< যিহোশূয়ের বই 9 >

1 আর যর্দ্দনের (নদীর) অন্য পারের সমস্ত রাজা, পাহাড়ি অঞ্চলে ও উপত্যকায় বসবাসকারী এবং লিবানোনের সামনে মহাসমুদ্রের তীরে বসবাসকারী সমস্ত হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়ের রাজারা এই কথা শুনতে পেয়ে,
এদিকে জর্ডন নদীর পশ্চিম পারের সব রাজা—পার্বত্য অঞ্চলের, পশ্চিম পাদদেশের, এবং লেবানন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরের সমগ্র উপকূলবর্তী এলাকার রাজারা (হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের রাজারা) যখন এসব বিষয় শুনলেন,
2 একসঙ্গে যিহোশূয়ের ও ইস্রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য একত্র হলেন।
তখন তাঁরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে যিহোশূয় ও ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন।
3 কিন্তু যিরীহোর প্রতি ও অয়ের প্রতি যিহোশূয় যা করেছিলেন, তা যখন গিবিয়োনে বসবাসকারীরা শুনল,
অবশ্য, গিবিয়োনের লোকজন যখন শুনতে পেল, যিহোশূয় যিরীহো ও অয়ের প্রতি কী করেছেন,
4 তখন তারাও বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করল; তারা গিয়ে রাজদূতের বেশ ধারণ করে নিজেদের গাধার উপরে পুরনো বস্তা এবং আঙ্গুরের রসের পুরনো, জীর্ণ ও তালি দেওয়া থলি চাপাল।
তখন তারা এক কৌশল অবলম্বন করল: তারা এমন এক প্রতিনিধিদলরূপে গেল যাদের গাধাগুলির পিঠে ছেঁড়া বস্তা ও চিড়-খাওয়া ও তাপ্পি মারা সুরাধার রাখা ছিল।
5 আর পায়ে পুরনো ও তালি দেওয়া জুতো ও গায়ে পুরনো পোশাক দিল এবং সমস্ত শুকনো ও ছাতাপড়া রুটি সঙ্গে নিল।
তারা ক্ষয়ে যাওয়া ও তাপ্পি মারা চটিজুতো পায়ে দিল এবং পুরোনো পোশাক গায়ে দিল। তাদের খাওয়ার জন্য সব রুটি ছিল শুকনো ও ছাতাধরা।
6 পরে তারা গিল্‌গলে অবস্থিত শিবিরে যিহোশূয়ের কাছে গিয়ে তাকে ও ইস্রায়েলের লোকদেরকে বলল, “আমরা দূরদেশ থেকে এসেছি; অতএব এখন আপনারা আমাদের সঙ্গে নিয়ম স্থাপন করুন।”
পরে তারা গিল্‌গলে অবস্থিত শিবিরে যিহোশূয়ের কাছে গেল এবং তাঁকে ও ইস্রায়েলীদের বলল, “আমরা এক দূরদেশ থেকে আসছি; আমাদের সঙ্গে আপনারা মৈত্রীচুক্তি করুন।”
7 তখন ইস্রায়েলের লোকেরা সেই হিব্বীয়দের বলল, “কি জানি, তোমরা আমাদেরই মধ্যে বাস করছ; তা হলে আমরা তোমাদের সঙ্গে কিভাবে নিয়ম স্থাপন করতে পারি?”
ইস্রায়েলীরা হিব্বীয়দের বলল, “কিন্তু হয়তো তোমরা আমাদের কাছাকাছি বসবাস করছ, তাই আমরা কীভাবে তোমাদের সঙ্গে মৈত্রীচুক্তি করব?”
8 যিহোশূয়কে বলল, “আমরা আপনার দাস।” তখন যিহোশূয় জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কারা? কোথা থেকে এসেছ?
“আমরা আপনার দাস,” তারা যিহোশূয়কে বলল। কিন্তু যিহোশূয় জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কারা এবং তোমরা কোথা থেকে এসেছ?”
9 তারা বলল, “আপনার দাস আমরা আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম শুনে অনেক দূরের দেশ থেকে এসেছি, কারণ তার কীর্ত্তি এবং তিনি মিশর দেশে যে কাজ করেছেন,
তারা উত্তর দিল: “আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সুখ্যাতি শুনে আপনার দাস আমরা বহু দূরের এক দেশ থেকে এখানে এলাম। কারণ আমরা তাঁর খবর শুনলাম: তিনি মিশরে যেসব কাজ করেছেন,
10 ১০ আর যর্দ্দনের ওপারের দুই ইমোরীয় রাজার প্রতি, হিষ্‌বোনের রাজা সীহোনের ও বাশনের রাজা অষ্টারোৎ-নিবাসী ওগের প্রতি যে কাজ করেছেন, সমস্তই আমরা শুনেছি।”
এবং জর্ডন নদীর পূর্বপারের ইমোরীয়দের দুই রাজার—হিষ্‌বোনের রাজা সীহোন ও যিনি অষ্টারোতে রাজত্ব করতেন, বাশনের রাজা সেই ওগের—প্রতি তিনি যেসব কাজ করেছেন, সেকথাও আমরা শুনেছি।
11 ১১ আর আমাদের প্রাচীনেরা ও দেশে বসবাসকারী সমস্ত লোক আমাদের বলল, “তোমরা যাওয়ার জন্য হাতে প্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাও এবং তাদেরকে বল, আমরা আপনাদের দাস, অতএব এখন আপনারা আমাদের সঙ্গে নিয়ম স্থাপন করুন।”
আর আমাদের প্রাচীনেরা ও আমাদের দেশে বসবাসকারী সবাই আমাদের বললেন, ‘তোমাদের যাত্রার জন্য তোমরা পাথেয় নাও; যাও এবং তাদের সঙ্গে দেখা করো ও তাদের বলো, “আমরা আপনাদের দাস; আমাদের সঙ্গে এক মৈত্রীচুক্তি করুন।”’
12 ১২ আপনাদের কাছে আসার জন্য যে দিন যাত্রা করি, সেই দিন আমরা বাড়ি থেকে যে গরম রুটি খাবার জন্য এনেছিলাম, এই দেখুন, আমাদের সেই রুটি এখন শুকনো ও ছাতাপড়া।
যেদিন আমরা আপনাদের কাছে আসার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলাম, সেদিন ঘরে বোঁচকা বাঁধা আমাদের এই রুটিগুলি সব টাটকা ছিল। কিন্তু এখন দেখুন, এগুলি কেমন শুকনো হয়ে গিয়েছে ও এতে ছাতা ধরেছে।
13 ১৩ আর যে সব থলি আঙ্গুরের রসে পূর্ণ করেছিলাম, সেগুলিও নূতন ছিল, এই দেখুন, সে সব ছিঁড়ে গিয়েছে। আর আমাদের এই সব পোশাক ও জুতো পুরনো হয়ে গেছে, কারণ রাস্তার দূরত্ব অনেক।
আর আমাদের ভর্তি করা এই সুরাধারগুলি নতুন ছিল, কিন্তু দেখুন, এগুলিতে কেমন চিড় ধরেছে। আর এই সুদীর্ঘ যাত্রার ফলে আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ও চটিজুতোও ছিঁড়ে গিয়েছে।”
14 ১৪ তাতে লোকেরা তাদের খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করল, কিন্তু সদাপ্রভুর ইচ্ছা কি তা জিজ্ঞাসা করল না।
ইস্রায়েলীরা সেইসব খাবারদাবার পরীক্ষা করে দেখল কিন্তু সদাপ্রভুর কাছে খোঁজ করল না।
15 ১৫ আর যিহোশূয় তাদের সঙ্গে সন্ধি করে যাতে তারা বাঁচে, এমন নিয়ম করলেন এবং মণ্ডলীর অধ্যক্ষগণ তাদের কাছে শপথ করলেন।
তখন যিহোশূয় তাদের সঙ্গে এক মৈত্রীচুক্তি করলেন, যেন তারা বেঁচে থাকে, এবং সমাজের সব নেতা শপথের দ্বারা সেটির অনুমোদন দিলেন।
16 ১৬ এই ভাবে তাদের সঙ্গে নিয়ম স্থাপন করার পরে তিন দিন পরে তারা শুনতে পেল, তারা আমাদের কাছের এবং আমাদের মধ্যে বাস করছে।
গিবিয়োনীয়দের সঙ্গে মৈত্রীচুক্তি করার তিন দিন পর, ইস্রায়েলীরা শুনতে পেল যে, তারা তাদেরই প্রতিবেশী, তাদের কাছেই বসবাস করছিল।
17 ১৭ পরে ইস্রায়েল-সন্তানেরা যাত্রা করে তৃতীয় দিনের তাদের নগরগুলির কাছে উপস্থিত হল। সেই সব নগরের নাম গিবিয়োন, কফারা, বেরোৎ ও কিরিয়ৎ-যিয়ারীম।
তাই ইস্রায়েলীরা যাত্রা করে তৃতীয় দিনে তাদের এই নগরগুলির কাছে পৌঁছে গেল: গিবিয়োন, কফীরা, বেরোৎ ও কিরিয়ৎ-যিয়ারীম।
18 ১৮ মণ্ডলীর নেতারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে তাদের কাছে শপথ করেছিলেন বলে ইস্রায়েল-সন্তানেরা তাদেরকে আঘাত করল না, কিন্তু সমস্ত মণ্ডলী নেতাদের বিরুদ্ধে বচসা করতে লাগল।
ইস্রায়েলীরা কিন্তু তাদের আক্রমণ করল না, কারণ সমাজের নেতারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে তাদের কাছে শপথ করেছিলেন। সমগ্র জনসমাজ নেতাদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করল,
19 ১৯ তাতে সব নেতারা সমস্ত মণ্ডলীকে বললেন, “আমরা ওদের কাছে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে শপথ করেছি, অতএব এখন ওদেরকে স্পর্শ করতে পারি না।
কিন্তু নেতারা সবাই তাদের উত্তর দিলেন, “আমরা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে তাদের কাছে শপথ করেছি, তাই এখন আমরা আর তাদের স্পর্শ করতে পারব না।
20 ২০ আমরা ওদের প্রতি এটাই করব, এদেরকে জীবিত রাখব, নাহলে এদের কাছে যে শপথ করেছি, তার জন্য আমাদের প্রতি ক্রোধ উপস্থিত হবে।”
আমরা তাদের প্রতি এরকম করব: আমরা তাদের বেঁচে থাকতে দেব, যেন তাদের কাছে করা শপথ ভাঙার জন্য আমাদের উপরে ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে না আসে।”
21 ২১ অতএব নেতারা তাদেরকে বললেন, “ওরা জীবিত থাকুক; কিন্তু নেতাদের কথা অনুযায়ী তারা সমস্ত মণ্ডলীর জন্য কাঠুরিয়া ও জল বহনকারী হল।”
তাঁরা আরও বললেন, “তারা বেঁচে থাকুক, কিন্তু সমগ্র সমাজের সেবায় তারা কাঠুরিয়া ও জল বহনকারী হয়েই থাকুক।” অতএব তাদের কাছে করা নেতাদের প্রতিজ্ঞা রক্ষিত হল।
22 ২২ আর যিহোশূয় তাদেরকে ডেকে বললেন, “তোমরা তো আমাদেরই মধ্যে বাস করছ; তবে আমরা তোমাদের থেকে অনেক দূরে থাকি, এই কথা বলে কেন আমাদের ঠকালে?
পরে যিহোশূয় গিবিয়োনীয়দের ডেকে পাঠালেন ও বললেন, “তোমরা কেন একথা বলে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করলে যে, ‘আমরা আপনাদের থেকে বহুদূরে বসবাস করি,’ প্রকৃতপক্ষে যখন তোমরা আমাদের কাছেই থাকো?
23 ২৩ এই জন্য তোমরা শাপগ্রস্ত হলে; আমার ঈশ্বরের বাড়ির জন্য কাঠ কাটা ও জলবহন, এই দাসত্বের থেকে তোমরা কখনও মুক্তি পাবে না।”
এখন তোমরা এক অভিশাপের অধীন হলে: আমার ঈশ্বরের গৃহের জন্য কাঠুরিয়ার ও জল বহনকারীর সেবাকাজ থেকে তোমরা কখনও নিষ্কৃতি পাবে না।”
24 ২৪ তারা যিহোশূয়কে এর উত্তরে বলল, “আপনাদেরকে এই সমস্ত দেশ দেওয়ার জন্য ও আপনাদের সামনে থেকে এই দেশে বসবাসকারী সমস্ত লোককে ধ্বংস করার জন্য আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর দাস মোশিকে যে আদেশ করেছিলেন, তার নিশ্চিত সংবাদ আপনার দাস আমরা পেয়েছিলাম, এই জন্য আমরা আপনাদের কাছ থেকে প্রাণ হারানোর ভয়ে, খুবই ভয় পেয়ে এই কাজ করেছি।
তারা যিহোশূয়কে উত্তর দিল, “আপনার দাসেদের স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছিল কীভাবে আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর দাস মোশিকে আদেশ দিয়েছিলেন, যে তিনি সমগ্র দেশটি আপনাদের দেবেন এবং এখানকার সমস্ত অধিবাসীকে আপনাদের সামনে থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবেন। তাই আপনাদের কারণে আমরা প্রাণভয়ে ভীত হয়েছি, এবং সেজন্যই এরকম করেছি।
25 ২৫ এখন দেখুন, আমরা আপনারি অধীনে, আমাদের প্রতি যা করা আপনার ভাল ও ন্যায্য মনে হয়, তাই করুন।”
এখন আমরা আপনার হাতেই আছি। আপনার যা ভালো ও ন্যায্য মনে হয়, আমাদের প্রতি তাই করুন।”
26 ২৬ পরে তিনি তাদের প্রতি তাই করলেন ও ইস্রায়েল-সন্তানদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করলেন, তাতে তারা তাদেরকে বধ করল না।
অতএব যিহোশূয় ইস্রায়েলীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করলেন, এবং ইস্রায়েলীরা তাদের হত্যা করল না।
27 ২৭ আর সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে মণ্ডলীর ও সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির জন্য কাঠ কাটার ও জলবহনের কাজে যিহোশূয় সেই দিনের তাদেরকে নিযুক্ত করলেন; তারা আজও তাই করছে।
গিবিয়োনীয়দের সেদিন তিনি সমাজের জন্য কাঠুরিয়া ও জল বহনকারীরূপে, ও সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির চাহিদা মিটানোর কাজে নিযুক্ত করলেন। আর আজও পর্যন্ত তারা এরকমই হয়ে আছে।

< যিহোশূয়ের বই 9 >