< যাত্রাপুস্তক 10 >

1 পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ফরৌণের কাছে যাও; কারণ আমি তার ও তার দাসেদের হৃদয় কঠিন করলাম, যেন আমি তাদের মধ্যে আমার এই সব চিহ্ন দেখাই
পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণের কাছে যাও, কারণ আমি তার হৃদয় ও তার কর্মচারীদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি যেন তাদের মাঝখানে আমি আমার এই চিহ্নকাজগুলি সম্পন্ন করতে পারি
2 এবং আমি মিশরীয়দের প্রতি যা যা করেছি ও তাঁদের মধ্যে আমার যা কিছু চিহ্ন কাজ করেছি, তার বর্ণনা যেন তুমি তোমার ছেলে ও নাতিদেরকে বল এবং আমি সদাপ্রভু, এটা তোমরা জানো।”
ও যেন তুমি তোমার সন্তানদের ও নাতি-নাতনিদের বলতে পারো কীভাবে আমি মিশরীয়দের সঙ্গে রূঢ়ভাবে আচরণ করেছি এবং কীভাবে আমি তাদের মাঝখানে আমার চিহ্নকাজগুলি সম্পন্ন করেছি, এবং তোমরা যেন জানতে পারো যে আমিই সদাপ্রভু।”
3 তখন মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু, ইব্রীয়দের ঈশ্বর, এই কথা বলেন, ‘তুমি আমার সামনে নম্র হতে কতদিন অসম্মত হবে?’ আমার সেবা করার জন্য আমার প্রজাদেরকে ছেড়ে দাও।
অতএব মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গেলেন এবং তাঁকে বললেন, “হিব্রুদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘আর কত কাল তুমি আমার সামনে নিজেকে নত করতে অসম্মত হবে? আমার প্রজাদের যেতে দাও, যেন তারা আমার আরাধনা করতে পারে।
4 কিন্তু যদি আমার প্রজাদেরকে ছেড়ে দিতে রাজি না হও, তবে দেখ, আমি কাল তোমার সীমানাতে পঙ্গপাল আনব।
যদি তুমি তাদের যেতে না দাও, তবে আগামীকাল আমি তোমার দেশে পঙ্গপাল নিয়ে আসব।
5 তারা পৃথিবী এমন ভাবে আচ্ছন্ন করবে যে, কেউ ভূমি দেখতে পাবে না এবং শিলাবৃষ্টি থেকে বেঁচে বাকি তোমাদের যা কিছু আছে, তা তারা খেয়ে ফেলবে এবং ক্ষেতে উৎপন্ন তোমাদের গাছগুলিও খাবে।
সেগুলি মাঠঘাট এমনভাবে ঢেকে ফেলবে যেন তা দেখা না যায়। শিলাবৃষ্টির পর তোমাদের অল্পসল্প যা কিছু অবশিষ্ট আছে, সেগুলি ও তার পাশাপাশি তোমাদের মাঠেঘাটে যত গাছপালা বেড়ে উঠছে, সেসব সেগুলি গ্রাস করবে।
6 আর তোমার বাড়ি ও তোমার দাসের বাড়ি ও সমস্ত মিশরীয় লোকের বাড়ির সব জায়গা ভরে যাবে; পৃথিবীতে তোমার পূর্বপুরুষদের ও তাঁদের পূর্বপুরুষদের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত সেই রকম দেখা যায়নি।” তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে ফরৌণের কাছ থেকে বাইরে গেলেন।
সেগুলি তোমার বাড়িঘর ও তোমার কর্মকর্তাদের এবং সমস্ত মিশরীয়ের বাড়িঘর ভরিয়ে তুলবে—তা এমন এক ঘটনা হবে যা তোমার বাবা-মায়েরা বা তোমার পূর্বপুরুষরাও এদেশে তাদের বসতি স্থাপন করা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কখনও দেখেনি।’” পরে মোশি ঘুরে দাঁড়ালেন ও ফরৌণকে ছেড়ে চলে গেলেন।
7 আর ফরৌণের দাসেরা তাঁকে বলল, “এ ব্যক্তি কত দিন আমাদের ফাঁদ হয়ে থাকবে? এই লোকদের ঈশ্বর সেবা করার জন্য এদেরকে ছেড়ে দিন; আপনি কি এখনও বুঝছেন না যে, মিশর দেশ ছারখার হয়ে গেল?”
ফরৌণের কর্মকর্তারা তাঁকে বললেন, “আর কত দিন এই লোকটি আমাদের পক্ষে এক ফাঁদ হয়ে থাকবে? লোকদের যেতে দিন, যেন তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আরাধনা করতে পারে। আপনি কি এখনও বুঝতে পারছেন না যে মিশর ছারখার হয়ে গিয়েছে?”
8 তখন মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে আবার আনা হল; আর তিনি তাদেরকে বললেন, “যাও গিয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা কর; কিন্তু কে কে যাবে?”
তখন মোশি ও হারোণকে ফরৌণের কাছে ফিরিয়ে আনা হল। “যাও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আরাধনা করো,” তিনি বললেন। “কিন্তু আমায় বলো, কে কে যাবে।”
9 মোশি বললেন, “আমরা আমাদের শিশু ও বৃদ্ধদেরকে, আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে এবং গরু ভেড়ার পালও সঙ্গে নিয়ে যাব, কারণ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আমাদের উৎসব করতে হবে।”
মোশি উত্তর দিলেন, “আমরা আমাদের শিশু ও বৃদ্ধদের, আমাদের ছেলেমেয়েদের, এবং আমাদের মেষপাল ও পশুপাল সঙ্গে নিয়ে যাব, কারণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমাদের এক উৎসব পালন করতে হবে।”
10 ১০ তখন ফরৌণ তাদেরকে বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকুন, যদি আমি তোমাদেরকে ও তোমাদের শিশুদেরকে ছেড়ে দিই; দেখ, অনিষ্ট তোমাদের সামনে।
ফরৌণ বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের সহবর্তী হোন—আমি যদি মহিলা ও শিশুদের সঙ্গে নিয়ে তোমাদের যেতে দিই! এতে তোমাদের অশুভ উদ্দেশ্য প্রকাশিত হচ্ছে।
11 ১১ তা হবে না; তোমাদের পুরুষেরা গিয়ে সদাপ্রভুর সেবা করুক; কারণ তোমরা তো এটাই চাইছ।” পরে তাঁরা ফরৌণের সামনে থেকে চলে গেলেন।
না! শুধুমাত্র পুরুষরাই যাক এবং সদাপ্রভুর আরাধনা করুক, যেহেতু তোমরা তো তাই চেয়েছিলে।” পরে মোশি ও হারোণকে ফরৌণের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল।
12 ১২ পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি মিশর দেশের উপরে পঙ্গপালের জন্য হাত তোলো, তাতে তারা মিশর দেশে এসে ক্ষেতের সমস্ত ঔষধি গাছ খাবে, শিলাবৃষ্টি যা কিছু রেখে গেছে, সবই খাবে।”
আর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “মিশরের উপর তোমার হাত প্রসারিত করো যেন পঙ্গপালেরা দেশের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসে ও শিলাবৃষ্টির পর যা কিছু অবশিষ্ট থেকে গিয়েছে, মাঠঘাটে বেড়ে ওঠা সেসবকিছু সেগুলি গ্রাস করে নেয়।”
13 ১৩ তখন মোশি মিশর দেশের উপরে তাঁর লাঠি তুললেন, তাতে সদাপ্রভু সমস্ত দিন ও সমস্ত রাত দেশে পূর্ব দিকের বায়ু বহালেন; আর সকাল হলে পূর্ব দিকের বায়ু পঙ্গপাল উঠিয়ে আনল।
অতএব মোশি মিশর দেশের উপর তাঁর ছড়িটি বাড়িয়ে দিলেন, আর সদাপ্রভু সারাদিন ও সারারাত দেশে পূর্বীয় বাতাস বইতে দিলেন। সকাল হতে না হতেই সেই বাতাস ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল নিয়ে এল;
14 ১৪ তাতে সারা মিশর দেশের উপরে পঙ্গপালে ভরে গেল ও মিশরের সমস্ত সীমানাতে পঙ্গপাল পড়ল। তা খুব ভয়ানক হল; সেই রকম পঙ্গপাল আগে কখনও হয়নি এবং পরেও কখনও হবে না।
সেগুলি সমগ্র মিশর দেশে হানা দিল এবং বিপুল সংখ্যায় দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে থিতুও হল। আগে কখনও পঙ্গপালের এরকম আঘাত সহ্য করতে হয়নি, আর কখনও তা করতেও হবে না।
15 ১৫ তারা সমস্ত এলাকা ঢেকে ফেলল, তাতে দেশ অন্ধকার হল এবং ভূমির যে ঔষধি গাছ ও বৃক্ষের যে ফল শিলাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেয়েছিল, সে সমস্ত তারা খেয়ে ফেলল; সমস্ত মিশর দেশে বড় গাছ বা ক্ষেতের গাছ, সবুজ গাছ বলে কিছুই রইল না।
অন্ধকার হওয়ার আগেই সেগুলি সমস্ত মাঠঘাট ঢেকে ফেলল। শিলাবৃষ্টির পর যা কিছু অবশিষ্ট থেকে গিয়েছিল—মাঠেঘাটে বেড়ে ওঠা সবকিছু এবং গাছের ফলমূল সেগুলি গ্রাস করে ফেলল। মিশর দেশের সর্বত্র গাছপালায় বা লতাপাতায় কোনও সবুজ অংশ অবশিষ্ট রইল না।
16 ১৬ তখন ফরৌণ তাড়াতাড়ি মোশি ও হারোণকে ডেকে বললেন, “আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে ও তোমাদের বিরুদ্ধে পাপ করেছি।
ফরৌণ তাড়াতাড়ি মোশি ও হারোণকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, “আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে ও তোমাদের বিরুদ্ধেও পাপ করেছি।
17 ১৭ অনুরোধ করি, শুধুমাত্র এবার আমার পাপ ক্ষমা কর এবং আমাদের থেকে এই মৃত্যুকে দূর করার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা কর।”
এখন আর একবার আমার পাপ ক্ষমা করে দাও, এবং এই মৃত্যুজনক আঘাত আমার কাছ থেকে দূর করার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করো।”
18 ১৮ তখন তিনি ফরৌণের কাছ থেকে বাইরে গিয়ে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন;
মোশি পরে ফরৌণকে ছেড়ে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে গেলেন।
19 ১৯ আর সদাপ্রভু বাতাসকে প্রবল পশ্চিম বাতাসে পরিবর্তন করলেন; তা পঙ্গপালদেরকে উঠিয়ে নিয়ে সূফসাগরে তাড়িয়ে দিল, তাতে মিশরের সমস্ত সীমানাতে একটিও পঙ্গপাল থাকল না।
আর সদাপ্রভু সেই বাতাসকে প্রচণ্ড এক পশ্চিমী বাতাসে পরিবর্তিত করে দিলেন, যা পঙ্গপালগুলিকে ধরে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে লোহিত সাগরে ফেলে দিল। মিশরে কোথাও আর একটিও পঙ্গপাল অবশিষ্ট রইল না।
20 ২০ কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করলেন, আর তিনি ইস্রায়েল সন্তানদের ছাড়লেন না।
কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করে দিলেন, এবং তিনি ইস্রায়েলীদের যেতে দিলেন না।
21 ২১ পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি আকাশের দিকে হাত তোলো; তাতে মিশর দেশে অন্ধকার হবে ও সেই অন্ধকার গাঢ় হবে।”
পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আকাশের দিকে তোমার হাত প্রসারিত করো যেন মিশরের উপর অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে—তা এমন অন্ধকার যা অনুভব করা যায়।”
22 ২২ পরে মোশি আকাশের দিকে হাত তুললে তিন দিন পর্যন্ত সমস্ত মিশর দেশে গাঢ় অন্ধকার হল।
অতএব মোশি আকাশের দিকে তাঁর হাত প্রসারিত করলেন, এবং সমগ্র মিশর দেশ তিনদিনের জন্য অন্ধকারে ঢেকে গেল।
23 ২৩ তিনদিন পর্যন্ত কেউ কাকেও দেখতে পেল না এবং কেউ নিজের জায়গা থেকে উঠল না; কিন্তু ইস্রায়েল সন্তানদের জন্য তাদের বাসস্থানে আলো ছিল।
তিন দিন ধরে কেউ কাউকে দেখতে পায়নি বা চলাফেরাও করতে পারেনি। অথচ ইস্রায়েলীরা যেখানে বসবাস করত সেখানে তাদের কাছে আলো ছিল।
24 ২৪ তখন ফরৌণ মোশিকে ডেকে বললেন, “যাও, গিয়ে সদাপ্রভুর সেবা কর; শুধুমাত্র তোমাদের ভেড়ার পাল ও গরুর পাল থাকুক; তোমাদের শিশুরাও তোমাদের সঙ্গে যাক।”
তখন ফরৌণ মোশিকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, “যাও, সদাপ্রভুর আরাধনা করো। এমনকি তোমাদের মহিলারা এবং সন্তানেরাও তোমাদের সঙ্গে যেতে পারে; শুধু তোমাদের মেষপাল ও পশুপাল এখানে রেখে যাও।”
25 ২৫ কিন্তু মোশি বললেন, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার জন্য আমাদের হাতে বলি ও হোমদ্রব্য সমর্পণ করা আপনার কর্তব্য।
কিন্তু মোশি বললেন, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার বলি এবং হোমবলি উৎসর্গ করার জন্য আপনাকে আমাদের অনুমতি দিতে হবে।
26 ২৬ আমাদের সঙ্গে আমাদের পশুরাও যাবে, একটি খুরও বাকি থাকবে না; কারণ আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবার জন্য তাঁদের মধ্যে থেকে বলি করতে হবে এবং কি কি দিয়ে সদাপ্রভুর সেবা করব, তা সেখানে উপস্থিত না হলে আমরা জানতে পারব না।”
আমাদের গৃহপালিত পশুপালও আমাদের সঙ্গে অবশ্যই যাবে; একটি খুরও এখানে পড়ে থাকবে না। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আরাধনায় সেগুলির মধ্যে কয়েকটিকে আমাদের ব্যবহার করতে হবে, আর যতক্ষণ না আমরা সেখানে পৌঁছাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানতে পারব না যে সদাপ্রভুর আরাধনার জন্য আমাদের কী কী ব্যবহার করতে হবে।”
27 ২৭ কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করলেন, আর তিনি তাদেরকে ছেড়ে দিতে রাজি হলেন না।
কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করে দিলেন, এবং তিনি তাঁদের যেতে দিতে চাইলেন না।
28 ২৮ তখন ফরৌণ তাঁকে বললেন, “আমার সামনে থেকে দূর হও; সাবধান, আমাকে আর কখনও মুখ দেখিও না; কারণ যে দিন আমার মুখ দেখবে, সেই দিন মরবে।”
ফরৌণ মোশিকে বললেন, “আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাও! নিশ্চিত করে নাও যে আমার সামনে তুমি আর কখনও দর্শন দেবে না! যেদিন আমার মুখদর্শন করবে সেদিনই তুমি মারা যাবে!”
29 ২৯ মোশি বললেন, “ভালই বলেছেন, আমি আপনার মুখ আর কখনও দেখব না।”
“আপনি ঠিকই বলেছেন,” মোশি উত্তর দিলেন, “আমি আর কখনোই আপনার সামনে দর্শন দেব না।”

< যাত্রাপুস্তক 10 >