< আদিপুস্তক 38 >

1 ঐ দিনের যিহূদা নিজের ভাইদের কাছ থেকে চলে গিয়ে অদুল্লমীয় হীরা নামে একটি লোকের কাছে গেল।
সেই সময় যিহূদা তাঁর দাদা-ভাইদের ছেড়ে হীরা নামক অদুল্লম নিবাসী একজন লোকের সঙ্গে থাকতে চলে গেলেন।
2 সে জায়গায় শূয় নামে এক কনানীয় পুরুষের মেয়েকে দেখে যিহূদা তাকে গ্রহণ করে তার কাছে গেল।
সেখানে যিহূদা শূয় নামক কনানীয় একজন লোকের মেয়ের দেখা পেলেন। তিনি তাকে বিয়ে করলেন ও তাকে প্রণয়জ্ঞাপনও করলেন;
3 পরে সে গর্ভবতী হয়ে ছেলে প্রসব করল ও যিহূদা তার নাম এর রাখল।
সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ল ও এক ছেলের জন্ম দিল, যার নাম রাখা হল এর।
4 পরে আবার তার গর্ভ হলে সে ছেলে প্রসব করে তার নাম ওনন রাখল।
সে আবার গর্ভবতী হল ও এক ছেলের জন্ম দিল, ও তার নাম রাখল ওনন।
5 আবার তার গর্ভ হলে সে ছেলে প্রসব করে তার নাম শেলা রাখল; এর জন্মের দিনের যিহূদা কষীবে ছিল।
সে আরও এক ছেলের জন্ম দিল ও তার নাম রাখল শেলা। শেলার জন্মের সময় তাঁরা কষীবেই বসবাস করতেন।
6 পরে যিহূদা তামর নামে একটি মেয়েকে এনে নিজের বড় ছেলে এরের সঙ্গে বিয়ে দিল।
যিহূদা তাঁর বড়ো ছেলে এরের জন্যে এক স্ত্রী এনেছিলেন, তার নাম তামর।
7 কিন্তু যিহূদার বড় ছেলে এর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে দুষ্ট হওয়াতে সদাপ্রভু তাকে মেরে ফেললেন।
কিন্তু যিহূদার বড়ো ছেলে এর, সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে দুষ্ট ছিল; তাই সদাপ্রভু তাকে মেরে ফেললেন।
8 তাতে যিহূদা ওননকে বলল, “তুমি নিজের ভাইয়ের স্ত্রীর কাছে যাও ও তার প্রতি দেবরের কর্তব্য সাধন করে নিজের ভাইয়ের জন্য বংশ উৎপন্ন কর।”
পরে যিহূদা ওননকে বললেন, “তোমার দাদার স্ত্রীর সঙ্গে শুয়ে পড়ো এবং তোমার দাদার হয়ে সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য তার প্রতি তোমার দায়িত্ব পালন করো।”
9 কিন্তু ঐ বংশ নিজের হবে না, এই বুঝে ওনন ভাইয়ের স্ত্রীর কাছে গেলেও ভাইয়ের বংশ উৎপন্ন করবার অনিচ্ছাতে মাটিতে বীর্যপাত করল।
কিন্তু ওনন জানত যে সেই সন্তানটি তার নিজের হবে না, তাই যখনই সে তার দাদার স্ত্রীর সাথে শুতো, সে তার বীর্য মাটিতে ফেলে দিত, যেন তাকে তার দাদার হয়ে কোনও সন্তানের জন্ম দিতে না হয়।
10 ১০ তার সেই কাজ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ হওয়াতে তিনি তাকেও হত্যা করলেন।
সে যা করল তা সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে অপকর্মরূপে গণ্য হল; তাই সদাপ্রভু তাকেও মেরে ফেললেন।
11 ১১ তখন যিহূদা ছেলের স্ত্রী তামরকে বলল, “যে পর্যন্ত আমার ছেলে শেলা বড় না হয়, ততক্ষণ তুমি নিজের বাবার বাড়ি গিয়ে বিধবাই থাক।” কারণ সে বলল যদি ভাইদের মতো সেও মারা যায়। অতএব তামর বাবার বাড়ি গিয়ে বাস করল।
যিহূদা তখন তাঁর পুত্রবধূ তামরকে বললেন, “আমার ছেলে শেলা যতদিন না বড়ো হচ্ছে, ততদিন তুমি তোমার বাবার ঘরে গিয়ে বিধবার মতো হয়ে থাকো।” কারণ তিনি ভাবলেন, “সেও হয়তো তার দাদাদের মতো মারা যাবে।” অতএব তামর তার বাবার ঘরে থাকতে চলে গেল।
12 ১২ পরে অনেক দিন গেলে শূয়ের মেয়ে যিহূদার স্ত্রী মারা গেল, পরে যিহূদা সান্ত্বনাযুক্ত হয়ে নিজের বন্ধু অদুল্লমীয় হীরার সঙ্গে তিম্নায়, যারা তাঁর মেষদের লোম কাটছিল, তাদের কাছে গেল।
বেশ কিছুকাল পর শূয়ের সেই মেয়ে, যিহূদার স্ত্রী মারা গেল। যিহূদা যখন তাঁর মর্মযন্ত্রণা কাটিয়ে উঠলেন, তখন তিনি তিম্নায় সেই লোকজনের কাছে উঠে গেলেন, যারা তাঁর মেষগুলির লোম ছাঁটছিল, এবং তাঁর বন্ধু অদুল্লমীয় হীরাও তাঁর সঙ্গে গেলেন।
13 ১৩ তখন কেউ তামরকে বলল, “দেখ, তোমার শ্বশুর নিজের মেষদের লোম কাটতে তিম্নায় যাচ্ছেন।”
যখন তামরকে বলা হল, “তোমার শ্বশুরমশাই তাঁর মেষগুলির লোম ছাঁটার জন্য তিম্নার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন,”
14 ১৪ তখন সে বিধবার বস্ত্র ত্যাগ করে ঘোমটা দিয়ে নিজেকে ঢাকলেন ও গায়ে কাপড় দিয়ে তিম্নার পথের পাশে অবস্থিত ঐনয়িমের প্রবেশস্থানে বসে থাকল; কারণ সে দেখল, শেলা বড় হলেও তার সঙ্গে তার বিয়ে হল না।
তখন সে তার বৈধব্য-বস্ত্রটি খুলে ফেলল, ছদ্মবেশ ধারণের জন্য ঘোমটায় মুখ ঢাকল, এবং পরে সেই ঐনয়িমের প্রবেশদ্বারে গিয়ে বসল, যা তিম্নায় যাওয়ার পথেই পড়ে। কারণ সে দেখল যে, যদিও শেলা এখন বেড়ে উঠেছে, তবুও তার স্ত্রীরূপে তাকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়নি।
15 ১৫ পরে যিহূদা তাকে দেখে বেশ্যা মনে করল, কারণ সে মুখ আচ্ছাদন করেছিল।
যিহূদা যখন তাকে দেখলেন, তখন তিনি ভাবলেন যে সে একজন বেশ্যা, কারণ সে তার মুখ ঢেকে রেখেছিল।
16 ১৬ তাই সে ছেলের স্ত্রীকে চিনতে না পারাতে পথের পাশে তার কাছে গিয়ে বলল, “এস, আমি তোমার কাছে যাই।” তামর বলল, “আমার কাছে আসার জন্য আমাকে কি দেবে?”
সে যে তাঁর পুত্রবধূ, একথা না বুঝেই তিনি রাস্তার ধারে তার কাছে গিয়ে বললেন, “এবার এসো, আমি তোমার সঙ্গে শুয়ে পড়ি।” “আর আপনার সঙ্গে শোয়ার জন্য আপনি আমাকে কী দেবেন?” সে জিজ্ঞাসা করল।
17 ১৭ সে বলল, “পাল থেকে একটি ছাগল ছানা পাঠিয়ে দেব। তামর বলল, যতক্ষণ তা না পাঠাও, ততক্ষণ আমার কাছে কি কিছু বন্ধক রাখবে?”
“আমার পশুপাল থেকে একটি ছাগশাবক আমি তোমার কাছে পাঠিয়ে দেব,” তিনি বললেন। “যতদিন না আপনি আমার কাছে সেটি পাঠাচ্ছেন, ততদিন আপনি কি জামানতরূপে আমাকে কিছু দেবেন?” সে জিজ্ঞাসা করল।
18 ১৮ সে বলল, “কি বন্ধক রাখব?” তামর বলল, “তোমার এই মোহর ও সুতো ও হাতের লাঠি।” তখন সে তাকে সেইগুলি দিয়ে তার কাছে গেল; তাতে সে তা থেকে গর্ভবতী হল।
তিনি বললেন, “জামানতরূপে তোমাকে আমি কী দেব?” “আপনার সিলমোহর ও সেটির সুতো, ও আপনার হাতের লাঠিটি,” সে উত্তর দিল। অতএব তিনি তাকে সেগুলি দিলেন ও তাঁর সঙ্গে শুলেন, এবং সে তাঁর দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ল।
19 ১৯ পরে সে উঠে চলে গেল এবং সেই আবরণ ত্যাগ করে নিজের বৈধব্য বস্ত্র পরিধান করল।
সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর, সে তার ওড়নাটি খুলে ফেলল এবং আবার তার বৈধব্য-বস্ত্রটি পরে নিল।
20 ২০ পরে যিহূদা সেই স্ত্রীলোকের কাছ থেকে বন্ধক দ্রব্য নেবার জন্য নিজের অদুল্লমীয় বন্ধুর হাতে ছাগল ছানাটি পাঠিয়ে দিল, কিন্তু সে তাকে পেল না।
ইতিমধ্যে যিহূদা সেই মহিলাটির কাছ থেকে তাঁর জামানতটি ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে তাঁর সেই অদুল্লমীয় বন্ধুর মাধ্যমে সেই ছাগশাবকটি পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু তিনি তাকে খুঁজে পাননি।
21 ২১ তখন সে সেখানকার লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করল, “ঐনয়িমের পথের পাশে যে বেশ্যা ছিল, সে কোথায়?” তারা বলল, “এ জায়গায় কোনো বেশ্যা আসেনি।
সেখানে বসবাসকারী লোকজনকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “ঐনয়িমের রাস্তার ধারে যে দেবদাসীটি ছিল, সে কোথায়?” তারা বলল, “এখানে কোনও দেবদাসী থাকে না।”
22 ২২ পরে সে যিহূদার কাছে ফিরে গিয়ে বলল, আমি তাকে পেলাম না এবং সেখানকার লোকেরাও বলল, এ জায়গায় কোনো বেশ্যা আসেনি।”
অতএব তিনি যিহূদার কাছে ফিরে গেলেন ও বললেন, “আমি তাকে খুঁজে পাইনি। এছাড়াও, সেখানে বসবাসকারী লোকজনও বলল, ‘এখানে কোনও দেবদাসী থাকে না।’”
23 ২৩ তখন যিহূদা বলল, “তার কাছে যা আছে, সে তা রাখুক, না হলে আমরা লজ্জায় পড়ব। দেখ, আমি এই ছাগল ছানাটি পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি তাকে পেলে না।”
তখন যিহূদা বললেন, “তার কাছে যা আছে তা সে রেখে দিক, তা না হলে আমাদের এক হাসির খোরাক হতে হবে। যাই হোক না কেন, আমি তো এই ছাগশাবকটি তার কাছে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি তাকে খুঁজে পাওনি।”
24 ২৪ প্রায় তিন মাস পরে কেউ যিহূদাকে বলল, “তোমার ছেলের স্ত্রী তামর ব্যভিচারিণী হয়েছে, আরো দেখ, ব্যভিচারের জন্য তার গর্ভ হয়েছে।” তখন যিহূদা বলল, “তাকে বাইরে এনে পুড়িয়ে দাও।”
প্রায় তিন মাস পর যিহূদাকে বলা হল, “আপনার পুত্রবধূ তামর বেশ্যাবৃত্তির অপরাধ করেছে, এবং পরিণামস্বরূপ এখন সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে।” যিহূদা বললেন, “তাকে বের করে আনো ও আগুনে পুড়িয়ে মারো!”
25 ২৫ পরে বাইরে আনার দিনের সে শ্বশুরকে বলে পাঠাল, যার এই সব বস্তু, সেই পুরুষ থেকে আমার গর্ভ হয়েছে। সে আরো বলল, “এই মোহর, সুতো ও লাঠি কার? চিনে দেখ।”
তাকে যখন বের করে আনা হচ্ছিল, সে তখন তার শ্বশুরের কাছে একটি খবর পাঠিয়েছিল। “যিনি এগুলির মালিক, তাঁর দ্বারাই আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছি,” সে বলল। আর সে এও বলল, “দেখুন তো, এই সিলমোহর ও সুতো এবং লাঠিটি কার তা আপনি চিনতে পারেন কি না।”
26 ২৬ তখন যিহূদা সেগুলি চিনে বলল, “সে আমার থেকেও অনেক ধার্মিক, কারণ আমি তাকে নিজের ছেলে শেলাকে দিইনি। পরে যিহূদা তাঁর সঙ্গে আর কোনো শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলেন না।”
যিহূদা সেগুলি চিনতে পেরে বললেন, “সে আমার থেকে বেশি ধার্মিক, যেহেতু আমি তাকে আমার ছেলে শেলার হাতে তুলে দিইনি।” তিনি আর কখনও তামরের সঙ্গে শয়ন করেননি।
27 ২৭ পরে তামরের প্রসবকাল উপস্থিত হল, আর দেখ। তার গর্ভে যমজ সন্তান।
যখন তামরের প্রসবকাল এসে উপস্থিত হল, তখন দেখা গেল তার গর্ভে যমজ ছেলে।
28 ২৮ তার প্রসবকালে একটি বালক হাত বের করল; তাতে ধাত্রী তার সেই হাত ধরে রক্তবর্ণ সুতো বেঁধে বলল, “এই প্রথমে ভূমিষ্ট হল।”
যখন সে সন্তান প্রসব করছিল, তাদের মধ্যে একজন তার হাত বাইরে বের করল; অতএব ধাত্রী টকটকে লাল রংয়ের সুতো নিয়ে সেটি তার কব্জিতে বেঁধে দিল ও বলল, “এই প্রথমে বের হয়েছে।”
29 ২৯ কিন্তু সে নিজের হাত টেনে নিলে দেখ, তার ভাই ভূমিষ্ট হল; তখন ধাত্রী বলল, “তুমি কিভাবে নিজের জন্য ভেদ করে আসলে?” অতএব তার নাম পেরস [ভেদ] হল।
কিন্তু সে যখন তার হাতটি টেনে নিল, তখন তার ভাই বের হয়ে এল, ও ধাত্রী বলল, “অতএব তুমি এভাবেই আবির্ভূত হয়েছ!” আর তার নাম রাখা হল পেরস।
30 ৩০ পরে হাতে রক্তবর্ণ সুতো বাঁধা তার ভাই ভূমিষ্ট হলে তার নাম সেরহ হল।
পরে তার সেই ভাই বের হয়ে এল, যার কব্জিতে টকটকে লাল রংয়ের সুতো বাঁধা ছিল। আর তার নাম রাখা হল সেরহ।

< আদিপুস্তক 38 >