হবে না, কারণ তারা হবে স্বর্গদূতের মতো। তাদের পুনরুত্থান বলে তারা ঈশ্বরের সন্তান। 37 কিন্তু জ্বলন্ত ঝোপের বর্ণনায় মোশিও দেখিয়েছেন যে মৃতেরা উত্থাপিত হয়, কারণ তিনি প্রভুকে ‘অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর,’ বলে অভিহিত করেছেন। 38 তিনি মৃতদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিতদের ঈশ্বর। কারণ তাঁর কাছে সকলেই জীবিত।” 39 তখন কয়েকজন শাস্ত্রবিদ উত্তর দিল, “গুরুমহাশয়, আপনি বেশ ভালোই বলেছেন।” 40 সেই থেকে কেউ তাঁকে আর কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে সাহস পেল না। 41 এরপর যীশু তাদের বললেন, “লোকে বলে, ‘খ্রীষ্ট হল দাউদের পুত্র,’ এ কেমন কথা? 42 গীতসংহিতা পুস্তকে দাউদ স্বয়ং ঘোষণা করেছেন: “‘প্রভু আমার প্রভুকে বলেন, “তুমি আমার ডানদিকে বসো, 43 যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পাদপীঠে পরিণত করি।”’ 44 সুতরাং, দাউদ তাঁকে ‘প্রভু’ বলে অভিহিত করেছেন, তাহলে কীভাবে তিনি তাঁর সন্তান হতে পারেন?” 45 সমস্ত লোকেরা যখন শুনছিল, যীশু তখন তাঁর শিষ্যদের বললেন, 46 “শাস্ত্রবিদদের সম্পর্কে সতর্ক থেকো, তারা লম্বা লম্বা পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতে ও হাটেবাজারে সম্ভাষিত হতে ভালোবাসে; সমাজভবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন পেতে ও ভোজসভায় সব থেকে সম্মানজনক আসন লাভ করতে ভালোবাসে। 47 তারা বিধবাদের বাড়িশুদ্ধ গ্রাস করে এবং লোক-দেখানো লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে। এই ধরনের লোকেরা কঠোর শাস্তি ভোগ করবে।”

< লুক 20 >