< আদিপুস্তক 29 >

1 পরে যাকোব পূর্বদিকের লোকদের দেশে গেলেন। সেখানে দেখলেন, মাঠের মধ্যে এক কূপ আছে,
পরে যাকোব তাঁর যাত্রাপথে এগিয়ে গেলেন এবং প্রাচ্যদেশীয় লোকদের দেশে পৌঁছালেন।
2 আর দেখ, তার কাছে ভেড়ার তিনটি পাল শুয়ে আছে; কারণ লোকে ভেড়ার পাল সকলকে সেই কুয়োর জল পান করাত; আর সেই কূপের মুখে একটা বড় পাথর ছিল।
সেখানে খোলা মাঠের মধ্যে তিনি একটি কুয়ো দেখতে পেলেন, যার কাছে মেষের তিনটি পাল শুয়েছিল, কারণ সেই কুয়ো থেকে পালগুলিকে জলপান করানো হত। কুয়োর মুখের উপর রাখা পাথরটি খুব বড়ো ছিল।
3 সেই জায়গায় পাল সকল জড়ো করা হলে লোকে কুয়োর মুখ থেকে পাথরখানা সরিয়ে ভেড়াদের জল পান করাত, পরে আবার কুয়োর মুখে সঠিক জায়গায় সেই পাথর রাখত।
সবকটি পাল যখন সেখানে একত্রিত হত, তখন মেষপালকেরা কুয়োর মুখ থেকে সেই পাথরটি সরিয়ে মেষদের জলপান করাতো। পরে তারা আবার কুয়োর মুখে যথাস্থানে পাথরটি বসিয়ে দিত।
4 যাকোব তাদেরকে বললেন, “ভাই সব, তোমরা কোন জায়গার লোক?” তারা বলল, “আমরা হারনের লোক।”
যাকোব মেষপালকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আমার ভাইসকল, তোমরা কোথাকার লোক?” “আমরা হারণের অধিবাসী,” তারা উত্তর দিল।
5 তিনি বললেন, “নাহরের নাতি লাবণকে চেনো কি না?” তারা বলল, “চিনি।”
তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কি সেই লাবনকে চেন, যিনি নাহোরের নাতি?” “হ্যাঁ, আমরা তাঁকে চিনি,” তারা উত্তর দিল।
6 তিনি বললেন, “সে ভালো আছে তো?” তারা বলল, “ভালো;” দেখ, তাঁর মেয়ে রাহেল ভেড়ার পাল নিয়ে আসছেন।
তখন যাকোব জিজ্ঞাসা করলেন, “তিনি ভালো আছেন তো?” “হ্যাঁ, তিনি ভালো আছেন,” তারা বলল, “আর দেখুন, তাঁর মেয়ে রাহেল মেষপাল নিয়ে এদিকেই আসছে।”
7 তখন তিনি বললেন, “দেখ, এখনও অনেক বেলা আছে; পশুপাল জড়ো করার দিন হয়নি; তোমরা মেষদেরকে জল পান করিয়ে আবার চরাতে নিয়ে যাও।”
“দেখো,” তিনি বললেন, “সূর্য এখনও মাথার উপরেই আছে; পালগুলি একত্রিত করার সময় এখনও হয়নি। মেষদের জলপান করিয়ে তাদের আবার চরাতে নিয়ে যাও।”
8 তারা বলল, “যতক্ষণ পাল সব জড়ো না হয়, ততক্ষণ আমরা তা করতে পারি না; পরে কুয়োর মুখ থেকে পাথর খানা সরান যায়; তখন আমরা ভেড়াদের জল পান করাই।”
“আমরা তা পারবো না,” তারা উত্তর দিল, “আগে সব পাল একসঙ্গে একত্রিত হোক এবং কুয়োর মুখ থেকে পাথরটি সরানো হোক। পরে আমরা মেষদের জলপান করাব।”
9 যাকোব তাদের সঙ্গে এরকম কথাবার্তা বলছেন, এমন দিনের রাহেল নিজের বাবার মেষপাল নিয়ে উপস্থিত হলেন, কারণ তিনি ভেড়াপালিকা ছিলেন।
তিনি তখনও তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, ইতিমধ্যে রাহেল তাঁর বাবার মেষপাল নিয়ে উপস্থিত হলেন, কারণ তিনি এক মেষপালিকা ছিলেন।
10 ১০ তখন যাকোব নিজের মামা লাবনের মেয়ে রাহেলকে ও মামার ভেড়ার পালকে দেখামাত্র কাছে গিয়ে কুয়োর মুখ থেকে পাথরখানা সরিয়ে তাঁর মামা লাবনের ভেড়ার পালকে জল পান করালেন।
যাকোব যখন তাঁর মামা লাবনের মেয়ে রাহেলকে, ও লাবনের মেষদের দেখতে পেলেন, তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে কুয়োর মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে দিলেন ও তাঁর মামার মেষদের জলপান করালেন।
11 ১১ পরে যাকোব রাহেলকে চুম্বন করে উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে লাগলেন।
পরে যাকোব রাহেলকে চুমু দিলেন এবং জোর গলায় কাঁদতে শুরু করলেন।
12 ১২ আপনি যে তাঁর বাবার কুটুম্ব ও রিবিকার ছেলে, যাকোব রাহেলকে এই পরিচয় দিলে রাহেল দৌড়ে গিয়ে নিজের বাবাকে সংবাদ দিলেন।
তিনি রাহেলকে বলে দিয়েছিলেন যে তিনি রাহেলের বাবার এক আত্মীয় ও রিবিকার এক ছেলে। তাই রাহেল দৌড়ে গিয়ে তাঁর বাবাকে সেকথা জানালেন।
13 ১৩ তাতে লাবন তাঁর ভাগ্নে যাকোবের সংবাদ পেয়ে দৌড়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, তাঁকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করলেন ও নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন; পরে তিনি লাবণকে বলা সমস্ত বৃত্তান্ত জানালেন।
যে মুহূর্তে লাবন তাঁর বোনের ছেলে যাকোবের খবর পেলেন, তিনি তাড়াতাড়ি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তিনি তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন ও তাঁকে চুমু দিলেন এবং তাঁকে নিজের ঘরে নিয়ে এলেন, ও যাকোব সেখানে তাঁকে সবকিছু বলে শোনালেন।
14 ১৪ তাতে লাবন বললেন, “তুমি সত্যিই আমার হাড় ও আমার মাংস।” পরে যাকোব তাঁর বাড়িতে এক মাস বাস করলেন।
তখন লাবন তাঁকে বললেন, “তুমি আমার আপন রক্তমাংসের আত্মীয়।” যাকোব সম্পূর্ণ এক মাস লাবনের সঙ্গে থাকার পর,
15 ১৫ পরে লাবন যাকোবকে বললেন, “তুমি আত্মীয় বলে কি বিনা বেতনে আমার দাসের কাজ করবে? বল দেখি, কি বেতন নেবে?”
লাবন যাকোবকে বললেন, “তুমি আমার এক আত্মীয় বলে কি কিছু না নিয়েই আমার জন্য কাজ করবে? তোমার বেতন কত হওয়া উচিত তা তুমিই বলে দাও।”
16 ১৬ লাবনের দুই মেয়ে ছিলেন; বড়টার নাম লেয়া ও ছোটটার নাম রাহেল।
লাবনের দুই মেয়ে ছিল; বড়টির নাম লেয়া ও ছোটোটির নাম রাহেল।
17 ১৭ লেয়া মৃদুলোচনা, কিন্তু রাহেল রূপবতী ও সুন্দরী ছিলেন।
লেয়ার চোখদুটি দুর্বল ছিল, কিন্তু রাহেল স্বাস্থ্যবতী ও সুন্দরী ছিলেন।
18 ১৮ আর যাকোব রাহেলকে ভালবাসতেন, এজন্য তিনি উত্তর করলেন, “আপনার ছোট মেয়ে রাহেলের জন্য আমি সাত বছর আপনার দাসের কাজ করব।”
যাকোব রাহেলের প্রেমে পড়ে গেলেন এবং তিনি বললেন, “আপনার ছোটো মেয়ে রাহেলের জন্য আমি সাত বছর আপনার কাছে কাজ করব।”
19 ১৯ লাবন বললেন, “অন্য পাত্রকে দান করার থেকে তোমাকে দান করা ভালো বটে; আমার কাছে থাক।”
লাবন বললেন, “তাকে অন্য কোনও পুরুষের হাতে তুলে দেওয়ার পরিবর্তে বরং তোমাকে দেওয়াই ভালো। আমার সঙ্গে তুমি এখানেই থাকো।”
20 ২০ এই ভাবে যাকোব রাহেলের জন্য সাত বছর দাসের কাজ করলেন; রাহেলের প্রতি তাঁর ভালোবাসার জন্য এক এক বছর তাঁর কাছে এক এক দিন মনে হল।
অতএব যাকোব রাহেলকে পাওয়ার জন্য সাত বছর দাসত্ব করলেন, কিন্তু যেহেতু তিনি রাহেলকে ভালোবেসেছিলেন তাই এতগুলি বছর তাঁর কাছে মাত্র কয়েক দিন বলে মনে হল।
21 ২১ পরে যাকোব লাবণকে বললেন, “আমার নিয়মিত কাল সম্পূর্ণ হল, এখন আমার স্ত্রী আমাকে দিন, আমি তার কাছে যাব।”
পরে যাকোব লাবনকে বললেন, “আমার স্ত্রীকে আমার হাতে তুলে দিন। আমার সময় সম্পূর্ণ হয়েছে, আর আমি তাকে প্রণয়জ্ঞাপন করতে চাই।”
22 ২২ তখন লাবন ঐ জায়গার সব লোককে জড়ো করে ভোজ প্রস্তুত করলেন।
অতএব লাবন সেখানকার সব লোকজনকে একত্রিত করে এক ভোজসভার আয়োজন করলেন।
23 ২৩ আর সন্ধ্যাবেলায় তিনি নিজের মেয়ে লেয়াকে নিয়ে তাঁর কাছে এনে দিলেন, আর যাকোব তাঁর কাছে গেলেন।
কিন্তু সন্ধ্যাবেলায়, তিনি তাঁর মেয়ে লেয়াকে এনে তাঁকে যাকোবের কাছে পৌঁছে দিলেন এবং যাকোব তাঁকে প্রণয়জ্ঞাপন করলেন।
24 ২৪ আর লাবন সিল্পা নামে নিজের দাসীকে নিজের মেয়ে লেয়ার দাসী বলে তাঁকে দিলেন।
আর লাবন তাঁর দাসী সিল্পাকে তাঁর মেয়ে লেয়ার সেবিকারূপে তাঁকে দিলেন।
25 ২৫ আর সকাল হলে, দেখ, তিনি লেয়া। তাতে যাকোব লাবনকে বললেন, “আপনি আমার সঙ্গে এ কি ব্যবহার করলেন? আমি কি রাহেলের জন্য আপনার দাসের কাজ করিনি? তবে কেন আমাকে প্রতারণা করলেন?”
যখন সকাল হল, দেখা গেল তিনি লেয়া! অতএব যাকোব লাবনকে বললেন, “আপনি আমার সঙ্গে এ কী করলেন? আমি রাহেলের জন্যই তো আপনার দাসত্ব করেছি, তাই না? তবে কেন আপনি আমাকে ঠকালেন?”
26 ২৬ তখন লাবন বললেন, “বড়র আগে ছোটকে দান করা আমাদের এই জায়গায় কর্তব্য নয়।
লাবন উত্তর দিলেন, “আমাদের এখানে বড়ো মেয়ের আগে ছোটো মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রথা নেই।
27 ২৭ তুমি এর সপ্তাহ পূর্ণ কর; পরে আর সাত বছর আমার দাসের কাজ স্বীকার করবে, সেজন্য আমরা ওকেও তোমাকে দান করব।”
এই মেয়েটির দাম্পত্য-সপ্তাহ সম্পূর্ণ করো; আরও সাত বছর কাজ করার পরিবর্তে পরে আমরা ছোটো মেয়েটিকেও তোমার হাতে তুলে দেব।”
28 ২৮ তাতে যাকোব সেই রকম করলেন, তাঁর সপ্তাহ পূর্ণ করলেন; পরে লাবন তাঁর সঙ্গে নিজের মেয়ে রাহেলের বিয়ে দিলেন।
আর যাকোব তেমনই করলেন। তিনি লেয়ার সপ্তাহ সম্পূর্ণ করলেন, এবং পরে লাবন তাঁর মেয়ে রাহেলকে যাকোবের স্ত্রী হওয়ার জন্য তাঁর হাতে তুলে দিলেন।
29 ২৯ আর লাবন বিলহা নামে নিজের দাসীকে রাহেলের দাসী বলে তাঁকে দিলেন।
লাবন তাঁর দাসী বিলহাকে রাহেলের সেবিকারূপে তাঁকে দিলেন।
30 ৩০ তাই তিনি রাহেলের কাছেও গেলেন এবং লেয়ার থেকে রাহেলকে বেশি ভালবাসলেন এবং আরও সাত বছর লাবনের কাছে দাসের কাজ করলেন।
যাকোব রাহেলকেও প্রণয়জ্ঞাপন করলেন, এবং লেয়াকে তিনি যত না ভালোবাসতেন, রাহেলকে সে তুলনায় অনেক বেশি ভালোবাসতেন। আর তিনি লাবনের জন্য আরও সাত বছর কাজ করলেন।
31 ৩১ পরে সদাপ্রভু লেয়াকে অবজ্ঞা করা দেখে তাঁর গর্ভ মুক্ত করলেন, কিন্তু রাহেল বন্ধ্যা হলেন।
সদাপ্রভু যখন দেখলেন যে লেয়া ভালোবাসা পাচ্ছেন না, তখন তিনি তাঁকে গর্ভধারণের ক্ষমতা দিলেন, কিন্তু রাহেল নিঃসন্তান রয়ে গেলেন।
32 ৩২ আর লেয়া গর্ভবতী হয়ে ছেলের জন্ম দিলেন ও তার নাম রুবেন [ছেলেকে দেখ] রাখলেন; কারণ তিনি বললেন, “সদাপ্রভু আমার দুঃখ দেখেছেন; এখন আমার স্বামী আমাকে ভালবাসবেন।”
লেয়া অন্তঃসত্ত্বা হলেন এবং একটি ছেলের জন্ম দিলেন। তিনি তাঁর নাম রাখলেন রূবেণ, কারণ তিনি বললেন, “সদাপ্রভু আমার দুর্দশা দেখেছেন বলেই এমনটি ঘটেছে। এখন নিশ্চয় আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসবেন।”
33 ৩৩ পরে তিনি আবার গর্ভবতী হয়ে ছেলের জন্ম দিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু শুনেছেন যে, আমি ঘৃণার পাত্রী, তাই আমাকে এই ছেলেও দিলেন;” আর তার নাম শিমিয়ন [শ্রবন] রাখলেন।
তিনি আবার গর্ভবতী হলেন, এবং যখন তিনি আর একটি ছেলের জন্ম দিলেন, তখন তিনি বললেন, “যেহেতু সদাপ্রভু শুনেছেন যে আমি ভালোবাসা পাইনি, তাই তিনি আমাকে এই একটি ছেলেও দিলেন।” অতএব তিনি তার নাম রাখলেন শিমিয়োন।
34 ৩৪ আবার তিনি গর্ভবতী হয়ে ছেলের জন্ম দিয়ে বললেন, “এ বার আমার স্বামী আমাতে আসক্ত হবেন, কারণ আমি তাঁর জন্য তিন ছেলের জন্ম দিয়েছি;” অতএব তার নাম, লেবি [আসক্ত] রাখা গেল।
আবার তিনি গর্ভবতী হলেন, এবং যখন তিনি আর একটি ছেলের জন্ম দিলেন, তখন তিনি বললেন, “এখন অবশেষে আমার স্বামী আমার প্রতি সংলগ্ন হবেন, কারণ আমি তাঁর জন্য তিন ছেলের জন্ম দিয়েছি।” অতএব তার নাম রাখা হল লেবি।
35 ৩৫ পরে আবার তাঁর গর্ভ হলে তিনি ছেলের জন্ম দিয়ে বললেন, “এ বার আমি সদাপ্রভুর স্তব গান করি;” অতএব তিনি তার নাম যিহূদা [স্তব] রাখলেন। তারপরে তাঁর গর্ভ বন্ধ হল।
তিনি আর একবার গর্ভবতী হলেন, এবং যখন তিনি আর একটি ছেলের জন্ম দিলেন, তখন তিনি বললেন, “এবার আমি সদাপ্রভুর প্রশংসা করব।” অতএব তিনি তার নাম রাখলেন যিহূদা। পরে তিনি আর কোনও সন্তানের জন্ম দেননি।

< আদিপুস্তক 29 >