< আদিপুস্তক 48 >

1 এ সব ঘটনা হলে পর কেউ যোষেফকে বলল, “দেখুন, আপনার বাবা অসুস্থ;” তাতে তিনি নিজের দুই ছেলে মনঃশি ও ইফ্রয়িমকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন।
কিছুকাল পর যোষেফকে বলা হল, “আপনার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” অতএব তিনি তাঁর দুই ছেলে মনঃশি ও ইফ্রয়িমকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন।
2 তখন কেউ যাকোবকে সংবাদ দিয়ে বলল, “দেখুন, আপনার ছেলে যোষেফ এসেছেন; তাতে ইস্রায়েল নিজেকে সবল করে শয্যায় উঠে বসলেন।”
যাকোবকে যখন বলা হল, “আপনার ছেলে যোষেফ আপনার কাছে এসেছেন,” তখন ইস্রায়েল শক্তি সঞ্চয় করে বিছানায় উঠে বসলেন।
3 আর যাকোব যোষেফকে বললেন, “কনান দেশে, লুস নামক জায়গায়, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাকে দর্শন দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন”
যাকোব যোষেফকে বললেন, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কনান দেশের লূসে আমাকে দর্শন দিয়েছিলেন, এবং সেখানে তিনি আমাকে আশীর্বাদ করেছিলেন
4 ও বলেছিলেন, “দেখ, আমি তোমাকে ফলবান ও বহুবংশ করব, আর তোমার থেকে জাতিসমাজ সৃষ্টি করব এবং তোমার ভাবী বংশকে চিরস্থায়ী অধিকারের জন্য এই দেশ দেব।”
ও আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে ফলবান করতে ও তোমার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চলেছি। আমি তোমাকে এক জনসমাজে পরিণত করব, এবং আমি তোমার পরে তোমার বংশধরদের এই দেশটি চিরস্থায়ী এক অধিকাররূপে দেব।’
5 আর মিশরে তোমার কাছে আমার আসবার আগে তোমার যে দুই ছেলে মিশর দেশে জন্মেছে, তারা আমারই; রুবেন ও শিমিয়োনের মতো ইফ্রয়িম ও মনঃশিও আমারই হবে।
“এখন তবে, আমি তোমার কাছে এখানে আসার আগে মিশরে তোমার যে দুই ছেলে জন্মেছিল, তারা আমারই বলে গণ্য হবে; ইফ্রয়িম ও মনঃশি আমারই হবে, ঠিক যেমন রূবেণ ও শিমিয়োনও আমার।
6 কিন্তু তুমি এদের পরে যাদের জন্ম দিয়েছ, তোমার সেই বংশধরেরা তোমারই হবে এবং এই দুই ভাইয়ের নামে এদেরই অধিকারে আখ্যাত হবে।
এদের পরে তোমার যে কোনো সন্তান জন্মাবে, তারা তোমারই হবে; উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সেই অঞ্চলে তারা তাদের দাদাদের নামেই পরিচিত হবে।
7 আর পদ্দন থেকে আমার আসবার দিনের কনান দেশে রাহেল ইফ্রাথে পৌঁছাবার অল্প পথ থাকতে পথের মধ্যে আমার কাছে মারা গেলেন; তাতে আমি সেখানে, ইফ্রাথের, অর্থাৎ বৈৎলেহমের, পথের পাশে তাঁর কবর দিলাম।
আমি যখন পদ্দন থেকে ফিরছিলাম, তখন আমাদের যাত্রাপথেই ইফ্রাথ থেকে খানিকটা দূরে সেই কনান দেশে রাহেল মারা গিয়েছিল। তাই ইফ্রাথে (অথবা, বেথলেহেমে) যাওয়ার পথের পাশে আমি তাকে কবর দিয়েছিলাম।”
8 পরে ইস্রায়েল যোষেফের দুই ছেলেকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “এরা কে?”
ইস্রায়েল যখন যোষেফের ছেলেদের দেখলেন, তখন তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এরা কারা?”
9 যোষেফ বাবাকে বললেন, “এরা আমার ছেলে, যাদেরকে ঈশ্বর এই দেশে আমাকে দিয়েছেন।” তখন তিনি বললেন, “অনুরোধ করি, এদেরকে আমার কাছে আন, আমি এদেরকে আশীর্বাদ করব।”
“এরা সেই ছেলেরা, ঈশ্বর যাদের এখানে আমাকে দিয়েছেন,” যোষেফ তাঁর বাবাকে বললেন। তখন ইস্রায়েল বললেন, “তাদের আমার কাছে নিয়ে এসো, যেন আমি তাদের আশীর্বাদ করতে পারি।”
10 ১০ তখন ইস্রায়েল বার্ধক্যের জন্য ক্ষীণ দৃষ্টি হওয়াতে দেখতে পেলেন না; আর তারা কাছে আসলে তিনি তাদেরকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করলেন।
বার্ধক্যের কারণে ইস্রায়েলের চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এসেছিল, এবং দেখতে তাঁর খুব অসুবিধা হত। তাই যোষেফ নিজের ছেলেদের তাঁর খুব কাছে নিয়ে এলেন, এবং তাঁর বাবা তাদের চুমু দিলেন ও তাদের আলিঙ্গন করলেন।
11 ১১ পরে ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “আমি ভেবেছিলাম, তোমার মুখ আর দেখতে পাব না; কিন্তু দেখ, ঈশ্বর আমাকে তোমার বংশও দেখালেন।”
ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “আমি কখনও আশা করিনি যে তোমার মুখ আবার দেখতে পাব, আর ঈশ্বর এখন আমাকে তোমার সন্তানদেরও দেখার সুযোগ করে দিলেন।”
12 ১২ তখন যোষেফ দুই জানুর মধ্য থেকে তাদেরকে বের করলেন ও ভূমিতে মুখ দিয়ে প্রণাম করলেন।
পরে যোষেফ ইস্রায়েলের দুই হাঁটুর মাঝখান থেকে তাদের সরিয়ে দিলেন এবং মাটিতে মুখ ঠেকিয়ে নতজানু হলেন
13 ১৩ পরে যোষেফ দুই জনকে নিয়ে নিজের ডান হাত দিয়ে ইফ্রয়িমকে ধরে ইস্রায়েলের বামদিকে ও বাম হাত দিয়ে মনঃশিকে ধরে ইস্রায়েলের ডানদিকে তাঁর কাছে উপস্থিত করলেন।
আর যোষেফ তাদের দুজনকে নিয়ে, ইফ্রয়িমকে নিজের ডানদিকে রেখে ইস্রায়েলের বাঁ হাতের দিকে এবং মনঃশিকে নিজের বাঁদিকে রেখে ইস্রায়েলের ডান হাতের দিকে এগিয়ে দিলেন, এবং তাঁর খুব কাছাকাছি নিয়ে এলেন।
14 ১৪ তখন ইস্রায়েল ডান হাত বাড়িয়ে ছোট ছেলে ইফ্রয়িমের মাথায় দিলেন এবং বাম হাত মনঃশির মাথায় রাখলেন। এ তার বিবেচনা সম্পন্ন বাহুচালন, কারণ মনঃশি প্রথমজাত।
কিন্তু ইস্রায়েল তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন এবং তা ইফ্রয়িমের মাথায় রাখলেন, যদিও সেই ছিল ছোটো, এবং তাঁর হাত দুটি আড়াআড়িভাবে বাড়িয়ে দিয়ে, তিনি তাঁর বাঁ হাত মনঃশির মাথায় রাখলেন, যদিও মনঃশিই ছিল প্রথমজাত সন্তান।
15 ১৫ পরে তিনি যোষেফকে আশীর্বাদ করে বললেন, “সেই ঈশ্বর, যাঁর সামনে আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম ও ইসহাক যাতায়াত করতেন সেই ঈশ্বর, যিনি প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত আমার পালক হয়ে আসছেন
পরে তিনি যোষেফকে আশীর্বাদ করে বললেন, “আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম ও ইস্‌হাক যে ঈশ্বরের সামনে বিশ্বস্ততাপূর্বক চলাফেরা করতেন, আজও পর্যন্ত আমার সমগ্র জীবনভোর যে ঈশ্বর আমার মেষপালক হয়ে থেকেছেন,
16 ১৬ সেই দূত, যিনি আমাকে সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত করেছেন তিনিই এই ছেলে দুটিকে আশীর্বাদ করুন। এদের মাধ্যমে আমার নাম ও আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহামের ও ইসহাকের নাম আখ্যাত হোক এবং এরা দেশের মধ্যে বহুগোষ্ঠী হোক।”
যে দূত আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেছেন, তিনিই এই বালকদের আশীর্বাদ করুন। তারা আমার এবং আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম ও ইস্‌হাকের নাম দ্বারাই পরিচিত হোক, আর তারা এই পৃথিবীর বুকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিলাভ করুক।”
17 ১৭ তখন ইফ্রয়িমের মাথায় বাবা ডান হাত দিয়েছেন দেখে যোষেফ অসন্তষ্ট হলেন, আর তিনি ইফ্রয়িমের মাথা থেকে মনঃশির মাথায় রাখার জন্য বাবার হাত তুলে ধরলেন।
যোষেফ যখন দেখলেন যে তাঁর বাবা তাঁর ডান হাত ইফ্রয়িমের মাথায় রেখেছেন তখন তিনি অসন্তুষ্ট হলেন; তাই তিনি তাঁর বাবার হাতটি মনঃশির মাথার উপর রাখার জন্য সেটি ধরে ইফ্রয়িমের মাথার উপর থেকে সরিয়ে দিলেন।
18 ১৮ যোষেফ বাবাকে বললেন, “বাবা, এমন না, এই প্রথমজাত, এরই মাথায় ডান হাত দিন।”
যোষেফ তাঁকে বললেন, “হে আমার বাবা, না না, এই প্রথমজাত, এরই মাথার উপর আপনার ডান হাতটি রাখুন।”
19 ১৯ কিন্তু তাঁর বাবা অসম্মত হয়ে বললেন, “বৎস তা আমি জানি, আমি জানি, এও এক জাতি হবে এবং মহানও হবে, তবুও এর ছোট ভাই এর থেকেও মহান হবে ও তার বংশ বহুগোষ্ঠী হবে।”
কিন্তু তাঁর বাবা তা প্রত্যাখ্যান করে বললেন, “আমি জানি, বাছা, আমি জানি। সেও এক জাতিতে পরিণত হবে, এবং সেও মহান হবে। তা সত্ত্বেও, তার ছোটো ভাই তার থেকেও মহান হবে এবং তার বংশধরেরা এক জাতিপুঞ্জ হবে।”
20 ২০ সেই দিন তিনি তাঁদেরকে আশীর্বাদ করে বললেন, “ইস্রায়েল তোমার নাম করে আশীর্বাদ করবে, বলবে, ঈশ্বর তোমাকে ইফ্রয়িমের ও মনঃশির সমান করুন।” এই ভাবে তিনি মনঃশি থেকে ইফ্রয়িমকে অগ্রগন্য করলেন।
সেদিন তিনি তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমার নামেই ইস্রায়েল এই আশীর্বাদ উচ্চারণ করবে: ‘ঈশ্বর তোমাকে ইফ্রয়িম ও মনঃশির মতো করুন।’” অতএব তিনি ইফ্রয়িমকে মনঃশির আগে রাখলেন।
21 ২১ পরে ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “দেখ, আমি মারা যাচ্ছি; কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে থাকবেন ও তোমাদেরকে আবার তোমাদের পূর্বপুরুষদের দেশে নিয়ে যাবেন।
পরে ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “আমি মরতে চলেছি, কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের সহবর্তী থাকবেন এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের দেশে তোমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।
22 ২২ আর তোমার ভাইদের থেকে এক অংশ তোমাকে বেশী দিলাম; তা আমি নিজের তরোয়াল ও ধনুকের মাধ্যমে ইমোরীয়দের হাত থেকে নিয়েছি।”
আর আমি তোমার দাদা-ভাইদের যা দেব তা থেকেও তোমাকে দেশের আরও একটি বেশি শৈলশিরা দেব, যে শৈলশিরাটি আমি আমার তরোয়াল ও আমার ধনুক দিয়ে ইমোরীয়দের কাছ থেকে অধিকার করেছিলাম।”

< আদিপুস্তক 48 >