< দ্বিতীয় বিবরণ 32 >

1 হে আকাশমণ্ডল, শোনো, আর আমি কথা বলব; হে পৃথিবী, আমার মুখের কথা শোনো। 2 আমার শিক্ষা বৃষ্টির মতো করে ঝরে পড়ুক আর আমার কথা শিশিরের মতো করে নেমে আসুক, নতুন ঘাসের উপর পড়া বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির মতো, কোমল চারাগাছের উপর পড়ুক ভারী বৃষ্টির মতো। 3 আমি সদাপ্রভুর নাম ঘোষণা করব, তোমরা আমাদের ঈশ্বরের মহিমাকীর্তন করো! 4 তিনিই শৈল, তাঁর কাজ নিখুঁত, আর তাঁর সমস্ত পথ ন্যায্য। একজন বিশ্বস্ত ঈশ্বর যিনি কোনও অন্যায় করেন না, তিনি ন্যায়পরায়ণ ও সঠিক। 5 তারা অসৎ এবং তাঁর সন্তান নয়; তাদের লজ্জা হল তারা পক্ষপাতদুষ্ট এবং কুটিল বংশ। 6 এই কি তোমাদের সদাপ্রভুর ঋণ পরিশোধ করার পদ্ধতি, হে মূর্খ এবং অবিবেচক লোকসকল? তিনি কি তোমার বাবা, সৃষ্টিকর্তা নন, যিনি তোমাকে নির্মাণ ও গঠন করেছেন? 7 পুরোনো দিনের কথা স্মরণ করো; বহুকাল আগের পূর্বপুরুষদের কথা বিবেচনা করো। তোমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করো আর তিনি তোমাকে বলবেন, তোমার প্রবীণ নেতাদের করো, তারা তোমাকে বুঝিয়ে দেবেন। 8 পরাৎপর যখন জাতিদের উত্তরাধিকার দিলেন, যখন তিনি সমস্ত মানুষকে তা ভাগ করে দিলেন, তিনি লোকদের জন্য সীমানা ঠিক করে দিলেন ইস্রায়েলের ছেলেদের সংখ্যা অনুসারে। 9 কেননা সদাপ্রভুর প্রাপ্য ভাগই হল তাঁর লোকেরা, যাকোবই তাঁর বরাদ্দ উত্তরাধিকার। 10 তিনি তাকে এক মরুএলাকায় পেলেন, অনুর্বর এবং গর্জন ভরা স্থানে। তিনি তাকে ঘিরে রাখলেন ও তার যত্ন নিলেন; তিনি তাকে চোখের মণির মতো পাহারা দিলেন, 11 ঈগল যেমন তার বাসাকে জাগায় আর তার বাচ্চাদের উপর ওড়ে, যে তার ডানা মেলে তাদের ধরে এবং তাদের উপরে তুলে নেয়। 12 সদাপ্রভু একাই তাকে চালিয়ে নিয়ে আসলেন; কোনও বিজাতীয় দেবতা তার সঙ্গে ছিল না। 13 তিনি দেশের এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে তাকে নিয়ে গেলেন এবং তাকে ক্ষেতের ফসল খেতে দিলেন। তিনি পাহাড়ের ফাটল থেকে মধু দিয়ে তাকে পুষ্ট করলেন, এবং পাথুরে পাহাড় থেকে তেল দিয়ে, 14 পশুপাল থেকে দই ও দুধ দিয়ে এবং স্বাস্থ্যবান মেষ ও ছাগল দিয়ে, বাশনের বাছাই করা মেষ দিয়ে এবং পরিপুষ্ট গম দিয়ে। তোমরা গেঁজে ওঠা আঙুরের রস পান করলে। 15 যিশুরূণ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে লাথি মারল; অতিরিক্ত খেয়ে, তারা ভারী ও চকচকে হয়ে। যে ঈশ্বর তাদের নির্মাণ করেছেন তাঁকে পরিত্যাগ করেছে এবং তাদের পরিত্রাতা সেই শৈলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। 16 তাদের বিজাতীয় দেবতাদের দরুন তাঁকে ঈর্ষান্বিত করেছ এবং তাদের ঘৃণ্য মূর্তি দ্বারা তাঁকে অসন্তুষ্ট করেছ। 17 তারা মিথ্যা দেবতাদের কাছে বলিদান করেছে, যারা ঈশ্বর নয়, যে দেবতাদের তারা জানত না, যে দেবতারা কিছুদিন আগে সম্প্রতি হাজির হয়েছে, যে দেবতাদের তোমাদের পূর্বপুরুষেরা ভয় করত না। 18 তোমরা সেই শৈল, যিনি তোমাদের বাবা তাঁকে পরিত্যাগ করেছ; তোমরা সেই ঈশ্বরকে ভুলে গিয়েছ যিনি তোমাদের জন্ম দিয়েছেন। 19 তা দেখে সদাপ্রভু তাদের অগ্রাহ্য করেছেন কারণ তিনি তাঁর ছেলে ও তাঁর মেয়েদের দ্বারা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। 20 তিনি বললেন, “আমি তাদের থেকে আমার মুখ লুকাব, এবং তাদের শেষ দশা কী হয় তা দেখব; কেননা তারা এক বিপথগামী বংশ, সন্তানেরা যারা অবিশ্বস্ত। 21 যারা ঈশ্বর নয় তাদের দ্বারা আমাকে ঈর্ষান্বিত করেছে এবং তাদের মূল্যহীন মূর্তি দ্বারা আমার ক্রোধ জাগিয়েছে। যারা প্রজা নয় তাদের দ্বারা আমি তাদের পরশ্রীকাতর করব; যে জাতি কিছু বোঝে না তাদের দ্বারা আমি তাদের অসন্তুষ্ট করব। 22 কেননা আমার ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠবে, যা পাতাল পর্যন্ত পুড়িয়ে দেবে। যা পৃথিবী ও তার ফসল গ্রাস করবে এবং পাহাড়ের ভিতে আগুন জ্বালাবে। (Sheol h7585) 23 “আমি তাদের উপরে বিপর্যয় স্তূপাকার করব এবং তাদের উপরে আমার সব তির ছুঁড়ব। 24 আমি তাদের বিরুদ্ধে দেহ ক্ষয় করা দুর্ভিক্ষ আনব, ধ্বংসকারী মহামারি ও কষ্ট ভরা রোগ পাঠিয়ে দেব; আমি তাদের বিরুদ্ধে বন্য দাঁতাল পশুদের আর বুকে ভর দিয়ে চলা বিষাক্ত সাপ পাঠাব। 25 রাস্তায় তরোয়াল দ্বারা তারা সন্তানহীন হবে; বাড়ির ভিতরে ভয়ের রাজত্ব চলবে। তাদের যুবক ও যুবতীরা, শিশুরা ও বৃদ্ধরা ধ্বংস হবে। 26 আমি বলেছিলাম আমি তাদের ছড়িয়ে দেব এবং মানুষের স্মৃতি থেকে তাদের নাম মুছে দেব, 27 কিন্তু আমি শত্রুদের বিদ্রুপ ভয় করেছিলাম, পাছে বিপক্ষেরা ভুল বোঝে আর বলে, ‘আমাদের শক্তি জয় করেছে; সদাপ্রভু এই সমস্ত করেননি।’” 28 তারা এক বোধশক্তিহীন জাতি, তাদের মধ্যে কোনও সূক্ষ্ম বুদ্ধি নেই। 29 তারা যদি জ্ঞানী হত ও এটি বুঝতে পারত আর উপলব্ধি করত যে তাদের শেষ পরিণতি কী হবে! 30 একজন লোক কেমন করে হাজার জনকে তাড়াবে, কিংবা দুজনকে দেখে দশ হাজার পালাবে, যদি তাদের শৈল তাদের বিক্রি না করেন, যদি সদাপ্রভু তাদের তুলে না দেন? 31 কেননা তাদের শৈল আমাদের শৈলের মতো নয়, যা আমাদের শত্রুও স্বীকার করে। 32 তাদের দ্রাক্ষালতা সদোমের দ্রাক্ষালতা থেকে এবং ঘমোরার ক্ষেত থেকে এসেছে। তাদের আঙুর বিষে ভরা, এবং তাদের আঙুরের গোছা তেতো। 33 তাদের দ্রাক্ষারস হল সাপের বিষ, কেউটের ভয়ংকর বিষ। 34 “আমি কি এটি সঞ্চয় করে রাখিনি এবং আমার ভাণ্ডার ঘরে সিলমোহর দিইনি? 35 প্রতিশোধ নেওয়া আমারই কাজ; আমি প্রতিফল দেব। সময় হলেই তাদের পা পিছলে যাবে; তাদের বিপর্যয়ের দিন নিকটবর্তী তাদের জন্য যা নিরূপিত তা তাড়াতাড়ি আসবে।” 36 সদাপ্রভু তাঁর প্রজাদের বিচার করবেন এবং তাঁর দাসদের প্রতি সদয় হবেন যখন তিনি দেখবেন যে তাদের শক্তি চলে গিয়েছে এবং দাস অথবা মুক্ত, কেউ বাকি নেই। 37 তিনি বলবেন: “তাদের দেবতারা এখন কোথায়, সেই শৈল কোথায় যার কাছে তারা আশ্রয় নিয়েছিল, 38 সেই দেবতারা যারা তাদের বলির মেদ খেয়েছিল এবং তাদের পেয়-নৈবেদ্যের দ্রাক্ষারস পান করেছিল? তারা উঠে তোমাদের সাহায্য করুক! তারা তোমাদের আশ্রয় দিক! 39 “এখন দেখো, আমি, আমিই তিনি! আমি ছাড়া আর কোনও ঈশ্বর নেই। আমি মৃত্যু দিই এবং আমিই জীবন দিই, আমি আঘাত করেছি এবং আমিই সুস্থ করব, আমার হাত থেকে কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। 40 আমি স্বর্গের দিকে আমার হাত তুলে শপথ করে বলছি: আর বলি, আমি অনন্তজীবী, 41 যখন আমি আমার ঝকঝকে তরোয়ালে শান দিই এবং বিচারের জন্য আমার হাতে তা ধরি, আমার শত্রুদের আমি শাস্তি দেব এবং যারা আমাকে ঘৃণা করে আমি তার প্রতিফল দেব। 42 নিহত আর বন্দিদের রক্ত খাইয়ে, আমার তিরগুলিকে মাতাল করে তুলব, আমার তরোয়াল মাংস খাবে, শত্রু সেনাদের মাথার মাংস খাবে।” 43 জাতিরা, তার লোকদের সঙ্গে আনন্দ করো, কেননা তিনি তাঁর দাসদের রক্তের প্রতিফল দেবেন; তাঁর শত্রুদের প্রতিশোধ নেবেন এবং নিজের দেশ ও লোকদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করবেন। 44 মোশি নূনের ছেলে যিহোশূয়কে সঙ্গে নিয়ে এই গানের সব কথা লোকদের শোনালেন। 45 সমস্ত ইস্রায়েলীর কাছে মোশি যখন এসব কথা শেষ করলেন, 46 তিনি তাদের বললেন, “আমি আজ তোমাদের কাছে সাক্ষ্য হিসেবে যা কিছু বললাম, তোমরা সেই সমস্ত কথায় মনোযোগ দাও, আর তোমাদের সন্তানেরা যেন এই বিধানের সব কথা যত্নের সঙ্গে পালন করে এজন্য তাদের সেই আদেশ দাও। 47 এগুলি নিরর্থক কথা নয়—এগুলি তোমাদের জীবন। তোমরা যে দেশ অধিকার করতে জর্ডন পার হয়ে যাচ্ছ, সেই দেশে এই কথাগুলি পালন করে বহুদিন বাঁচবে।” 48 সেদিনই সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, 49 “তুমি যিরীহোর উল্টোদিকে মোয়াব দেশের অবারীম পর্বতমালার মধ্যে নেবো পর্বতে গিয়ে ওঠো এবং অধিকার হিসেবে যে কনান দেশটি আমি ইস্রায়েলীদের দিচ্ছি তা একবার দেখে নাও। 50 তোমার দাদা হারোণ যেমন হোর পাহাড়ে মারা গিয়ে তার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে তেমনি করে তুমিও যে পাহাড়ে উঠবে সেখানে তুমি মারা যাবে এবং তোমার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে মিলিত হবে। 51 এর কারণ হল, সীন মরুভূমিতে কাদেশের মরীবার জলের কাছে ইস্রায়েলীদের সামনে তোমরা দুজনেই আমার প্রতি অবিশ্বস্ততার কাজ করেছিলে এবং ইস্রায়েলীদের সামনে আমাকে পবিত্র বলে মান্য করোনি। 52 সেইজন্য যে দেশটি আমি ইস্রায়েলীদের দিতে যাচ্ছি তা তুমি কেবল দূর থেকে দেখতে পাবে কিন্তু সেখানে তোমার ঢোকা হবে না।”

< দ্বিতীয় বিবরণ 32 >