< ইষ্টের বিবরণ 1 >

1 কুশ দিনের এই ঘটনা ঘটল। ঐ অহশ্বেরশ ভারত থেকে কূশ দেশ পর্যন্ত একশো সাতাশ দেশের ওপরে রাজত্ব করতেন।
সেই অহশ্বেরশের সময়ে এই ঘটনাটি ঘটেছিল, যে অহশ্বেরশ হিন্দুস্থান থেকে কূশ দেশ পর্যন্ত 127-টি প্রদেশে রাজত্ব করতেন।
2 সেই দিনের অহশ্বেরশ রাজা শূশন রাজধানীতে রাজসিংহাসনে বসেছিলেন৷
সেই সময় অহশ্বেরশ রাজা শূশন দুর্গে তাঁর সিংহাসনে বসে শাসন করতেন,
3 তাঁর রাজত্বের তৃতীয় বছরে নিজের সমস্ত শাসনকর্ত্তা ও দাসদের জন্য এক ভোজ তৈরী করলেন। পারস্য ও মাদিয়া দেশের সেনাপতিরা, রাজপুত্রেরা ও প্রদেশের শাসনকর্তারা তাঁর সামনে উপস্থিত হলেন।
এবং তাঁর রাজত্বের তৃতীয় বছরে অভিজাত লোকদের ও কর্মকর্তাদের জন্য এক ভোজের আয়োজন করলেন। পারস্য ও মাদিয়া দেশের সেনাপতিরা, অভিজাত লোকেরা ও রাজ্যের উঁচু পদের কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
4 তিনি অনেক দিন অর্থাৎ একশো আশি দিন ধরে তাঁর মহিমান্বিত রাজ্যের ঐশ্বর্য্য ও নিজের মহানতার গৌরব দেখালেন।
একশত আশি দিন ধরে তিনি তাঁর রাজ্যের সম্পদ এবং ঐশ্বর্য ও গরিমা তাদের কাছে প্রদর্শন করলেন।
5 সেই সব দিন সম্পূর্ণ হলে পর রাজা শূশন রাজধানীতে থাকা ছোট কি বড় সমস্ত লোকের জন্য রাজবাড়ির বাগানের উঠানে সারা সপ্তাহ ধরে ভোজের আয়োজন করলেন।
এই দিনগুলি শেষ হয়ে যাবার পর তিনি শূশনে উপস্থিত ক্ষুদ্র কি মহান সমস্ত লোকের জন্য সাত দিন ধরে রাজবাড়ির বাগানের উঠানে একটি ভোজ দিলেন।
6 সেখানে কার্পাসের তৈরী সাদা ও নীল রঙের পর্দা ছিল, তা সূক্ষ সুতোর বেগুনী দড়ির মাধ্যমে রূপালি রঙের কড়াতে পাথরের থামে আটকে ছিল এবং লাল, সাদা, সবুজ ও কালো মার্বেল পাথরে কারুকার্য্য করা মেঝেতে সোনার ও রূপার আসনের সারি রাখা ছিল।
সেই বাগান সাজাবার জন্য সাদা ও নীল কাপড়ের পর্দা ব্যবহার করা হয়েছিল যেগুলি সাদা ও বেগুনি মসিনা সুতোর দড়ি দিয়ে রুপোর কড়াতে মার্বেল পাথরের থামে আটকানো ছিল। মার্বেল পাথর, ঝিনুক এবং বিভিন্ন রংয়ের অন্যান্য দামি পাথরের করা মেঝের উপরে সোনা ও রুপোর আসন ছিল।
7 আর রাজার উদারতা অনুসারে সোনার পাত্রে পানীয় ও প্রচুর রাজকীয় আঙ্গুরের রস দেওয়া হল, সেই সব পাত্র নানা ধরনের ছিল।
সমস্ত পানীয় বিভিন্ন রকমের সোনার পাত্রে দেওয়া হচ্ছিল এবং রাজার মন বড়ো ছিল বলে প্রচুর পরিমাণে দ্রাক্ষারস ছিল।
8 তাতে ব্যবস্থা অনুযায়ী পান করা হল, কেউ জোর করল না; কারণ যার যেমন ইচ্ছা, সেই অনুযায়ী তাকে করতে দাও, এই আদেশ রাজা নিজের বাড়ির সমস্ত কর্মচারীকে দিয়েছিলেন।
রাজার আদেশে নিমন্ত্রিত প্রত্যেকজনকে নিজের ইচ্ছামতো তা খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কারণ প্রত্যেকে যেমন চায় রাজা সেইভাবে পরিবেশন করার জন্য সকল দ্রাক্ষারসের পরিবেশককে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
9 আর বষ্টী রাণীও অহশ্বেরশের রাজবাড়ীতে মহিলাদের জন্য ভোজ তৈরী করলেন।
অহশ্বেরশ রাজার রাজপ্রাসাদে বষ্টী রানিও মহিলাদের জন্য একটি ভোজ দিলেন।
10 ১০ সপ্তম দিনের যখন রাজা আঙ্গুরের রস পান করে আনন্দিত ছিলেন, তখন তিনি মহূমন, বিস্থা, হর্বোণা, বিগ্‌থা, অবগথ, সেথর ও কর্ক্কস নামে যারা, অহশ্বেরশ রাজার সামনে সেবা করতেন এই সাত জন নপুংসককে আদেশ দিলেন,
সপ্তম দিনে রাজা অহশ্বেরশ দ্রাক্ষারস খেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন এবং যে সাতজন নপুংসক—মহূমন, বিস্থা, হর্বোণা, বিগথা, অবগথ, সেথর, কর্কস—তাঁর পরিচর্যা করত তাদের তিনি আদেশ দিলেন,
11 ১১ যেন তারা প্রজাদের ও শাসনকর্তাদেরকে বষ্টী রাণীর সৌন্দর্য্য দেখাবার জন্য তাঁকে রাজমুকুট পরিয়ে রাজার সামনে আনে; কারণ তিনি দেখতে সুন্দরী ছিলেন।
যেন রানি বষ্টীকে রাজমুকুট পরিয়ে তাঁর সামনে আনা হয়। রানি দেখতে সুন্দরী ছিলেন বলে রাজা অভিজাত লোকদের ও কর্মকর্তাদের সামনে তাঁর সৌন্দর্য দেখাতে চেয়েছিলেন।
12 ১২ কিন্তু বষ্টী রাণী নপুংসকদের মাধ্যমে পাঠানো রাজার আদেশ মত আসতে রাজি হলেন না; তাতে রাজা খুব রেগে গেলেন, তাঁর মধ্যে রাগের আগুন জ্বলে উঠল।
কিন্তু পরিচর্যাকারীরা যখন রাজার আদেশ জানাল তখন রানি বষ্টী আসতে রাজি হলেন না। এতে রাজা ভীষণ রেগে আগুন হয়ে গেলেন।
13 ১৩ পরে রাজা দিন সম্পর্কে জ্ঞানী লোকদেরকে এই বিষয় বললেন; কারণ আইন ও বিচার সম্মন্ধে জ্ঞানী লোক সবার কাছে রাজার এই রকম বলবার রীতি ছিল।
যেহেতু আইন ও বিচার সম্বন্ধে দক্ষ লোকদের সঙ্গে রাজার পরামর্শ করবার নিয়ম ছিল বলে তিনি সেই পরামর্শদাতাদের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বললেন
14 ১৪ আর কর্শনা, শেথর, অদ্‌মাথা, তর্শীশ, মেরস, মর্সনা ও মমূখন, এরা তাঁর কাছে ছিলেন; এই সাত জন পারস্য ও মাদিয়া দেশের শাসনকর্ত্তা রাজার সামনে যেতেন এবং রাজ্যের শ্রেষ্ঠ জায়গার অধিকারী ছিলেন।
এবং যারা রাজার খুব কাছের ছিল তারা হল কর্শনা, শেথর, অদমাথা, তর্শীশ, মেরস, মর্সনা ও মমূখন, এই সাতজন পারস্য ও মাদিয়া দেশের অভিজাত কর্মকর্তাদের রাজার সামনে উপস্থিত হবার অধিকার ছিল এবং সাম্রাজ্যের মধ্যে সব বড়ো স্থান ছিল তাদের।
15 ১৫ [রাজা বললেন, ] “বষ্টী রাণী নপুংসকদের মাধ্যমে পাঠানো অহশ্বেরশ রাজার আদেশ মানে নি, অতএব আইন অনুসারে তার প্রতি কি করা উচিত?”
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “বিধান অনুসারে রানি বষ্টীর প্রতি কি করা উচিত? নপুংসকদের দ্বারা রাজা অহশ্বেরশ যে আদেশ রানিকে পাঠিয়েছিলেন তা তিনি মানেননি।”
16 ১৬ তখন মমূখন রাজার ও শাসনকর্ত্তাদের সামনে উত্তর করলেন, “রাণী বষ্টী যে কেবল মহারাজের কাছে অন্যায় করেছেন, তা নয়, কিন্তু রাজা অহশ্বেরশের অধীন সমস্ত দেশের সমস্ত শাসনকর্ত্তার ও সমস্ত লোকের কাছে অপরাধ করেছেন।
তখন রাজা এবং উঁচু পদের কর্মকর্তাদের সাক্ষাতে মমূখন বললেন, “রানি বষ্টী অন্যায় করেছেন, কেবল রাজার বিরুদ্ধে নয় কিন্তু রাজা অহশ্বেরশের অধীন সমস্ত রাজ্যের উঁচু পদের কর্মকর্তাদের ও সেখানকার লোকদের বিরুদ্ধে।
17 ১৭ কারণ রাণীর এই কাজের কথা সমস্ত স্ত্রীলোকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যাবে; সুতরাং রাজা অহশ্বেরশ বষ্টী রাণীকে নিজের সামনে আনতে আদেশ দিলেও তিনি আসলেন না, এই কথা শুনলে তারা নিজের চোখে তাদের স্বামীকে তুচ্ছজ্ঞান করবে।
রানির এরকম ব্যবহার সমস্ত স্ত্রীলোকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যাবে এবং তারা তাদের স্বামীদের তুচ্ছ করে বলবে, ‘রাজা অহশ্বেরশ আদেশ দিয়েছিলেন যেন রানি বষ্টীকে তাঁর সামনে আনা হয়, কিন্তু তিনি আসলেন না।’
18 ১৮ আর পারস্য ও মাদিয়ার সম্মানিতা স্ত্রীলোকেরা রাণীর এই কাজের খবর শুনলেন, তাঁরা আজই রাজার সব শাসনকর্তাকে ঐরকম বলবেন, তাতে খুব অসম্মান ও রাগ জন্মাবে।
পারস্য ও মাদিয়ার সম্মানিতা স্ত্রীলোকেরা রানির এই ব্যবহারের কথা শুনে রাজার উঁচু পদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একইরকম ব্যবহার করবেন। এতে অসম্মান ও অনৈক্যের কোনও শেষ হবে না।
19 ১৯ যদি মহারাজের ইচ্ছা হয়, তবে বষ্টী অহশ্বেরশ রাজার সামনে আর আসতে পারবেন না, এই রাজ আদেশ আপনার মুখ থেকে বেরিয়ে আসুক এবং যা অমান্য করা যাবে না, এই জন্য এটা পারসীকদের আদেশ ও মাদীয়দের আইনের মধ্যে লেখা হোক; পরে মহারাজ তাঁর রাণীর পদ নিয়ে তাঁর থেকে ভালো আর এক রাণীকে দিন।
“যদি রাজার অমত না থাকে, তবে তিনি যেন একটি রাজ-আদেশ দেন যে, বষ্টী আর কখনও রাজা অহশ্বেরশের সামনে আসতে পারবেন না। এই আদেশ পারস্য ও মাদিয়ার আইনে লেখা থাকুক যেন বাতিল করা না যায়। এছাড়া রাজা যেন তাঁর চেয়েও উপযুক্ত অন্য আর একজনকে রানির পদ দেন।
20 ২০ মহারাজ যে আদেশ দেবেন, তা যখন তাঁর বিরাট রাজ্যের সব জায়গায় প্রচারিত হবে, তখন সমস্ত স্ত্রীলোক ছোট কি বড় নিজের নিজের স্বামীকে সম্মান করবে।”
রাজার এই আদেশ যখন তাঁর বিরাট সাম্রাজ্যের সব জায়গায় ঘোষিত হবে তখন সাধারণ থেকে সম্মানিতা সমস্ত স্ত্রীলোকেরা তাদের স্বামীদের সম্মান করবে।”
21 ২১ এই কথা রাজার ও অধ্যক্ষদের ভালো লাগলে রাজা মমূখনের কথানুযায়ী কাজ করলেন।
এই পরামর্শ রাজা ও তাঁর উঁচু পদের কর্মকর্তাদের ভালো লাগল, রাজা সেইজন্য মমূখনের কথামতো কাজ করলেন।
22 ২২ তিনি এক এক দেশের অক্ষর অনুসারে ও এক এক জাতির ভাষা অনুসারে রাজার অধীন সমস্ত দেশে এই রকম চিঠি পাঠালেন, প্রত্যেক পুরুষ নিজের নিজের বাড়িতে কর্তৃত্ব করুক ও নিজের ভাষায় এটা প্রচার করুক।
তিনি তাঁর সাম্রাজ্যের সব জায়গায় প্রত্যেকটি রাজ্যের অক্ষরানুসারে ও প্রত্যেকটি জাতির ভাষানুসারে চিঠি পাঠিয়ে দিলেন যে, প্রত্যেক পুরুষ তার নিজের বাড়ির উপর কর্তৃত্ব করুক ও স্বজাতীয় ভাষায় তা প্রচার করুক।

< ইষ্টের বিবরণ 1 >