< লুক 18 >

1 আর তিনি তাদের এই রকম এক গল্প বললেন যে, তাদের সবদিন প্রার্থনা করা উচিত, নিরুৎসাহ হওয়া উচিত নয়।
তারপর যীশু এক রূপক কাহিনির মাধ্যমে তাঁর শিষ্যদের বোঝাতে চাইলেন, তাঁরা যেন সব সবময়ই প্রার্থনা করে, নিরাশ না হয়।
2 তিনি বললেন, কোনো শহরে এক বিচারক ছিল, সে ঈশ্বরকে ভয় করত না, মানুষকেও মানত না।
তিনি বললেন, “কোনো এক নগরে একজন বিচারক ছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন না, কোনো মানুষকেও গ্রাহ্য করতেন না।
3 আর সেই শহরে এক বিধবা ছিল, সে তার কাছে এসে বলত, অন্যায়ের প্রতিকার করে আমার বিপক্ষ থেকে আমাকে উদ্ধার করুন!
সেই নগরে একজন বিধবা ছিল। সে বারবার এসে তাঁর কাছে মিনতি করত, ‘আমার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমার প্রতি ন্যায়বিচার করুন।’
4 বিচারক কিছুদিন পর্যন্ত কিছুই করলেন না; কিন্তু পরে মনে মনে বলল, যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না, মানুষকেও মানি না,
“কিছুদিন তিনি সম্মত হলেন না। কিন্তু শেষে চিন্তা করলেন, ‘যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না,
5 তবুও এই বিধবা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, সেইজন্য বিচার থেকে একে উদ্ধার করব, না হলে সর্বদা আমাকে জ্বালাতন করবে।
তবুও, এই বিধবা যেহেতু আমাকে বারবার জ্বালাতন করে চলেছে, তাই সে যেন ন্যায়বিচার পায়, তা আমি দেখব যেন সে বারবার এসে আমাকে আর বিরক্ত না করে।’”
6 পরে প্রভু বললেন, শোন, ঐ অধার্ম্মিক বিচারক কি বলে।
প্রভু বললেন, “শোনো তোমরা, ওই ন্যায়হীন বিচারক কী বলে।
7 তবে ঈশ্বর কি তাঁর সেই মনোনীতদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার করবেন না, যারা দিন রাত তাঁর কাছে ক্রন্দন করে, যদিও তিনি তাদের বিষয়ে দীর্ঘসহিষ্ণু?
তাহলে ঈশ্বরের যে মনোনীত জনেরা তাঁর কাছে দিবারাত্রি কান্নাকাটি করে, তাদের বিষয়ে তিনি কি ন্যায়বিচার করবেন না? তিনি কি তাদের দূরে সরিয়ে রাখবেন?
8 আমি তোমাদের বলছি, তিনি শীঘ্রই তাদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার করবেন। কিন্তু মনুষ্যপুত্র যখন আসবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস দেখতে পাবেন?
আমি তোমাদের বলছি, তিনি দ্রুত তাদের ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু মনুষ্যপুত্র যখন আসবেন, তিনি কি পৃথিবীতে বিশ্বাস খুঁজে পাবেন?”
9 যারা নিজেদের মনে করত যে তারাই ধার্মিক এবং অন্য সবাইকে তুচ্ছ করত, এমন কয়েকজনকে তিনি এই গল্প বললেন।
নিজেদের ধার্মিকতার প্রতি যাদের আস্থা ছিল ও অন্যদের যারা হীনদৃষ্টিতে দেখত, যীশু এই রূপক কাহিনিটি তাদের বললেন:
10 ১০ দুই ব্যক্তি প্রার্থনা করার জন্য মন্দির গেল; একজন ফরীশী, আর একজন কর আদায়কারী।
“দুই ব্যক্তি প্রার্থনার জন্য মন্দিরে গেল; একজন ফরিশী ও অন্যজন কর আদায়কারী।
11 ১১ ফরীশী দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে এই প্রার্থনা করল, হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সব লোকের মতো ঠগ, অসৎ ও ব্যভিচারীদের মতো কিংবা ঐ কর আদায়কারীর মতো নই;
ফরিশী দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে প্রার্থনা করল, ‘হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ আমি কোনো দস্যু, দুর্বৃত্ত, ব্যভিচারী, এমনকি, ওই কর আদায়কারী, বা অন্য লোকের মতো নই।
12 ১২ আমি সপ্তাহের মধ্যে দুবার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি।
আমি সপ্তাহে দু-দিন উপোস করি এবং যা আয় করি, তার এক-দশমাংশ দান করি।’
13 ১৩ কিন্তু কর আদায়কারী দূরে দাঁড়িয়ে স্বর্গের দিকে চোখ তুলতেও সাহস পেল না, বরং সে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি দয়া কর।
“কিন্তু কর আদায়কারী দূরে দাঁড়িয়ে রইল। এমনকি, সে স্বর্গের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারল না। সে তার বুক চাপড়ে বলতে লাগল, ‘হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি কৃপা করো।’
14 ১৪ আমি তোমাদের বলছি, এই ব্যক্তি ধার্মিক বলে গণ্য হয়ে নিজ বাড়িতে চলে গেল, ঐ ব্যক্তি ধার্মিক নয়; কারণ যে কেউ নিজেকে উঁচু করে, তাকে নীচু করা যাবে; কিন্তু যে নিজেকে নীচু করে, তাকে উঁচু করা যাবে।
“আমি তোমাদের বলছি, এই ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে ধার্মিক গণ্য হয়ে ঘরে ফিরে গেল, কিন্তু অন্যজন নয়। কারণ যে কেউ নিজেকে উন্নত করে, তাকে নত করা হবে, আর যে কেউ নিজেকে নত করে তাকে উন্নত করা হবে।”
15 ১৫ আর লোকেরা নিজেদের ছোট শিশুদেরও তাঁর কাছে আনল, যেন তিনি তাদের স্পর্শ করেন। শিষ্যেরা তা দেখে তাদের ধমক দিতে লাগলেন।
যীশুকে স্পর্শ করার জন্য লোকেরা শিশু সন্তানদের তাঁর কাছে নিয়ে আসছিল। এই দেখে শিষ্যেরা তাদের তিরস্কার করলেন।
16 ১৬ কিন্তু যীশু তাদের কাছে ডাকলেন, বললেন, “শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও, ওদের বারণ কর না, কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মত লোকদেরই।
কিন্তু যীশু শিষ্যদের তাঁর কাছে ডাকলেন ও বললেন, “ছোটো শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও, ওদের বাধা দিয়ো না। কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মতো মানুষদেরই।
17 ১৭ আমি তোমাদের সত্য বলছি, যে কেউ শিশুর মতো হয়ে ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, তবে সে কখনই ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।”
আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, ছোটো শিশুর মতো যে ঈশ্বরের রাজ্যকে গ্রহণ করতে পারে না, সে কখনও তাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
18 ১৮ একজন তত্ত্বাবধায়ক তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “হে সৎগুরু, অনন্ত জীবন পেতে হোলে আমাকে কি কি করতে হবে?” (aiōnios g166)
একজন সমাজভবনের অধ্যক্ষ তাঁকে প্রশ্ন করল, “সৎ গুরু, অনন্ত জীবনের অধিকারী হওয়ার জন্য আমাকে কী করতে হবে?” (aiōnios g166)
19 ১৯ যীশু তাকে বললেন, “আমাকে সৎ কেন বলছো? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ সৎ নয়।”
যীশু উত্তর দিলেন, “আমাকে সৎ বলছ কেন? ঈশ্বর ছাড়া তো আর কেউ সৎ নেই!
20 ২০ তুমি শাস্ত্রের আদেশ সকল জান, “ব্যভিচার কর না, মানুষ খুন কর না, চুরি কর না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না, তোমার বাবা মাকে সম্মান করো।”
ঈশ্বরের আজ্ঞা তুমি নিশ্চয় জানো: ‘ব্যভিচার কোরো না, নরহত্যা কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, তোমার বাবাকে ও তোমার মাকে সম্মান কোরো।’”
21 ২১ সে বলল, “ছোট থেকে এই সব পালন করে আসছি।”
তিনি বললেন, “আমি ছোটোবেলা থেকে এসব পালন করে আসছি।”
22 ২২ একথা শুনে যীশু তাকে বললেন, “এখনও একটি বিষয়ে তোমার ভুল আছে; তোমার যা কিছু আছে, সব বিক্রি করে গরিবদের দান কর, তাতে স্বর্গে ধন পাবে; আর এস, আমাকে অনুসরণ কর।”
একথা শুনে যীশু তাকে বললেন, “এখনও একটি বিষয়ে তোমার ঘাটতি আছে। তুমি তোমার সর্বস্ব বিক্রি করে দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দাও, তাহলে স্বর্গে ঐশ্বর্য লাভ করবে। তারপর এসো, আমাকে অনুসরণ করো।”
23 ২৩ কিন্তু একথা শুনে সে খুব দুঃখিত হল, কারণ সে অনেক সম্পত্তির লোক ছিল।
একথা শুনে সে অত্যন্ত বিষণ্ণ হয়ে উঠল, কারণ সে প্রচুর সম্পত্তির অধিকারী ছিল।
24 ২৪ তখন তার দিকে তাকিয়ে যীশু বললেন, “যারা ধনী তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা অনেক কঠিন!”
যীশু তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, “ধনীর পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন কষ্টসাধ্য!
25 ২৫ “ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করার থেকে বরং সুচের ছিদ্র দিয়ে উটের প্রবেশ করা সহজ।”
প্রকৃতপক্ষে, ধনী মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার চেয়ে বরং সুচের ছিদ্রপথ দিয়ে উটের পার হওয়া সহজ।”
26 ২৬ যারা শুনল, তারা বলল, “তবে কে রক্ষা পেতে পারে?”
একথা শুনে শ্রোতারা জিজ্ঞাসা করল, “তাহলে কে পরিত্রাণ পেতে পারে?”
27 ২৭ তিনি বললেন, “যা মানুষের কাছে অসাধ্য তা ঈশ্বরের পক্ষে সবই সম্ভব।”
যীশু উত্তর দিলেন, “মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব, ঈশ্বরের কাছে তা সম্ভবপর।”
28 ২৮ তখন পিতর তাঁকে বললেন, “দেখুন, আমারা যা আমাদের নিজের ছিল, সে সবকিছু ছেড়ে আপনার অনুসরণকারী হয়েছি।”
পিতর তাঁকে বললেন, “আপনাকে অনুসরণ করার জন্য আমরা আমাদের সর্বস্ব ত্যাগ করেছি।”
29 ২৯ তিনি তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্য বলছি, এমন কেউ নেই, যে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য বাড়ি কি স্ত্রী কি ভাইদের কি বাবা মা কি ছেলে মেয়েদের ত্যাগ করলে,
যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এমন কেউ নেই, যে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য নিজের ঘরবাড়ি, অথবা স্ত্রী, ভাই, বাবা-মা, বা সন্তানসন্ততি ত্যাগ করেছে,
30 ৩০ এইকালে তার বহুগুণ এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাবে না।” (aiōn g165, aiōnios g166)
সে এই জীবনে তার বহুগুণ এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন লাভ করবে না।” (aiōn g165, aiōnios g166)
31 ৩১ পরে তিনি সেই বারো জনকে কাছে নিয়ে তাদের বললেন, দেখ, আমরা যিরুশালেমে যাচ্ছি; আর ভাববাদীদের মাধ্যমে যা যা লেখা হয়েছে, সে সব মানবপুত্রে পূর্ণ হবে।
যীশু সেই বারোজনকে একান্তে ডেকে বললেন, “আমরা জেরুশালেম পর্যন্ত যাচ্ছি; আর মনুষ্যপুত্র সম্পর্কে ভাববাদীদের সমস্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী বাস্তবায়িত হবে।
32 ৩২ কারণ তিনি অইহূদির লোকদের হাতে সমর্পিত হবেন এবং লোকেরা তাঁকে ঠাট্টা করবে, তাঁকে অপমান করবে, তাঁর গায়ে থুথু দেবে;
তাঁকে অইহুদিদের হাতে সমর্পণ করা হবে। তারা তাঁকে বিদ্রুপ করবে, অপমান করবে, তাঁর গায়ে থুতু দেবে, তাঁকে চাবুক দিয়ে মারবে ও হত্যা করবে।
33 ৩৩ এবং চাবুক দিয়ে মেরে তাঁকে মেরে ফেলবে; পরে তিন দিনের র দিন তিনি পুনরায় উঠবেন।
কিন্তু তৃতীয় দিনে তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবেন।”
34 ৩৪ এসবের কিছুই তাঁরা বুঝলেন না, এই কথা তাদের থেকে গোপন থাকল এবং কি কি বলা হচ্ছে, তা তারা বুঝে উঠতে পারল না।
শিষ্যেরা এসব কথার কিছুই উপলব্ধি করতে পারলেন না। তাদের কাছে এর অর্থ গুপ্ত ছিল এবং তিনি কোন বিষয়ে আলোচনা করছেন, তা তারা বুঝতে পারলেন না।
35 ৩৫ আর যখন যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা যিরীহোর কাছে আসলেন, একজন অন্ধ পথের পাশে বসে ভিক্ষা করছিল;
যীশু যখন যিরীহোর নিকটবর্তী হলেন, একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি পথের পাশে বসে ভিক্ষা করছিল।
36 ৩৬ সে লোকদের যাওয়ার শব্দ শুনে জিজ্ঞাসা করল, এর কারণ কি?
পথে চলা লোকদের কলরোল শুনে সে তার কারণ জানতে চাইল।
37 ৩৭ লোকে তাকে বলল, নাসরতীয় যীশু সেখান দিয়ে যাচ্ছেন।
তারা তাকে বলল, “নাসরতের যীশু সেখান দিয়ে যাচ্ছেন।”
38 ৩৮ তখন সে চিৎকার করে বলল, হে যীশু, দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন।
সে চিৎকার করে উঠল, “যীশু, দাউদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন।”
39 ৩৯ যারা আগে আগে যাচ্ছিল, তারা চুপ করো বলে তাকে ধমক দিল, কিন্তু সে আরও জোরে চেঁচাতে লাগল, হে দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন।
সামনের লোকেরা তাকে ধমক দিল ও চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও বেশি চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে দাউদের সন্তান, আমার প্রতি কৃপা করুন।”
40 ৪০ তখন যীশু থেমে গিয়ে তাকে তাঁর কাছে আনতে আদেশ করলেন; পরে সে কাছে আসলে যীশু তাকে বললেন, তুমি কি চাও?
যীশু থেমে সেই মানুষটিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসার জন্য আদেশ দিলেন। সে কাছে এলে যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
41 ৪১ আমি তোমার জন্য কি করব? সে বলল, প্রভু, আমি দেখতে চাই।
“আমার কাছে তুমি কী চাও? তোমার জন্য আমি কী করব?” সে উত্তর দিল, “প্রভু, আমি যেন দেখতে পাই।”
42 ৪২ যীশু তাকে বললেন, দেখ; তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করল।
যীশু তাকে বললেন, “তুমি দৃষ্টি লাভ করো; তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করেছে।”
43 ৪৩ তাতে সে তক্ষুনি দেখতে পেল এবং ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে তাঁর পিছন পিছন চলল। তা দেখে সব লোক ঈশ্বরের স্তব করল।
তখনই সে তার দৃষ্টিশক্তি লাভ করল ও ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে যীশুকে অনুসরণ করল। এই দেখে সমস্ত লোকও ঈশ্বরের বন্দনা করতে লাগল।

< লুক 18 >