< মথি 26 >

1 তখন যীশু এই সমস্ত কথা শেষ করলেন এবং তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন,
এসব বিষয় বলা শেষ করার পর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন,
2 “তোমরা জান, দুই দিন পরে নিস্তারপর্ব্ব আসছে, আর মনুষ্যপুত্র ক্রুশে বিদ্ধ হবার জন্য সমর্পিত হবেন।”
“তোমরা জানো, আর দু-দিন পরে নিস্তারপর্ব আসছে, তখন মনুষ্যপুত্রকে ক্রুশার্পিত করার জন্য সমর্পণ করা হবে।”
3 তখন প্রধান যাজকেরা ও লোকদের প্রাচীনেরা কায়াফা মহাযাজকের বাড়ির প্রাঙ্গণে একত্র হল,
সেই সময় প্রধান যাজকেরা ও লোকেদের প্রাচীনবর্গ কায়াফা নামক মহাযাজকের প্রাসাদে সমবেত হল।
4 আর এই ষড়যন্ত্র করল, যেন ছলে যীশুকে ধরে বধ করতে পারে।
আর তারা কোনও ছলে যীশুকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করল।
5 কিন্তু তারা বলল, “পর্বের দিন নয়, যদি লোকদের মধ্যে গন্ডগোল বাধে।”
তারা বলল, “কিন্তু পর্বের সময়ে নয়, তাতে লোকদের মধ্যে দাঙ্গা বেধে যেতে পারে।”
6 যীশু তখন বৈথনিয়ায় শিমোনের বাড়িতে ছিলেন, যে একজন কুষ্ঠরোগী ছিল,
যীশু যখন বেথানিতে কুষ্ঠরোগী শিমোনের বাড়িতে ছিলেন,
7 তখন একটি মহিলা শ্বেত পাথরের পাত্রে খুব মূল্যবান সুগন্ধি তেল নিয়ে তাঁর কাছে এলো এবং তিনি খেতে বসলে তাঁর মাথায় সেই তেল ঢেলে দিল।
তখন একজন নারী একটি শ্বেতস্ফটিকের পাত্রে বহুমূল্য সুগন্ধি তেল নিয়ে তাঁর কাছে এল। যীশু যখন টেবিলে হেলান দিয়ে বসেছিলেন, সেই নারী তাঁর মাথায় তা উপুড় করে ঢেলে দিল।
8 কিন্তু এই সব দেখে শিষ্যেরা বিরক্ত হয়ে বললেন, “এ অপচয়ের কারণ কি?
শিষ্যেরা এই দেখে ভীষণ রুষ্ট হলেন। তাঁরা বললেন, “এই অপচয় কেন?
9 এই তেল অনেক টাকায় বিক্রি করে তা দরিদ্রদেরকে দেওয়া যেত।”
এই সুগন্ধি তেল তো অনেক টাকায় বিক্রি করে দরিদ্রদের দান করা যেত!”
10 ১০ কিন্তু যীশু, এই সব বুঝতে পেরে তাঁদের বললেন, “এই মহিলাটিকে কেন দুঃখ দিচ্ছ? এ তো আমার জন্য ভালো কাজ করল।
একথা শুনে যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা কেন এই মহিলাকে বিরক্ত করছ? সে তো আমার জন্য এক ভালো কাজই করেছে।
11 ১১ কারণ দরিদ্ররা তোমাদের কাছে সব দিন ই আছে, কিন্তু তোমরা আমাকে সবদিন পাবে না।
দরিদ্রেরা তোমাদের সঙ্গে সবসময়ই থাকবে, কিন্তু আমাকে তোমরা সবসময় পাবে না।
12 ১২ তাই আমার দেহের উপরে এই সুগন্ধি তেল ঢেলে দেওয়াতে এ আমার সমাধির উপযোগী কাজ করল।
সে আমার শরীরে এই সুগন্ধি তেল ঢেলে আমাকে সমাধির উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করল।
13 ১৩ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সমস্ত জগতে যে কোন জায়গায় এই সুসমাচার প্রচারিত হবে, সেই জায়গায় এর এই কাজের কথাও একে মনে রাখার জন্য বলা হবে।”
আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, সমস্ত জগতে যেখানেই এই সুসমাচার প্রচারিত হবে, সে যা করেছে, স্মৃতির উদ্দেশে তার সেই কাজের কথাও বলা হবে।”
14 ১৪ তখন বারো জনের মধ্যে একজন, যাকে ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা বলা হয়, সে প্রধান যাজকদের কাছে গিয়ে বলল,
তখন সেই বারোজনের মধ্যে একজন, যে যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ নামে আখ্যাত, সে প্রধান যাজকদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
15 ১৫ “আমাকে কি দিতে চান, বলুন, আমি তাঁকে আপনাদের হাতে সমর্পণ করব।” তারা তাকে ত্রিশটা রূপার মুদ্রা গুনে দিল।
“যীশুকে আপনাদের হাতে সমর্পণ করলে, আপনারা আমাকে কী দেবেন?” তারা তাকে ত্রিশটি রুপোর মুদ্রা গুনে দিল।
16 ১৬ আর সেই দিন থেকে সে তাঁকে ধরিয়ে দাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল।
সেই সময় থেকে যিহূদা তাঁকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
17 ১৭ পরে তাড়ীশূন্য (খামির বিহীন) রুটি র পর্বের প্রথম দিন শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার জন্য আমরা কোথায় নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করব? আপনার ইচ্ছা কি?”
খামিরবিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিনে, শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “নিস্তারপর্বের ভোজ গ্রহণের প্রস্তুতি আমরা কোথায় করব?”
18 ১৮ তিনি বললেন, “তোমরা শহরের অমুক ব্যক্তির কাছে যাও, আর তাকে বল, গুরু বলছেন, আমার দিন সন্নিকট, আমি তোমারই বাড়িতে আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্ব্ব পালন করব।”
তিনি উত্তর দিলেন, “তোমরা নগরে জনৈক ব্যক্তির কাছে যাও ও তাকে বলো, ‘গুরুমহাশয় বলছেন, আমার জন্য নির্ধারিত সময় এসে গেছে। আমি তোমার গৃহে আমার শিষ্যদের নিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ গ্রহণ করতে চাই।’”
19 ১৯ তাতে শিষ্যেরা যীশুর আদেশ মতো কাজ করলেন, ও নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।
তাই শিষ্যেরা যীশুর নির্দেশমতো কাজ করলেন ও গিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।
20 ২০ পরে সন্ধ্যা হলে তিনি সেই বারো জন শিষ্যের সঙ্গে খেতে বসলেন।
সন্ধ্যা হলে, যীশু সেই বারোজনের সঙ্গে ভোজের টেবিলে হেলান দিয়ে বসলেন।
21 ২১ আর তাঁদের খাওয়ার দিনের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।”
তারা খাওয়াদাওয়া করছেন, এমন সময়ে যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।”
22 ২২ তখন তাঁরা অত্যন্ত দুঃখিত হলো এবং প্রত্যেক জন তাঁকে বলতে লাগলেন, “প্রভু, সে কি আমি?”
তাঁরা ভীষণ দুঃখিত হলেন ও একের পর এক তাঁকে বললেন, “প্রভু, সে নিশ্চয়ই আমি নই?”
23 ২৩ তিনি বললেন, “যে আমার সঙ্গে খাবারপাত্রে হাত ডুবাল, সেই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।”
যীশু উত্তর দিলেন, “যে আমার সঙ্গে খাবারের পাত্রে হাত ডুবালো, সেই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।
24 ২৪ মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে যেমন লেখা আছে, তেমনি তিনি যাবেন, কিন্তু ধিক সেই ব্যক্তিকে, যার মাধ্যমে মনুষ্যপুত্রকে ধরিয়ে দেওয়া হবে, সেই মানুষের জন্ম না হলেই তার পক্ষে ভাল ছিল।
মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে যে রকম লেখা আছে, তেমনই তিনি চলে যাবেন, কিন্তু ধিক্ সেই ব্যক্তিকে, যে মনুষ্যপুত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে! তার জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভালো হত।”
25 ২৫ তখন যে তাঁকে ধরিয়ে দেবে, সেই যিহূদা বলল, “গুরু, সে কি আমি?” তিনি বললেন, “তুমিই বললে।”
তখন, যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, সেই যিহূদা বলল, “রব্বি, সে নিশ্চয়ই আমি নই?” যীশু উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, তুমিই সে।”
26 ২৬ পরে তাঁরা খাবার খাচ্ছেন, এমন দিনের যীশু রুটি নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে ভাঙলেন এবং শিষ্যদের দিলেন, আর বললেন, “নাও, খাও, এটা আমার শরীর।”
তাঁরা যখন আহার করছিলেন, যীশু রুটি নিলেন, ধন্যবাদ দিলেন ও তা ভাঙলেন। আর তিনি তাঁর শিষ্যদের দিলেন ও বললেন, “তোমরা নাও, এবং ভোজন করো; এ আমার শরীর।”
27 ২৭ পরে তিনি পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁদের দিয়ে বললেন, “তোমরা সবাই এর থেকে পান কর,
তারপর তিনি পানপাত্র নিলেন, ধন্যবাদ দিলেন ও শিষ্যদের তা দিয়ে বললেন, “তোমরা সবাই এর থেকে পান করো।
28 ২৮ কারণ এটা আমার রক্ত, নতুন নিয়মের রক্ত, যা অনেকের জন্য, পাপ ক্ষমার জন্য ঝরবে।”
এ আমার রক্ত, সেই নতুন নিয়মের রক্ত, যা পাপক্ষমার উদ্দেশ্যে অনেকের জন্য পাতিত হচ্ছে।
29 ২৯ আর আমি তোমাদের বলছি, “এখন থেকে সেই দিন পর্যন্ত আমি এই আঙুরের রস পান করব না, যত দিন না আমি আমার পিতার রাজ্যে প্রবেশ করি ও তোমাদের সাথে নতুন আঙুরের রস পান করি।”
আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে আমি এই দ্রাক্ষারস আর কখনও পান করব না, যতদিন না আমি আমার পিতার রাজ্যে তোমাদের সঙ্গে নতুন দ্রাক্ষারস পান করি।”
30 ৩০ পরে তাঁরা প্রশংসা গান করতে করতে, জৈতুন পর্বতে গেলেন।
পরে তাঁরা একটি গান করে সেখান থেকে বের হয়ে জলপাই পর্বতে গেলেন।
31 ৩১ তখন যীশু তাঁদের বললেন, “এই রাতে তোমরা সবাই আমাতে বাধা পাবে (অর্থাৎ তোমরা আমাকে ত্যাগ করবে),” কারণ লেখা আছে, “আমি মেষ পালককে আঘাত করব, তাতে মেষেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে।”
তারপর যীশু তাঁদের বললেন, “এই রাত্রিতে তোমরা সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, কারণ এরকম লেখা আছে, “‘আমি পালরক্ষককে আঘাত করব, তাতে পালের মেষেরা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।’
32 ৩২ কিন্তু আমি মৃত্যু থেকে জীবিত হবার পরে আমি তোমাদের আগে গালীলে যাব।
কিন্তু আমি উত্থিত হলে পর, আমি তোমাদের আগেই গালীলে পৌঁছাব।”
33 ৩৩ পিতর তাঁকে বললেন, “যদি সবাই আপনাকে ছেড়েও চলে যায়, আমি কখনও ছাড়বনা।”
পিতর উত্তর দিলেন, “সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে গেলেও, আমি কিন্তু কখনও যাব না।”
34 ৩৪ যীশু তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যি বলছি, এই রাতে মোরগ ডাকার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে।”
প্রত্যুত্তরে যীশু বললেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ রাত্রে, মোরগ ডাকার আগেই, তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে।”
35 ৩৫ পিতর তাঁকে বললেন, “যদি আপনার সঙ্গে মরতেও হয়, তবু কোন মতেই আপনাকে অস্বীকার করব না।” সেই রকম সব শিষ্যই বললেন।
কিন্তু পিতর তাঁকে বললেন, “আপনার সঙ্গে যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হয়, তাহলেও আমি আপনাকে কখনোই অস্বীকার করব না।” অন্য সব শিষ্যও একই কথা বললেন।
36 ৩৬ তখন যীশু তাঁদের সঙ্গে গেৎশিমানী নামে এক জায়গায় গেলেন, আর তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি যতক্ষণ ওখানে গিয়ে প্রার্থনা করি, ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।”
তারপর যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে গেৎশিমানি নামে এক স্থানে গেলেন। তিনি তাদের বললেন, “আমি যতক্ষণ ওখানে প্রার্থনা করি তোমরা ততক্ষণ এখানে বসে থাকো।”
37 ৩৭ পরে তিনি পিতরকে ও সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন, আর দুঃখার্ত্ত ও ব্যাকুল হতে লাগলেন।
তিনি পিতর ও সিবদিয়ের দুই পুত্রকে তাঁর সঙ্গে নিলেন। তিনি ক্রমেই দুঃখার্ত ও ব্যাকুল হতে লাগলেন।
38 ৩৮ তখন তিনি তাঁদের বললেন, “আমার প্রাণ মরণ পর্যন্ত দুঃখার্ত্ত হয়েছে, তোমরা এখানে থাক, আমার সঙ্গে জেগে থাক।”
তারপর তিনি তাঁদের বললেন, “আমার প্রাণ মৃত্যু পর্যন্ত দুঃখার্ত হয়েছে। তোমরা এখানে থাকো, এবং আমার সঙ্গে জেগে থাকো।”
39 ৩৯ পরে তিনি একটু আগে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করে বললেন, “হে আমার পিতা, যদি এটা সম্ভব হয়, তবে এই দুঃখের পানপাত্র আমার কাছে থেকে দূরে যাক, আমার ইচ্ছামত না হোক, কিন্তু তোমার ইচ্ছামত হোক।”
আরও কিছু দূর এগিয়ে, তিনি ভূমিতে উবুড় হয়ে প্রার্থনা করলেন, “পিতা, যদি সম্ভব হয়, এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে দূর করে দাও। তবুও আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছামতো হোক।”
40 ৪০ পরে তিনি সেই শিষ্যদের কাছে গিয়ে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর তিনি পিতরকে বললেন, “একি? এক ঘন্টাও কি আমার সঙ্গে জেগে থাকতে তোমাদের শক্তি হল না?”
তারপর তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি এক ঘণ্টাও আমার সঙ্গে জেগে থাকতে পারলে না?
41 ৪১ জেগে থাক ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়, আত্মা ইচ্ছুক, কিন্তু শরীর দুর্বল।
জেগে থাকো ও প্রার্থনা করো, যেন তোমরা প্রলোভনে না পড়ো। আত্মা ইচ্ছুক, কিন্তু শরীর দুর্বল।”
42 ৪২ আবার তিনি দ্বিতীয়বার গিয়ে এই প্রার্থনা করলেন, “হে আমার পিতা, আমি পান না করলে যদি এই দুঃখকা পানপাত্র দূরে যেতে না পারে, তবে তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হোক।”
তিনি দ্বিতীয়বার গিয়ে প্রার্থনা করলেন, “পিতা আমার, আমি পান না করলে যদি এই পাত্র দূর না হয়, তাহলে তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।”
43 ৪৩ পরে তিনি আবার এসে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে পড়েছিল।
যখন তিনি ফিরে এলেন, তিনি আবার তাঁদের ঘুমাতে দেখলেন, কারণ তাঁদের চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠেছিল।
44 ৪৪ আর তিনি আবার তাঁদের ছেড়ে তৃতীয় বার আগের মতো কথা বলে প্রার্থনা করলেন।
তাই তিনি পুনরায় তাদের ছেড়ে এগিয়ে গেলেন ও একই কথা বলে তৃতীয়বার প্রার্থনা করলেন।
45 ৪৫ তখন তিনি শিষ্যদের কাছে এসে বললেন, “এখনও কি তোমরা ঘুমাচ্ছ এবং বিশ্রাম করছ?, দেখ, দিন উপস্থিত, মনুষ্যপুত্রকে পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
তারপর তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, “তোমরা কি এখনও ঘুমিয়ে আছ ও বিশ্রাম করছ? দেখো, সময় হয়েছে। মনুষ্যপুত্রকে পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
46 ৪৬ উঠ, আমরা যাই, এই দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করবে, সে কাছে এসেছে।
ওঠো, চলো আমরা যাই! দেখো, আমার বিশ্বাসঘাতক এসে পড়েছে!”
47 ৪৭ তিনি যখন কথা বলছিলেন, দেখ, যিহূদা, সেই বারো জনের একজন, এল এবং তার সঙ্গে অনেক লোক, তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে প্রধান যাজকদের ও প্রাচীনদের কাছ থেকে এলো।
তিনি তখনও কথা বলছেন সেই সময় বারোজনের অন্যতম যিহূদা সেখানে এসে উপস্থিত হল। তার সঙ্গে ছিল একদল সশস্ত্র লোক, তাদের হাতে ছিল তরোয়াল ও লাঠিসোঁটা। প্রধান যাজকেরা ও লোকসমূহের প্রাচীনবর্গ তাদের পাঠিয়েছিল।
48 ৪৮ যে তাঁকে সমর্পণ করছিল, সে তাদের এই সংকেত বলেছিল, “আমি যাকে চুমু দেব, তিনিই সেই ব্যক্তি, তোমরা তাকে ধরবে।”
সেই বিশ্বাসঘাতক তাদের এই সংকেত দিয়ে রেখেছিল, “যাকে আমি চুম্বন করব, সেই ওই ব্যক্তি; তাকে গ্রেপ্তার কোরো।”
49 ৪৯ সে তখনই যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু, নমস্কার, আর সে তাঁকে চুমু দিল।”
সেই মুহূর্তেই যীশুর কাছে গিয়ে যিহূদা বলল, “রব্বি, নমস্কার!” আর তাঁকে চুম্বন করল।
50 ৫০ যীশু তাকে বললেন, “বন্ধু, যা করতে এসেছ, তা কর।” তখন তারা কাছে এসে যীশুর উপরে হস্তক্ষেপ করল ও তাঁকে ধরল।
যীশু উত্তর দিলেন, “বন্ধু, যা করতে এসেছ, তুমি তাই করো।” তখন সেই লোকেরা এগিয়ে এসে যীশুকে ধরল ও তাঁকে গ্রেপ্তার করল।
51 ৫১ আর দেখ, যীশুর সঙ্গীদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাত বাড়িয়ে তরোয়াল বার করলেন এবং মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন।
তাই দেখে যীশুর সঙ্গীদের একজন তাঁর তরোয়াল বের করে মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার কান কেটে ফেললেন।
52 ৫২ তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার তরোয়াল যেখানে ছিল সেখানে রাখ, কারণ যারা তরোয়াল ব্যবহার করে, তারা তরোয়াল দিয়েই ধ্বংস হবে।”
যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার তরোয়াল পুনরায় স্বস্থানে রাখো, কারণ যারাই তরোয়াল ধারণ করে তারাই তরোয়ালের দ্বারা মৃত্যুবরণ করবে।
53 ৫৩ আর তুমি কি মনে কর যে, যদি আমি আমার পিতার কাছে অনুরোধ করি তবে তিনি কি এখনই আমার জন্য বারোটা বাহিনীর থেকেও বেশি দূত পাঠিয়ে দেবেন না?
তুমি কি মনে করো? আমি কি আমার পিতাকে ডাকতে পারি না, আর তিনি সঙ্গে সঙ্গে কি আমার অধীনে বারোটি বাহিনীরও বেশি দূত পাঠিয়ে দেবেন না?
54 ৫৪ কিন্তু তা করলে কেমন করে শাস্ত্রের এই বাণীগুলি পূর্ণ হবে যে, এমন অবশ্যই হবে?
তাহলে শাস্ত্রবাণী কীভাবে পূর্ণ হবে, যা বলে যে, এসব এভাবেই ঘটবে?”
55 ৫৫ সেই দিনে যীশু লোকদেরকে বললেন, “লোকে যেমন দস্যু ধরতে যায়, তেমনি কি তোমরা তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছো? আমি প্রতিদিন ঈশ্বরের মন্দিরে বসে উপদেশ দিয়েছি, তখন তো আমাকে ধরলে না।”
সেই সময় যীশু লোকদের বললেন, “আমি কি কোনও বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছি যে, তোমরা তরোয়াল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ? প্রতিদিন আমি মন্দির চত্বরে বসে শিক্ষা দিয়েছি, তখন তো তোমরা আমাকে গ্রেপ্তার করোনি।
56 ৫৬ কিন্তু এ সমস্ত ঘটল, যেন ভাববাদীদের লেখা ভাববাণীগুলি পূর্ণ হয়। তখন শিষ্যেরা সবাই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।
কিন্তু এ সমস্ত এজন্যই ঘটছে, যেন ভাববাদীদের লিখিত বচনগুলি পূর্ণ হয়।” তখন সব শিষ্য তাঁকে ত্যাগ করে পালিয়ে গেলেন।
57 ৫৭ আর যারা যীশুকে ধরেছিল, তারা তাঁকে মহাযাজক কায়াফার কাছে নিয়ে গেল, সেই জায়গায় ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও প্রাচীনেরা সমবেত হয়েছিল।
যারা যীশুকে গ্রেপ্তার করেছিল, তারা তাঁকে মহাযাজক কায়াফার কাছে নিয়ে গেল। সেখানে সব শাস্ত্রবিদ ও লোকদের প্রাচীনবর্গ সমবেত হয়েছিল।
58 ৫৮ আর পিতর দূরে থেকে তাঁর পিছনে পিছনে মহাযাজকের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত গেলেন এবং শেষে কি হয়, তা দেখার জন্য ভিতরে গিয়ে পাহারাদারদের সঙ্গে বসলেন।
কিন্তু পিতর দূর থেকে, মহাযাজকের উঠান পর্যন্ত যীশুকে অনুসরণ করলেন। তিনি প্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা দেখার জন্য রক্ষীদের কাছে গিয়ে বসলেন।
59 ৫৯ তখন প্রধান যাজকরা এবং সমস্ত মহাসভা যীশুকে বধ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণ খুঁজতে লাগল,
প্রধান যাজকেরা ও সমস্ত মহাসভা যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজছিল।
60 ৬০ কিন্তু অনেক মিথ্যাসাক্ষী এসে জুটলেও, তারা কিছুই পেল না।
বহু মিথ্যাসাক্ষী এগিয়ে এলেও তারা সেরকম কিছুই পেল না। শেষে দুজন এগিয়ে
61 ৬১ অবশেষে দুই জন এসে বলল, “এই ব্যক্তি বলেছিল, আমি ঈশ্বরের মন্দির ভেঙে, তা আবার তিন দিনের র মধ্যে গেঁথে তুলতে পারি।”
এসে বলল, “এই লোকটি বলেছিল, ‘আমি ঈশ্বরের মন্দির ভেঙে ফেলতে ও তিনদিনের মধ্যে তা পুনর্নির্মাণ করতে পারি।’”
62 ৬২ তখন মহাযাজক উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে বললেন, “তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এরা কিসব বলছে?”
তখন মহাযাজক উঠে দাঁড়িয়ে যীশুকে বললেন, “তুমি কি উত্তর দেবে না? এই লোকেরা তোমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ নিয়ে এসেছে, এগুলি কী?”
63 ৬৩ কিন্তু যীশু চুপ করে থাকলেন। মহাযাজক তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্যি করছি, আমাদেরকে বল দেখি, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র?”
যীশু তবুও নীরব রইলেন। মহাযাজক তাঁকে বললেন, “আমি জীবন্ত ঈশ্বরের নামে শপথ করে তোমাকে অভিযুক্ত করছি: আমাদের বলো দেখি, তুমিই কি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র?”
64 ৬৪ যীশু এর উত্তরে বললেন, “তুমি নিজেই বললে, আর আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে তোমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের (সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের) ডান পাশে বসে থাকতে এবং আকাশের মেঘরথে আসতে দেখবে।”
যীশু উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, ঠিক তাই, যেমন তুমি বলেছ। কিন্তু আমি তোমাদের সবাইকে বলছি: ভাবীকালে তোমরা মনুষ্যপুত্রকে সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানদিকে বসে থাকতে ও স্বর্গের মেঘে করে আসতে দেখবে।”
65 ৬৫ তখন মহাযাজক তাঁর বস্ত্র ছিঁড়ে বললেন, “এ ঈশ্বরনিন্দা করল, আর প্রমাণে আমাদের কি প্রয়োজন? দেখ, এখন তোমরা ঈশ্বরনিন্দা শুনলে,
তখন মহাযাজক তাঁর কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “ও ঈশ্বরনিন্দা করেছে! আমাদের আর সাক্ষ্য-প্রমাণের কী প্রয়োজন? দেখো, এখন তোমরা ঈশ্বরনিন্দা শুনলে।
66 ৬৬ তোমরা কি মনে কর?” তারা বলল, “এ মৃত্যুর যোগ্য।”
তোমাদের অভিমত কী?” তারা উত্তর দিল, “ও মৃত্যুরই যোগ্য।”
67 ৬৭ তখন তারা তাঁর মুখে থুথু দিল ও তাঁকে ঘুষি মারল,
তারা তখন তাঁর মুখে থুতু দিল ও তাঁকে ঘুসি মারল।
68 ৬৮ আর কেউ কেউ তাঁকে আঘাত করে বলল, “রে খ্রীষ্ট, আমাদের কাছে ভাববাণী বল, কে তোকে মারল?”
অন্যেরা তাঁকে চড় মেরে বলতে লাগল, “ওরে খ্রীষ্ট, আমাদের কাছে ভাববাণী বল দেখি, কে তোকে মারল?”
69 ৬৯ এদিকে পিতর যখন বাইরে উঠোনে বসেছিলেন, তখন আর একজন দাসী তাঁর কাছে এসে বলল, “তুমিও সেই গালীলীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে।”
সেই সময় পিতর বাইরের উঠানে বসেছিলেন। একজন দাসী তাঁর কাছে এসে বলল, “তুমিও সেই গালীলীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে।”
70 ৭০ কিন্তু তিনি সবার সামনে অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ আমি বুঝতে পারছি না।”
কিন্তু তিনি তাদের সবার সামনে সেকথা অস্বীকার করলেন। তিনি বললেন, “আমি জানি না, তুমি কী বলছ।”
71 ৭১ তিনি দরজার কাছে গেলে আর এক দাসী তাঁকে দেখতে পেয়ে লোকদেরকে বলল, “এ ব্যক্তি সেই নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল।”
তখন তিনি ফটকের কাছে গেলেন। সেখানে অন্য একজন দাসী তাঁকে দেখে, সেখানকার লোকজনকে বলল, “এই লোকটিও নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল।”
72 ৭২ তিনি আবার অস্বীকার করলেন, দিব্যি করে বললেন, “আমি সে ব্যক্তিকে চিনি না।”
তিনি শপথ করে আবার তা অস্বীকার করলেন, বললেন, “আমি ওই মানুষটিকে চিনি না!”
73 ৭৩ আরও কিছুক্ষণ পরে, যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, তারা এসে পিতরকে বলল, “সত্যিই তুমিও তাদের একজন, কারণ তোমার ভাষাই তোমার পরিচয় দিচ্ছে।”
আরও কিছুক্ষণ পরে, যারা সেখানে দাঁড়িয়েছিল, তারা পিতরের কাছে গিয়ে বলল, “নিশ্চিতরূপে তুমি তাদেরই একজন, কারণ তোমার উচ্চারণভঙ্গিই তা প্রকাশ করছে।”
74 ৭৪ তখন তিনি অভিশাপের সঙ্গে শপথ করে বলতে লাগলেন, “আমি সেই ব্যক্তিকে চিনি না।” তখনই মোরগ ডেকে উঠল।
তখন তিনি নিজের উপরে অভিশাপ ডেকে এনে তাদের কাছে শপথ করে বললেন, “আমি ওই মানুষটিকে চিনিই না!” সেই মুহূর্তে একটি মোরগ ডেকে উঠল।
75 ৭৫ তাতে যীশু এই যে কথা বলেছিলেন, মোরগ ডাকার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে, তা পিতরের মনে পড়ল এবং তিনি বাইরে গিয়ে অত্যন্ত করুন ভাবে কাঁদলেন।
তখন যীশু যে কথা বলেছিলেন, তা পিতরের মনে পড়ল, “মোরগ ডাকার পূর্বে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে।” আর তিনি বাইরে গিয়ে খুব কাঁদতে লাগলেন।

< মথি 26 >