< যিরমিয়ের বই 22 >

1 সদাপ্রভু এই কথা বলেন, যিহূদার রাজবাড়ীতে যাও এবং সেখানে এই কথা ঘোষণা কর।
সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “তুমি যিহূদার রাজার প্রাসাদে নেমে যাও ও সেখানে এই বার্তা ঘোষণা করো।
2 বল, হে যিহূদার রাজা, যে দায়ূদের সিংহাসনে বসে, সদাপ্রভুর বাক্য শোন। তোমরা, যারা তার দাস এবং তোমরা তার লোকেরা, যারা এই ফটকের মধ্য দিয়ে আসো, সবাই শোনো।
‘হে যিহূদার রাজা, তুমি যে দাউদের সিংহাসনে বসে থাকো, তুমি সদাপ্রভুর এই বাক্য শ্রবণ করো—তুমি, তোমার কর্মচারীরা এবং তোমার সব প্রজা, যারা এই দুয়ারগুলি দিয়ে প্রবেশ করো, সকলে শোনো।
3 সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তোমরা সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণ কর এবং যাকে অপহরণ করা হয়েছে, তাকে তার অত্যাচারীর হাত থেকে উদ্ধার কর। তোমাদের দেশে কোন অনাথ ও বিধবাদের সাথে মন্দ ব্যবহার কর না। অত্যাচার কর না বা এই জায়গায় নির্দোষের রক্তপাত কোরো না।
সদাপ্রভু এই কথা বলেন, যা কিছু যথার্থ ও ন্যায়সংগত, তোমরা তাই করো। যাদের সবকিছু হরণ করা হয়েছে, তাদের অত্যাচারীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করো। বিদেশি, পিতৃহীন বা বিধবাদের প্রতি কোনো অন্যায় বা হিংস্রতার কাজ কোরো না এবং এই স্থানে কোনো নির্দোষ ব্যক্তির রক্তপাত কোরো না।
4 কারণ তোমরা যদি এই পালন কর, তবে দায়ূদের সিংহাসনে বসা রাজারা রথে ও ঘোড়ায় চড়ে এই রাজবাড়ীর ফটক দিয়ে ভিতরে আসবে। সে, তাদের দাসেরা ও তার লোকজন!
কারণ, যদি তোমরা এসব আদেশ যত্নের সঙ্গে পালন করো, তাহলে দাউদের সিংহাসনে যারা বসে, সেইসব রাজা রথে বা অশ্বদের উপরে আরোহণ করে এই প্রাসাদের দুয়ারগুলি দিয়ে ভিতরে আসবে। তাদের কর্মচারীরা ও তাদের লোকজন তাদের সঙ্গে থাকবে।
5 কিন্তু যদি তোমরা আমার এই সব কথা না শোনো, যা আমি প্রচার করেছি, এটি সদাপ্রভুর ঘোষণা, তবে এই রাজবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাবে।
কিন্তু যদি তোমরা এসব আদেশ পালন না করো, সদাপ্রভু বলেন, আমি নিজের নামেই শপথ করে বলছি যে, এই স্থান এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।’”
6 কারণ যিহূদার রাজবাড়ির সম্বন্ধে সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “তুমি আমার কাছে গিলিয়দ এবং লিবানোনের চূড়ার মত। তবুও আমি তোমাকে মরুভূমি, লোকশূন্য শহরগুলির মত করবো।
কারণ সদাপ্রভু যিহূদার রাজার এই প্রাসাদ সম্পর্কে এই কথা বলেন: “তুমি যদিও আমার কাছে গিলিয়দের মতো, লেবাননের শিখরচূড়ার মতো, আমি তোমাকে নিশ্চয়ই পতিত জমির তুল্য করব, তুমি হবে জনবসতিহীন নগরের মতো।
7 কারণ আমি তোমার বিরুদ্ধে ধ্বংসকারীদের মনোনীত করেছি! তারা তাদের অস্ত্র দিয়ে তোমার দামী এরস গাছগুলি কেটে আগুনে ফেলবে।
আমি তোমার বিরুদ্ধে বিনাশকদের প্রেরণ করব, প্রত্যেক ব্যক্তি তার অস্ত্র নিয়ে আসবে, তারা তোমাদের মনোরম সিডার গাছগুলি কেটে আগুনে নিক্ষেপ করবে।
8 তখন বিভিন্ন জাতির লোকেরা এই শহরের পাশ দিয়ে যাবে। প্রত্যেকে পাশের জনকে বলবে, ‘এই মহান শহরের প্রতি কেন সদাপ্রভু এমন করলেন?’
“বহু দেশ থেকে আগত লোকেরা, এই নগরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘সদাপ্রভু কেন এই মহানগরের প্রতি এরকম আচরণ করেছেন?’
9 অপর লোকেরা উত্তর দেবে, ‘কারণ তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর চুক্তি ত্যাগ করে অন্য দেবতার কাছে নত হত এবং তাদের উপাসনা করত।’
তাদের এই উত্তর দেওয়া হবে: ‘কারণ তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিয়ম ত্যাগ করেছিল এবং অন্যান্য দেবদেবীর উপাসনা ও সেবা করেছিল।’”
10 ১০ তোমরা মৃতদের জন্য কেঁদো না। তার জন্য বিলাপ কোরো না। কিন্তু তুমি অবশ্যই তাদের জন্য কাঁদ, যে বন্দীদশায় গিয়েছে, কারণ সে আর কখনও ফিরে আসবে না এবং তার জন্মদেশ আর দেখতে পাবে না।”
তোমরা মৃত রাজার জন্য কেঁদো না বা তাঁর চলে যাওয়ার জন্য বিলাপ কোরো না; বরং তার জন্য তীব্র রোদন করো, যে নির্বাসিত হয়েছে, কারণ সে আর কখনও ফিরে আসবে না, বা তার জন্মভূমি আর দেখতে পাবে না।
11 ১১ কারণ সদাপ্রভু যিহূদার রাজা যোশিয়ের ছেলে শল্লুম সম্বন্ধে এই কথা বলেন, যিনি তাঁর বাবার পরে রাজা হয়েছিলেন; “তিনি এই জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছেন এবং তিনি আর ফিরে আসবেন না।
কারণ, যোশিয়ের পুত্র শল্লুম, যে যিহূদার রাজারূপে তার বাবার উত্তরসূরি হয়েছিল, কিন্তু এই স্থান থেকে যাকে চলে যেতে হয়েছে, তার সম্পর্কে সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “সে আর কখনও ফিরে আসবে না।
12 ১২ যেখানে সে বন্দী হয়ে আছে সেখানেই সে মারা যাবে এবং সে এই দেশ আর কখনো দেখতে পাবে না।”
তাকে যেখানে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে; সে এই দেশ আর কখনও দেখতে পাবে না।”
13 ১৩ “ধিক সে! যে অধার্মিকতা দিয়ে তার বাড়ি বানায় এবং অন্যায় দিয়ে বড় বড় ঘরগুলি তৈরী করে। যার জন্য অন্যরা কাজ করে, কিন্তু যে তাদের মজুরী দেয় না।
“ধিক্ সেই মানুষকে, যে অধার্মিকতায় তার প্রাসাদ নির্মাণ করে, অন্যায়ের সঙ্গে তার উপরতলার কক্ষ তৈরি করে, যে বিনামূল্যে তার স্বদেশি লোকদের কাজ করায়, তাদের পরিশ্রমের কোনো মজুরি দেয় না।
14 ১৪ ধিক তাকে! যে লোক বলে, ‘আমি নিজের জন্য একটি উঁচু বাড়ি তৈরী করব এবং চওড়া উঁচু ঘর বানাবো,’ সে নিজের জন্য বড় বড় জানলা বানায় এবং এরস কাঠ দিয়ে ঘর বানায় এবং তার সমস্ত কিছুতে লাল রং করে।
সে বলে, ‘আমি নিজের জন্য এক বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করব, যার উপরতলার ঘরগুলিতে যথেষ্ট প্রশস্ত স্থান থাকবে।’ তাই সে তার মধ্যে বড়ো বড়ো জানালা বসায়, তার তক্তাগুলি হয় সিডার-কাঠের এবং লাল রং দিয়ে সে তা রাঙিয়ে দেয়।
15 ১৫ এটাই কি তোমাকে একজন ভালো রাজা বানায়, যে তুমি এরস গাছের তক্তা চেয়েছ? তোমার বাবাও কি ভোজন পান করত না, তবুও সুবিচার করত ও ন্যায়পরায়ন কি ছিলনা? তাই তার মঙ্গল হল।
“কিন্তু সুন্দর সিডার-কাঠের প্রাসাদ থাকলেই কেউ মহান রাজা হয় না! তোমার বাবা কি যথেষ্ট ভোজনপান করত না? যা যথার্থ ও ন্যায়সংগত, সে তাই করত, তাই তার পক্ষে সবকিছু ভালোই হয়েছিল।
16 ১৬ সে গরিব ও অভাবগ্রস্ত লোকেদের পক্ষে বিচার করত। সবকিছু ভালো চলছিল। এটাই কি আমাকে জানা নয়?” এটি সদাপ্রভুর ঘোষণা।
সে দরিদ্র ও নিঃস্বদের পক্ষসমর্থন করত, তাই সবকিছু ভালোই হয়েছিল। আমাকে জানার অর্থ কি তাই নয়?” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
17 ১৭ কিন্তু তোমার চোখে ও অন্তরে অন্য লোককে নির্যাতন ও চূর্ণবিচূর্ণ করার জন্য অন্যায় লাভ, নির্দোষের রক্তপাত ছাড়া আর কিছু নেই।
“কিন্তু তোমাদের চোখ ও তোমাদের মন কেবলমাত্র অন্যায্য লাভের প্রতি নিবদ্ধ থাকে, তোমরা নির্দোষের রক্তপাত করে থাকো, অত্যাচার ও অন্যায় শোষণ।”
18 ১৮ তাই যিহূদার রাজা যোশিয়ের ছেলে যিহোয়াকীমের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “তারা তার জন্য ‘হে, আমার ভাই!’ বা ‘হে, আমার বোন’ বলে বিলাপ করবে না। তারা তার জন্য ‘হে, প্রভু!’ ‘হায়, তাঁর মহিমা!’ বলেও বিলাপ করবে না।
সেই কারণে, যিহূদার রাজা যোশিয়ের পুত্র যিহোয়াকীম সম্পর্কে সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “‘হায়, আমার ভাই! হায়, আমার বোন!’ বলে তার জন্য তারা বিলাপ করবে না; তারা তার জন্য এই বলে শোক করবে না, ‘হায়, আমার মনিব! হায়, তার চোখ ঝলসানো জৌলুস!’
19 ১৯ গাধার কবরের মত তাকে কবর দেওয়া হবে, তাকে টেনে তোলা হবে এবং যিরূশালেমের ফটকের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে।
গাধার মতো তার কবর হবে, লোকে তাকে টেনে নিয়ে নিক্ষেপ করবে জেরুশালেমের ফটকগুলির বাইরে।”
20 ২০ তুমি লিবানোনের পর্বতে ওঠো এবং চিৎকার কর। তোমার গলার স্বর বাশনে শোনা যাক। অবারীম পর্বত থেকে চিৎকার কর, কারণ তোমার সব বন্ধুরা ধ্বংস হয়ে গেছে।
“তুমি লেবাননে উঠে যাও ও গিয়ে চিৎকার করো, বাশনে তোমার কণ্ঠস্বর শোনা যাক, তুমি অবারীম থেকে চিৎকার করো, কারণ তোমার সমস্ত মিত্রপক্ষ চূর্ণ হয়েছে।
21 ২১ তুমি যখন নিরাপদে ছিলে, তখন আমি তোমাকে বলেছিলাম, কিন্তু তুমি বলেছিলে, ‘আমি শুনব না।’ যুবক বয়স থেকেই তোমার এই রকম ব্যবহার, কারণ তুমি আমার কথা শোনো নি।
তুমি যখন নিজেকে নিরাপদ মনে করছিলে, আমি তোমাকে সাবধান করেছিলাম, কিন্তু তুমি বলেছিলে, ‘আমি শুনব না!’ তোমার যৌবনকাল থেকে এই ছিল তোমার অভ্যাস, তুমি আমার কথা শোনোনি।
22 ২২ বাতাস তোমার সব পালকদের তাড়িয়ে দেবে এবং তোমার বন্ধুরা বন্দিত্বে যাবে। তখন তুমি তোমার হঠাত লজ্জিত হবে ও তোমার মন্দ কাজের জন্য অপমানিত হবে।
বাতাস তোমার সমস্ত পালককে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, তোমার মিত্রশক্তি সকলে নির্বাসিত হবে। তখন তোমার সব দুষ্টতার জন্য, তুমি লজ্জিত ও অপমানিত হবে।
23 ২৩ রাজা, তুমি যে লিবানোনের অরন্যে বসবাস করো, তুমি যে এরস বনে বাস করো, যখন তুমি প্রসব বেদনার মত যন্ত্রণা তোমার উপরে আসবে তখন কিভাবে তোমাকে দয়া করা হবে!”
তোমরা যারা লেবাননে বসবাস করো, যারা সিডার-কাঠের অট্টালিকায় বাসা বেঁধে থাকো, স্ত্রীলোকের প্রসববেদনার মতো বেদনা যখন তোমাদের ঘিরে ধরবে, তখন তোমরা কেমন আর্তনাদ করবে!
24 ২৪ “যেমন আমি জীবিত,” এটি সদাপ্রভুর ঘোষণা, এমনকি যদি তুমি, যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের ছেলে যিহোয়াখীন, আমার ডান হাতের সীলমোহর থেকে, আমি তোমাকে খুলে ফেলে দিতাম।
“আমারই প্রাণের দিব্যি,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “যদি তুমি যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের পুত্র যিহোয়াখীন, আমার ডান হাতের সিলমোহর দেওয়ার আংটি হতে, তাহলেও আমি তোমাকে খুলে ফেলে দিতাম।
25 ২৫ কারণ আমি তোমাকে তাদের হাতে তুলে দেব, যারা তোমার জীবনের খোঁজ করে এবং বাবিলের রাজা নবূখদনিৎসর ও কলদীয়দের হাতে দেব, যাদের তুমি ভয় পাও।
যারা তোমার প্রাণনাশ করতে চায়, যাদের তুমি ভয় করো, সেই ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজার ও ব্যাবিলনীয়দের হাতে আমি তোমাকে সমর্পণ করব।
26 ২৬ আমি তোমাকে ও তোমার মা, যে তোমাকে জন্ম দিয়েছে, সেই মাকে অন্য দেশে ছুঁড়ে ফেলে দেব, যেখানে তুমি জন্মাও নি। সেখানে তোমরা মারা যাবে।
আমি তোমাকে ও তোমার মাকে, যে তোমার জন্ম দিয়েছিল, অন্য এক দেশে নিক্ষেপ করব, যেখানে তোমাদের কারও জন্ম হয়নি, অথচ সেখানে তোমরা উভয়েই মরবে।
27 ২৭ এই দেশে তারা ফিরে আসতে চাইবে, তারা এখানে ফিরে আসতে পারবে না।
যে দেশে তোমরা ফিরে আসতে চাও, সেখানে কখনও তোমরা আর ফিরে আসতে পারবে না।”
28 ২৮ এটা কি একটি তুচ্ছ এবং ভাঙ্গা পাত্র? এই যিহোয়াখীন কি এমন একজন যে কাউকে সন্তুষ্ট করে না? কেন তাকে ও তার সন্তানদের একটি দেশে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে, যা তাদের জানে না?
এই যিহোয়াখীন কি অবজ্ঞাত, ভাঙা পাত্র, এমন এক জিনিস যা কেউ চায় না? কেন তাকে ও তার সন্তানদের নিক্ষেপ করা হবে, এমন এক দেশে, যা তাদের অপরিচিত?
29 ২৯ দেশ, দেশ, দেশ! সদাপ্রভুর বাক্য শোন। সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “যিহোয়াখীন এর সম্মন্ধে এই কথা লেখ, সে সন্তানহীন ছিল।
এই দেশ, দেশ, দেশ, তুমি সদাপ্রভুর বাক্য শোনো!
30 ৩০ সে তার জীবনকালে উন্নতি করতে পারবে না এবং তার কোন সন্তানও সফল হবে না, তাদের কেউ দায়ূদের সিংহাসনে বসবে না বা যিহূদার উপর রাজত্ব করবে না।”
সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “এরকম লিখে নাও, এই লোকটি যেন সন্তানহীন, এমন মানুষ, যে তার জীবনকালে সমৃদ্ধিলাভ করবে না, কারণ তার কোনো সন্তান কৃতকার্য হবে না, তাদের কেউই দাউদের সিংহাসনে বসবে না বা যিহূদায় আর শাসন করবে না।”

< যিরমিয়ের বই 22 >