< লুক 15 >

1 আর কর আদায়কারী ও পাপী লোকেরা সবাই যীশুর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিল।
আর কর আদায়কারী ও পাপীরা, তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর চারপাশে সমবেত হয়েছিল।
2 তাতে ফরীশী ও ধর্মশিক্ষকেরা অভিযোগ করে বলতে লাগল, “এ ব্যক্তি পাপীদের গ্রহণ করে, ও তাদের সাথে খাওয়া দাওয়া ও মেলামেশা করে।”
কিন্তু ফরিশী ও শাস্ত্রবিদরা ফিসফিস করে বলতে লাগল, “এই মানুষটি পাপীদের গ্রহণ করে, তাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে।”
3 তখন তিনি তাদের এই উপমা বললেন।
যীশু তখন তাদের এই রূপকটি বললেন,
4 “তোমাদের মধ্যে কোনো এক ব্যক্তি যার একশো মেষ আছে, ও তার মধ্যে থেকে একটি হারিয়ে যায়, তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটাকে ছেড়ে দিয়ে সেই একটাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তার খোঁজ করতে যায় না?
“মনে করো, তোমাদের কারও একশোটি মেষ আছে। তার মধ্যে একটি হারিয়ে গেল। সে কি নিরানব্বইটি মেষকে মাঠে রেখে হারানো মেষটি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তার সন্ধান করবে না?
5 আর সেটিকে খুঁজে পেলে সে খুশী হয়ে তাকে কাঁধে তুলে নেয়।
সেটি খুঁজে পেলে সে সানন্দে তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে।
6 পরে ঘরে এসে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটি হারিয়ে গিয়েছিল, তা আমি খুঁজে পেয়েছি।”
পরে বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে সে বলবে, ‘আমার সঙ্গে আনন্দ করো; আমি আমার হারানো মেষটি খুঁজে পেয়েছি।’
7 আমি তোমাদের বলছি, “ঠিক সেইভাবে একজন পাপী মন ফেরালে স্বর্গে আনন্দ হবে; যারা পাপ থেকে মন ফেরান দরকার বলে মনে করে না, এমন নিরানব্বই জন ধার্ম্মিকের জন্য তত আনন্দ হবে না।”
আমি তোমাদের বলছি, একইভাবে নিরানব্বইজন ধার্মিক ব্যক্তি, যাদের মন পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই, তাদের চেয়ে একজন পাপী মন পরিবর্তন করলে স্বর্গে অনেক বেশি আনন্দ হবে।
8 অথবা কোনো এক স্ত্রীলোক, যার দশটি সিকি আছে, সে যদি একটি হারিয়ে ফেলে, তবে প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘর ঝাঁট দিয়ে যে পর্যন্ত তা না পায়, ভালো করে খুঁজে দেখে না?
“আবার মনে করো, কোনো স্ত্রীলোকের দশটি রুপোর মুদ্রা আছে, কিন্তু তার একটি হারিয়ে গেল। সেটাকে না পাওয়া পর্যন্ত, সে কি প্রদীপ জ্বেলে, ঘর ঝাঁট দিয়ে, তন্নতন্ন করে খুঁজবে না?
9 আর সেটি খুঁজে পেলে পর সে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমি যে সিকিটি হারিয়ে ফেলেছিলাম, তা খুঁজে পেয়েছি।
মুদ্রাটি খুঁজে পেলে, সে তার বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের একসঙ্গে ডেকে বলবে, ‘আমার সঙ্গে আনন্দ করো, আমার হারিয়ে যাওয়া মুদ্রাটি আমি খুঁজে পেয়েছি।’
10 ১০ ঠিক সেইভাবে, আমি তোমাদের বলছি, “একজন পাপী মন ফেরালে ঈশ্বরের দূতদের উপস্থিতিতে আনন্দ হয়।”
একইভাবে, আমি তোমাদের বলছি, একজন পাপী মন পরিবর্তন করলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।”
11 ১১ আর তিনি বললেন, “এক ব্যক্তির দুটি ছেলে ছিল;”
যীশু আরও বললেন, “এক ব্যক্তির দুই ছেলে ছিল।
12 ১২ ছোটো ছেলেটি তার বাবাকে বলল, বাবা, টাকা ও সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়ে, তা আমাকে দিয়ে দাও। তাতে তিনি তাদের মধ্যে সম্পত্তি ও টাকা ভাগ করে দিলেন।
ছোটো পুত্র তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, সম্পত্তির যে অংশ আমার, তা আমাকে দিয়ে দাও।’ তাই তিনি ছেলেদের মধ্যে তাঁর সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন।
13 ১৩ কিছুদিন পরে ছোটো ছেলেটি সব কিছু নিয়ে দূর দেশে চলে গেল, আর সেখানে সে বেনিয়মে জীবন কাটিয়ে নিজের সব টাকা পয়সা উড়িয়ে দিল।
“অল্পদিন পরেই, ছোটো ছেলে তার সবকিছু নিয়ে এক দূরবর্তী দেশের উদ্দেশে যাত্রা করল। সেখানে সে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে, তার নিজস্ব সম্পত্তি অপচয় করল।
14 ১৪ সে সব কিছু খরচ করে ফেললে পর সেই দেশে ভীষণ দূর্ভিক্ষ হল, তাতে সে কষ্টে পড়তে লাগল।
তার সর্বস্ব শেষ হলে পর, সেই দেশের সর্বত্র ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল; তাতে সে অত্যন্ত অভাবের মধ্যে পড়ল।
15 ১৫ তখন সে সেই দেশের একজন লোকের কাজ নিল; আর সে তাকে শূকর চরানোর জন্য নিজের জমিতে পাঠিয়ে দিল;
তখন সে গিয়ে সেই দেশের এক ব্যক্তির কাছে তার অধীনে কাজে নিযুক্ত হল। সে তাকে শূকর চরানোর কাজে মাঠে পাঠিয়ে দিল।
16 ১৬ তখন, শূকরে যে শুঁটি খেত, সেই শুঁটি সে খেতে ইচ্ছা করলো, কারণ কেউই তাকে খাবার খেতে দেওয়ার মত ছিল না।
সে এতটাই ক্ষুধার্ত হয়ে উঠল যে শূকরেরা যে শুঁটি খেত তা খেয়েই পেট ভরানো তার কাছে ভালো মনে হল, কিন্তু কেউ তাকে কিছুই খেতে দিত না।
17 ১৭ কিন্তু সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলল, আমার বাবার কত চাকরেরা অনেক অনেক খাবার পাচ্ছে, কিন্তু আমি এখানে খিদেতে মরে যাচ্ছি।
“কিন্তু যখন তার চেতনার উদয় হল, সে মনে মনে বলল, ‘আমার বাবার কত মজুরই তো প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার পাচ্ছে, আর আমি এখানে অনাহারে মৃত্যুর মুখে পড়ে আছি!
18 ১৮ আমি উঠে আমার বাবার কাছে গিয়ে বলব, বাবা, আমি তোমার ও স্বর্গের বিরুদ্ধে পাপ করেছি;
আমি বাড়ি ফিরে আমার বাবার কাছে যাব; তাঁকে বলব, “বাবা, আমি স্বর্গের বিরুদ্ধে ও তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি,
19 ১৯ আমি আর তোমার ছেলে নামের যোগ্য নই; তোমার একজন চাকরের মত আমাকে রাখ।
তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেওয়ার যোগ্যতা আর আমার নেই; আমাকে তোমার এক মজুরের মতো করে নাও।”’
20 ২০ পরে সে উঠে তার বাবার কাছে আসল। সে দূরে থাকতেই তাকে দেখেই তার বাবার খুব করুণা হল, আর দৌড়িয়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে থাকলেন।
তাই সে উঠে তার বাবার কাছে ফিরে গেল। “সে তখনও অনেক দূরে, তার বাবা তাকে দেখতে পেলেন। ছেলের জন্য তাঁর অন্তর করুণায় ভরে উঠল। তিনি দৌড়ে তাঁর ছেলের কাছে গেলেন, তার গলা জড়িয়ে ধরলেন ও তাকে চুম্বন করলেন।
21 ২১ তখন ছেলেটি বলল, বাবা, আমি তোমার ও স্বর্গরাজ্যের বিরুদ্ধে পাপ করেছি, আমি আর তোমার ছেলে নামের যোগ্য নই।
“সেই ছেলে তাঁকে বলল, ‘বাবা, আমি স্বর্গের বিরুদ্ধে ও তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেওয়ার কোনো যোগ্যতা আমার নেই।’
22 ২২ কিন্তু তার বাবা নিজের চাকরদেরকে বললেন, তাড়াতাড়ি করে সবচেয়ে ভাল জামাটি নিয়ে এস, আর একে পরিয়ে দাও এবং এর হাতে আংটি ও পায়ে জুতো দাও;
“কিন্তু তার বাবা তাঁর দাসদের বললেন, ‘শীঘ্র, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পোশাক এনে ওকে পরিয়ে দাও। ওর আঙুলে আংটি পরিয়ে দাও, পায়ে চটিজুতো দাও।
23 ২৩ আর মোটাসোটা বাছুরটি এনে মার; আমরা খাওয়া দাওয়া করে আনন্দ করি;
আর ভোজের জন্য একটি হৃষ্টপুষ্ট বাছুর এনে মারো। এসো আমরা ভোজ ও আনন্দ উৎসবের আয়োজন করি।
24 ২৪ কারণ আমার এই ছেলেটি মারা গিয়েছিল, কিন্তু এখন বাঁচলো; সে হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন পাওয়া গেল। তাতে তারা আমোদ প্রমোদ করতে লাগল।
কারণ আমার এই ছেলেটি মারা গিয়েছিল, কিন্তু এখন সে আবার বেঁচে উঠেছে। সে হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।’ তাই তারা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠল।
25 ২৫ তখন তাঁর বড় ছেলেটি মাঠে ছিল; পরে সে আসতে আসতে যখন বাড়ির কাছে পৌঁছালো, তখন বাজনা ও নাচের শব্দ শুনতে পেল।
“এদিকে বড়ো ছেলেটি মাঠে ছিল। সে বাড়ির কাছে এসে নাচ-গানের শব্দ শুনতে পেল।
26 ২৬ আর সে একজন চাকরকে কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, এ সব কি?
তখন সে একজন দাসকে ডেকে কি হচ্ছে জানতে চাইল?
27 ২৭ সে তাকে বলল, তোমার ভাই এসেছে এবং তোমার বাবা মোটাসোটা বাছুরটি মেরেছেন, কারণ তিনি তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছেন।
সে উত্তর দিল, ‘আপনার ভাই ফিরে এসেছে এবং আপনার বাবা তাকে নিরাপদে, সুস্থ শরীরে ফিরে পেয়েছেন বলে একটি হৃষ্টপুষ্ট বাছুর মেরেছেন।’
28 ২৮ তাতে সে রেগে গেল, ভিতরে যেতে চাইল না; তখন তার বাবা বাইরে এসে সাধাসাধি করতে লাগলেন।
“বড়ো ছেলে খুব রেগে গেল ও ভিতরে প্রবেশ করতে রাজি হল না। তাই তার বাবা বাইরে গিয়ে তাকে অনুনয়-বিনয় করলেন।
29 ২৯ কিন্তু সে তার বাবাকে বলল, দেখ, এত বছর ধরে আমি তোমার সেবাযত্ন করে আসছি, কখনও তোমার আদেশ অমান্য করিনি, তবুও আমার বন্ধুদের সাথে আমোদ প্রমোদ করবার জন্য তুমি কখনও একটি ছাগলের বাচ্চাও দাওনি;
কিন্তু সে তার বাবাকে উত্তর দিল, ‘দেখুন, এত বছর ধরে আমি আপনার সেবা করছি, কখনও আপনার আদেশের অবাধ্য হইনি। তবুও আমার বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ উৎসব করার জন্য আপনি আমাকে কখনও একটি ছাগলছানাও দেননি।
30 ৩০ কিন্তু তোমার এই ছেলে যে, বেশ্যাদের সঙ্গে তোমার টাকা পয়সা নষ্ট করেছে, সে যখন আসল, তারই জন্য মোটাসোটা বাছুরটি মারলে।
কিন্তু আপনার এই ছেলে, যে বেশ্যাদের পিছনে আপনার সম্পত্তি উড়িয়ে দিয়েছে, সে যখন বাড়ি ফিরে এলে, আপনি তারই জন্য হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটি মারলেন!’
31 ৩১ তিনি তাকে বললেন, “বাবা, তুমি সবদিন আমার সঙ্গে আছ, আর যা কিছু আমার, সবই তোমার।
“বাবা বললেন, ‘ছেলে আমার, তুমি সবসময়ই আমার সঙ্গে আছ। আর আমার যা কিছু আছে, সবই তো তোমার।
32 ৩২ কিন্তু আমাদের আমোদ প্রমোদ ও আনন্দ করা উচিত, কারণ তোমার এই ভাই মারা গিয়েছিল এবং এখন বাঁচলো; হারিয়ে গিয়েছিল, এখন পাওয়া গেল।”
কিন্তু তোমার এই ভাই মরে গিয়েছিল, এখন সে আবার বেঁচে উঠেছে; সে হারিয়ে গিয়েছিল, এখন খুঁজে পাওয়া গেছে। তাই আমাদের উচিত আনন্দ উৎসব করা ও খুশি হওয়া।’”

< লুক 15 >