< দানিয়েল 4 >

1 রাজা নবূখদনিৎসর তাঁর এই সংবাদ সমস্ত লোকের কাছে, সমস্ত জাতির এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার লোকদের কাছে পাঠালেন, “তোমাদের শান্তির বৃদ্ধি হোক।
রাজা নেবুখাদনেজার, সমস্ত পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রত্যেক জাতি ও ভাষার মানুষের প্রতি: তোমাদের অনেক উন্নতি হোক!
2 মহান সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার জন্য যে সব চিহ্ন ও আশ্চর্য্য কাজ করেছেন তা তোমাদের জানানো আমি ভালো বলে মনে করলাম।
পরাৎপর ঈশ্বর আমার জন্য যে অলৌকিক চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ করেছেন তা সব তোমাদের জানানো আমি উচিত মনে করছি।
3 তাঁর চিহ্নগুলো কত মহান, তাঁর আশ্চর্য্য কাজগুলো কত শক্তিশালী! তাঁর রাজ্য অনন্তকালের রাজ্য এবং তাঁর রাজত্ব বংশপরম্পরায় স্থায়ী।”
তাঁর চিহ্নসকল কত মহান,
4 আমি, নবূখদনিৎসর, আমি আমার রাজবাড়িতে আনন্দের সঙ্গে বসবাস করছিলাম এবং রাজপ্রাসাদে আমি আমার সমৃদ্ধি উপভোগ করছিলাম।
আমি, নেবুখাদনেজার, পরিতৃপ্তি ও সমৃদ্ধিতে রাজপ্রাসাদে বাস করছিলাম।
5 কিন্তু আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম যা আমাকে ভীত করল। যখন আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম, তখন আমি মুর্ত্তিগুলো দেখলাম এবং আমার মনের মধ্য বিভিন্ন দর্শনগুলো আমাকে অস্থির করে তুলল।
কিন্তু একদিন এক স্বপ্ন দেখলাম যা আমাকে ভীত করল। যখন আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম, তখন যেসব চিন্তা ও দর্শন মনে এল তা আমাকে আতঙ্কিত করল।
6 তাই আমি একটি আদেশ দিলাম যেন আমার সামনে ব্যাবিলনের সমস্ত জ্ঞানী লোকদের আনা হয় যাতে তারা সেই স্বপ্নটাকে আমার জন্য ব্যাখ্যা করতে পারে।
তাই আদেশ দিলাম যে এই স্বপ্নের মানে আমাকে ব্যাখ্যা করবার জন্য ব্যাবিলনের সমস্ত জ্ঞানীদের আমার সামনে হাজির করা হোক।
7 তখন যাদুকর, যারা মৃতদের সঙ্গে কথা বলত, জ্ঞানী লোকেরা এবং জ্যোতিষীরা আমার কাছে উপস্থিত হল। আমি তাদের কাছে স্বপ্নটা বললাম, কিন্তু তারা তা ব্যাখ্যা করতে পারল না।
যখন সব মন্ত্রবেত্তা, যাদুকর, জ্যোতিষী ও গণকেরা এসে হাজির হল, আমি স্বপ্নটি তাদের বললাম কিন্তু তারা কেউ এর মানে আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারল না।
8 কিন্তু অবশেষে দানিয়েল আমার সামনে উপস্থিত হল, যাকে আমার দেবতার নাম অনুসারে বেল্টশৎসর নাম দেওয়া হয়েছিল এবং যার মধ্যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা আছে। আমি তাকে স্বপ্নটা বললাম।
অবশেষে, দানিয়েল আমার সামনে এল এবং আমি স্বপ্নটি তাকে বললাম। আমার দেবতার নামানুসারে তাকে বেল্টশৎসর বলা হত কারণ পুণ্য দেবতাদের আত্মা তার অন্তরে ছিল।
9 “হে যাদুকরদের প্রধান বেল্টশৎসর, আমি জানি তোমার মধ্যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা আছে এবং কোন গুপ্ত বিষয়ই তোমার কাছে খুব কঠিন নয়। আমি স্বপ্নের মধ্যে কি দেখেছি এবং এর অর্থ কি তা আমাকে বল।
আমি বললাম, “হে মন্ত্রবেত্তাদের প্রধান বেল্টশৎসর, আমি জানি পুণ্য দেবতাদের আত্মা তোমার অন্তরে আছে এবং কোনো রহস্যই তোমার অসাধ্য নয়। এই হল আমার স্বপ্ন; আমাকে এর মানে বুঝিয়ে দাও।
10 ১০ বিছানায় শুয়ে আমি আমার মনে এই দর্শন দেখেছিলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম পৃথিবীর মাঝখানে একটা গাছ দাঁড়িয়ে আছে; তা খুবই উঁচু।
বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় আমি এসব দর্শন পেলাম: আমি তাকিয়ে দেখলাম, পৃথিবীর মাঝখানে আমার সামনে একটি গাছ, যা ছিল উচ্চতায় প্রকাণ্ড।
11 ১১ গাছটা বেড়ে উঠল এবং শক্তিশালী হয়ে উঠল। তার মাথাটা গিয়ে আকাশমণ্ডল স্পর্শ করল এবং এটিকে পৃথিবীর শেষ সীমা থেকেও দেখা যাচ্ছিল।
গাছটি ক্রমাগত বেড়ে বৃহৎ ও শক্তিশালী হয়ে উঠল, উচ্চতায় আকাশ ছুঁল এবং পৃথিবীর সব প্রান্ত পর্যন্ত দৃশ্যমান হল।
12 ১২ তার পাতাগুলো ছিল খুবই সুন্দর ও সেটার প্রচুর ফল ছিল এবং তার মধ্যে সবার জন্য খাবার ছিল। বন্য পশুরা তার নীচে ছায়া খুঁজে পেত এবং আকাশের পাখিরা তার ডালে বাস করত; সমস্ত প্রাণীই তা থেকে খাবার পেত।
তার সুন্দর পাতা ছিল ও পর্যাপ্ত ফল ছিল এবং তার মধ্যে সকলের আহার ছিল। মাঠের বন্যপশুরা এই গাছের তলায় আশ্রয় খুঁজে পেল এবং পাখিরা ডালপালায় বাস করল; সকল প্রাণী এই গাছটি থেকে খাবার পেল।
13 ১৩ আমি বিছানায় শুয়েই আমি আমার মনের মধ্য সেই দর্শনে দেখলাম যে, একজন পবিত্র বার্তাবাহক স্বর্গ থেকে নেমে আসলেন।
“পরে আমি বিছানায় শুয়ে দর্শনে দেখলাম, আমার সামনে এক পবিত্র ব্যক্তি, এক দূত, যিনি স্বর্গ থেকে নেমে আসছিলেন।
14 ১৪ তিনি উঁচু স্বরে এই কথা বললেন, ‘গাছটা কেটে ফেল এবং তার ডালগুলো কেটে দাও; তার পাতাগুলো ছেঁটে ফেল এবং তার ফলগুলো ছড়িয়ে দাও। তার তলা থেকে পশুরা পালিয়ে যাক ও ডালপালা থেকে পাখিরা উড়ে যাক,
তিনি জোর গলায় ঘোষণা করলেন: ‘গাছটি কেটে ফেলো ও তার ডালপালাগুলি ছেঁটে দাও, পাতাগুলি ঝেড়ে ফেলো এবং ফলগুলি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাও। এই গাছের আশ্রয় থেকে পশুরা এবং ডালপালা থেকে পাখিরা পালিয়ে যাক।
15 ১৫ তার শিকড়গুলোর গোড়া লোহা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে মাঠের ঘাসের মধ্যে রেখে দাও। সেটাকে আকাশের শিশিরে ভিজতে দাও এবং সেটাকে গাছপালার পশুদের মধ্যে মাটিতে বাস করতে দাও।
কিন্তু শুধু মূলকাণ্ড ও শিকড়, লোহা ও পিতলের শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায়, মাটিতে পড়ে থাক; ও মাঠের ঘাসের মধ্যে পড়ে থাক। “‘সে আকাশের শিশিরে ভিজুক এবং পশুদের সঙ্গে পৃথিবীর গাছপালার মধ্যে তার বাসস্থান হোক।
16 ১৬ তার মনকে মানুষের মন থেকে পরিবর্তন করা হোক এবং সাত বছর পর্যন্ত তাকে পশুর মন দেওয়া হোক।
সাত কাল পর্যন্ত তার মানুষের মন নিয়ে তাকে পশুর মন দেওয়া হোক।
17 ১৭ এই বার্তা সেই বার্তাবাহকের মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে, এই বিষয়টি সেই পবিত্র জনই ঘোষণা করছেন, যেন জীবিত লোকেরা জানতে পারে যে, লোকেদের রাজ্যগুলোর উপরে মহান সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই রাজত্ব করেন এবং সেই রাজ্যগুলির উপরে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে বসান, এমনকি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র ব্যক্তিকে তার উপরে বসান।’
“‘এই সিদ্ধান্ত দূতদের মাধ্যমে ঘোষিত হল, পবিত্র ব্যক্তিগণ এই রায় ঘোষণা করলেন, যেন সব জীবিত মানুষ জানতে পারে যে পরাৎপর ঈশ্বর পৃথিবীর সব রাজ্যের উপর সার্বভৌম এবং যে ব্যক্তিকে চান তার হাতে তিনি সেই রাজত্বভার অর্পণ করেন এবং ঈশ্বর এই রাজ্যগুলি শাসনের জন্য বিনয়ী লোকেদের মনোনীত করেন।’
18 ১৮ আমি, রাজা নবূখদনিৎসর, যে এই স্বপ্ন দেখেছি। এখন তুমি, হে বেল্টশৎসর, তুমি আমাকে এর অর্থ বল, কারণ আমার রাজ্যের এমন কোন জ্ঞানী লোক নেই যে আমার জন্য এর অর্থ বলতে পারে। কিন্তু তুমি পারবে, কারণ তোমার মধ্যে পবিত্র দেবতাদের আত্মা আছে।”
“আমি, রাজা নেবুখাদনেজার এই স্বপ্নই দেখেছিলাম। এখন, বেল্টশৎসর, আমাকে এর মানে কি তা বুঝিয়ে বলো কেননা আমার রাজ্যের কোনো জ্ঞানী এর মানে আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। কিন্তু তুমি পারবে, কারণ পবিত্র দেবতাদের আত্মা তোমার মধ্যে উপস্থিত।”
19 ১৯ তখন দানিয়েল, যার নাম বেল্টশৎসর ছিল, কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ভ হয়ে গেলেন এবং তাঁর চিন্তা তাঁকে প্রচণ্ডভাবে চিন্তিত করে তুলল। রাজা বললেন, “হে বেল্টশৎসর, স্বপ্ন অথবা তার অর্থ তোমাকে চিন্তিত না করুক।” বেল্টশৎসর উত্তর দিয়ে বললেন, “আমার প্রভু, এই স্বপ্ন তাদের জন্য হোক যারা আপনাকে ঘৃণা করে এবং এর অর্থ আপনার শত্রুদের প্রতি ঘটুক।
তখন দানিয়েল, যাকে বেল্টশৎসর বলা হত, কিছুক্ষণের জন্য খুব হতবুদ্ধি হয়ে রইল; স্বপ্নের মানে তাকে আতঙ্কিত করল। তাই রাজা বললেন, “বেল্টশৎসর, এই স্বপ্ন বা তার অর্থ যেন তোমাকে ভীত না করে।” বেল্টশৎসর উত্তর দিলেন, “হে আমার প্রভু, শুধু যদি এই স্বপ্ন আপনার পরিবর্তে আপনার শত্রুদের উপর বর্তাত ও এর অর্থ আপনার বিপক্ষের প্রতি ঘটত!
20 ২০ আপনি যে গাছটা দেখেছিলেন, যেটা বিরাট ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল এবং যার মাথা আকাশ ছুঁয়েছিল এবং যেটা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকেও দেখতে পাওয়া যেত,
যে গাছটি আপনি দেখেছিলেন, যা বৃদ্ধি পেয়েছিল ও শক্তিশালী হয়েছিল, যার উচ্চতা আকাশ ছুঁয়েছিল, সমস্ত পৃথিবীতে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল,
21 ২১ যার পাতা খুব সুন্দর ছিল ও যার প্রচুর ফল ছিল, যেন সকলকে খাবার তার মধ্যে থাকে এবং যার তলায় মাঠের পশুরা ছাওয়া খুঁজে পেয়েছিল এবং যার ডালে আকাশের পাখিরা থাকত,
যার পাতা সুন্দর ও প্রচুর ফল ছিল, সকলকে আহার দিয়েছিল, বন্যপশুদের আশ্রয় দিয়েছিল এবং যার ডালে পাখিরা বাসা বেঁধেছিল,
22 ২২ সেই গাছ আপনিই, মহারাজ, আপনিই সেই যিনি প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়েছেন। আপনার মহিমা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আকাশ পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং আপনার কর্তৃত্ব পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
হে মহারাজ, আপনিই সেই গাছ! আপনি মহান এবং শক্তিশালী হয়েছেন; আপনার গৌরব বৃদ্ধি পেয়ে আকাশ ছুঁয়েছে এবং আপনার আধিপত্য পৃথিবীর দূরদূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
23 ২৩ আপনি, হে মহারাজ, একজন পবিত্র বার্তাবাহককে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখেছিলেন এবং তিনি বলছিলেন, ‘গাছটা কেটে ফেল এবং এটিকে ধ্বংস কর, কিন্তু তার শিকড়গুলোর গোড়া লোহা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বেঁধে সেটাকে আকাশের শিশিরে ভিজতে দাও; সাত বছর পর্যন্ত সে মাঠের পশুদের সঙ্গে বাস করুক।’
“হে মহারাজ আপনি এক পবিত্র ব্যক্তিকে দেখলেন, এক দূত, যিনি স্বর্গ থেকে নেমে আসছিলেন; তিনি বললেন, ‘গাছটি কেটে একেবারে নষ্ট করে দাও, শুধু মূল কাণ্ডটি রেখে দাও, লোহা ও পিতলের শিকল দিয়ে ওটাকে বেঁধে রাখো, ঘাসের মধ্যে থাক, আর শিকড় মাটিতে পড়ে থাক। সে আকাশের শিশিরে ভিজুক, বন্যপশুদের সঙ্গে বাস করুক, যতদিন না পর্যন্ত তার জন্য সাত কাল অতিক্রম হচ্ছে।’
24 ২৪ মহারাজ, এটিই হল স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আমার প্রভু মহারাজ, এটি মহান সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের একটি আদেশ যা আপনার কাছে এসেছে।
“হে মহারাজ, স্বপ্নের মানে এই এবং পরাৎপর ঈশ্বর আমার প্রভু মহারাজের বিরুদ্ধে এই আদেশ জারি করেছেন:
25 ২৫ আপনাকে লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আপনি মাঠের পশুদের সঙ্গে বাস করবেন৷ আপনি ষাঁড়ের মত ঘাস খাবেন এবং আপনি আকাশের শিশিরে ভিজবেন। এই ভাবে সাত বছর চলে যাবে, যতক্ষণ না আপনি স্বীকার করবেন যে, মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে মহান সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই রাজত্ব করেন এবং তিনি সেই সব রাজ্যগুলি যাকে ইচ্ছা তাকে দেন।
মানুষের সমাজ থেকে আপনাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আপনি বন্যপশুদের সঙ্গে বাস করবেন; বলদের মতো আপনি ঘাস খাবেন ও আকাশের শিশিরে ভিজবেন। সাত কাল পার হবে যতদিন না পর্যন্ত আপনি স্বীকার করবেন যে পরাৎপর ঈশ্বর পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের উপর সার্বভৌম এবং যাকে তাঁর খুশি তার হাতে তিনি রাজত্বভার অর্পণ করেন।
26 ২৬ যেমন শিকড় সুদ্ধ গাছটার গোড়া রেখে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই ভাবেই আপনার রাজ্য আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে যখন আপনি মেনে নেবেন যে, স্বর্গের ঈশ্বরই কর্তৃত্ব করেন।
আদেশ অনুযায়ী মূলকাণ্ড ও শিকড় অক্ষত রাখার অর্থ হল যে, আপনি যখন স্বর্গের কর্তৃত্বের কথা স্বীকার করবেন, তখন আপনার রাজত্ব আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
27 ২৭ তাই হে মহারাজ, আমার পরামর্শ আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক। আপনি পাপ করা বন্ধ করুন এবং যা ভালো তাই করুন। নির্যাতিতদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে আপনার অপরাধ থেকে ফিরে আসুন। তাহলে হয়তো আপনার সমৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পাবে।”
অতএব, হে মহারাজ, আমার পরামর্শ গ্রহণ করুন: ন্যায় আচরণ করে পাপের জীবন পরিত্যাগ করুন ও পীড়িতদের প্রতি দয়া করে দুষ্ট জীবন বর্জন করুন। তাতে হয়তো আপনার সমৃদ্ধি বজায় থাকবে।”
28 ২৮ সেই সমস্তই রাজা নবূখদনিৎসরের প্রতি ঘটল।
এসবই রাজা নেবুখাদনেজারের জীবনে ঘটেছিল।
29 ২৯ বারো মাসের শেষে তিনি যখন ব্যাবিলনের রাজপ্রাসাদের ছাদে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন,
বারো মাস পরে, রাজা যখন ব্যাবিলনের রাজপ্রাসাদের ছাদে হাঁটছিলেন,
30 ৩০ তখন রাজা বললেন, “এটা কি সেই মহান ব্যাবিলন নয়, যা আমার রাজধানী হিসাবে ও আমার মহিমার জন্য আমি আমার শক্তি দিয়ে তৈরী করেছি?”
তিনি বললেন, “এই কি সেই মহান ব্যাবিলন নয়, যা আমি আপন পরাক্রমে নিজের মহিমা প্রকাশের উদ্দেশে রাজকীয় ভবন রূপে গড়ে তুলেছি?”
31 ৩১ যখন রাজা সেই কথাগুলো বলছিলেন, স্বর্গ থেকে একটি কন্ঠস্বর শোনা গেল, “রাজা নবূখদনিৎসর, তোমার বিরুদ্ধে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, এই রাজ্য আর তোমার অধিকারে থাকবে না।
কথাগুলি যখন তার মুখেই ছিল, স্বর্গ থেকে এক কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “তোমার জন্য এই আদেশ জারি করা হয়েছে, রাজা নেবুখাদনেজার, তোমার রাজকীয় কর্তৃত্ব তোমার কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
32 ৩২ তোমাকে লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তুমি মাঠের বন্য পশুদের সঙ্গে বাস করবে। ষাঁড়ের মত তোমাকে ঘাস খাওয়ানো হবে। সাত বছর শেষ হবে, যতক্ষণ না তুমি স্বীকার করবে যে মহান সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে রাজত্ব করেন এবং সেগুলো তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।”
মানুষের সমাজ থেকে তোমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং বন্যপশুদের সঙ্গে তুমি বাস করবে; তুমি বলদের মতো ঘাস খাবে। সাত কাল এভাবেই কেটে যাবে যতদিন না পর্যন্ত তুমি স্বীকার করবে যে পরাৎপর ঈশ্বর পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের উপর সার্বভৌম এবং যাকে তাঁর খুশি তার হাতে তিনি রাজত্বভার অর্পণ করেন।”
33 ৩৩ সেই বাক্য যা নবূখদনিৎসরের সম্বন্ধে বলা হয়েছিল তখনই তা পূর্ণ হল। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। তিনি ষাঁড়ের মত ঘাস খেতে লাগলেন এবং তাঁর দেহ আকাশের শিশিরে ভিজতে লাগল; তাঁর চুলগুলো ঈগল পাখির পালখের মত বড় হয়ে উঠল আর তাঁর নখগুলো পাখির পায়ের নখের মত হয়ে উঠল।
তৎক্ষণাৎ নেবুখাদনেজারের সম্বন্ধে যা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হল। মানুষের সমাজ থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হল এবং বলদের মতো সে ঘাস খেল। আকাশের নিচে তার সারা শরীর শিশিরে ভিজল যতদিন না পর্যন্ত তার চুল ঈগল পাখির পালকের মতো বেড়ে উঠল ও তার নখ পাখির নখের মতো হয়ে উঠল।
34 ৩৪ এবং সেই দিন শেষ হয়ে গেলে আমি, নবূখদনিৎসর স্বর্গের দিকে আমার চোখ তুললাম এবং আমাকে আবার আমার বুদ্ধি ফিরিয়ে দেওয়া হল। আমি মহান সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রশংসা করলাম; যিনি অনন্তকাল স্থায়ী আমি তাঁকে সম্মান দিলাম এবং তাঁকে গৌরব দিলাম। কারণ তাঁর রাজত্ব অনন্তকাল স্থায়ী এবং তাঁর রাজ্য বংশপরম্পরায় স্থায়ী।
সেই সময় শেষ হওয়ার পরে, আমি, নেবুখাদনেজার, স্বর্গের দিকে চোখ তুলে দেখলাম এবং আমার সুবুদ্ধি ফিরিয়ে দেওয়া হল; তখন আমি পরাৎপর ঈশ্বরের ধন্যবাদ করলাম; যিনি নিত্যস্থায়ী তাঁর প্রশংসা ও সমাদর করলাম।
35 ৩৫ পৃথিবীর সমস্ত লোক তাঁর কাছে যেন কিছুই নয়; তিনি স্বর্গদূতদের ও পৃথিবীর লোকদের মধ্য তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করেন। এমন কেউ নেই যে তাঁকে থামাতে পারে অথবা এমন কেউ নেই যে তাঁকে বলতে পারে যে, তুমি কেন এটা করছ?
পৃথিবীর সব মানুষেরা
36 ৩৬ যখন আমার বুদ্ধি ফিরে এল তখন আমার রাজ্যের মহিমার জন্য আমার গৌরব ও প্রতাপ আমার কাছে ফিরে এল। আমার মন্ত্রীরা ও আমার প্রধান লোকেরা আমাকে খুঁজে বের করল এবং আমাকে আবার আমার সিংহাসনে ফিরিয়ে আনা হল এবং আরও বেশি সম্মান আমাকে দেওয়া হল।
যে সময়ে আমার সুবুদ্ধি ফিরিয়ে দেওয়া হল, আমার রাজ্যের গৌরবার্থে, সেই সময়েই আমার সম্মান ও প্রতিপত্তিও আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। আমার উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যক্তি সকলে আমাকে খুঁজে বের করল। আমাকে রাজসিংহাসনে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা হল এবং আমার মহিমা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেল।
37 ৩৭ এখন আমি, নবূখদনিৎসর সেই স্বর্গের রাজার প্রশংসা, গুনগান ও সম্মান করি, কারণ তাঁর সমস্ত কাজ সঠিক এবং তাঁর সমস্ত পথগুলো ন্যায্য। তিনি তাদের নত করতে পারেন যারা তাদের অহঙ্কারে চলে।
এখন, আমি, নেবুখাদনেজার, স্বর্গের রাজার প্রশংসা, গৌরব ও সমাদর করি কারণ তিনি যা করেন তা সঠিক ও তাঁর সমস্ত পথ ন্যায্য। আর যারা অহংকারে জীবন কাটায় তাদের তিনি নম্র করতে সক্ষম।

< দানিয়েল 4 >