< যিশাইয় ভাববাদীর বই 42 >

1 দেখ, আমার দাস, যাঁকে আমি সাহায্য করি; আমার মনোনীত লোক, যাঁর উপর আমি সন্তুষ্ট। আমি তাঁর উপরে আমার আত্মা দেব; তিনি জাতিদের কাছে ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন।
“এই আমার দাস, যাঁকে আমি ধরে রাখি, আমার মনোনীত জন, যাঁর কারণে আমি আনন্দ পাই; আমি তাঁর উপরে আমার আত্মা স্থাপন করব, তিনি জাতিসমূহের জন্য ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন।
2 তিনি চিৎকার করবেন না বা জোরে কথা বলবেন না; তিনি রাস্তায় রাস্তায় তাঁর গলার স্বর শোনাবেন না।
তিনি চিৎকার বা উচ্চশব্দ করবেন না, কিংবা পথে পথে নিজের কণ্ঠস্বর শোনাবেন না।
3 তিনি থেঁৎলে যাওয়া নল ভাঙবেন না আর মিটমিট করে জ্বলতে থাকা সলতে নিভাবেন না। তিনি সততার সঙ্গে ন্যায়বিচার চালু করবেন।
তিনি দলিত নলখাগড়া ভেঙে ফেলবেন না, এবং ধূমায়িত সলতে নির্বাপিত করবেন না। বিশ্বস্ততায় তিনি ন্যায়বিচার আনয়ন করবেন;
4 পৃথিবীতে ন্যায়বিচার স্থাপন না করা পর্যন্ত তিনি দুর্বল হবেন না বা নিরুত্সাহ হবেন না। উপকূলের লোকেরা তাঁর নিয়মের অপেক্ষায় থাকবে।
তিনি মনোবল হারাবেন না বা হতাশ হবেন না, যতক্ষণ না পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করেন। দ্বীপপুঞ্জ তাঁর বিধিবিধানে আস্থা রাখবে।”
5 সদাপ্রভু ঈশ্বর আকাশ সৃষ্টি করে বিস্তার করেছেন; তিনি পৃথিবী ও তাতে যা জন্মায় তা সব ছড়িয়ে দিয়েছেন; তিনি সেখানকার লোকদের নিঃশ্বাস দেন আর যারা সেখানে যারা বাস করে তাদের জীবন দেন। তিনি বলেন,
সদাপ্রভু ঈশ্বর এই কথা বলেন, সেই সদাপ্রভু, যিনি আকাশমণ্ডল সৃষ্টি করে তা প্রসারিত করেছেন, যিনি পৃথিবী ও তার অভ্যন্তরস্থ সবকিছুই বিছিয়ে দিয়েছেন, যিনি তাঁর লোকেদের মধ্যে শ্বাসবায়ু সঞ্চার করেন ও তার মধ্যে জীবনযাপনকারী সকলকে জীবন দেন:
6 আমি, সদাপ্রভু, তোমাকে ধার্ম্মিকতায় ডেকেছি এবং আমি তোমার হাত ধরে রাখব। আমি তোমাকে রক্ষা করব এবং আমার লোকদের জন্য তোমাকে একটা ব্যবস্থার মত করব আর অন্যান্য জাতিদের জন্য আলোর মত করব।
“আমি সদাপ্রভু ধার্মিকতায় তোমাকে আহ্বান করেছি; আমি তোমার হাত ধরে থাকব। আমি তোমাকে রক্ষা করব এবং তোমাকে প্রজাদের জন্য এক চুক্তি এবং অইহুদি জাতিদের জন্য এক জ্যোতিস্বরূপ করব,
7 তুমি অন্ধদের চোখ খুলে দেবে, জেলখানা থেকে বন্দীদের মুক্ত করবে, কারাকূপ থেকে বন্দীদের মুক্ত করবে এবং কারাবাস থেকে যারা অন্ধকারে বসে তাদেরকে মুক্ত করবে।
যেন অন্ধদের দৃষ্টি উন্মোচন করা হয়, কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্ত করা হয় এবং যারা কারাকূপের অন্ধকারে বসে থাকে, তাদের মুক্ত করা হয়।
8 “আমি সদাপ্রভু, এই আমার নাম এবং আমি অন্যকে আমার গৌরব কিংবা প্রতিমাকে আমার প্রশংসা পেতে দেব না।
“আমি সদাপ্রভু; এই আমার নাম! আমার মহিমা আমি অন্য কাউকে দেব না, বা আমার প্রশংসা ক্ষোদিত প্রতিমাদের দেব না।
9 দেখ, আগেকার ঘটনাগুলো ঘটে গেছে আর এখন আমি নতুন ঘটনার কথা ঘোষণা করব; সেগুলো ঘটবার আগেই তোমাদের কাছে তা জানাচ্ছি।”
দেখো, পূর্বের বিষয়গুলি পূর্ণ হয়েছে এবং নতুন সব বিষয় আমি ঘোষণা করছি; সেগুলি ঘটবার পূর্বেই আমি সেগুলি তোমাদের কাছে ঘোষণা করছি।”
10 ১০ হে সাগরে চলাচলকারীরা, সাগরের মধ্যেকার সব প্রাণী, হে উপকূল সব আর তার মধ্যেকার বাসিন্দারা, তোমরা সবাই সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে একটা নতুন গান কর, পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে তাঁর প্রশংসার গান গাও।
সমুদ্রযাত্রী ও সমুদ্রের অভ্যন্তরস্থ সবকিছু, দ্বীপপুঞ্জ ও সেগুলির মধ্যে বসবাসকারী সকলে, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক নতুন গীত গাও, পৃথিবীর প্রান্তসীমা থেকে তাঁর প্রশংসা ধ্বনিত হোক।
11 ১১ মরুভূমি ও তার শহরগুলো জোরে জোরে প্রশংসা করুক; কেদরীয়দের গ্রামগুলোও আনন্দের জন্য চিত্কার করুক, শেলার লোকেরা গান করুক, পাহাড়ের চূড়াগুলো থেকে চিৎকার করুক।
মরুভূমি ও তার নগরগুলি তাদের কণ্ঠস্বর তুলুক, কেদরের উপনিবেশগুলিতে বসবাসকারী লোকেরা উল্লসিত হোক। সেলা-র লোকেরা আনন্দে গান করুক; পর্বতশিখরগুলি থেকে তারা চিৎকার করুক।
12 ১২ তারা সদাপ্রভুর গৌরব করুক; উপকূলগুলোর মধ্যে তাঁর প্রশংসা ঘোষণা করুক।
তারা সদাপ্রভুকে মহিমা প্রদান করুক, দ্বীপগুলিতে তাঁর প্রশংসা ঘোষণা করুক।
13 ১৩ একজন শক্তিশালী লোকের মত করে সদাপ্রভু বের হয়ে আসবেন; তিনি যোদ্ধার মত তাঁর আগ্রহকে উত্তেজিত করবেন; তিনি চিৎকার করে যুবক হাঁক দেবেন আর শত্রুদের ওপর তার ক্ষমতা দেখাবেন।
পরাক্রান্ত বীরের মতো সদাপ্রভু অভিযান করবেন, যোদ্ধার মতোই তাঁর উদ্যম আলোড়িত হবে; রণনাদে তিনি মহা চিৎকার করবেন এবং তাঁর সব শত্রুর উপরে তিনি বিজয়ী হবেন।
14 ১৪ আমি সদাপ্রভু অনেক দিন চুপ করেছিলাম; আমি শান্ত থেকে নিজেকে দমন করে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন প্রসবকারিণী স্ত্রীলোকের মত আমি চিৎকার করছি, হ্যাঁ করে শ্বাস নিচ্ছি ও হাঁপাচ্ছি।
“দীর্ঘ সময় ধরে আমি নিশ্চুপ আছি, আমি শান্ত থেকে নিজেকে দমন করেছি। কিন্তু এখন, প্রসববেদনাতুরা স্ত্রীর মতো, আমি চিৎকার করছি, হাঁপাচ্ছি ও দীর্ঘশ্বাস ফেলছি।
15 ১৫ আমি পাহাড়-পর্বতগুলো গাছপালাহীন করব আর সেখানকার সমস্ত গাছপালা শুকিয়ে ফেলব এবং আমি নদীগুলোকে দ্বীপ বানাব আর জলাশয়গুলো শুকিয়ে ফেলব।
আমি পাহাড় ও পর্বতগুলিকে বৃক্ষহীন করব এবং তাদের সব গাছপালাকে শুকিয়ে ফেলব; আমি নদীগুলিকে দ্বীপপুঞ্জে পরিণত করব ও পুকুরগুলিকে শুকিয়ে ফেলব।
16 ১৬ আমি অন্ধদের এক রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসব যা তারা জানে না; যে পথ তারা জানে না সেই পথে তাদের চালাব। তাদের আগে আগে আমি অন্ধকারকে আলো করব আর অসমান জায়গাকে সমান করে দেব। এ সবই আমি করব, আমি তাদেরকে পরিত্যক্ত করব না।
আমি অন্ধদের, তাদের অজানা পথে চালাব, অপরিচিত পথগুলিতে আমি তাদের পরিচালিত করব; আমি তাদের সামনে অন্ধকারকে আলোয় পরিণত ও অসমতল স্থানকে মসৃণ করে দেব। আমি এসব কাজ করব; আমি তাদের পরিত্যাগ করব না।
17 ১৭ কিন্তু যারা খোদাই করা প্রতিমার উপর নির্ভর করে, যারা ছাঁচে ঢালা মুর্ত্তিগুলোকে বলে, “তোমরা আমাদের দেবতা,” আমি তাদের ভীষণ লজ্জায় ফেলে ফিরিয়ে দেব।
কিন্তু যারা প্রতিমাদের উপরে নির্ভর করে, যারা প্রতিমাদের কাছে বলে, ‘তোমরা আমাদের দেবতা,’ চরম লজ্জায় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
18 ১৮ “ওহে বধির লোকেরা, শোন, আর অন্ধেরা, তোমরা তাকিয়ে দেখ।
“ওহে বধির সব, তোমরা শোনো; ওহে যারা অন্ধ, তোমরা দেখতে থাকো!
19 ১৯ আমার দাস ছাড়া অন্ধ আর কে? আমার পাঠানো দূতের মত বধির আর কে? আমার উপর মিত্রের মত অন্ধ আর কে? সদাপ্রভুর দাসের মত অন্ধকে?
আমার দাস ছাড়া আর অন্ধ কে? আমার প্রেরিত দূত ছাড়া আর বধির কে? যে আমার প্রতি সমর্পিত, তার থেকে আর অন্ধ কে? সদাপ্রভুর দাসের মতো অন্ধ আর কে আছে?
20 ২০ তুমি অনেক কিছু দেখেও মনোযোগ দিচ্ছ না; তোমার কান খোলা থাকলেও কিছু শুনছ না।”
তুমি অনেক কিছু দেখে থাকলেও কোনো মনোযোগ করোনি; তোমার কান তো খোলা, কিন্তু তুমি কিছুই শুনতে পাও না।”
21 ২১ সদাপ্রভু নিজের ধর্মশীলতার অনুরোধে নিয়মকে মহৎ ও গৌরবযুক্ত করলেন।
সদাপ্রভু প্রীত হলেন, তাঁর ধার্মিকতার গুণে তাঁর বিধানকে মহৎ ও গৌরবান্বিত করতে।
22 ২২ কিন্তু এই লোকদের সব কিছু নিয়ে যাওয়া ও লুট করা হয়েছে, তাদের সবাইকে গর্তে ফেলা হয়েছে আর জেলখানায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তারা লুটের জিনিসের মত হয়েছে, তাদের উদ্ধার করবার কেউ নেই এবং কেউ বলে না, “তাদের ফিরিয়ে দাও।”
কিন্তু এই জাতির লোকেদের লুণ্ঠন করে সবকিছু নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তারা সকলেই গর্তের ফাঁদে পড়েছে অথবা তাদের কারাগারে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তারাই লুণ্ঠনের বস্তু হয়েছে, তাদের উদ্ধারকারী কেউই ছিল না; তাদের লুণ্ঠনের বস্তু করা হয়েছে, কেউ বলে না, “ওদের ফেরত পাঠাও।”
23 ২৩ তোমাদের মধ্যে কে আমার কথা শুনবে? আর যে দিন আসছে সেই দিনের র জন্য কে আমার কথা শুনবে?
তোমাদের মধ্যে কে একথা শুনবে? মনোযোগ দিয়ে কে ভবিষ্যতের জন্য শুনে রাখবে?
24 ২৪ যাকোবকে কে লুট হতে দিয়েছেন? আর ইস্রায়েলকে কে লুটেরাদের হাতে তুলে দিয়েছেন? তিনি কি সদাপ্রভু নন, যাঁর বিরুদ্ধে আমরা পাপ করেছি? যারা তাঁর পথে চলতে চায়নি, তাঁর নির্দেশ পালন করে নি।
কে যাকোবকে লুণ্ঠনের বিষয় হওয়ার জন্য সমর্পণ করেছেন এবং ইস্রায়েলকে লুণ্ঠনকারীদের হাতে সমর্পণ করেছেন? তিনি কি সদাপ্রভু নন, যাঁর বিরুদ্ধে আমরা পাপ করেছি? কারণ তারা তাঁর পথসকলে চলতে চায়নি, তারা তাঁর বিধান মান্য করেনি।
25 ২৫ তাই তিনি তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধ ও যুদ্ধের ভয়ংকরতা ইস্রায়েলের উপর ঢেলে দিয়েছেন। তাতে সেই আগুন তার চারদিকে জ্বলে উঠল, তবুও সে বুঝতে পারল না; তাদের পুড়িয়ে দিল, কিন্তু তাতে সে মনোযোগ দিল না।
তাই তিনি তাঁর প্রজ্বলিত ক্রোধ, যুদ্ধের হিংস্রতা তাদের উপরে ঢেলে দিয়েছেন। তা তাদের আগুনের শিখায় আবৃত করল, তবুও তারা বুঝতে পারল না; তা তাদের গ্রাস করল, তবুও তারা শিক্ষা নিল না।

< যিশাইয় ভাববাদীর বই 42 >