< যিরমিয়ের বই 38 >

1 মত্তনের ছেলে শফটিয়, পশহূরের ছেলে গদলিয়, শেলিমিয়ের ছেলে যিহূখল ও মল্কিয়ের ছেলে পশহূর শুনল যে, সমস্ত লোকদের কাছে যিরমিয় ঘোষণা করছিলেন। তিনি বলছিলেন,
যিরমিয় সব লোকের কাছে যে কথা বলছিলেন, তা মত্তনের পুত্র শফটিয়, পশ্‌হূরের পুত্র গদলিয়, শেলেমিয়ের পুত্র যিহূখল ও মল্কিয়ের পুত্র পশ্‌হূর শুনল। তিনি বলছিলেন,
2 “সদাপ্রভু এই কথা বলেন, ‘যে কেউ এই শহরে থাকবে, সে তরোয়ালে, দূর্ভিক্ষে ও মহামারীতে মারা যাবে; কিন্তু যে কেউ কলদীয়দের কাছে যাবে, সে বাঁচবে। সে লুটিত বস্তুর মত তার প্রাণ বাঁচাবে’।
“সদাপ্রভু এই কথা বলেন, ‘যে কেউ এই নগরে অবস্থান করবে, সে তরোয়াল, দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে মারা যাবে, কিন্তু যে কেউ ব্যাবিলনীয়দের কাছে যাবে, সে বেঁচে থাকবে। সে তার প্রাণ বাঁচাতে পারবে; সে বেঁচে থাকবে।’
3 সদাপ্রভু এই কথা বলেন, ‘এই শহর নিশ্চয়ই বাবিলের রাজার সৈন্যদলের হাতে সমর্পিত হবে; তারা এটি দখল করবে’।”
আর সদাপ্রভু এই কথা বলেন, ‘এই নগর অবশ্য ব্যাবিলনের রাজার সৈন্যদের হাতে সমর্পিত হবে। তারা নগরটি অধিকার করবে।’”
4 তখন শাসনকর্তারা রাজাকে বললেন, “এই লোকটিকে মেরে ফেলা হোক। কারণ এই ভাবে কথা বলে এই শহরে অবশিষ্ট সৈন্যদের ও লোকেরা হাত দুর্বল করছে। সে এই লোকদের নিরাপত্তার কথা প্রচার না করে, অমঙ্গলের কথা প্রচার করে।”
তখন রাজকর্মচারীরা রাজাকে বললেন, “এই লোকটিকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। সে যেসব কথা বলছে, তার দ্বারা এ নগরে অবশিষ্ট সৈন্যদের ও সেই সঙ্গে সব প্রজাকেও নিরাশ করছে। এই লোকটি এদের কোনো মঙ্গল চায় না, বরং তাদের বিনাশ দেখতে চায়।”
5 তাই রাজা সিদিকিয় বললেন, “সে তো তোমাদের হাতেই রয়েছে; কারণ রাজা তোমাদের বাধা দেবেন না।”
রাজা সিদিকিয় উত্তর দিলেন, “সে তোমাদেরই হাতে আছে। তোমাদের বিরুদ্ধে রাজা কিছুই করতে পারেন না।”
6 তখন তারা যিরমিয়কে ধরে রাজার ছেলে মল্কিয়ের কুয়োতে ফেলে দিল। এই কুয়োটি ছিল পাহারাদারদের উঠানের মধ্যে। তারা যিরমিয়কে দড়ি দিয়ে সেই কুয়োতে নামিয়ে দিল। সেখানে জল ছিল না, শুধু কাদা ছিল; আর যিরমিয় সেই কাদার মধ্যে ডুবে যেতে লাগলেন।
তাই তারা যিরমিয়কে নিয়ে রাজপুত্র মল্কিয়ের কুয়োতে রেখে দিল। সেই কুয়ো রক্ষীদের প্রাঙ্গণে ছিল। তারা দড়ি দিয়ে যিরমিয়কে নিচে নামিয়ে দিল। সেই কুয়োতে কোনো জল ছিল না, কেবলমাত্র কাদা ছিল। যিরমিয় সেই কাদায় প্রায় ডুবতে বসেছিলেন।
7 এখন রাজবাড়ীর একজন কূশীয় নপুংসক এবদ-মেলক শুনতে পেল যে, যিরমিয়কে কুয়োতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তখন রাজা বিন্যামীন ফটকে বসে ছিলেন।
কিন্তু কূশীয় এবদ-মেলক, একজন রাজপ্রাসাদের কর্মকর্তা, শুনতে পেলেন যে, তারা যিরমিয়কে সেই কুয়োর মধ্যে ফেলে দিয়েছে। রাজা যখন বিন্যামীন-দ্বারে বসেছিলেন,
8 এবদ-মেলক রাজবাড়ী থেকে বের হয়ে রাজাকে গিয়ে বলল,
এবদ-মেলক প্রাসাদের বাইরে রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে বললেন,
9 “হে আমার প্রভু মহারাজ, এই লোকেরা ভাববাদী যিরমিয়ের প্রতি যা করেছে, তা সমস্তই অন্যায়। তারা তাঁকে কুয়োতে ফেলে দিয়েছে; তিনি কুয়োয় ক্ষিদেতে মারা যাবেন, কারণ শহরে আর খাবার নেই।”
“হে আমার প্রভু মহারাজা, এই লোকেরা ভাববাদী যিরমিয়ের প্রতি যা করেছে, তা দুষ্টতার কাজ। তারা তাঁকে কুয়োর মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সেখানে তিনি অনাহারে মারা যাবেন, যখন নগরে কোনো রুটি থাকবে না।”
10 ১০ তখন রাজা কূশীয় এবদ-মেলককে আদেশ দিলেন, “এখান থেকে ত্রিশজন লোক সঙ্গে নাও এবং ভাববাদী যিরমিয়কে, তাঁর মৃত্যুর আগে তুলে আন।”
রাজা তখন কূশীয় এবদ-মেলককে আদেশ দিলেন, “এখান থেকে তোমার সঙ্গে ত্রিশজন লোককে নিয়ে যাও এবং ভাববাদী যিরমিয়কে, তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই কুয়ো থেকে তুলে বের করো।”
11 ১১ তখন এবদ-মেলক সেই লোকদের সঙ্গে নিয়ে রাজবাড়ীর ভাঁড়ার ঘরের নীচের গেল। সে সেখান থেকে কতগুলি পুরানো ও ছেঁড়া কাপড় নিয়ে দড়ি দিয়ে সেই কুয়োর মধ্যে যিরমিয়ের কাছে নামিয়ে দিল।
তাই এবদ-মেলক সেই লোকদের সঙ্গে নিয়ে প্রাসাদের ভাণ্ডারগৃহের নিচে একটি কক্ষে গেলেন। তিনি সেখান থেকে কিছু পুরোনো ন্যাক্‌ড়া ও ছেঁড়া কাপড় নিলেন এবং দড়ির সাহায্যে সেগুলি কুয়োর মধ্যে যিরমিয়ের কাছে নামিয়ে দিলেন।
12 ১২ কূশীয় এবদ-মেলক যিরমিয়কে বলল, “এই পুরানো ও ছেঁড়া কাপড়গুলি আপনি আপনার বগলের নিচে দিন।” যিরমিয় তাই করলেন।
কূশীয় এবদ-মেলক যিরমিয়কে বললেন, “এসব পুরোনো ন্যাকড়া ও ছেঁড়া কাপড় আপনার বগলে দিন, তা দড়ির যন্ত্রণা থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।” যিরমিয় তাই করলেন,
13 ১৩ তখন তারা দড়ি ধরে টেনে তাঁকে সেই কুয়ো থেকে তুলে আনল। যিরমিয় পাহারাদারদের উঠানে থাকলেন।
আর তারা সেই দড়ির সাহায্যে যিরমিয়কে টেনে কুয়োর বাইরে তুলে আনলেন। যিরমিয় রক্ষীদের প্রাঙ্গণে থেকে গেলেন।
14 ১৪ তারপর রাজা সিদিকিয় লোক পাঠিয়ে ভাববাদী যিরমিয়কে সদাপ্রভুর গৃহের তৃতীয় প্রবেশপথে ডেকে আনলেন। রাজা যিরমিয়কে বললেন, “আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই। আমার কাছ থেকে কিছুই লুকাবেন না।”
তারপর রাজা সিদিকিয়, ভাববাদী যিরমিয়ের কাছে লোক পাঠালেন এবং তাঁকে সদাপ্রভুর মন্দিরের তৃতীয় প্রবেশপথে ডেকে আনলেন। রাজা যিরমিয়কে বললেন, “আমি আপনার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই। আমার কাছ থেকে কোনো কিছু লুকাবেন না।”
15 ১৫ তখন যিরমিয় সিদিকিয়কে বললেন, “আমি যদি আপনাকে উত্তর দিই, আপনি কি আমাকে হত্যা করবেন না? আর আমি যদি আপনাকে পরামর্শ দিই, তবে আপনি আমার কথা শুনবেন না।”
যিরমিয় সিদিকিয়কে বললেন, “আমি যদি আপনাকে উত্তর দিই, আপনি কি আমাকে হত্যা করবেন না? আমি যদিও আপনাকে পরামর্শ দিই, আপনি আমার কথা শুনবেন না।”
16 ১৬ এতে রাজা সিদিকিয় গোপনে যিরমিয়ের কাছে শপথ করে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনাকে হত্যা করব না বা আপনাকে তাদের হাতে সমর্পণ করব না, যারা আপনার প্রাণের খোঁজ করছে।”
কিন্তু রাজা সিদিকিয় গোপনে যিরমিয়ের কাছে এই শপথ করলেন, “যিনি আমাদের শ্বাসবায়ু দিয়েছেন, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি, আমি আপনাকে হত্যা করব না বা যারা আপনার প্রাণনাশ করতে চায়, তাদের হাতেও আপনাকে সমর্পণ করব না।”
17 ১৭ তখন যিরমিয় সিদিকিয়কে বললেন, “সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন, ‘তুমি যদি বাবিলের রাজার প্রধানদের কাছে যাও, তবে তুমি বাঁচবে এবং এই শহরও পুড়িয়ে দেওয়া হবে না। তুমি ও তোমার পরিবার বাঁচবে।
তখন যিরমিয় সিদিকিয়কে বললেন, “বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন, ‘তুমি যদি ব্যাবিলনের রাজার কর্মাধ্যক্ষদের কাছে আত্মসমর্পণ করো, তোমার জীবন রক্ষা পাবে ও এই নগর অগ্নিদগ্ধ হবে না; তুমি ও তোমার পরিবার বেঁচে থাকবে।
18 ১৮ কিন্তু যদি বাবিলের রাজার সেনাপ্রধানদের কাছে না যাও, তবে এই শহর কলদীয়দের হাতে সমর্পিত হবে। তারা এটি পুড়িয়ে দেবে এবং আর তুমি নিজেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাবে না’।”
কিন্তু যদি তুমি ব্যাবিলনের রাজার কর্মাধ্যক্ষদের কাছে আত্মসমর্পণ না করো, এই নগর ব্যাবিলনীয়দের হাতে সমর্পিত হবে ও তারা এই নগর আগুনে পুড়িয়ে দেবে। আপনি নিজেও তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না।’”
19 ১৯ রাজা সিদিকিয় তখন যিরমিয়কে বললেন, “যে সব যিহূদী কলদীয়দের পক্ষে গেছে, আমি তাদের ভয় করি, কারণ হয়তো আমি তাদের হাতে সমর্পিত হবো, আর তারা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে।”
রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে বললেন, “আমি সেই ইহুদিদের ভয় পাই, যারা ব্যাবিলনীয়দের পক্ষে যোগ দিয়েছে, কারণ ব্যাবিলনীয়েরা হয়তো আমাকে তাদের হাতে সমর্পণ করবে ও তারা আমার প্রতি দুর্ব্যবহার করবে।”
20 ২০ যিরমিয় বললেন, “তারা আপনাকে সমর্পণ করবে না। আমি আপনাকে যা বলছি, সদাপ্রভুর সেই বার্তার বাধ্য হন। তাহলে আপনার ভাল হবে এবং আপনি বাঁচবে।
উত্তরে যিরমিয় বললেন, “তারা আপনাকে সমর্পণ করবে না। আমি আপনাকে যা বলি, তা পালন করে আপনি সদাপ্রভুর আদেশ মান্য করুন। তাহলে আপনার মঙ্গল হবে ও আপনার প্রাণরক্ষা পাবে।
21 ২১ কিন্তু যদি আপনি যেতে অস্বীকার করেন, তবে সদাপ্রভু আমার কাছে যা প্রকাশ করেছেন, তা এই:
কিন্তু যদি আপনি আত্মসমর্পণ করা অগ্রাহ্য করেন, তাহলে শুনুন, সদাপ্রভু আমার কাছে কী প্রকাশ করেছেন:
22 ২২ ‘যিহূদার রাজবাড়ীতে অবশিষ্ট স্ত্রীলোকদের বাবিলের রাজার সেনাপ্রধানদের সমর্পণ করা হবে। দেখ! সেই স্ত্রীলোকেরা আপনাকে বলবে, তোমার বন্ধুরা তোমাকে বিপথে নিয়ে গেছে, তোমাকে হারিয়ে দিয়েছে। তোমার পা কাদায় ডুবে গেছে; তোমার বন্ধুরা পালিয়ে গেছে’।
যিহূদার রাজার প্রাসাদে অবশিষ্ট যে সমস্ত স্ত্রীলোক আছে, তাদের ব্যাবিলনের রাজার কর্মকর্তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই স্ত্রীলোকেরা আপনার সম্বন্ধে বলবে, “‘তোমার নির্ভরযোগ্য সব বন্ধু, তোমাকে বিপথে চালিত করে পরাস্ত করেছে, তোমার পা কাদায় নিমজ্জিত হয়েছে; তোমার বন্ধুরা তোমাকে ত্যাগ করেছে।’
23 ২৩ আপনার সব স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের কলদীয়দের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনি নিজেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাবেন না। আপনি বাবিলের রাজার হাতে ধরা পড়বেন, আর এই শহর পুড়িয়ে দেওয়া হবে।”
“তোমার সব স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ব্যাবিলনীয়দের কাছে নিয়ে আসা হবে। তুমি নিজেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে না, কিন্তু ব্যাবিলনের রাজার হাতে ধৃত হবে; আর এই নগরকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে।”
24 ২৪ তখন সিদিকিয় যিরমিয়কে বললেন, “এই সব কথা কেউ যেন না জানে, তাহলে আপনি মারা যাবেন না।
তারপর সিদিকিয় যিরমিয়কে বললেন, “আমাদের এই বার্তালাপের কথা কেউ যেন জানতে না পারে, তা না হলে আপনার মৃত্যু হবে।
25 ২৫ যদি শাসনকর্তারা শোনে যে, আমি আপনার সঙ্গে কথা বলেছি যদি তারা এসে আপনাকে বলে, ‘তুমি রাজাকে যা বলেছ, তা আমাদের বল। আমাদের কাছ থেকে লুকাবে না, নাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব। রাজা তোমাকে যা বলেছেন তাও আমাদের বল’
যদি কর্মচারীরা শোনে যে, আমি আপনার সঙ্গে কথা বলেছি, আর তারা আপনার কাছে এসে বলে, ‘আমাদের বলুন, আপনি রাজাকে কী বলেছেন এবং রাজা আপনাকে কী বলেছেন; কোনো কথা আমাদের কাছে গোপন করবেন না, নইলে আমরা আপনাকে হত্যা করব,’
26 ২৬ তবে আপনি তাদের বলবেন, ‘আমি রাজাকে মিনতি করছিলাম, আমি মারার জন্য যেন যোনাথনের বাড়িতে ফেরত না পাঠান’।”
তাহলে তাদের বলবেন, ‘আমি রাজার কাছে মিনতি করছিলাম, তিনি যেন আমাকে পুনরায় যোনাথনের গৃহে মরবার জন্য না পাঠান।’”
27 ২৭ পরে শাসনকর্তারা সবাই যিরমিয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তাতে রাজা তাঁকে যে কথা বলতে আদেশ করেছিলেন যিরমিয় তাদের সেই সব উত্তরই দিলেন। তখন তারা তাঁর সাথে কথা বলা বন্ধ করল, কারণ রাজার সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা তারা শোনেনি।
সমস্ত কর্মচারী যিরমিয়ের কাছে এল ও তাঁকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল। রাজা যিরমিয়কে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন, তিনি তাদের সে সমস্তই বললেন। তাই তারা তাঁকে আর কিছু বলল না, কারণ রাজার সঙ্গে তাঁর কথোপকথন আর কেউই শুনতে পায়নি।
28 ২৮ যিরূশালেমের দখল হবার দিন পর্যন্ত যিরমিয় পাহারাদারদের সেই উঠানে থাকলেন।
আর জেরুশালেম অধিকৃত না হওয়া পর্যন্ত যিরমিয় রক্ষীদের প্রাঙ্গণে থেকে গেলেন। এভাবেই জেরুশালেমকে অধিকার করা হয়।

< যিরমিয়ের বই 38 >