< ইয়োবের বিবরণ 2 >

1 আবার এক দিন যখন ঈশ্বরের পুত্ররা সদাপ্রভুর সামনে নিজেদের উপস্থিত করতে এলেন, শয়তানও তাদের মাঝে এলো নিজেকে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করতে।
অন্য আর একদিন স্বর্গদূতেরা সদাপ্রভুর সামনে নিজেদের উপস্থিত করার জন্য এলেন, এবং শয়তানও তাদের সঙ্গে নিজেকে তাঁর সামনে উপস্থিত করার জন্য এল।
2 সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে এলে?” তখন শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিলেন এবং বললেন, “পৃথিবীর এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম এবং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিলাম।”
আর সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে এলে?” শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিল, “পৃথিবীর সর্বত্র এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করে এলাম।”
3 সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কি আমার দাস ইয়োবের প্রতি লক্ষ্য রেখেছ? কারণ তার মত পৃথিবীতে কেউ নেই, একটি নিখুঁত এবং সৎ লোক, যে ব্যক্তি ঈশ্বরকে ভয় করে এবং মন্দ থেকে দূরে থাকে। সে এখনও তার সততা ধরে রেখেছে, যদিও তুমি আমাকে তার বিরুদ্ধে কাজ করতে রাজি করিয়েছ, অকারণে তাকে ধ্বংস করতে রাজি করিয়েছ।”
পরে সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “আমার দাস ইয়োবের দিকে কি তোমার নজর পড়েছে? পৃথিবীতে তার মতো আর কেউ নেই; সে অনিন্দনীয় ও ন্যায়পরায়ণ এমন এক মানুষ, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে ও কুকর্ম এড়িয়ে চলে। আর সে এখনও তার সততা বজায় রেখেছে, যদিও বিনা কারণে তার সর্বনাশ করার জন্য তুমি তার বিরুদ্ধে আমাকে প্রণোদিত করেছ।”
4 শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিয়ে বলল, “চামড়ার জন্য চামড়া, প্রকৃত পক্ষে, একজন মানুষ তার জীবনের জন্য সব কিছু দিয়ে দেবে।
“চামড়ার জন্য চামড়া!” শয়তান উত্তর দিল। “একজন মানুষ তার নিজের জীবনের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পারে।
5 কিন্তু এখন তুমি তোমার হাত বাড়াও এবং তার হাড় এবং শরীর স্পর্শ কর এবং সে তোমাকে তোমার মুখের উপরেই ত্যাগ করবে।”
কিন্তু এখন তোমার হাত বাড়াও ও তার মাংসে ও হাড়ে আঘাত হানো, আর সে নিশ্চয় তোমার মুখের উপরেই তোমাকে অভিশাপ দেবে।”
6 সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “দেখ, সে তোমার হাতে আছে; শুধু তার জীবন থাকতে দাও।”
সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “ঠিক আছে, সে তোমারই হাতে রইল; কিন্তু তোমাকে তার প্রাণটি অব্যাহতি দিতে হবে।”
7 তাতে শয়তান সদাপ্রভুর সামনে থেকে চলে গেল এবং ইয়োবকে পায়ের তলা থেকে মাথা পর্যন্ত ভয়ঙ্কর ফোঁড়ায় ভরিয়ে দিয়ে কষ্ট দিল।
অতএব শয়তান সদাপ্রভুর কাছ থেকে চলে গেল এবং ইয়োবের পায়ের তলা থেকে তার মাথার তালু পর্যন্ত বেদনাদায়ক ঘা উৎপন্ন করে তাঁকে পীড়িত করল।
8 ইয়োব নিজেকে ঘষার জন্য একটা ভাঙ্গা মাটির পাত্রের টুকরো নিলেন এবং তিনি ছাইয়ে বসলেন।
তখন ইয়োব এক টুকরো খাপরা তুলে নিলেন এবং ছাই-গাদায় বসে নিজের গা চুলকাতে লাগলেন।
9 তারপর তার স্ত্রী তাকে বললেন, “তুমি কি এখনও তোমার সততা ধরে রাখবে? ঈশ্বরকে ত্যাগ কর এবং প্রাণ ত্যাগ করো বা মৃত্যু বরণ করো।”
তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, “এখনও কি তুমি তোমার সততা বজায় রাখার চেষ্টা করছ? ঈশ্বরকে অভিশাপ দাও ও মরে যাও!”
10 ১০ কিন্তু তিনি তাকে বললেন, “তুমি একটা বোকা মহিলার মত কথা বলছ। তুমি কি সত্যিই মনে কর যে আমাদের ঈশ্বরের হাত থেকে ভালোই পাওয়া উচিত এবং মন্দ নয়?” এই সমস্ত বিষয়ে, ইয়োব তার মুখ দিয়ে পাপ করল না।
তিনি উত্তর দিলেন, “তুমি একজন মূর্খ মহিলার মতো কথা বলছ। আমরা কি ঈশ্বরের কাছ থেকে মঙ্গলই গ্রহণ করব আর দুঃখকষ্ট গ্রহণ করব না?” এসব কিছুতে, ইয়োব তাঁর কথাবার্তার মাধ্যমে পাপ করেননি।
11 ১১ পরে যখন ইয়োবের তিন বন্ধু এ সমস্ত শুনল তার প্রতি কি ঘটেছে, তারা প্রত্যেকে তাদের নিজেদের জায়গা থেকে এল, তৈমনীয় ইলীফস, শূহীয় বিলদদ ও নামাথীয় সোফর। তারা তার কাছে যাওয়ার জন্য, তার সঙ্গে শোক করার এবং তাকে সান্ত্বনা করার জন্য দিন ঠিক করল।
ইয়োবের তিন বন্ধু, তৈমনীয় ইলীফস, শূহীয় বিল্‌দদ ও নামাথীয় সোফর যখন তাঁর উপর এসে পড়া সব বিপত্তির কথা শুনতে পেলেন, তখন তারা ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে সহানুভূতি জানানোর ও সান্তনা দেওয়ার জন্য সহমত প্রকাশ করে একত্রিত হলেন।
12 ১২ যখন তারা কিছু দূর থেকে তাদের চোখ তুলল, তারা তাকে চিনতে পারল না; তারা চিত্কার করে কাঁদলো; প্রত্যেকে নিজের নিজের কাপড় ছিঁড়লো এবং নিজেদের মাথার উপরে বাতাসে ধূলো উড়াল।
দূর থেকে ইয়োবকে দেখে তাদের তাঁকে চিনতে খুব কষ্ট হল; তারা জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন, এবং তাদের আলখাল্লাগুলি ছিঁড়ে ফেললেন ও মাথায় ধুলো ছড়ালেন।
13 ১৩ তাতে তারা তার সঙ্গে সাত দিন এবং সাতরাত মাটিতে বসে রইলেন এবং কেউ তাকে কোন কথা বললেন না, কারণ তারা দেখল যে তার দুঃখ অতি ভয়ঙ্কর ছিল।
পরে তাঁর সাথে তারা সাত দিন, সাত রাত মাটিতে বসে থাকলেন। কেউ তাঁকে কোনও কথা বললেন না, কারণ তারা দেখলেন যে তাঁর পীড়া খুবই কষ্টদায়ক।

< ইয়োবের বিবরণ 2 >