< যিরমিয়ের বই 46 >

1 জাতিদের বিষয়ে ভাববাদী যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য এল।
বিভিন্ন জাতি সম্পর্কে সদাপ্রভুর এই বাক্য, ভাববাদী যিরমিয়ের কাছে উপস্থিত হল:
2 মিশরের বিষয়ে: যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের চতুর্থ বছরে বাবিলের রাজা নবূখদনিৎসর মিশরের রাজা ফরৌণ-নখোর যে সৈন্যদলকে পরাজিত করলেন, ইউফ্রেটিস নদীর তীরের কাছে কর্কমীশে উপস্থিত সেই সৈন্যদলের কথা:
মিশর সম্পর্কে: যোশিয়ের পুত্র যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের চতুর্থ বছরে, ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজার, মিশরের রাজা ফরৌণ নখোর যে সৈন্যদলকে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে কর্কমীশে পরাস্ত করেন, তাদের সম্পর্কে এই বাক্য,
3 “তোমাদের ছোট ও বড় ঢাল প্রস্তুত কর এবং যুদ্ধ করবার জন্য যাও।
“বড়ো বা ছোটো, তোমাদের ঢালগুলি প্রস্তুত করো ও সমরাভিযানে বের হও!
4 ঘোড়াগুলিকে সাজাও, ঘোড়াচালকরা তার উপর চড়। মাথা রক্ষার বর্ম পরে তোমার জায়গায় গিয়ে দাঁড়াও। বর্শাগুলি মসৃণ কর এবং যুদ্ধসজ্জা পর।
অশ্বগুলিকে সজ্জিত করো, যুদ্ধাশ্বে আরোহণ করো! শিরস্ত্রাণ পরে তোমরা অবস্থান নাও! তোমাদের বর্শাগুলি ঝকঝকে করো, সব রণসাজ পরে নাও!
5 আমি এখানে কি দেখাচ্ছি? তারা আতঙ্কে পূর্ণ হয়েছে এবং পালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তাদের সৈন্যরা পরাজিত হয়েছে। তারা নিরাপত্তার জন্য দৌড়াচ্ছে, পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে না। চারদিকে আতঙ্ক ঘিরে আছে” এটা সদাপ্রভুর ঘোষণা।
আমি কী দেখতে পাচ্ছি? তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে, তারা পিছনে অপসারণ করছে, তাদের বীর যোদ্ধারা পরাস্ত হয়েছে। পিছন দিকে না ফিরে তারা দ্রুত পলায়ন করে, তাদের চারদিকে কেবলই ভয়ের পরিবেশ,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
6 দ্রুতগামী লোকেরা পালাতে পারছে না; সৈন্যরাও রেহাই পাচ্ছে না। উত্তর দিকে ইউফ্রেটিস নদীর কাছে তারা হোঁচট খেয়ে পড়েছে।
“দ্রুতগামী লোক পলায়ন করতে পারছে না, শক্তিশালী লোকেরাও নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। উত্তর দিকে, ইউফ্রেটিস নদীর তীরে, তারা হোঁচট খেয়ে পতিত হচ্ছে।
7 ও কে যে, নীল নদীর মত উঠে আসছে, নদীর মত জল তোলপাড় করছে?
“নীলনদের মতো, নদীর উপচে পড়া জলরাশির মতো, ওই যে উঠে আসছে, ও কে?
8 মিশর নীল নদীর মত হয়ে উঠে আসছে, নদীর মত জল তোলপাড় করছে। সে বলে, আমি উপরে উঠব; আমি পৃথিবী ঢেকে ফেলব; আমি শহরগুলি ও তাদের বাসিন্দাদের ধ্বংস করব।
মিশর নীলনদের মতো উঠে আসছে, যেমন নদীগুলিতে জলরাশি ফেঁপে ওঠে। সে বলছে, ‘আমি উঠে সমস্ত পৃথিবীকে প্লাবিত করব, আমি লোকসমেত সব নগর ধ্বংস করব।’
9 হে সমস্ত ঘোড়া, উঠে যাও; তোমরা আক্রমণ কর। হে রথেরা, পাগলের মত হও। হে বীরেরা, ঢাল বহনকারী কূশ ও পূটের দক্ষ লোকেরা, ধনুকধারী লূদীয়েরা, তোমরা এগিয়ে যাও।
হে অশ্বেরা, তোমরা আক্রমণ করো! ওহে রথারোহীরা, তোমরা উন্মত্তের মতো রথ চালাও! হে যোদ্ধারা, তোমরা সমরাভিযান করো, কূশ ও পূটের লোকেরা, যারা ঢাল বহন করে, লূদের লোকেরা, যারা ধনুকে শরসন্ধান করে।
10 ১০ সেই দিন টি বাহিনীগণের প্রভু সদাপ্রভুর প্রতিশোধের দিন। তিনি তাঁর শত্রুদের উপর প্রতিশোধ নেবেন। তরোয়াল গ্রাস করবে এবং তৃপ্ত হবে। তাদের রক্ত পান করে পরিতৃপ্ত হবে, কারণ উত্তর দিকের দেশে, ইউফ্রেটিস নদীর কাছে বাহিনীগণের প্রভু সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বলিদান হবে।
কিন্তু সেদিনটি হল প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, এক প্রতিশোধের দিন, তাঁর শত্রুদের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার দিন। তরোয়াল তৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত গ্রাস করে যাবে, যতক্ষণ না রক্তে তার পিপাসা নিবারিত হয়। কারণ প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, উত্তরের দেশে, ইউফ্রেটিস নদীর তীরে, বলি উৎসর্গ করবেন।
11 ১১ “হে মিশরের কুমারী কন্যা, তুমি গিলিয়দে উঠে যাও, ওষুধ সংগ্রহ কর। বৃথাই তুমি বেশি ওষুধ নিচ্ছ; তুমি সুস্থ হবে না।
“হে মিশরের কুমারী-কন্যা, তুমি গিলিয়দে গিয়ে মলম নিয়ে এসো। কিন্তু তুমি বৃথাই অনেক ওষুধ ব্যবহার করছ, তোমার রোগের কোনো প্রতিকার নেই।
12 ১২ জাতিরা তোমার অপমানের কথা শুনেছে; তোমার বিলাপে পৃথিবী পূর্ণ হবে। এক সৈন্য আর এক সৈন্যের উপর হোঁচট খেয়েছে, দুজনেই একসঙ্গে পতিত হল।”
জাতিগণ তোমার লজ্জার কথা শুনবে; তোমার কান্নায় পৃথিবী পূর্ণ হবে। এক যোদ্ধা অন্য যোদ্ধার উপরে পড়বে, তারা উভয়েই একসঙ্গে পতিত হবে।”
13 ১৩ বাবিলের রাজা নবূখদনিৎসর কখন মিশর দেশে এসে আক্রমণ করবেন সেই কথা সদাপ্রভু ভাববাদী যিরমিয়কে বললেন।
মিশরকে আক্রমণ করার জন্য ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজারের আগমন সম্পর্কে, সদাপ্রভু ভাববাদী যিরমিয়কে এই বার্তা দিলেন:
14 ১৪ তোমরা মিশরে প্রচার কর, মিগ্দোল ও নোফে এটি শোনা যাক। তফনহেষে ঘোষণা করে বল, তোমরা জায়গা নিয়ে দাঁড়াও ও প্রস্তুত হও, কারণ তরোয়াল তোমাদের চারপাশে গ্রাস করছে।
“তোমরা মিশরে ঘোষণা করো, মিগ্‌দোলে একথা প্রচার করো; মেম্ফিস ও তফন্‌হেষেও একথা গিয়ে বলো: ‘তোমরা নিজেদের অবস্থান নাও ও প্রস্তুত হও, কারণ তরোয়াল তোমাদের চারপাশের সবাইকে গ্রাস করবে।’
15 ১৫ তোমাদের দেবতা আপনি কেন পালিয়ে গেল? কেন তোমাদের দেবতা দাঁড়াতে পারছে না? সদাপ্রভু তাদের নীচে ছুঁড়ে ফেলেছেন।
কেন তোমার যোদ্ধারা ভূপাতিত হবে? তারা দাঁড়াতে পারে না, কারণ সদাপ্রভু তাদের মাটিতে ফেলে দেবেন।
16 ১৬ তিনি হোঁচট খাওয়া লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন, প্রত্যেক সৈন্য একে অন্যের বিরুদ্ধে পতিত হয়। তারা বলছে, ওঠো, চল আমরা বাড়ি যাই। চল আমরা নিজেদের লোকদের কাছে ও নিজেদের দেশে ফিরে যাই। চল আমরা সেই তরোয়ালকে ত্যাগ করি যা আমাদের আঘাত করে।
তারা বারবার হোঁচট খাবে; তারা পরস্পরের উপরে গিয়ে পড়বে। তারা বলবে, ‘ওঠো, চলো আমরা ফিরে যাই, স্বদেশে, আমাদের আপনজনদের কাছে, অত্যাচারীদের তরোয়াল থেকে অনেক দূরে।’
17 ১৭ তারা সেখানে ঘোষণা করল, মিশরের রাজা ফরৌণ শুধুমাত্র একটি শব্দ; যে তার সুযোগ হারিয়েছে।
সেখানে তারা চিৎকার করে বলবে, ‘মিশরের রাজা ফরৌণ এক উচ্চশব্দ মাত্র; সে তার সুযোগ হারিয়েছে।’
18 ১৮ সেই রাজা, যাঁর নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তাঁর ঘোষণা “আমার জীবনের দিব্যি, পর্বতের মধ্যে তাবোরের মত এবং সমুদ্রের কাছের কর্মিলের মত একজন আসবেন।
“আমার জীবনের দিব্যি,” রাজা ঘোষণা করেন, যাঁর নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু, “একজন আসবেন, যিনি পর্বতগুলির মধ্যে তাবোরের তুল্য, সমুদ্রতীরের কর্মিল পাহাড়ের মতো।
19 ১৯ হে মিশরের মেয়েরা, নির্বাসনের জন্য তোমাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও। কারণ নোফ ভয়ঙ্কর, ধ্বংসস্থান হয়ে যাবে; সেখানে কেউ বাস করবে না।
তোমরা যারা মিশরে বসবাস করো, নির্বাসনের জন্য তোমাদের জিনিসপত্র তুলে নাও, কারণ মেম্ফিস নগরী পরিত্যক্ত হবে, নিবাসীহীন ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়ে থাকবে।
20 ২০ মিশর খুব সুন্দর একটি যুবতী গরু, কিন্তু উত্তর দিক থেকে তার বিরুদ্ধে একটি দংশক পোকা আসছে। সেটা আসছে।
“মিশর এক সুন্দরী বকনা-বাছুর, কিন্তু উত্তর দিক থেকে তার বিরুদ্ধে এক ডাঁশ-মাছি আসছে।
21 ২১ মিশরের মধ্যবর্তী তার সৈন্যেরা পুষ্ট বাছুরের মত। কিন্তু তারা ফিরে যাবে ও পালিয়ে যাবে। তারা একসঙ্গে দাঁড়াবে না, কারণ তাদের বিপদের দিন, তাদের শাস্তি পাবার দিন আসছে।
তার সৈন্যশ্রেণীরা বেতনভোগী, তারা সব নধর বাছুরের মতো। তারাও পিছন ফিরে একসঙ্গে পালাবে, তারা তাদের স্থানে স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, কারণ বিপর্যয়ের দিন তাদের উপরে নেমে আসছে, সেই সময়টি হল তাদের শাস্তি পাওয়ার।
22 ২২ মিশর সাপের মত শিশ ধ্বনি করবে ও বুকে হাঁটবে, কারণ তার শত্রুরা তার বিরুদ্ধে এগিয়ে আসছে। তারা কাঠুরিয়াদের মত কুড়ুল নিয়ে তার বিরুদ্ধে আসবে।
মিশর পালিয়ে যাওয়া সাপের মতো হিস্‌হিস্ করবে, যেভাবে সৈন্যদল সামনের দিকে এগিয়ে যায়; তারা কুড়ুল নিয়ে তার বিরুদ্ধে আসবে, যেমন লোকেরা গাছপালা কেটে নেয়।
23 ২৩ তারা অরণ্য কেটে ফেলবে” এটা সদাপ্রভুর ঘোষণা, “যদিও তা অনেক গভীর। কারণ পঙ্গপালের থেকে শত্রুদের সংখ্যা বেশি হবে।
তারা তার অরণ্য কেটে ফেলবে,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “তা যতই গহন হোক না কেন। তারা পঙ্গপাল অপেক্ষাও বহুসংখ্যক, যাদের সংখ্যা গণনা করা যায় না।
24 ২৪ মিশরের মেয়ে লজ্জিত হবে। সে উত্তর দিকের লোকেদের হাতে সমর্পিত হবে।”
মিশর-কন্যাকে লজ্জা দেওয়া হবে, উত্তরের লোকদের হাতে সে সমর্পিত হবে।”
25 ২৫ বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেন, “দেখ, আমি নো শহরের দেবতা আমোনকে, ফরৌণ ও মিশরকে, তার দেবতাদের ও রাজাদের, ফরৌণের উপর নির্ভরশীল সবাইকে শাস্তি দেব।
বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা বলেন: “আমি শাস্তি দিতে চলেছি থিব্‌স-নগরের আমোন-দেবের উপরে, ফরৌণের উপরে, মিশরের উপরে ও তার দেবদেবী ও রাজাদের উপরে, এবং তাদের উপরে, যারা মিশরের উপরে নির্ভর করে।
26 ২৬ যারা তাদের হত্যা করার চেষ্টা করে, তাদের হাতে বাবিলের রাজা নবূখদনিৎসর ও তার দাসেদের হাতে আমি তাদের সমর্পণ করব। কিন্তু পরে মিশরে আগের দিনের র মত লোকজন বাস করবে।” এটা সদাপ্রভুর ঘোষণা।
যারা তাদের প্রাণ হরণ করতে চায়, আমি তাদের হাতে তাদের সমর্পণ করব। তারা হল ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজার ও তার সৈন্যেরা। পরবর্তী সময়ে, মিশর অবশ্য লোক অধ্যূষিত হবে, যেমন তারা পূর্বে ছিল,” একথা সদাপ্রভু ঘোষণা করেন।
27 ২৭ “কিন্তু তুমি, আমার দাস যাকোব, ভয় কোরো না; আতঙ্কিত হোয়ো না, ইস্রায়েল, কারণ আমি তোমাকে দূর দেশ থেকে ও বন্দী থাকা দেশ থেকে ফিরিয়ে আনব। তখন যাকোব ফিরে আসবে, শান্তিতে খুঁজে পাবে ও নিরাপদে থাকবে এবং কেউ তাকে ভয় দেখাবে না।
“আমার দাস যাকোব, তোমরা ভয় কোরো না; ও ইস্রায়েল, তোমরা নিরাশ হোয়ো না। আমি নিশ্চয়ই তোমাকে দূরবর্তী দেশ থেকে রক্ষা করব, তোমার বংশধরদের নির্বাসনের দেশ থেকে উদ্ধার করব। যাকোব পুনরায় শান্তি ও সুরক্ষা লাভ করবে, আর কেউ তাকে ভয় দেখাতে পারবে না।
28 ২৮ তুমি, আমার দাস যাকোব, ভয় কোরো না” এটা সদাপ্রভুর ঘোষণা। “কারণ আমি তোমার সঙ্গে আছি। তাই যে সব জাতির মধ্যে আমি তোমাকে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম, আমি তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করব। কিন্তু আমি তোমাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করব না। যদিও আমি তোমাকে যথাযথভাবে শাসন করব, একেবারে শাস্তি না দিয়েও ছাড়ব না।”
হে যাকোব, আমার দাস, তুমি ভয় কোরো না, কারণ আমি তোমার সঙ্গে আছি,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন। “যাদের মধ্যে আমি তোমাকে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেই অন্য সব জাতিকে যদিও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করি, আমি তোমাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করব না। আমি কেবলমাত্র বিচার করে তোমাকে শাস্তি দেব, আমি কোনোমতেই তোমাকে অদণ্ডিত রাখব না।”

< যিরমিয়ের বই 46 >