< প্রেরিত 28 >

1 আমরা রক্ষা পাওয়ার পর জানতে পারলাম যে, সেই দ্বীপের নাম মিলিতা।
এভাবে নিরাপদে তীরে পৌঁছানোর পর, আমরা জানতে পারলাম যে সেই দ্বীপের নাম মাল্টা।
2 আর সেখানকার বর্ব্বর লোকেরা আমাদের প্রতি খুব ভালো অতিথিসেবা করল, বিশেষ করে বৃষ্টির মধ্যে ও শীতের জন্য আগুন জ্বালিয়ে সকলকে স্বাগত জানালো।
সেই দ্বীপের অধিবাসীরা আমাদের প্রতি অসাধারণ সহানুভূতি দেখাল। সেই সময় বৃষ্টি পড়ছিল এমনকি শীতও পড়েছিল, তাই তারা আগুন জ্বেলে আমাদের সবাইকে অভ্যর্থনা জানাল।
3 কিন্তু পৌল এক বোঝা কাঠ কুড়িয়ে ঐ আগুনে ফেলে দিলে আগুনের তাপে একটা বিষধর সাপ বের হয়ে তাঁর হাতে লেগে থাকল।
পৌল এক বোঝা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে ওই আগুনে দেওয়ামাত্র, আগুনের তাপে একটি বিষধর সাপ বেরিয়ে এসে তাঁর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
4 তখন বর্ব্বর লোকেরা তাঁর হাতে সেই সাপটি ঝুলছে দেখে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, এ লোকটি নিশ্চয় খুনি, সমুদ্র থেকে রক্ষা পেলেও ধর্ম একে বাঁচতে দিলেন না।
দ্বীপের অধিবাসীরা যখন দেখল যে সাপটি তাঁর হাতে ঝুলছে, তারা পরস্পরকে বলতে লাগল, “এই ব্যক্তি নিশ্চয়ই একজন খুনি। কারণ সমুদ্রের কবল থেকে এ রক্ষা পেলেও দেবতার বিচারে ও প্রাণে বাঁচবে না।”
5 কিন্তু তিনি হাত ঝেড়ে সাপটিকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিলেন, ও তাঁর কিছুই ক্ষতি হল না।
কিন্তু পৌল সাপটিকে আগুনে ঝেড়ে ফেলে দিলেন, আর তাঁর কোনো ক্ষতি হল না।
6 তখন তারা অপেক্ষা করতে লাগল যে, তিনি ফুলে উঠবেন, কিংবা হঠাৎ করে মরে মাটিতে পড়ে যাবেন; কিন্তু অনেকক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর, তাঁর কোনো রকম খারাপ কিছু হচ্ছে না দেখে, তারা অন্যভাবে বুঝতে পেরে বলতে লাগল, উনি দেবতা।
লোকেরা ভাবছিল, তিনি ফুলে উঠবেন বা হঠাৎই মারা গিয়ে মাটিতে পড়ে যাবেন, কিন্তু দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষা করেও কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা তাঁর প্রতি ঘটতে না দেখে, তারা তাদের মত বদল করে বলল যে, তিনি একজন দেবতা।
7 ঐ স্থানের কাছে সেই দ্বীপের পুব্লীয় নামে প্রধানের জমিজমা ছিল; তিনি আমাদের খুশির সাথে গ্রহণ করে অতিথিস্বরূপ তিনদিন পর্যন্ত আমাদের সেবাযত্ন করলেন।
কাছেই ছিল সেই দ্বীপের প্রধান কর্মকর্তা পুব্লিয়ের জমিজায়গা। তিনি আমাদের তাঁর বাড়িতে স্বাগত জানালেন এবং তিন দিন যাবৎ আমাদের অতিথি আপ্যায়ন করলেন।
8 সেই দিন পুব্লিয়ের বাবা জ্বর ও আমাশা রোগের জন্য বিছানাতে শুয়ে থাকতেন, আর পৌল ভিতরে তার কাছে গিয়ে প্রার্থনার সাথে তার উপরে হাত রেখে তাকে সুস্থ করলেন।
তাঁর বাবা জ্বর ও আমাশয়রোগে শয্যাশায়ী ছিলেন। পৌল তাঁকে দেখতে ভিতরে গেলেন এবং প্রার্থনা করার পর তাঁর উপরে হাত রেখে তাঁকে সুস্থ করলেন।
9 এই ঘটনার পর অন্য যত রোগী ঐ দ্বীপে ছিল, তারা এসে সুস্থ হল।
এ ঘটনা ঘটার পর, সেই দ্বীপের অন্যান্য রোগীরাও এসে সুস্থতা লাভ করল।
10 ১০ আর তারা আমাদের অনেক সম্মান ও আদর যত্ন করল এবং আমাদের ফিরে আসার দিনের বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাহাজে এনে দিল।
তারা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের সমাদর করল এবং যখন আমরা সমুদ্রযাত্রার জন্য প্রস্তুত হলাম, আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু তারা সরবরাহ করল।
11 ১১ তিনমাস চলে যাওয়ার পর আমরা আলেকসান্দ্রিয় এক জাহাজে উঠে যাত্রা করলাম; সেই জাহাজ ঐ দ্বীপে শীতকাল কাটাচ্ছিল, তার মাথায় জমজ ভাইয়ের চিহ্ন ছিল।
তিন মাস পরে আমরা একটি জাহাজে করে যাত্রা শুরু করলাম। সেই জাহাজ ওই দ্বীপেই শীতকাল কাটাচ্ছিল। সেটা ছিল একটি আলেকজান্দ্রীয় জাহাজ, যার সামনে খোদাই করা ছিল ক্যাস্টর ও পোল্লাক্স, দুই যমজ দেবতার মূর্তি।
12 ১২ পরে সুরাকুষে লাগিয়ে আমরা সেখানে তিনদিন থাকলাম।
আমরা সুরাকুষে জাহাজ লাগিয়ে সেখানে তিন দিন থাকলাম।
13 ১৩ আর সেখান থেকে ঘুরে ঘুরে রাগী বন্দরে চলে এলাম; এক দিন পর দক্ষিণ বাতাস উঠল, আর দ্বিতীয় দিন পুতিয়লী শহরে উপস্থিত হলাম।
সেখান থেকে আমরা সমুদ্রযাত্রা করে রিগিয়ামে পৌঁছালাম। পরের দিন দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস বইতে লাগল এবং তার পরের দিন আমরা পুতিয়লিতে পৌঁছালাম।
14 ১৪ সেই জায়গাতে কয়েক জন ভাইয়ের দেখা পেলাম, আর তাঁরা অনুরোধ করলে সাত দিন তাঁদের সঙ্গে থাকলাম; এই ভাবে আমরা রোমে পৌঁছাই।
সেখানে আমরা কয়েকজন বিশ্বাসীর সন্ধান পেলাম, তাঁরা তাঁদের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটানোর জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানালেন। এভাবে আমরা রোমে পৌঁছালাম।
15 ১৫ আর সেখান থেকে ভাইয়েরা আমাদের খবর পেয়ে অপ্পিয়ের হাট ও তিন সরাই পর্যন্ত আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন; তাদের দেখে পৌল ঈশ্বরের ধন্যবাদ করে সাহস পেলেন।
সেখানকার ভাইবোনরা আমাদের আসার খবর শুনতে পেয়েছিলেন, তাই আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তাঁরা সুদূর আপ্পিয়ের হাট ও ত্রি-পান্থনিবাস পর্যন্ত এলেন। তাঁদের দেখে পৌল ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন ও উৎসাহিত হলেন।
16 ১৬ রোমে আমাদের পৌছানোর পর পৌল নিজের পাহারাদার সেনাদের সাথে স্বাধীন ভাবে বাস করার অনুমতি পেলেন।
যখন আমরা রোমে পৌঁছালাম, পৌলকে স্বতন্ত্রভাবে বাস করার অনুমতি দেওয়া হল যদিও একজন সৈন্য তাঁকে পাহারা দিত।
17 ১৭ আর তিন দিনের র পর তিনি ইহুদীদের প্রধান প্রধান লোককে ডেকে একত্র করলেন; এবং তাঁরা একসাথে হলে পর তিনি তাঁদের বললেন, প্রিয় ভাইয়েরা, আমি যদিও নিজের জাতিদের কিংবা পিতার রীতিনীতির বিপক্ষে কিছুই করিনি, তবুও যিরুশালেম থেকে পাঠিয়ে বন্দীরূপে রোমীয়দের হাতে সমর্পিত হয়েছিলাম;
তিন দিন পরে তিনি ইহুদিদের নেতৃবৃন্দকে একত্র হওয়ার জন্য আহ্বান করলেন। তাঁরা সমবেত হলে পৌল তাঁদের বললেন, “হে আমার ভাইয়েরা, যদিও স্বজাতির বিরুদ্ধে বা আমাদের পিতৃপুরুষদের রীতিনীতির বিরুদ্ধে আমি কিছুই করিনি, তবুও আমাকে জেরুশালেমে গ্রেপ্তার করে রোমীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
18 ১৮ আর তারা, আমার বিচার করে প্রাণদন্ডের মত কোনো দোষ না পাওয়াতে, আমাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল;
তারা আমাকে জেরা করার পর মুক্তি দিতে চেয়েছিল, কারণ মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোনো অপরাধই আমি করিনি।
19 ১৯ কিন্তু ইহুদীরা বিরোধ করায় আমি কৈসরের কাছে আপীল করতে বাধ্য হলাম; নিজের জাতির উপরে দোষারোপ করার কোনোও কথা যে আমার ছিল, তা নয়।
কিন্তু ইহুদিরা যখন আপত্তি করল, আমি কৈসরের কাছে অনুরোধ জানাতে বাধ্য হলাম। এমন নয় যে স্বজাতির লোকদের দোষারোপ করার মতো আমার কোনও অভিযোগ ছিল।
20 ২০ সেই কারণে আমি আপনাদের সাথে দেখা ও কথা বলার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ করলাম; কারণ ইস্রায়েলের সেই প্রত্যাশার জন্যই, আমি শেকলে বন্দি।
এই কারণে, আমি আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ও কথা বলতে চেয়েছি। ইস্রায়েলের প্রত্যাশার জন্যই আমি এই শিকলে বন্দি হয়েছি।”
21 ২১ তারা তাঁকে বলল, আমরা আপনার বিষয়ে যিহূদীয়া থেকে কোনো চিঠি পাইনি; অথবা ভাইদের মধ্যেও কেউ এখানে এসে আপনার বিষয়ে খারাপ সংবাদ দেননি, বা খারাপ কথাও বলেনি।
তাঁরা উত্তর দিলেন, “আমরা আপনার সম্পর্কে যিহূদিয়া থেকে কোনও পত্র পাইনি। সেখান থেকে আসা কোনও ব্যক্তি আপনার বিষয়ে কোনো খারাপ সংবাদ দেয়নি বা কোনো খারাপ কথা বলেনি।
22 ২২ কিন্তু আপনার মত কি, সেটা আমরা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই; কারণ এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে, সব জায়গাতে লোকে এর বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে।
কিন্তু আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী প্রকার তা আমরা শুনতে চাই, কারণ আমরা জানি, সর্বত্র লোকেরা এই দলের বিরুদ্ধে কথা বলে।”
23 ২৩ পরে তাঁরা একটি দিন ঠিক করে সেই দিন অনেকে তাঁর বাড়িতে তাঁর কাছে আসলেন; তাঁদের কাছে তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাখ্যা করে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন এবং মোশির ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের বই নিয়ে যীশুর বিষয়ে তাঁদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন।
পৌলের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তাঁরা একটি দিন স্থির করলেন। পৌল যেখানে বসবাস করছিলেন, তাঁরা আরও বেশি সংখ্যায় সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি তাঁদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও প্রচার করলেন। তিনি মোশির বিধান ও ভাববাদীদের গ্রন্থ থেকে যীশুর বিষয়ে তাঁদের মনে বিশ্বাস জাগানোর চেষ্টা করলেন।
24 ২৪ তাতে কেউ কেউ তাঁর কথায় বিশ্বাস করলেন, আর কেউ কেউ অবিশ্বাস করলেন।
তিনি যা বললেন, তা শুনে কেউ কেউ বিশ্বাস করলেন, কিন্তু অন্যরা বিশ্বাস করলেন না।
25 ২৫ এভাবে তাঁদের মধ্যে একমত না হওয়ায় তাঁরা চলে যেতে লাগলেন; যাওয়ার আগে পৌল এই একটি কথা বলে দিলেন, পবিত্র আত্মা যিশাইয় ভাববাদীর দ্বারা আপনাদের পূর্বপুরুষদের এই কথা ভালোই বলেছিলেন,
তাঁদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ায় তাঁরা সেই স্থান ত্যাগ করতে লাগলেন, যখন পৌল তাঁর সর্বশেষ মন্তব্য করলেন, “পবিত্র আত্মা আপনাদের পিতৃপুরুষদের কাছে সত্য ঘোষণা করেছিলেন, যখন তিনি ভাববাদী যিশাইয়র মাধ্যমে বলেছিলেন,
26 ২৬ যেমন “এই লোকদের কাছে গিয়ে বল, তোমরা কানে শুনবে, কিন্তু কোনো মতে বুঝবে না; এবং চোখে দেখবে, কিন্তু কোনো মতে জানবে না,
“‘তুমি এই জাতির কাছে যাও ও বলো, “তোমরা সবসময়ই শুনতে থাকবে, কিন্তু কখনও বুঝতে পারবে না; তোমরা সবসময়ই দেখতে থাকবে, কিন্তু কখনও উপলব্ধি করবে না।”
27 ২৭ কারণ এই লোকদের হৃদয় শক্ত হয়েছে, শুনতে তাদের কান ভারী হয়েছে, ও তারা চোখ বন্ধ করেছে, যেন তারা চোখে দেখে এবং কানে শুনে, হৃদয়ে বুঝে এবং ফিরে আসে, আর আমি তাদের সুস্থ করি।”
কারণ এই লোকেদের হৃদয় অনুভূতিহীন হয়েছে, তারা কদাচিৎ তাদের কান দিয়ে শোনে, তারা তাদের চোখ মুদ্রিত করেছে। অন্যথায়, তারা হয়তো তাদের চোখ দিয়ে দেখবে, তাদের কান দিয়ে শুনবে, তাদের মন দিয়ে বুঝবে, ও ফিরে আসবে যেন আমি তাদের আরোগ্য দান করি।’
28 ২৮ অতএব আপনারা জানুন, অযিহুদিদের কাছে ঈশ্বরের এই পরিত্রান পাঠানো হল; আর তারা শুনবে।
“সেই কারণে, আমি আপনাদের বলতে চাই যে, ঈশ্বরের পরিত্রাণ অইহুদিদের কাছে পাঠানো হয়েছে, আর তারা তা শুনবে।”
29 ২৯
তিনি একথা বলার পর, ইহুদিরা নিজেদের মধ্যে তুমুল তর্কবিতর্ক করতে করতে সেই স্থান ত্যাগ করল।
30 ৩০ আর পৌল সম্পূর্ণ দুবছর পর্যন্ত নিজের ভাড়া করা ঘরে থাকলেন এবং যত লোক তাঁর কাছে আসত, সকলকেই গ্রহণ করতেন।
সম্পূর্ণ দু-বছর পৌল সেখানে তাঁর নিজস্ব ভাড়াবাড়িতে রইলেন। যারা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসত, তাদের সকলকে তিনি স্বাগত জানাতেন।
31 ৩১ তিনি সম্পূর্ণ সাহসের সাথে ঈশ্বরের রাজ্যের কথা প্রচার করতেন এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন, কেউ তাঁকে বাঁধা দিত না।
সাহসের সঙ্গে তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতেন এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন। কেউ তাঁকে বাধা দিত না।

< প্রেরিত 28 >