< যিশাইয় ভাববাদীর বই 5 >

1 আমি আমার প্রিয়ের জন্য আঙ্গুরক্ষেতের বিষয়ে আমার প্রিয়ের একটা গান করি। খুব উর্বর পর্বতে আমার প্রিয়ের একটা আঙ্গুর ক্ষেত ছিল।
আমি আমার প্রিয়তমের উদ্দেশে একটি গান গাইব, তাঁর দ্রাক্ষাক্ষেত্রের বিষয়ে গান গাইব: আমার প্রিয়তমের একটি দ্রাক্ষাক্ষেত্র ছিল এক উর্বরা পাহাড়ের গায়ে।
2 তিনি জায়গাটা খুঁড়লেন এবং পাথর তুলে ফেললেন আর তাতে ভাল আঙ্গুর লতা রোপণ করলেন। তার মধ্যে তিনি একটা উঁচু দুর্গ তৈরী করলেন এবং এছাড়া আঙ্গুর কুণ্ড তৈরী করলেন। তিনি অপেক্ষা করলেন যে ভালো আঙ্গুর ফল উত্পন্ন হবে, কিন্তু বুনো আঙ্গুর উত্পন্ন হল।
তিনি তা খুঁড়ে সব পাথর পরিষ্কার করলেন এবং উৎকৃষ্ট সব দ্রাক্ষার চারা তার মধ্যে রোপণ করলেন। তিনি তার মধ্যে এক নজরমিনার নির্মাণ করলেন এবং একটি দ্রাক্ষামাড়াই কুণ্ড খনন করলেন। তারপর তিনি অপেক্ষা করলেন উৎকৃষ্ট দ্রাক্ষাফলের, কিন্তু তাতে কেবলই বুনো আঙুর ধরল।
3 এখন হে, যিরূশালেমের বাসিন্দারা ও যিহূদার লোকেরা, তোমরা আমার ও আমার আঙ্গুর ক্ষেতের মধ্যে বিচার কর।
“এখন জেরুশালেমের অধিবাসী তোমরা ও যিহূদার লোকেরা, আমার ও আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মধ্যে বিচার করো।
4 আমার আঙ্গুর ক্ষেতের জন্য কি আরো কি করতে পারা যেত, যা আমি করিনি? যখন আমি ভাল আঙ্গুরের জন্য অপেক্ষা করলাম কেন তাতে বুনো আঙ্গুর উত্পন্ন হল?
আমি আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের জন্য যা করেছি, তার থেকে বেশি আর কী করা যেত? যখন আমি উৎকৃষ্ট দ্রাক্ষার অপেক্ষা করলাম, তাতে কেবলই বুনো আঙুর কেন ধরল?
5 এখন আমি তোমাকে জানাব যা আমি আমার আঙ্গুরক্ষেতে করব; আমি বেড়া তুলে ফেলব; আমি তা তৃণক্ষেত্রতে পরিণত করব; আমি তার দেয়াল ভেঙে ফেলব এবং এটা মাড়ানো হবে।
এবার আমি তোমাদের বলি, আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের প্রতি আমি কী করতে চলেছি: আমি এর বেড়াগুলি তুলে ফেলব, আর তা ধ্বংস হয়ে যাবে; আমি এর প্রাচীরগুলি ভেঙে দেব, তখন তা পদদলিত হবে।
6 আমি এটা আবর্জনা হিসাবে রাখব এবং এটা পরিষ্কার কি খোঁড়া যাবে না। কিন্তু কাঁটাঝোপ ও কাঁটাগাছ বেড়ে উঠবে এবং আমি মেঘদেরকে আদেশ দেব যেন তার ওপর বৃষ্টি না হয়।
আমি তা এক পরিত্যক্ত ভূমি করব, তার লতা পরিষ্কার বা ভূমি কর্ষণও করা হবে না; সেখানে শেয়ালকাঁটা ও কাঁটাঝোপ উৎপন্ন হবে। আমি মেঘমালাকে আদেশ দেব যেন সেখানে জল বর্ষণ না করে।”
7 কারণ ইস্রায়েল-কুল বাহিনীদের সদাপ্রভুর আঙ্গুর ক্ষেত এবং যিহূদার লোকেরা হল তাঁর আনন্দদায়ক চারাগাছ; তিনি ন্যায়বিচারের অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু পরিবর্তে রক্তপাত; কারণ ধার্মিকতার পরিবর্তে সাহায্যের কান্না।
সর্বশক্তিমান সদাপ্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্র হল ইস্রায়েলের সমস্ত কুল, আর যিহূদার লোকেরা হল তাঁর মনোরম উদ্যান। তিনি ন্যায়বিচারের আশা করলেন, কিন্তু রক্তপাত দেখলেন; ধার্মিকতার আশা করলেন, কিন্তু দুর্দশার আর্তনাদ শুনলেন।
8 ধিক তাদের, যারা বাড়ির সঙ্গে বাড়ি যোগ করে, যারা ক্ষেতের সঙ্গে ক্ষেত যোগ করে; কোনো ঘর বাকি থাকে না এবং তোমরা দেশের মধ্যে একা থাক।
ধিক্ তোমাদের, যারা গৃহের সঙ্গে গৃহ এবং মাঠের সঙ্গে মাঠ যোগ করো যতক্ষণ না আর কোনো স্থান শূন্য থাকে আর তোমরা একা দেশের মধ্যে বসবাস করো।
9 বাহিনীদের সদাপ্রভু আমাকে বলেন, অনেক বাড়ি খালি হবে, এছাড়া বড় ও সুন্দর বাড়িগুলি বসবাসকারী বিহীন হবে।
সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু আমার কর্ণগোচরে একথা ঘোষণা করেছেন: “নিশ্চিতরূপে বড়ো বড়ো সব গৃহ জনশূন্য হবে, সুন্দর সব অট্টালিকায় বাস করার জন্য কেউ থাকবে না।
10 ১০ কারণ দশ বিঘা আঙ্গুর ক্ষেতে এক বাৎ আঙ্গুর রস উত্পন্ন হবে ও এক হোমর বীজে মাত্র এক ঐফা শস্য উত্পন্ন হবে।
ত্রিশ বিঘা দ্রাক্ষাকুঞ্জে মাত্র বাইশ লিটার দ্রাক্ষারস পাওয়া যাবে, আর দশ ঝুড়ি বীজে মাত্র এক ঝুড়ি শস্য উৎপন্ন হবে।”
11 ১১ ধিক তাদের, যারা খুব সকালে সুরা খোঁজার জন্য ওঠে; যারা অনেক রাত পর্যন্ত বসে থাকে, যতক্ষণ না আঙ্গুর রস তাদেরকে উত্তপ্ত করে!
ধিক্ তাদের, যারা খুব সকালে ওঠে যেন সুরার অন্বেষণে দৌড়ায়, যারা রাত পর্যন্ত জেগে থাকে যতক্ষণ না সুরা তাদের উত্তপ্ত করে।
12 ১২ তারা ভোজের দিন বীণা, নেবল, খঞ্জনি, বাঁশী এবং আঙ্গুর রস রাখে, কিন্তু তারা প্রভুর কাজকে চিনতে পারে না, তারা তার হাতের কাজগুলিরও বিবেচনা করে না।
তাদের ভোজসভায় থাকে বীণা ও নেবল, খঞ্জনি, বাঁশি ও সুরা, কিন্তু সদাপ্রভুর কাজের প্রতি তাদের কোনো সম্ভ্রম নেই, তাঁর হাতের কাজকে তারা সম্মান করে না।
13 ১৩ এই জন্য আমার লোকেরা জ্ঞানের অভাবের জন্য বন্দী হিসাবে রয়েছে। তাদের নেতারা ক্ষুধার্ত ও তাদের জনসাধারণ কিছুই পান করে নি।
সেই কারণে, আমার প্রজাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য, তারা নির্বাসনে যাবে; তাদের পদস্থ ব্যক্তিরা খিদেতে মারা যাবে, এবং তাদের আপামর জনসাধারণ পিপাসায় মারা যাবে।
14 ১৪ এই জন্য মৃত্যু তার ক্ষুধা বড় করেছে এবং তার মুখ খুব চওড়া করে খুলেছে; তাদের অভিজাত ও সাধারণ লোক, ফুর্তিবাজ আর তাদের মধ্যে উল্লাসিত লোকেরা পাতালে নেমে যাচ্ছে। (Sheol h7585)
তাই, পাতাল তার উদর প্রশস্ত করেছে, সীমাহীন গ্রাসের জন্য তার মুখ খুলে দিয়েছে; তার মধ্যে যত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ও জনসাধারণ নেমে যাবে, তাদের সঙ্গে যত কলহকারী ও উচ্ছৃঙ্খল মানুষ থাকবে। (Sheol h7585)
15 ১৫ সামান্য লোক নীচু হয় এবং মহান লোক নম্র হয় এবং অহঙ্কারীদের চোখ অবনত হয়।
তাই, মানুষকে নত করা হবে, মানবজাতি অবনত হবে, উদ্ধত লোকের দৃষ্টি নতনম্র হবে।
16 ১৬ কিন্তু বাহিনীদের সদাপ্রভু তার বিচারে উন্নত হন, পবিত্রতম ঈশ্বর ধার্ম্মিকতায় পবিত্র বলে মান্য হন।
কিন্তু সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু তাঁর ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চে উন্নত হবেন, এবং পবিত্র ঈশ্বর তাঁর ধার্মিকতার দ্বারা নিজেকে ধার্মিক দেখাবেন।
17 ১৭ তখন মেষগুলো যেমন তাদের তৃণক্ষেত্রে চরে, তেমনি চরবে, ধনীদের ধ্বংসের জায়গায় মেষেরা চরবে।
তখন মেষেরা যেন নিজেদের চারণভূমিতে চরে বেড়াবে; ধনীদের ধ্বংসাবশেষে মেষশাবকেরা তাদের খাদ্য ভোজন করবে।
18 ১৮ ধিক তাদেরকে, যারা শূন্যতার দড়ি দিয়ে পাপ টানে এবং যারা রথের দড়ি দিয়ে পাপ টানে;
ধিক্ তাদের যারা প্রতারণার দড়ি দিয়ে পাপ টেনে আনে, দুষ্টতাকে টেনে আনে তাদের শকটের দড়ি দিয়ে।
19 ১৯ তারা বলে, “ঈশ্বর তাড়াতাড়ি করুন; তিনি তাড়াতাড়ি করে কাজ করেন, যেন আমরা তা দেখতে পাই এবং ইস্রায়েলের সেই পবিত্রতমের পরিকল্পনা গ্রহণ করুক এবং আসুক, যেন আমরা তা জানতে পারি।”
যারা বলে, “ঈশ্বর ত্বরা করুন, তিনি দ্রুত তাঁর কাজ করে দেখান যেন আমরা তা দেখতে পাই। ইস্রায়েলের পবিত্রতমের পরিকল্পনা কাছে আসুক, তা দৃশ্যমান হোক, যেন আমরা তা জানতে পারি।”
20 ২০ ধিক তাদেরকে, যারা খারাপকে ভালো আর ভালোকে খারাপ বলে, যারা অন্ধকারকে আলো হিসাবে ও আলোকে অন্ধকার হিসাবে বর্ণনা করে; যারা মিষ্টিকে তেতো ও তেতোকে মিষ্টি বলে বর্ণনা করে!
ধিক্ তাদের যারা মন্দকে ভালো ও ভালোকে মন্দ বলে, যারা অন্ধকারকে আলো ও আলোকে অন্ধকার বলে তুলে ধরে, যারা মিষ্টিকে তেতো ও তেতোকে মিষ্টি বলে।
21 ২১ ধিক তাদেরকে, যারা নিজেদের চোখে জ্ঞানী ও নিজেদের বুদ্ধিতে বিচক্ষণ!
ধিক্ তাদের, যারা নিজেদের দৃষ্টিতেই জ্ঞানবান, যারা নিজেদের দৃষ্টিতে নিজেদের চতুর মনে করে।
22 ২২ ধিক তাদেরকে, যারা আঙ্গুর রস পান করায় ওস্তাদ এবং যারা সুরা মেশানোয় পন্ডিত।
ধিক্ তাদের যারা সুরা পান করায় দক্ষ ও সুরা মিশ্রিত করায় নিপুণ,
23 ২৩ যারা ঘুষের জন্য দোষীকে নির্দোষ করে এবং নির্দোষকে তার ধার্ম্মিকতা থেকে বঞ্চিত করে।
যারা ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীকে মুক্ত করে, কিন্তু নির্দোষের ন্যায়বিচার অন্যথা করে।
24 ২৪ অতএব আগুনের জিভ যেমন খড় গ্রাস করে, শুকনো ঘাস যেমন আগুনের শিখায় পরিণত হয়, তেমনি তাদের মূল পচে যাবে ও তাদের ফুল ধূলোর মতো উড়ে যাবে, কারণ তারা বাহিনীদের সদাপ্রভুর নিয়ম অমান্য করেছে, ইস্রায়েলের পবিত্রতম ঈশ্বরের কথা তুচ্ছ করেছে।
তাই, অগ্নিজিহ্বা যেমন খড়কুটো গ্রাস করে এবং শুকনো ঘাস আগুনের শিখায় দগ্ধ হয়, তেমনই তাদের মূল পচে যাবে এবং তাদের সব ফুল ধুলোর মতোই উড়ে যাবে; কারণ তারা সর্বশক্তিমান সদাপ্রভুর বিধানকে অগ্রাহ্য করেছে এবং ইস্রায়েলের পবিত্রতমজনের বাণীকে অবজ্ঞা করেছে।
25 ২৫ এই জন্য তার লোকদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর রাগ জ্বলে উঠেছে; তিনি তাদের বিরুদ্ধে হাত তুলেছেন এবং তাদেরকে আঘাত করেছেন; তাই পর্বতরা কাঁপল ও তাদের মৃতদেহ রাস্তার মধ্যে আবর্জনার মতো হল। এই সব সত্বেও, তার রাগ কম হয়নি, কিন্তু তার হাত এখনো আঘাত করার জন্য উঠে আছে।
তাই সদাপ্রভুর ক্রোধ তাঁর প্রজাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠেছে; তিনি হাত তুলে তাদের আঘাত করেছেন। পর্বতগুলি কম্পিত হয়, মৃতদেহগুলি যেন আবর্জনার মতো রাস্তায় পড়ে থাকে। তবুও, এ সকলের জন্য, তাঁর ক্রোধ ফেরেনি, তাঁর হাত এখনও উপরে উঠে আছে।
26 ২৬ তিনি দূরের জাতিদের জন্য একটা পতাকা তুলবেন, পৃথিবীর শেষ সীমার লোকদের জন্য শিশ দেবেন। দেখ, তারা তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে দৌড়ে আসবে।
দূরের জাতিদের উদ্দেশে তিনি একটি পতাকা তুলেছেন, পৃথিবীর প্রান্তসীমার লোকেদের তিনি শিস্ দিয়ে ডেকেছেন। ওই তারা আসছে, দ্রুত ও মহাবেগে!
27 ২৭ তাদের মধ্যে কেউই ক্লান্ত হবে না, হোঁচটও খাবে না; কেউই ঢুলে পড়বে না বা ঘুমাবে না; তাদের কোমর-বন্ধনী খুলে যাবে না, জুতার ফিতেও ছিঁড়বে না;
তাদের মধ্যে কেউই ক্লান্ত হয় না বা হোঁচট খায় না, কেউই ঢুলে পড়ে না বা ঘুমিয়ে যায় না; তাদের কোমরের কারও বেল্ট খসে পড়ে না, জুতো-চটির একটি ফিতেও ছিঁড়ে যায় না।
28 ২৮ তাদের তীরগুলো ধারালো, তাদের সব ধনুকে টান দেওয়া আছে; তাদের ঘোড়ার খুরগুলো চকমকি পাথরের মত এবং তাদের রথের চাকাগুলো ঝড়ের মত।
তাদের তিরগুলি ধারালো, তাদের সব ধনুকে চাড়া দেওয়া আছে; তাদের অশ্বগুলির খুর চকমকি পাথরের মতো, তাদের রথগুলির চাকা যেন ঘূর্ণিবায়ুর মতো ঘোরে।
29 ২৯ সিংহীর মতই তাদের গর্জন; তারা যুবসিংহের মত গর্জন করবে। তারা গর্জন করবে এবং শিকার ধরবে এবং তা টেনে আনবে, কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
তাদের গর্জন সিংহনাদের মতো, তাদের চিৎকার যুবসিংহের মতো; শিকার ধরা মাত্র তারা গর্জন করে, ও ধরে নিয়ে যায়, কেউ তাদের উদ্ধার করতে পারে না।
30 ৩০ সেই দিন তারা সমুদ্রের গর্জনের মত শিকার করবে; আর কেউ যদি দেশের দিকে তাকায়, দেখ, অন্ধকার, চরম দুর্দশা, আর আলো মেঘের দ্বারা অন্ধকারময় হয়েছে।
সেদিন তারা তার উপরে গর্জন করবে, যেমন সমুদ্রের জলরাশি গর্জন করে। আর কেউ যদি দেশের প্রতি দৃষ্টিপাত করে, সে কেবলই অন্ধকার ও দুর্দশা দেখবে; এমনকি আলোও মেঘমালায় ঢাকা পড়ে অন্ধকার হয়ে যাবে।

< যিশাইয় ভাববাদীর বই 5 >