< উপদেশক 2 >

1 আমি মনে মনে বললাম, “এখন এসো, আমি তোমাকে আমোদ দিয়ে পরীক্ষা করব যে কী ভালো।” কিন্তু তাও পরীক্ষা করে দেখা গেল যে তা অসার। 2 আমি বললাম, “হাসিও উন্মত্ততা। আর আমোদ কী করে?” 3 আমি মদ্যপান দ্বারা নিজেকে আনন্দ দেবার চেষ্টা করলাম এবং মূর্খতাকে আলিঙ্গন করলাম প্রজ্ঞা তখনও আমার মনকে পরিচালিত করছিল। আমি দেখতে চাইলাম, আকাশের নিচে মানুষের জীবনকালে তার জন্য কোনটা ভালো। 4 আমি কতগুলি বড়ো বড়ো কাজ করলাম আমি নিজের জন্য অনেক ঘরবাড়ি তৈরি করলাম আর আমি দ্রাক্ষাক্ষেত তৈরি করলাম। 5 আমি বাগান ও পার্ক তৈরি করে সেখানে সব রকমের ফলের গাছ লাগালাম। 6 বেড়ে ওঠা গাছে জল দেবার জন্য আমি কতগুলি পুকুর কাটালাম। 7 আমি অনেক দাস ও দাসী কিনলাম আর অনেক দাস-দাসী আমার বাড়িতে জন্মেছিল। আমার আগে যারা জেরুশালেমে ছিলেন তাদের চেয়েও আমার অনেক বেশি গরু-মেষ ছিল। 8 আমি অনেক রুপো ও সোনা এবং অন্যান্য দেশের রাজাদের ও বিভিন্ন প্রদেশের সম্পদ নিজের জন্য জড়ো করলাম। আমি অনেক গায়ক গায়িকা এবং মানুষের হৃদয়ের আনন্দ অনুসারে হারেমও অর্জন করলাম। 9 আমার আগে যারা জেরুশালেমে ছিলেন তাদের চেয়েও আমি অনেক বড়ো হলাম। এই সবে আমার প্রজ্ঞা আমার সঙ্গে ছিল। 10 আমার চোখে যা ভালো লাগত আমি তা অস্বীকার করতাম না; আমার হৃদয়ের কোনো আনন্দ আমি প্রত্যাখ্যান করতাম না। আমার সবকাজেই আমার মন খুশি হত, আর এটাই ছিল আমার সব পরিশ্রমের পুরস্কার। 11 তবুও আমি যা কিছু করেছি আর যা পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করেছি তার দিকে যখন তাকিয়াছি, সবকিছুই অসার, কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো; সূর্যের নিচে কোনো কিছুতেই লাভ নেই। 12 তারপর আমি প্রজ্ঞা, এবং উন্মত্ততা ও মূর্খতার কথা চিন্তা করলাম। যা কিছু আগেই করা হয়ে গেছে তার থেকে রাজার উত্তরাধিকারী আর বেশি কী করতে পারে? 13 আমি দেখলাম প্রজ্ঞা মূর্খতার থেকে ভালো, যেমন আলো অন্ধকারের থেকে ভালো। 14 জ্ঞানবানের মাথাতেই চোখ থাকে, কিন্তু বোকা অন্ধকারে চলাফেরা করে; তবুও আমি বুঝতে পারলাম যে ওই দুজনের শেষ দশা একই। 15 তারপর আমি নিজের মনে মনে বললাম, “বোকার যে দশা হয় তা তো আমার প্রতি ঘটে। তাহলে জ্ঞানবান হয়ে আমার কী লাভ?” আমি নিজের মনে মনে বললাম, “এটাও তো অসার।” 16 বোকাদের মতো জ্ঞানবানদেরও লোকে বেশি দিন মনে রাখবে না; সেদিন উপস্থিত যখন উভয়কেই ভুলে যাবে। বোকাদের মতো জ্ঞানবানদেরও মরতে হবে! 17 সুতরাং আমি জীবনকে ঘৃণা করলাম, কারণ সূর্যের নিচে যে কাজ করা হয় সেগুলি আমার কাছে দুঃখজনক মনে হল। সবকিছুই অসার, কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো। 18 সূর্যের নিচে যেসব জিনিসের জন্য আমি পরিশ্রম করেছি সেগুলি আমি এখন ঘৃণা করতে লাগলাম, কারণ আমার পরে যে আসবে তার জন্যই আমাকে সেইসব রেখে যেতে হবে। 19 আর কে জানে সেই লোক জ্ঞানী না বুদ্ধিহীন হবে? তবুও সেই আমার পরিশ্রমের সব ফল নিয়ন্ত্রণ করবে, যার জন্য আমি সূর্যের নিচে সমস্ত প্রচেষ্টা ও দক্ষতা ঢেলেছি। এটাও অসার। 20 অতএব সূর্যের নিচে যেসব পরিশ্রমের কাজ করেছি তার জন্য আমার অন্তর নিরাশ হতে লাগল। 21 কেননা জ্ঞান, বুদ্ধি ও দক্ষতা দিয়ে একজন পরিশ্রম করতে পারে, কিন্তু তারপরে তার সবকিছু অধিকার হিসেবে এমন একজনের জন্য রেখে যেতে হয় যে লোক তার জন্য কোনো পরিশ্রম করেনি। এটাও অসার এবং দুর্ভাগ্যের বিষয়। 22 সূর্যের নিচে মানুষের যে সকল পরিশ্রম ও উদ্বেগ হয়, তাতে তার কী লাভ হয়? 23 সারাদিন তার কাজে থাকে মনস্তাপ ও ব্যথা; রাতেও তার মন বিশ্রাম পায় না। এটাও অসার। 24 মানুষের পক্ষে খাওয়াদাওয়া করা এবং নিজের কাজে সন্তুষ্ট থাকা ছাড়া ভালো আর কিছুই নেই। এটাও আমি দেখলাম, এসব ঈশ্বরের হাত থেকে আসে, 25 কেননা তাঁকে ছাড়া কে খেতে পায় কিংবা আনন্দ উপভোগ করে? 26 যে তাঁকে সন্তুষ্ট করে, ঈশ্বর তাকে প্রজ্ঞা, বুদ্ধি ও আনন্দ দান করেন, কিন্তু পাপীকে তিনি ধনসম্পদ জোগাড় করবার ও তা জমাবার কাজ দেন, যেন সে তা সেই লোককে দিয়ে যায় যে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে। এটাও অসার, কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো।

< উপদেশক 2 >