< যিশাইয় ভাববাদীর বই 51 >

1 তোমরা যারা ধার্মিকতার অনুগামী, যারা সদাপ্রভুর খোঁজ করছ, তোমরা শোন। যে পাথর থেকে তোমরা খোদিত হয়েছে এবং যে খাদ থেকে তোমাদেরকে খোঁড়া হয়েছে তার দিকে তাকিয়ে দেখ।
“তোমরা যারা ধার্মিকতার পিছনে ছুটে চলো ও সদাপ্রভুর অন্বেষণ করো, তোমরা আমার কথা শোনো, সেই শৈলের দিকে তাকাও, যা থেকে তোমাদের কেটে নেওয়া হয়েছে, সেই পাথরের খাদের দিকে তাকাও, যেখান থেকে তোমাদের তক্ষণ করা হয়েছে;
2 তোমাদের পূর্বপুরুষ এবং তোমাদের যে জন্ম দিয়েছে সেই সারার দিকে তাকিয়ে দেখ; কারণ যখন সে একাকী ছিল তখন তাকে ডেকেছিলাম। আমি তাকে আশীর্বাদ করলাম এবং সংখ্যায় অনেক করলাম।
তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহামের দিকে তাকাও ও সারার দিকে, যিনি তোমাদের জাতিকে জন্ম দিয়েছেন। আমি যখন তাকে ডেকেছিলাম, সে মাত্র একজন ছিল, আমি তাকে আশীর্বাদ করে বহুসংখ্যক করেছি।
3 হ্যাঁ, সদাপ্রভু সিয়োনকে সান্ত্বনা দেবেন; তিনি তার সব ধ্বংসস্থানগুলিকে সান্ত্বনা দেবেন; তার মরুভূমিকে তিনি এদোন বাগানের মত করবেন এবং তার শুকনো ভূমিকে যর্দ্দন নদীর উপত্যকার পাশে সদাপ্রভুর বাগানের মত করবেন। তার মধ্যে আনন্দ, সুখ, ধন্যবাদ ও গানের আওয়াজ পাওয়া যাবে।
সদাপ্রভু নিশ্চয়ই সিয়োনকে সান্ত্বনা দেবেন ও তার সমস্ত ধ্বংসস্তূপগুলির প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন; তিনি তার মরুপ্রান্তরগুলিকে এদন উদ্যানের মতো করবেন, তার জনশূন্য ভূমিকে সদাপ্রভুর উদ্যানের ন্যায় করবেন। তার মধ্যে পাওয়া যাবে আনন্দ ও উৎফুল্লতা, পাওয়া যাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও সংগীতের ঝংকার।
4 “হে আমার লোকেরা, আমার প্রতি মনোযোগী হও এবং হে আমার লোকেরা, আমার কথায় শোন! কারণ আমি এক নির্দেশ জারি করব এবং আমি আমার জাতিদের জন্য ন্যায়বিচারকে আলোর মত করব।
“আমার প্রজারা, আমার কথা শোনো; আমার জাতির লোকেরা, আমার কথায় কান দাও: আমার কাছ থেকে বিধান নির্গত হবে; আমার ন্যায়বিচার সব জাতির কাছে আলোস্বরূপ হবে।
5 আমার ধার্ম্মিকতা কাছাকাছি; আমার পরিত্রান বের হয়ে আসবে এবং আমার হাত জাতিদের বিচার করবে; উপকূলগুলি আমার জন্য অপেক্ষা করবে; আমার হাতের জন্য তারা সাগ্রহে অপেক্ষা করবে।
আমার ধর্মশীলতা দ্রুত নিকটে আসছে, আমার পরিত্রাণ সন্নিকট হল, আমারই বাহু জাতিসমূহের কাছে ন্যায়বিচার নিয়ে আসবে। দ্বীপসমূহ আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করবে এবং আমার শক্তি প্রদর্শনের প্রত্যাশায় থাকবে।
6 তোমরা আকাশের দিকে চোখ তোল এবং নীচে পৃথিবীর দিকে তাকাও। কারণ আকাশ ধোঁয়ার মত অদৃশ্য হয়ে যাবে, পৃথিবী কাপড়ের মত পুরানো হয়ে যাবে এবং তার বাসিন্দারা পতঙ্গের মত মারা যাবে। কিন্তু আমার পরিত্রান অনন্তকাল থাকবে এবং আমার ধার্ম্মিকতা কাজ থামাবে না।
তোমাদের চোখ আকাশমণ্ডলের দিকে তোলো, নিচে পৃথিবীর দিকে তাকাও; ধোঁয়ার মতোই আকাশমণ্ডল অন্তর্হিত হবে, পোশাকের মতোই পৃথিবী জীর্ণ হবে এবং মাছির মতো এর অধিবাসীরা মারা যাবে। কিন্তু আমার দেওয়া পরিত্রাণ চিরস্থায়ী হবে, আমার ধর্মশীলতার শাসন কখনও ব্যর্থ হবে না।
7 তোমরা যারা ধার্ম্মিকতা জান, তোমরা যারা যাদের হৃদয়ে আমার নিয়ম আছে, তোমরা শোন। তোমরা মানুষের অপমানকে ভয় কর না, তাদের অপব্যবহারের দ্বারা হতাশ হয়ো না,
“যা ন্যায়সংগত, তোমরা যারা তা জানো, আমার কথা শোনো, আমার বিধান তোমাদের মধ্যে যাদের অন্তরে আছে, তারা শোনো: মানুষের করা দুর্নাম থেকে ভয় পেয়ো না, কিংবা তাদের করা অপমান থেকে আতঙ্কগ্রস্ত হোয়ো না।
8 কারণ কীট কাপড়ের মত তাদেরকে খেয়ে ফেলবে এবং পোকা তাদেরকে পশমের মত খয়ে ফেলবে; কিন্তু আমার ধার্ম্মিকতা চিরকাল থাকবে এবং আমার পরিত্রান বংশের পর বংশ ধরে চিরকাল থাকবে।”
কারণ পোশাকের মতোই কীটপতঙ্গ তাদের খেয়ে ফেলবে; পশমের মতো কীট তাদের গ্রাস করবে। কিন্তু আমার ধার্মিকতা চিরকাল থাকবে, আমার পরিত্রাণ বংশপরম্পরায় অস্তিত্বমান থাকবে।”
9 জাগো, জাগো, নিজেকে শক্তির সঙ্গে পরিধান কর, হে সদাপ্রভুর শক্তিশালী হাত। যেমন তুমি আগেকার দিনের উঠেছিলে, পুরানো দিনের বংশের পর বংশ ধরে উঠেছিলে। তুমি কি রহবকে টুকরো টুকরো করে কাটনি? সমুদ্রের দৈত্যকে কি তুমি চূর্ণ করনি?
জাগো, জাগো! হে সদাপ্রভুর বাহু, তুমি স্বয়ং শক্তি পরিহিত হও; অতীতকালের মতোই তুমি জেগে ওঠো, যেমন পূর্বে বংশপরম্পরায় তুমি করেছিলে। তুমিই কি রহবকে খণ্ডবিখণ্ড করোনি, যিনি সেই বিরাট দানবকে বিদ্ধ করেছিলেন?
10 ১০ তুমি কি সমুদ্রের, বিশাল গভীরের জল শুকিয়ে ফেলনি এবং তুমি কি সমুদ্রের গভীর জায়গাকে রাস্তা তৈরী করনি যাতে তোমার মুক্তিপ্রাপ্ত লোকেরা পার হয়ে যায়?
তুমিই কি সমুদ্রকে, সেই মহাজলধির জলরাশিকে শুষ্ক করোনি? যিনি সমুদ্রের গভীরে একটি পথ প্রস্তুত করেছিলেন, যেন মুক্তিপ্রাপ্ত লোকেরা তা পার হয়ে যায়?
11 ১১ সদাপ্রভুর মুক্তি পাওয়া লোকেরা ফিরে আসবে এবং আনন্দের চিত্কারের সঙ্গে সিয়োনে আসবে এবং চিরকাল স্থায়ী আনন্দ তাদের মাথায় থাকবে এবং সুখ ও আনন্দ তাদের অতিক্রম করবে এবং দুঃখ ও শোক পালিয়ে যাবে।
মুক্তিপণ দেওয়া সদাপ্রভুর লোকেরা প্রত্যাবর্তন করবে। তারা গান গাইতে গাইতে সিয়োনে প্রবেশ করবে; তাদের মাথায় থাকবে চিরস্থায়ী আনন্দ-মুকুট। আমোদ ও আনন্দে তারা প্লাবিত হবে, দুঃখ ও দীর্ঘশ্বাস দূরে পলায়ন করবে।
12 ১২ আমি, আমিই তোমাদের সান্ত্বনা করি। তোমরা কেন মানুষকে ভয় করছ? যারা মারা যাবে, মানুষের সন্তানেরা, যারা ঘাসের মতই তৈরী।
“আমি, হ্যাঁ আমিই, তোমাদের সান্ত্বনা দিই। তোমরা কেন মর্ত্যমানবকে ভয় করছ, তারা তো মানবসন্তান, সবাই তৃণের মতো।
13 ১৩ তোমাদের যিনি তৈরী করেছেন তাঁকে কেন তোমরা ভুলে গেছ? যিনি আকাশকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করেছেন? তুমি অত্যাচারীদের প্রচণ্ড ক্রোধের কারণে প্রতিদিন ত্রাসে আছ যখন সে ধ্বংস করার জন্য সিদ্ধান্ত করেছে? অত্যাচারীদের ক্রোধ কোথায়?
তোমরা, তোমাদের সৃষ্টিকর্তা, সদাপ্রভুকে ভুলে যাচ্ছ, তিনিই আকাশমণ্ডলকে প্রসারিত করেছেন এবং পৃথিবীর ভিত্তিমূল সকল স্থাপন করেছেন। তোমরা প্রতিদিন অবিরত আতঙ্কে বাস করো উপদ্রবীর ক্রোধের কারণে, যারা বিনাশ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে? কারণ উপদ্রবীর ক্রোধ কোথায়?
14 ১৪ যারা নত হয়, সদাপ্রভু তাদের শীঘ্রই ছেড়ে দেবেন; সে মারা যাবে না এবং গর্তে নেমে যাবে না, তার খাবারের অভাব হবে না।
ভয়ে জড়োসড়ো বন্দিরা শীঘ্রই মুক্তি পাবে; তারা তাদের অন্ধকূপে আর মৃত্যুবরণ করবে না, তাদের খাদ্যের অভাবও আর হবে না।
15 ১৫ কারণ আমিই সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, যিনি সমুদ্রকে মন্থন করলে তার ঢেউ গর্জন করে। তার নাম বাহিনীদের সদাপ্রভু।
কারণ আমি সদাপ্রভু, তোমাদের ঈশ্বর, আমি সমুদ্রকে তোলপাড় করলে তার তরঙ্গসমূহ গর্জন করে— সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু তাঁর নাম।
16 ১৬ আমি তোমার মুখে আমার বাক্য রাখলাম আর আমার হাতের ছায়ায় তোমাকে ঢেকে রাখলাম। যে আমি আকাশমণ্ডল রোপণ করি, পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি এবং সিয়োনকে বলি, তুমি আমার লোক।
আমি আমার বাক্য তোমার মুখে দিয়েছি, আর তোমাকে আমার হাতের ছায়ায় আবৃত করেছি— আমিই আকাশমণ্ডলকে যথাস্থানে স্থাপন করেছি, যিনি পৃথিবীর ভিত্তিমূলসমূহ স্থাপন করেছেন, যিনি সিয়োনকে বলেন, ‘তুমি আমার প্রজা।’”
17 ১৭ হে যিরূশালেম, জাগো, জাগো; উঠে দাঁড়াও। তুমি তো সদাপ্রভুর হাত থেকে তাঁর ক্রোধের বাটিতে পান করেছ; মত্ততাজনক বাটিতে পান করেছ, তুমি নিঃশেষ করেছ।
জাগো, জাগো! ওহে জেরুশালেম, উঠে দাঁড়াও, সদাপ্রভুর ক্রোধের পানপাত্র, যারা তাঁর হাত থেকে পান করেছ, যে পানপাত্র মানুষকে টলোমলো করে, যারা তার তলানি পর্যন্ত চেটে খেয়েছ।
18 ১৮ তুমি যে সব ছেলেদের জন্ম দিয়েছ তাদের মধ্যে তার পথপ্রদর্শক কেউ নেই; যে সব ছেলেদের তুমি পালন করেছ তাদের মধ্যে তার হাত ধরবার মত কেউ নেই।
তার জন্ম দেওয়া সব পুত্রের মধ্যে কেউই তাকে পথ প্রদর্শন করেনি; তার লালনপালন করা সব সন্তানের মধ্যে কেউই তার হাত ধরে চালায়নি।
19 ১৯ এই দুই তোমার প্রতি ঘটেছে; কে তোমার জন্য বিলাপ করবে? নির্জনতা এবং ধ্বংস এবং দূর্ভিক্ষ এবং তরোয়াল। কে তোমাকে সান্ত্বনা দেবে?
এই দুই ধরনের দুর্যোগ তোমার উপরে এসে পড়েছে, কে তোমাকে সান্ত্বনা দেবে? ধ্বংস ও বিনাশ, দুর্ভিক্ষ ও তরোয়াল, আমি কী করে তোমাকে আশ্বাস দিতে পারি?
20 ২০ তোমার ছেলেরা দুর্বল হয়েছে; তারা জালে পড়া হরিণের মত প্রতিটি রাস্তার মাথায় শুয়ে আছে। তারা সদাপ্রভুর ক্রোধে, তোমার ঈশ্বরের তিরস্কারে পরিপূর্ণ।
তোমার সন্তানেরা সব মূর্ছিত হয়েছে; তারা প্রত্যেকটি পথের মাথায় মাথায় পড়ে আছে, যেভাবে কোনো কৃষ্ণসার হরিণ জালে ধরা পড়ে। তারা সদাপ্রভুর ক্রোধে, তোমার ঈশ্বরের তিরস্কারে পূর্ণ।
21 ২১ কিন্তু এখন এই কথা শোন, হে অত্যাচারকারী এবং তুমি মাতাল, কিন্তু দ্রাক্ষারসে মত্ত না।
সেই কারণে, তোমরা যারা কষ্ট পেয়েছ, একথা শোনো, তোমাকে মত্ত করা হয়েছে, কিন্তু দ্রাক্ষারসে নয়।
22 ২২ তোমার প্রভু সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, যিনি তাঁর লোকদের পক্ষে থাকেন তিনি এই কথা বলছেন, “দেখ, মত্ততাজনক পানপাত্র, আমার ক্রোধরূপ পানপাত্র, তোমার হাত থেকে নিলাম; সেই পানপাত্রে তুমি আর পান করবে না।
তোমার সার্বভৌম সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তোমার ঈশ্বর বলেন, যিনি তাঁর প্রজাদের পক্ষসমর্থন করেন: “দেখো, আমি তোমার হাত থেকে ওই পানপাত্র ছিনিয়ে নিয়েছি, যা পান করলে তুমি টলোমলো হও; সেই পেয়ালা, যা আমার ক্রোধের বড়ো পানপাত্র, তুমি আর কখনও তা পান করবে না।
23 ২৩ আমি তোমার উত্পীড়কদের হাতে তা তুলে দেব, যারা তোমাকে বলত, ‘শুয়ে পড়, যাতে আমরা তোমার ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারি।’ তুমি মাটির মত ও রাস্তার মত লোকদের কাছে নিজের পিঠ পেতে দিতে পার।”
আমি তোমার অত্যাচারীদের হাতে তা দেব, যারা তোমাকে বলেছিল, ‘উপুড় হয়ে পড়ো, যেন তোমাদের উপর দিয়ে আমরা হেঁটে যাই।’ আর তোমরা তোমাদের পিঠ ভূমির মতো, পথিকদের কাছে সড়কের মতো করেছ।”

< যিশাইয় ভাববাদীর বই 51 >