< যিরমিয়ের বই 20 >

1 যিরমিয় যখন সদাপ্রভুর গৃহের সামনে ভাববাণী করছিলেন তখন ইম্মেরের ছেলে পশহূর যাজক, যিনি একজন প্রধান কর্মচারী ছিলেন, তিনি তা শুনলেন।
যিরমিয় যখন এসব ভাববাণী বলছিলেন, তখন ইম্মেরের পুত্র, যাজক পশ্‌হূর, যিনি সদাপ্রভুর মন্দিরের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন,
2 তিনি যিরমিয় ভাববাদীকে মারধর করলেন এবং সদাপ্রভুর গৃহের বিন্যামীন ফটকের কাছে উঁচু জায়গায় ভাঁড়ার ঘরে আটকে রাখলেন।
তিনি ভাববাদী যিরমিয়কে প্রহার করে সদাপ্রভুর মন্দিরের বিন্যামীনের উচ্চতর ফটকে হাড়িকাঠে বদ্ধ করে রাখলেন।
3 তার পরের দিন পশহূর সেই ভাঁড়ার ঘর থেকে যিরমিয়কে নিয়ে এলেন। তখন যিরমিয় তাঁকে বললেন, “সদাপ্রভু তোমার নাম পশহূর রাখেন নি, কিন্তু তুমি মাগোর মিষাবীব।
পরের দিন, পশ্‌হূর যখন তাঁকে হাড়িকাঠ থেকে মুক্ত করলেন, যিরমিয় তাঁকে বললেন, “সদাপ্রভু তোমার নাম পশ্‌হূর রাখেননি, কিন্তু মাগোরমিষাবীব রেখেছেন।
4 কারণ সদাপ্রভু এই কথা বলেন, ‘দেখ, আমি তোমাকে একটি ভীষণ ভয়ের পাত্র করব, তোমার ও তোমার সমস্ত প্রিয়জনদের কাছে; কারণ তারা সবাই তাদের শত্রুদের তরোয়ালের আঘাতে মারা যাবে এবং তুমি নিজের চোখে তা দেখবে। সমস্ত যিহূদাকে আমি বাবিলের রাজার হাতে তুলে দেব। সে তাদের বাবিলে বন্দী করবে বা তাদের তরোয়াল নিয়ে আক্রমণ করবে।
কারণ সদাপ্রভু এই কথা বলেন: ‘আমি তোমাকে তোমার নিজেরই কাছে ও তোমার সমস্ত বন্ধুর কাছে আতঙ্কস্বরূপ করব; তুমি নিজের চোখে শত্রুদের তরোয়ালের আঘাতে তাদের পতন দেখতে পাবে। আমি সমস্ত যিহূদাকে ব্যাবিলনের রাজার হাতে সমর্পণ করব, সে তাদের ব্যাবিলনে নির্বাসিত করবে, অথবা তরোয়াল দ্বারা মেরে ফেলবে।
5 আমি এই শহরের সমস্ত ধনদৌলত, তার সমস্ত দামী জিনিস এবং যিহূদার রাজাদের সমস্ত সম্পদ তাকে দেব। আমি সেই সমস্ত জিনিস তোমার শত্রুদের হাতে তুলে দেব এবং তারা সেগুলো দখল করবে। তারা সেগুলো বাবিলে নিয়ে যাবে।
আমি এই নগরের সমস্ত ঐশ্বর্য তাদের শত্রুদের হাত তুলে দেব—এর সমস্ত উৎপন্ন দ্রব্য, এর সমস্ত মূল্যবান জিনিস এবং যিহূদার রাজাদের সমস্ত ধনসম্পদ তুলে দেব। তারা লুন্ঠিত বস্তুরূপে সেগুলি বহন করে ব্যাবিলনে নিয়ে যাবে।
6 কিন্তু তুমি, পশহূর এবং তোমার বাড়ির সবাই বন্দিত্বে যাবে। তোমরা বাবিলে যাবে ও সেখানে মারা যাবে। তুমি এবং তোমার প্রিয়জনেরা যারা মিথ্যা ভাববাণী করেছ, তারাই সেখানে কবরে যাবে’।”
আর পশ্‌হূর তুমি ও তোমার গৃহে বসবাসকারী প্রত্যেকে ব্যাবিলনে নির্বাসিত হবে। সেখানেই তোমার ও তোমার বন্ধুদের, যাদের কাছে তুমি মিথ্যা ভাববাণী বলেছ, তাদের সকলের মৃত্যু ও কবর হবে।’”
7 হে সদাপ্রভু! তুমি আমাকে প্ররোচনা করেছ। আমি প্ররোচিত হলাম। তুমি আমাকে বন্দী করেছ এবং পরাজিত করেছ। আমি ঠাট্টার পাত্র হয়েছি; আমার প্রতিটি দিন ঠাট্টায় পরিপূর্ণ।
হে সদাপ্রভু, তুমি আমার বিশ্বাস উৎপন্ন করেছ, তাই আমি বিশ্বাস করেছি; তুমি আমার উপরে শক্তি প্রয়োগ করে বিজয়ী হয়েছ। সমস্ত দিন আমাকে উপহাস করা হয়; প্রত্যেকে আমাকে বিদ্রুপ করে।
8 যতবার আমি কথা বলি, আমি চিত্কার করি ও অত্যাচার ও ধ্বংস প্রচার করি। সদাপ্রভুর বাক্য প্রতিদিন আমার জন্য ভর্ত্সনা ও উপহাস নিয়ে আসে।
যখনই আমি কথা বলি, আমি চিৎকার করে উঠি, আমি হিংস্রতা ও ধ্বংসের কথা ঘোষণা করি। তাই সদাপ্রভুর বাক্য আমার কাছে সমস্ত দিন অপমান ও দুর্নাম নিয়ে আসে।
9 যদি আমি বলি, আমি সদাপ্রভুর কথা আর চিন্তা করব না; আমি তাঁর নাম ঘোষণা করব না, তবে এটা আমার অন্তরে জ্বলন্ত আগুনের মত আমার হাড়ের মধ্যে বদ্ধ হয়ে থাকে। তাই আমি তা ধরে রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি; কিন্তু আমি সক্ষম হই না।
কিন্তু আমি যদি বলি, “আমি তাঁর কথা উল্লেখ করব না বা তাঁর নামে আর কিছু বলব না,” তাঁর বাক্য আমার হৃদয়ে যেন আগুনের মতো হয়, যেন আমার হাড়গুলির মধ্যে দাহকারী আগুন বদ্ধ হয়। আমি তা অন্তরে রেখে ক্লান্ত হই, সত্যিসত্যিই আমি তা ধরে রাখতে পারি না।
10 ১০ আমার চারদিকের লোকেদের থেকে আতঙ্কের গুজব শুনেছি; অভিযোগ কর, আমরা অবশ্যই অভিযোগ করব। আমার কাছের লোকেরা আমার পতিত হওয়া অপেক্ষায় থাকে, হয়তো তাকে ঠকানো হবে, যদি তাই হয়, আমরা তাকে পরাজিত করব এবং তার উপর প্রতিশোধ নেব।
আমি অনেক ফিসফিস ধ্বনি শুনি, “সবদিকেই আতঙ্কের পরিবেশ! নালিশ করো! এসো তার নামে নালিশ করি!” আমার সব বন্ধু আমার স্খলনের অপেক্ষায় আছে। তারা বলে, “হয়তো সে প্রতারিত হবে; তখন আমরা তার উপরে জয়ী হব, আর তার উপরে আমাদের প্রতিশোধ নেব।”
11 ১১ কিন্তু সদাপ্রভু আমার সঙ্গে শক্তিশালী যোদ্ধার মত আছেন, তাই আমার অত্যাচারীরা হোঁচট খাবে এবং জয়ী হবে না। তারা আমাকে হারাতে পারবে না। তারা খুব লজ্জিত হবে; কারণ তারা সফল হবে না। তাদের লজ্জা শেষ হবে, কখনো ভুলবে না।
কিন্তু এক পরাক্রান্ত বীরের মতো সদাপ্রভু আমার সঙ্গে আছেন; তাই আমার নির্যাতনকারীরা হোঁচট খাবে, তারা জয়ী হবে না। তারা ব্যর্থ হবে এবং সম্পূর্ণভাবে অপমানিত হবে; তাদের অসম্মান কখনও ভোলা যাবে না।
12 ১২ কিন্তু তুমি, বাহিনীগণের সদাপ্রভু; তুমি, যিনি ধার্মিক লোকদের পরীক্ষা করেন এবং যিনি মন ও অন্তর দেখেন, তাদের উপর তোমার প্রতিশোধ আমাকে দেখতে দাও, কারণ আমি আমার অভিযোগ তোমাকে জানিয়েছি।
হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তুমি যে ধার্মিকদের পরীক্ষা করে থাকো এবং তাদের হৃদয় ও মনের অনুসন্ধান করো, শত্রুদের উপরে তোমার প্রতিশোধ নেওয়া আমাকে দেখতে দাও, কারণ তোমারই কাছে আমি আমার অভিযোগের বিষয় জানিয়েছি।
13 ১৩ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে গান কর! সদাপ্রভুর প্রশংসা কর! কারণ তিনি দুষ্টদের হাত থেকে নিপীড়িত ব্যক্তির প্রাণকে উদ্ধার করেন।
সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে গান গাও! সদাপ্রভুরই উদ্দেশ্যে প্রশংসা করো! তিনি দুষ্টদের হাত থেকে অভাবগ্রস্তদের প্রাণ উদ্ধার করেন।
14 ১৪ আমি যেদিন জন্মেছিলাম সেই দিন টি অভিশপ্ত হোক। যেদিন আমার মা আমাকে প্রসব করেছিলেন সেই দিন টি আশীর্বাদ বিহীন হোক।
আমার যেদিন জন্ম হয়েছিল, সেদিনটি অভিশপ্ত হোক! যেদিন আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন, সেদিনটি আশীর্বাদবিহীন হোক!
15 ১৫ সেই লোক অভিশপ্ত হোক যে আমার বাবাকে খবর দিয়ে আনন্দিত করেছিল যে, তোমার একটি ছেলে হয়েছে।
সেই মানুষ অভিশপ্ত হোক, যে আমার বাবার কাছে সংবাদ বহন করেছিল, যে তাঁকে এই কথা বলে ভীষণ আনন্দ দিয়েছিল, “আপনার এক সন্তানের জন্ম হয়েছে—এক পুত্রসন্তান!”
16 ১৬ এই লোক সেই শহরের মত হোক, যাকে সদাপ্রভু করুণা না করে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। সে ভোরে সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি শুনুক এবং দুপুরে যুদ্ধের জন্য চিত্কার শুনুক।
সে মানুষ সেই নগরগুলির মতো হোক, সদাপ্রভু যাদের নির্মমরূপে উৎপাটিত করেছেন। সে সকালে শুনুক বিলাপের রব, দুপুরবেলা শুনুক রণহুঙ্কার।
17 ১৭ যদি এমন হতো, কারণ সদাপ্রভু, তিনি আমার মায়ের গর্ভে কেন আমাকে হত্যা করেননি? আমার মায়ের গর্ভ আমার কবর হত, তাহলে চিরকাল তিনি গর্ভবতী থাকতেন।
কারণ তিনি আমাকে গর্ভের মধ্যে মেরে ফেলেননি, তাহলে আমার মা-ই হতেন আমার কবরস্থান, তাঁর জঠর নিত্য গুরুভার থাকত।
18 ১৮ কষ্ট আর যন্ত্রণা দেখতে কেন আমি গর্ভ থেকে বের হলাম, তাই আমার জীবন লজ্জায় পরিপূর্ণ?
কষ্টসমস্যা ও দুঃখ দেখার জন্য, লজ্জায় আমার জীবন কাটানোর জন্য, কেন আমি গর্ভ থেকে নির্গত হয়েছি?

< যিরমিয়ের বই 20 >