< দ্বিতীয় রাজাবলি 23 >

1 পরে রাজা লোক পাঠিয়ে যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত প্রাচীন নেতাদের ডেকে তাঁর কাছে জড়ো করলেন।
তখন যিহূদা ও জেরুশালেমের সব প্রাচীনকে রাজা এক স্থানে ডেকে পাঠালেন।
2 তখন রাজা যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের, যাজকদের, ভাববাদীদের এবং ছোট ও মহান সমস্ত লোকদের তাঁর সঙ্গে নিয়ে সদাপ্রভুর গৃহে গেলেন। তখন তিনি সদাপ্রভুর গৃহে ব্যবস্থার যে বইটি পাওয়া গিয়েছিল তার সমস্ত কথা তিনি তাদের শুনিয়ে পড়লেন।
যিহূদার প্রজাদের, জেরুশালেমের অধিবাসীদের, যাজক ও ভাববাদীদের—ছোটো থেকে বড়ো, সব লোকজনকে সাথে নিয়ে তিনি সদাপ্রভুর মন্দিরে উঠে গেলেন। সদাপ্রভুর মন্দিরে যে নিয়ম-পুস্তকটি খুঁজে পাওয়া গেল, তার সব কথা তিনি লোকদের পড়ে শুনিয়েছিলেন।
3 রাজা মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে সদাপ্রভুর পথে চলবার জন্য এবং সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে তাঁর সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ মেনে চলবার জন্য, অর্থাৎ এই বইয়ের মধ্যে লেখা ব্যবস্থার সমস্ত কথা পালন করবার জন্য সদাপ্রভুর সামনে প্রতিজ্ঞা করলেন এবং সমস্ত লোকেরাও রাজার সঙ্গে একই প্রতিজ্ঞায় সম্মতি দিল।
রাজামশাই থামের পাশে দাঁড়িয়ে সদাপ্রভুর সামনে সেই পবিত্র নিয়মটির নবীকরণ করলেন—তিনি সদাপ্রভুর পথে চলার ও মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে তাঁর আদেশ, বিধিনিয়ম ও হুকুম পালন করার শপথ নিয়েছিলেন। এইভাবে সেই গ্রন্থে লেখা পবিত্র নিয়মের কথাগুলি তিনি সুনিশ্চিত করলেন। পরে প্রজারাও সবাই সেই পবিত্র নিয়মের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার শপথ নিয়েছিল।
4 রাজা তখন বাল দেবতা ও আশেরা এবং আকাশের সমস্ত তারাগুলোর পূজার জন্য তৈরী সব জিনিসপত্র সদাপ্রভুর ঘর থেকে বের করে ফেলবার জন্য মহাযাজক হিল্কিয়কে, দ্বিতীয় শ্রেণীর যাজককে এবং দারোয়ানদের আদেশ দিলেন। তিনি সেগুলো যিরূশালেমের বাইরে কিদ্রোণ উপত্যকার মাঠে পুড়িয়ে দিলেন এবং ছাইগুলো বৈথেলে নিয়ে গেলেন।
রাজামশাই মহাযাজক হিল্কিয়, পদাধিকারবলে তাঁর থেকে ছোটো যাজকদের এবং দারোয়ানদের বললেন, তারা যেন সদাপ্রভুর মন্দির থেকে বায়াল, আশেরা ও আকাশের সব তারকাদলের জন্য তৈরি জিনিসপত্র সরিয়ে দেন। জেরুশালেম নগরের বাইরে অবস্থিত কিদ্রোণ উপত্যকার মাঠে নিয়ে গিয়ে তিনি সেগুলি পুড়িয়ে দিলেন এবং সেই ছাইভস্ম বেথেলে নিয়ে এলেন।
5 তিনি যিহূদার শহরগুলোর এবং যিরূশালেমের চারপাশের উঁচু স্থানগুলোতে ধূপ জ্বালাবার জন্য যিহূদার রাজারা যে সব প্রতিমাপূজাকারী যাজকদের নিযুক্ত করেছিলেন, অর্থাৎ যারা বাল দেবতা, চাঁদ, সূর্য্য, গ্রহদের এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীদের উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালাত তাদের তিনি দূর করে দিলেন।
যিহূদার রাজারা ইতিপূর্বে যিহূদার বিভিন্ন নগরে ও জেরুশালেমের আশেপাশে অবস্থিত উঁচু উঁচু স্থানে ধূপ পোড়ানোর জন্য প্রতিমাপুজোর সাথে যুক্ত যেসব যাজককে নিযুক্ত করলেন—অর্থাৎ, যারা বায়ালদেব, সূর্য ও চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডল এবং তারকাদলের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাতো, তাদের তিনি বরখাস্ত করে দিলেন।
6 তিনি সদাপ্রভুর ঘর থেকে আশেরার মূর্তির খুঁটিটা বার করে নিয়ে এসে যিরূশালেমের বাইরে কিদ্রোণ উপত্যকাতে সেটা নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দিলেন। তারপর সেটা গুঁড়া করলেন এবং তার ধূলো সাধারণ লোকদের কবরের উপরে ছড়িয়ে দিলেন।
তিনি আশেরার খুঁটিটিকে সদাপ্রভুর মন্দির থেকে বের করে জেরুশালেমের বাইরে অবস্থিত কিদ্রোণ উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে, সেখানে সেটি পুড়িয়ে দিলেন। সেটি পিষে ধুলোর মতো গুঁড়ো করে তিনি সাধারণ লোকদের কবরস্থানে ছড়িয়ে দিলেন।
7 পুরুষ বেশ্যাদের যে কামরাগুলো সদাপ্রভুর গৃহে ছিল যেখানে স্ত্রীলোকেরা আশেরার জন্য কাপড় বুনত তিনি সেগুলো ভেঙে পরিষ্কার করে দিলেন।
এছাড়াও তিনি সদাপ্রভুর মন্দিরের মধ্যে অবস্থিত দেবদাসদের সেই বাসাগুলি ভেঙে দিলেন, যে বাসাগুলিতে বসে মহিলারা আশেরার জন্য কাপড় বুনত।
8 যোশিয় যিহূদার শহর ও গ্রামগুলো থেকে সমস্ত যাজকদের বাইরে আনালেন এবং গেবা থেকে বের-শেবা পর্যন্ত যে সব পূজার উঁচু স্থানগুলোতে সেই যাজকেরা ধূপ জ্বালাত সেগুলো অশূচি করে দিলেন। তিনি শাসনকর্ত্তা যিহোশূয়ের ফটকে ঢোকার পথে যে সব পূজার উঁচু স্থান ছিল সেগুলো ভেঙে ফেললেন। এই ফটকদ্বার শহরের প্রধান ফটকে প্রবেশকারীর বাঁদিকে ছিল।
যোশিয় যিহূদার সব নগর থেকে যাজকদের বের করে এনেছিলেন এবং গেবা থেকে শুরু করে বের-শেবা পর্যন্ত প্রতিমাপুজোর যত উঁচু উঁচু স্থানে যাজকেরা ধূপ জ্বালাতো, সেসব তিনি কলুষিত করে দিলেন। নগরের সিংহদুয়ারের বাঁদিকে অবস্থিত নগরের শাসনকর্তা যিহোশূয়ের দুয়ারের প্রবেশদ্বারে যে সদর দরজাটি ছিল, তিনি সেটিও ভেঙে দিলেন।
9 সেই উঁচুস্থানগুলোর যাজকদের যিরূশালেমে সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদীতে বলিদান করতে অনুমতি ছিল না, কিন্তু তারা অন্যান্য যাজক ভাইদের সঙ্গে খামি ছাড়া রুটি খেতে পারত।
যদিও প্রতিমাপুজোর উঁচু উঁচু স্থানগুলির যাজকেরা জেরুশালেমে সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদিতে সেবাকাজে অংশগ্রহণ করত না, তারা কিন্তু তাদের সহ-যাজকদের সাথে মিলেমিশে খামিরবিহীন রুটি খেয়ে যেত।
10 ১০ অন্য কেউ যাতে মোলক দেবতার উদ্দেশ্যে নিজের ছেলে বা মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে হোমবলি উৎসর্গ করতে না পারে সেইজন্য যোশিয় বেন্‌হিন্নোম উপত্যকার তোফৎ নামে জায়গাটা অশূচি করলেন।
তিনি বিন-হিন্নোম উপত্যকায় অবস্থিত তোফৎকে কলুষিত করলেন, যেন কেউ আর সেখানে মোলক দেবতার আগুনে তাদের ছেলেমেয়েকে বলিরূপে উৎসর্গ করতে না পারে।
11 ১১ যিহূদার রাজারা যে সব রথ ও ঘোড়াগুলো সূর্য্যের উদ্দেশ্যে দিয়েছিলেন যোশিয় সেই ঘোড়াগুলো দূর করে দিয়ে রথগুলো পুড়িয়ে দিলেন। সদাপ্রভুর গৃহে ঢোকবার পথের পাশে, উঠানের মধ্যে, নথন-মেলক নামে একজন রাজকর্মচারীর কামরার কাছে ঘোড়াগুলো রাখা হত।
সদাপ্রভুর মন্দিরের প্রবেশদ্বার থেকে ঘোড়ার সেই মূর্তিগুলি তিনি দূর করে দিলেন, যেগুলি যিহূদার রাজারা সূর্যের উদ্দেশে প্রতিষ্ঠা করলেন। সেগুলি রাখা ছিল নথন-মেলক বলে একজন কর্মকর্তার ঘরের কাছে অবস্থিত প্রাঙ্গণে। যোশিয় পরে সূর্যের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত রথগুলিও পুড়িয়ে দিলেন।
12 ১২ রাজা আহসের উপরের কামরার ছাদের উপরে যিহূদার রাজারা যে সব যজ্ঞবেদী তৈরী করেছিলেন এবং সদাপ্রভুর গৃহের দুটি উঠানে মনঃশি যে সব যজ্ঞবেদী তৈরী করেছিলেন যোশিয় সেগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো করে কিদ্রোণ উপত্যকায় ফেলে দিলেন।
আহসের রাজপ্রাসাদের ছাদে অবস্থিত ঘরের কাছে যিহূদার রাজারা যে যজ্ঞবেদিগুলি তৈরি করেছিলেন, এবং সদাপ্রভুর মন্দিরের দুটি প্রাঙ্গণে মনঃশি যে যজ্ঞবেদিগুলি তৈরি করেছিলেন, তিনি সেগুলিও ভেঙে নামিয়েছিলেন। তিনি সেখান থেকে সেগুলি দূর করে দিলেন, সেগুলি ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিলেন এবং সেই ভাঙাচোরা ইটপাথর কিদ্রোণ উপত্যকায় ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।
13 ১৩ যিরূশালেমের পূর্ব দিকে ধ্বংসের পাহাড়ের দক্ষিণে যে সব উঁচু স্থান ছিল সেগুলো তিনি অশূচি করলেন। ইস্রায়েলের রাজা শলোমন সীদোনীয়দের জঘন্য দেবী অষ্টোরতের জন্য, মোয়াবের জঘন্য দেবতা কমোশের জন্য এবং অম্মোনের লোকদের জঘন্য দেবতা মিল্কমের জন্য এই সব উঁচু স্থান তৈরী করেছিলেন। সে সকলই তিনি অশূচি করলেন।
রাজামশাই জেরুশালেমের পূর্বদিকে পচন-পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত প্রতিমাপুজোর সেই উঁচু উঁচু স্থানগুলিও কলুষিত করলেন—যেগুলি ইস্রায়েলের রাজা শলোমন সীদোনীয়দের কদর্য দেবী অষ্টারোতের, মোয়াবের কদর্য দেবতা কমোশের, এবং অম্মোনীয়দের ঘৃণ্য দেবতা মোলকের জন্য তৈরি করলেন।
14 ১৪ যোশিয় রাজা পবিত্র পাথরগুলো ভেঙে ফেললেন এবং আশেরার মূর্তিগুলিও কেটে ফেললেন আর সেই জায়গাগুলো মানুষের হাড়ে পূরণ করে দিলেন।
যোশিয় পবিত্র পাথরগুলি ভেঙে গুঁড়ো করে দিলেন ও আশেরার খুঁটিগুলি কেটে নামিয়েছিলেন এবং সেই স্থানটি মানুষের অস্থি দিয়ে ঢেকে দিলেন।
15 ১৫ নবাটের ছেলে যারবিয়াম যিনি ইস্রায়েলকে দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন তিনি বৈথেলে যে যজ্ঞবেদী ও উঁচু স্থান তৈরী করেছিলেন সেটি যোশিয় ভেঙে দিয়েছিলেন। যোশিয় সেই উঁচু স্থানটা আগুনে পুড়িয়ে দিলেন ও পিষে গুড়ো করলেন।
এমনকি বেথেলের যজ্ঞবেদিটি, এবং যিনি ইস্রায়েলকে দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন, সেই নবাটের ছেলে যারবিয়াম প্রতিমাপুজোর যেসব উঁচু উঁচু স্থান তৈরি করলেন, সেগুলিও তিনি ভূমিসাৎ করে দিলেন। প্রতিমাপুজোর উঁচু স্থানটি পুড়িয়ে দিয়ে তিনি সেটি পিষে গুঁড়ো করে দিলেন, এবং আশেরার খুঁটিটিও তিনি পুড়িয়ে দিলেন।
16 ১৬ তারপর তিনি চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন এবং পাহাড়ের কাছে কিছু কবর দেখতে পেলেন। তিনি তাঁর লোক পাঠিয়ে সেই কবর থেকে হাড় আনিয়ে সেগুলো যজ্ঞবেদীর উপর পোড়ালেন এবং সেটি অশূচি করলেন। সদাপ্রভুর সেই কথা অনুযায়ী সবই হয়েছিল যা ঈশ্বরের লোক সব ঘটনার কথা আগে ঘোষণা করেছিলেন।
পরে যোশিয় চারপাশে তাকিয়েছিলেন, আর যখন তিনি পাহাড়ের পাশে কয়েকটি কবর দেখতে পেয়েছিলেন, তখন তিনি সেগুলি থেকে অস্থি বের করে এনে যজ্ঞবেদিটি কলুষিত করার জন্য সেটির উপরে সেগুলি পুড়িয়েছিলেন। এসবই হল সদাপ্রভুর ঘোষণা করে দেওয়া সেই কথানুসারে, যে বিষয়ে ঈশ্বরের লোক আগেই ভাববাণী করে দিলেন।
17 ১৭ তখন তিনি বললেন, “আমি ওটা কোন স্তম্ভ দেখতে পাচ্ছি?” শহরের লোকেরা তাঁকে বলল, “ঈশ্বরের যে লোক যিহূদা থেকে এসে বৈথেলের যজ্ঞবেদীর বিরুদ্ধে আপনার এই সমস্ত কাজের কথা প্রচার করেছিলেন, এটি তাঁরই কবর।”
রাজামশাই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আমি যে সমাধিস্তম্ভটি দেখতে পাচ্ছি, সেটি কার?” সেই নগরের লোকেরা বলল, “এটি ঈশ্বরের সেই লোকের সমাধির চিহ্নিত স্তম্ভ, যিনি যিহূদা থেকে এসে বেথেলের যজ্ঞবেদির বিরুদ্ধে একটি বাণী ঘোষণা করলেন, এবং আপনি সেটির প্রতি ঠিক তাই করেছেন।”
18 ১৮ তখন যোশিয় বললেন, “ওটা থাকুক; কেউ যেন তাঁর হাড়গুলো না সরিয়ে দেয়।” সুতরাং লোকেরা তাঁর হাড়গোড় এবং যে ভাববাদী শমরিয়া থেকে এসেছিলেন তাঁর হাড়গোড় তেমনই থাকতে দিল।
“এটি ছেড়ে দাও,” তিনি বললেন। “কেউ যেন তাঁর অস্থি নষ্ট না করে।” তাই তারা তাঁর ও শমরিয়া থেকে আসা ভাববাদীর অস্থি নষ্ট না করে ছেড়ে দিয়েছিল।
19 ১৯ শমরিয়ার শহর ইস্রায়েলের রাজারা উঁচু স্থানে যে সব মন্দির তৈরী করে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করেছিলেন, যোশিয় সেগুলো দূর করে দিলেন এবং সেগুলির অবস্থা বৈথেলে যেমন করেছিলেন ঠিক সেই রকম করলেন।
যোশিয় বেথেলে যেমনটি করলেন, ঠিক সেভাবেই শমরিয়ার নগরগুলির উঁচু উঁচু স্থানগুলিতে ইস্রায়েলের রাজারা দেবতার যে পীঠস্থানগুলি তৈরি করে সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন, সেগুলিও তিনি দূর করে দিলেন।
20 ২০ তিনি সেই সব যজ্ঞবেদীর উপরে সেখানকার যাজকদের বলিদান করলেন এবং সেগুলির উপর মানুষের হাড় পোড়ালেন। তারপরে তিনি যিরূশালেমে ফিরে গেলেন।
বেদিগুলির উপরেই যোশিয় প্রতিমাপুজোর সেইসব উঁচু উঁচু স্থানের যাজকদের হত্যা করলেন এবং সেগুলির উপর মানুষের অস্থি পুড়িয়েছিলেন। পরে তিনি জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।
21 ২১ তখন রাজা সব লোকদের আদেশ দিয়ে বললেন, “ব্যবস্থার বইয়ে যেমন লেখা আছে তেমনি করে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে নিস্তারপর্ব্ব পালন করুন।”
রাজামশাই সব লোকজনকে এই আদেশ দিলেন: “পবিত্র নিয়ম সম্বলিত এই গ্রন্থে যেমন লেখা আছে, সেভাবেই তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব পালন করো।”
22 ২২ ইস্রায়েলীয়দের শাসনকালে বিচারকদের আমলে কিম্বা ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের আমলে এই ধরনের নিস্তারপর্ব্ব কখনো পালন করা হয়নি।
যেসব বিচারকর্তা ইস্রায়েলকে পরিচালনা দিলেন, না তাদের আমলে, আর না ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের আমলে এ ধরনের নিস্তারপর্ব পালন করা হত।
23 ২৩ যদিও যোশিয় রাজার রাজত্বকালে আঠারো বছরের দিনের যিরূশালেমে সদাপ্রভুর জন্য এই নিস্তারপর্ব্ব পালন করা হয়েছিল।
কিন্তু রাজা যোশিয়ের রাজত্বকালের অষ্টাদশ বছরে জেরুশালেমে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই নিস্তারপর্ব পালন করা হল।
24 ২৪ এছাড়া যারা মৃতদের সঙ্গে এবং যারা মন্দ আত্মার সঙ্গে কথা বলতেন যোশিয় তাদের তাড়িয়ে দিলেন। তিনি পারিবারিক দেবতার মূর্ত্তি, প্রতিমা এবং যিহূদা ও যিরূশালেমে যে সব ঘৃণার জিনিসপত্র দেখতে পেলেন সেগুলোও সব দূর করে দিলেন। হিল্কিয় যাজক সদাপ্রভুর গৃহে যে ব্যবস্থার কথা লেখা বই খুঁজে পেয়েছিলেন তার সব বাক্য যেন সঠিকভাবে মান্য করা হয় সেইজন্য যোশিয় এই সব কাজ করেছিলেন।
এছাড়াও, যারা প্রেতমাধ্যম ও যারা অশরীরী আত্মাদের আবাহন করে, তাদের, ও ঘরোয়া দেবতাদের, প্রতিমাগুলিকে এবং যিহূদা ও জেরুশালেমে যত ঘৃণ্য জিনিসপত্র দেখা যেত, সেসব যোশিয় দূর করে দিলেন। যাজক হিল্কিয় সদাপ্রভুর মন্দিরে যে গ্রন্থটি খুঁজে পেয়েছিলেন, সেটিতে লেখা বিধানের চাহিদা পূরণ করার জন্যই তিনি এ কাজ করলেন
25 ২৫ যোশিয় রাজার আগে আর কোনো রাজাই তাঁর মত ছিলেন না যিনি তাঁর মত সমস্ত মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে মোশির সমস্ত ব্যবস্থা অনুযায়ী সদাপ্রভুর পথে চলতেন। না কোনো রাজা যোশিয় রাজার মত পরে উঠেছিলেন।
যোশিয়ের আগে বা পরে এমন কোনও রাজা দেখা যায়নি, যিনি তাঁর মতো মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে, ও সর্বশক্তি দিয়ে মোশির বিধান অনুসারে সদাপ্রভুর দিকে ফিরতে পেরেছিলেন।
26 ২৬ তবুও, যিহূদার বিরুদ্ধে যে ভয়ঙ্কর ক্রোধে সদাপ্রভু প্রজ্বলিতি হয়ে উঠেছিলেন তা থেকে তিনি ফিরলেন না, যেমন মনঃশির অসন্তোষ জনক কাজের ফলে সদাপ্রভু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
তা সত্ত্বেও, মনঃশি যেহেতু সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তোলার জন্য প্রচুর মন্দ কাজ করলেন, তাই সদাপ্রভু তাঁর সেই প্রচণ্ড ক্রোধের উত্তাপ থেকে ফিরে আসেননি, যা যিহূদার বিরুদ্ধে জ্বলে উঠেছিল।
27 ২৭ সেইজন্য সদাপ্রভু বললেন, “আমি আমার চোখের সামনে থেকে যেমন করে আমি ইস্রায়েলকে দূর করেছি তেমনি করে যিহূদাকেও দূর করব, আর যে শহরকে আমি বেছে নিয়েছিলাম সেই যিরূশালেমকে এবং যার সম্বন্ধে আমি বলেছিলাম, ‘আমার নাম সেখানে থাকবে’ সেই ঘরকেও আমি অগ্রাহ্য করব।”
তাই সদাপ্রভু বললেন, “যেভাবে আমি ইস্রায়েলকে আমার সামনে থেকে দূর করে দিয়েছি, সেভাবে আমি যিহূদাকেও দূর করে দেব, এবং যে নগরটিকে আমি বেছে নিয়েছিলাম, সেই জেরুশালেমকে, এবং যেটির বিষয়ে আমি বলেছিলাম, ‘আমার নাম সেখানে বজায় থাকবে,’ সেই মন্দিরটিকেও আমি প্রত্যাখ্যান করব।”
28 ২৮ যোশিয়ের অন্যান্য সমস্ত অবশিষ্ট কাজের কথা যা কিছু তিনি করেছিলেন যিহূদার রাজাদের ইতিহাস বইটিতে কি লেখা নেই?
যোশিয়ের রাজত্বের অন্যান্য সব ঘটনা, এবং তিনি যা যা করলেন, তার বিবরণ কি যিহূদার রাজাদের ইতিহাস-গ্রন্থে লেখা নেই?
29 ২৯ তাঁর রাজত্বের দিনের মিশরের রাজা ফরৌণ নখো অশূর রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইউফ্রেটিস নদীর দিকে গেলেন। তখন যোশিয় রাজা নখোর সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্য বের হলেন এবং ফরৌণ নখো যুদ্ধ করে তাঁকে মগিদ্দোতে মেরে ফেললেন।
যোশিয় যখন রাজত্ব করছিলেন, তখন মিশরের রাজা ফরৌণ নখো আসিরিয়ার রাজাকে সাহায্য করার জন্য ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত চলে গেলেন। রাজা যোশিয় তাঁর সাথে যুদ্ধ করার জন্য কুচকাওয়াজ করে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু নখো যোশিয়ের সম্মুখীন হয়ে মগিদ্দোতে তাঁকে মেরে ফেলেছিলেন।
30 ৩০ যোশিয়ের দাসেরা তাঁর মৃত দেহ রথে করে মগিদ্দো থেকে যিরূশালেমে নিয়ে আসলো এবং তাঁর নিজের কবরে তাঁকে কবর দিল। পরে দেশের লোকেরা যোশিয়ের ছেলে যিহোয়াহসকে অভিষেক করে তাঁর বাবার জায়গায় তাঁকে রাজা করল।
যোশিয়ের দাসেরা তাঁর দেহটি রথে করে মগিদ্দো থেকে জেরুশালেমে নিয়ে এসেছিল এবং তাঁকে তাঁরই কবরে কবর দিয়েছিল। দেশের প্রজারা যোশিয়ের ছেলে যিহোয়াহসকে অভিষিক্ত করল এবং তাঁকে তাঁর বাবার পদে রাজা করল।
31 ৩১ যিহোয়াহস তেইশ বছর বয়সে ছিলেন যখন তিনি রাজত্ব শুরু করেছিলেন এবং তিনি তিন মাস যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল হমূটল; তিনি লিব্‌নার বাসিন্দা যিরমিয়ের মেয়ে ছিলেন।
যিহোয়াহস তেইশ বছর বয়সে রাজা হলেন, এবং জেরুশালেমে তিনি তিন মাস রাজত্ব করলেন। তাঁর মায়ের নাম হমূটল। তিনি ছিলেন যিরমিয়ের মেয়ে, ও তাঁর বাড়ি ছিল লিব্‌নায়।
32 ৩২ যিহোয়াহস তাঁর পূর্বপুরুষরা যেমন করেছিলেন, তেমনই তিনি সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তাই করতেন।
তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের মতোই সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা যা মন্দ, তাই করলেন।
33 ৩৩ ফরৌণ নখো তাঁকে হমাৎ দেশের রিব্‌লাতে আটক করে রাখলেন যেন তিনি যিরূশালেমে রাজত্ব করতে না পারেন। তখন নখো একশো তালন্ত রূপো (প্রায় চার টন রূপো) ও এক তালন্ত সোনা (ঊনচল্লিশ কেজি সোনা) যিহূদা দেশের উপর জরিমানা করলেন।
ফরৌণ নখো তাঁকে শিকলে বেঁধে হমাৎ দেশের রিব্‌লাতে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন, যেন তিনি আর জেরুশালেমে রাজত্ব করতে না পারেন। একইসাথে যিহূদার উপর তিনি জোর করে একশো তালন্ত রুপো ও এক তালন্ত সোনা খাজনা ধার্য করলেন।
34 ৩৪ পরে ফরৌণ নখো যোশিয়ের অন্য ছেলে ইলীয়াকীমকে তাঁর বাবা যোশিয়ের জায়গায় রাজা করলেন এবং ইলীয়াকীমের নাম বদল করে যিহোয়াকীম রাখলেন। কিন্তু ফরৌণ নখো যিহোয়াহসকে মিশরে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে যিহোয়াহস মারা গেলেন।
ফরৌণ নখো যোশিয়ের ছেলে ইলিয়াকীমকে তাঁর বাবা যোশিয়ের পদে রাজা করলেন এবং ইলিয়াকীমের নাম পরিবর্তন করে যিহোয়াকীম রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি যিহোয়াহসকে মিশরে তুলে নিয়ে গেলেন, এবং সেখানেই যিহোয়াহসের মৃত্যু হল।
35 ৩৫ যিহোয়াকীম ফরৌণকে সেই সোনা ও রূপা দিলেন। ফরৌণের আদেশ অনুসারে তা দেওয়ার জন্য তিনি দেশের লোকদের উপর কর চাপালেন। দেশের প্রত্যেকে মানুষের উপর কর ধার্য্য করে সেই সোনা ও রূপা তিনি ফরৌণ নখোকে দেবার জন্য দেশের লোকদের কাছ থেকে আদায় করলেন।
ফরৌণ নখোর দাবি মতোই যিহোয়াকীম তাঁকে সোনা ও রুপো দিলেন। এরকম করতে গিয়ে, তিনি দেশেই রাজকর ধার্য করে বসেছিলেন এবং দেশের প্রজাদের সামর্থ্য অনুসারে তিনি তাদের কাছ থেকে সোনারুপো আদায় করলেন।
36 ৩৬ যিহোয়াকীমের বয়স পঁচিশ বছর ছিল যখন তিনি রাজত্ব করতে শুরু করলেন। তিনি এগারো বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল সবীদা; তিনি ছিলেন রূমায় বাসিন্দা পদায়ের মেয়ে।
যিহোয়াকীম পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হলেন, এবং জেরুশালেমে তিনি এগারো বছর রাজত্ব করলেন। তাঁর মায়ের নাম সবীদা। তিনি ছিলেন পদায়ের মেয়ে, ও তাঁর বাড়ি ছিল রূমায়।
37 ৩৭ যিহোয়াকীম তাঁর পূর্বপুরুষের যেমন করেছিলেন তেমনই সদাপ্রভুর চোখে যা কিছু মন্দ তাই করতেন।
আর তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের মতোই সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা যা মন্দ, তাই করলেন।

< দ্বিতীয় রাজাবলি 23 >