< বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড 33 >

1 মনঃশির বয়স বারো বছর ছিল যখন তিনি রাজত্ব শুরু করেছিলেন এবং যিরূশালেমে পঞ্চান্ন বছর ধরে রাজত্ব করেছিলেন।
মনঃশি 12 বছর বয়সে রাজা হলেন, এবং জেরুশালেমে তিনি পঞ্চান্ন বছর রাজত্ব করলেন।
2 তিনি সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তাই করতেন; সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে যে সব জাতিকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের মত জঘন্য কাজ করতেন।
ইস্রায়েলীদের সামনে থেকে সদাপ্রভু যে জাতিদের দূর করে দিলেন, তাদের ঘৃণ্য প্রথা অনুসরণ করে তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা যা মন্দ, তাই করলেন।
3 তাঁর বাবা হিষ্কিয় পূজার যে সব উঁচু জায়গা ধ্বংস করেছিলেন তিনি সেগুলো আবার তৈরী করালেন। এছাড়া তিনি বাল দেবতার উদ্দেশ্যে কতগুলো বেদী ও আশেরা মূর্ত্তি তৈরী করলেন। তিনি আকাশের সব তারাগুলোর সামনে মাথা নত করে পূজা ও সেবা করলেন।
তাঁর বাবা হিষ্কিয় প্রতিমাপূজার যে উঁচু স্থানগুলি ভূমিসাৎ করলেন, তিনি সেগুলিই আবার নতুন করে গড়ে তুলেছিলেন; এছাড়াও তিনি বায়াল-দেবতাদের উদ্দেশে বেদি গেঁথে তুলেছিলেন এবং আশেরার খুঁটিও তৈরি করেছিলেন। তিনি আকাশের রাশি রাশি তারার কাছে মাথা নত করতেন এবং সেগুলির পূজার্চনা করতেন।
4 যে ঘরের বিষয় সদাপ্রভু বলেছিলেন, “আমার নাম চিরকাল যিরূশালেমে থাকবে,” সদাপ্রভুর সেই ঘরের মধ্যে তিনি কতগুলো বেদী তৈরী করলেন।
তিনি সদাপ্রভুর সেই মন্দিরে কয়েকটি বেদি তৈরি করলেন, যেটির বিষয়ে সদাপ্রভু বললেন, “আমার নাম জেরুশালেমে চিরকাল বজায় থাকবে।”
5 সদাপ্রভুর ঘরের দুইটি উঠানেই তিনি আকাশের সমস্ত তারাগুলোর উদ্দেশ্যে যজ্ঞবেদী তৈরী করলেন।
সদাপ্রভুর মন্দিরের উভয় প্রাঙ্গণে তিনি আকাশের সব তারকাদলের জন্য কয়েকটি বেদি তৈরি করে দিলেন।
6 বিন্‌-হিন্নোম উপত্যকায় তাঁর নিজের ছেলেদের তিনি আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করলেন। যারা গণনা করে ভবিষ্যতের কথা বলে, মায়াবিদ্যা ও যাদুবিদ্যা ব্যবহার করে এবং মৃতদের সঙ্গে কথা বলে আর মন্দ আত্মাদের সঙ্গে যারা কথা বলে তিনি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। সদাপ্রভুর চোখে অনেক মন্দ কাজ করে তিনি তাঁকে অসন্তুষ্ট করেছেন।
বিন-হিন্নোমের উপত্যকায় তিনি তাঁর সন্তানদের আগুনে উৎসর্গ করতেন, দৈববিচার ও ডাকিনীবিদ্যার চর্চা করতেন, শুভ-অশুভ চিহ্নের খোঁজ চালাতেন, এবং প্রেতমাধ্যম ও গুনিনদের সাথেও শলাপরামর্শ করতেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে প্রচুর অন্যায় করে তিনি তাঁর ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন।
7 তিনি নিজে যে মুর্ত্তিটি খোদাই করে তৈরী করেছিলেন সেটা নিয়ে ঈশ্বরের ঘরে রাখলেন। ঈশ্বর যে ঘর সম্পর্কে দায়ূদ ও তাঁর ছেলে শলোমনকে বলেছিলেন, “এই ঘর ও ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্য থেকে আমার বেছে নেওয়া এই যিরূশালেমে আমি চিরকালের জন্য আমার নামের বসবাসের জায়গা করব।
একটি মূর্তি তৈরি করে, তিনি সেটি নিয়ে গিয়ে ঈশ্বরের সেই মন্দিরে রেখেছিলেন, যেটির বিষয়ে ঈশ্বর দাউদ ও তাঁর ছেলে শলোমনকে বলে দিলেন, “এই মন্দিরে ও যে জেরুশালেমকে আমি ইস্রায়েলের সব বংশের মধ্যে থেকে আলাদা করে মনোনীত করেছি, সেখানেই আমি চিরকাল আমার নাম বজায় রাখব।
8 আমি ইস্রায়েলীয়দের যে সব আদেশ দিয়েছি, অর্থাৎ মোশির মধ্য দিয়ে যে সব ব্যবস্থা, নিয়ম ও নির্দেশ দিয়েছি যদি কেবল তারা যত্নের সঙ্গে তা পালন করে তবে যে দেশ আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছি সেখান থেকে তাদের আর দূর করে দেব না।”
শুধু যদি ইস্রায়েলীরা একটু সতর্ক হয়ে সেই নিয়ম, বিধান ও নির্দেশগুলি মেনে চলে, যেগুলি পালন করার আদেশ মোশির মাধ্যমে আমি তাদের দিয়েছিলাম, তবে আমি আর কখনোই সেই দেশের বাইরে ইস্রায়েলীদের পা বাড়াতে দেব না, যে দেশটি আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলাম।”
9 যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের মনঃশি বিপথে নিয়ে গেলেন; তার ফলে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে যে সব জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তাদের চেয়েও তারা আরও খারাপ কাজ করত।
কিন্তু মনঃশি এমনভাবে যিহূদাকে ও জেরুশালেমের লোকজনকে বিপথে পরিচালিত করলেন, যে তারা সেইসব জাতির চেয়েও বেশি অন্যায় করল, যে জাতিদের সদাপ্রভু ইস্রায়েলীদের সামনে ধ্বংস করে দিলেন।
10 ১০ সদাপ্রভু মনঃশি ও তাঁর লোকদের কাছে কথা বলতেন কিন্তু তারা তাতে কান দিত না।
সদাপ্রভু মনঃশি ও তাঁর প্রজাদের সাথে কথা বলতেন, কিন্তু তারা সেকথায় মনোযোগ দিতেন না।
11 ১১ কাজেই সদাপ্রভু তাদের বিরুদ্ধে অশূর রাজার সেনাপতিদের নিয়ে আসলেন। তারা মনঃশিকে বন্দী করে তাঁর হাতকড়ি পরিয়ে ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বেঁধে তাঁকে বাবিলে নিয়ে গেল।
তাই তাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু আসিরিয়ার রাজার সেই সেনাপতিদের নিয়ে এলেন, যারা মনঃশিকে বন্দি করল, তাঁর নাকে বড়শি গেঁথে দিয়েছিল, ও ব্রোঞ্জের শিকলে বেঁধে তাঁকে ব্যাবিলনে নিয়ে গেল।
12 ১২ যখন মনঃশি বিপদে পড়লেন, তিনি তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে দয়া ভিক্ষা করলেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের সামনে নিজেকে খুবই নত করলেন।
দুর্দশায় পড়ে তিনি তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে অনুগ্রহ চেয়েছিলেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের সামনে নিজেকে অত্যন্ত নত করলেন।
13 ১৩ এই ভাবে তিনি প্রার্থনা করলে সদাপ্রভুর তাঁর প্রার্থনা গ্রাহ্য করলেন এবং তাঁর মিনতি শুনে তিনি তাঁকে যিরূশালেমে ও তাঁর রাজ্যে ফিরিয়ে আনলেন। তখন মনঃশি জানতে পারলেন যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।
আর তিনি যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করলেন, তখন তাঁর মিনতি সদাপ্রভুর হৃদয় স্পর্শ করল ও তিনি তাঁর সনির্বন্ধ অনুরোধ শুনেছিলেন; তাই তিনি তাঁকে জেরুশালেমে ও তাঁর রাজ্যে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তখন মনঃশি বুঝেছিলেন যে সদাপ্রভুই ঈশ্বর।
14 ১৪ পরে তিনি দায়ূদ শহরের বাইরের দেয়ালটা উপত্যকার মধ্যেকার গীহোন ফোয়ারা থেকে ওফল পাহাড় ঘিরে পশ্চিম দিকে মাছ দরজায় ঢুকবার পথ পর্যন্ত আরও উঁচু করে তৈরী করে শক্তিশালী করলেন। যিহূদার দেয়াল ঘেরা সমস্ত শহরগুলোতে তিনি সেনাপতিদের নিযুক্ত করলেন।
পরে একেবারে মৎস-দ্বারের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত গিয়ে ও ওফল পাহাড় ঘিরে থাকা উপত্যকায় অবস্থিত গীহোন জলের উৎসের পশ্চিমদিকে, দাউদ-নগরের বাইরের দিকের প্রাচীরটি তিনি নতুন করে গড়ে দিলেন; তিনি আবার সেটি আরও উঁচু করে দিলেন। যিহূদার সব সুরক্ষিত নগরেও তিনি সামরিক সেনাপতি মোতায়েন করে দিলেন।
15 ১৫ তিনি সদাপ্রভুর ঘর থেকে বিজাতীয় দেবতাদের মুর্ত্তিগুলোকে নিয়ে বাইরে ফেলে দিলেন। তিনি যিরূশালেমে এবং সদাপ্রভুর ঘরের পাহাড়ের উপরে যে সব বেদী তৈরী করেছিলেন সেগুলোও নিয়ে তিনি শহরের বাইরে ফেলে দিলেন।
সদাপ্রভুর মন্দির থেকে তিনি বিজাতীয় দেবতাদের দূর করলেন এবং প্রতিমার মূর্তিগুলিও দূর করলেন, এছাড়াও মন্দির-পাহাড়ের উপর ও জেরুশালেমে তিনি যেসব বেদি তৈরি করলেন, সেগুলিও তিনি উপড়ে ফেলেছিলেন; এবং সেগুলি নগরের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।
16 ১৬ পরে তিনি সদাপ্রভুর বেদী পুনরায় ঠিক করলেন এবং তার উপরে মঙ্গলের জন্য বলি ও কৃতজ্ঞতা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তিনি যিহূদার লোকদের নির্দেশ দিলেন যেন তারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা করে।
পরে তিনি সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদিটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং সেটির উপরে মঙ্গলার্থক-নৈবেদ্য ও ধন্যবাদের বলি উৎসর্গ করলেন, ও যিহূদার লোকজনকেও বললেন, যেন তারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা করে।
17 ১৭ অবশ্য লোকেরা তখনও পূজার উঁচু জায়গা গুলোতে যজ্ঞ করত, কিন্তু তারা শুধুমাত্র তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই উদ্দেশ্যেই করত।
প্রজারা অবশ্য তখনও পূজার্চনার উঁচু উঁচু স্থানগুলিতেই নৈবেদ্য উৎসর্গ করে যাচ্ছিল, তবে শুধুমাত্র তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশেই তারা তা করছিল।
18 ১৮ মনঃশির আরো অন্যান্য সব কাজের কথা, ঈশ্বরের কাছে তাঁর প্রার্থনা এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে দর্শকেরা তাঁকে যে কথা বলেছিল, দেখো, তা সবই “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে।
মনঃশির রাজত্বকালের অন্যান্য সব ঘটনা, এবং তাঁর ঈশ্বরের কাছে করা তাঁর প্রার্থনা ও ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে তাঁর কাছে বলা দর্শকদের সব কথা ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস-গ্রন্থে লেখা আছে।
19 ১৯ তাঁর প্রার্থনার কথা, আর কেমন করে তাঁর মিনতি ঈশ্বরে গ্রাহ্য করলেন তার কথা, তাঁর সব পাপ ও অবিশ্বস্ততার কথা এবং তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সামনে নত করবার আগে পূজার যে সব উঁচু জায়গা তৈরী করেছিলেন আর আশেরা মূর্ত্তি ও খোদাই করা প্রতিমা স্থাপন করেছিলেন সেই সব কথা দর্শকদের বইয়ে লেখা আছে।
তাঁর প্রার্থনা ও তাঁর মিনতি কীভাবে ঈশ্বরের হৃদয় স্পর্শ করল, এছাড়াও তাঁর সব পাপ ও অবিশ্বস্ততা, এবং নিজেকে নত করার আগে যেখানে যেখানে তিনি পূজার্চনার উঁচু উঁচু স্থান তৈরি করলেন এবং আশেরার খুঁটি ও প্রতিমার মূর্তি খাড়া করলেন—সেসবই দর্শকদের পুস্তকে লেখা আছে।
20 ২০ পরে মনঃশি তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। এবং তাঁর নিজের বাড়ীতেই তাঁকে লোকেরা কবর দিল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে আমোন রাজা হলেন।
মনঃশি তাঁর পূর্বপুরুষদের সাথে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন এবং তাঁকে তাঁর প্রাসাদেই কবর দেওয়া হল। তাঁর ছেলে আমোন রাজারূপে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন।
21 ২১ আমোনের বয়স বাইশ বছর ছিল যখন তিনি রাজত্ব শুরু করেছিলেন এবং যিরূশালেমে দুইবছর কাল রাজত্ব করেছিলেন।
আমোন বাইশ বছর বয়সে রাজা হলেন, এবং জেরুশালেমে তিনি দুই বছর রাজত্ব করলেন।
22 ২২ তিনি তাঁর বাবা মনঃশির মতই তিনি সদাপ্রভুর চোখে যা কিছু মন্দ তাই করতেন। মনঃশি যে সব প্রতিমা খোদাই করে তৈরী করেছিলেন আমোন তাদের পূজা করতেন ও তাদের কাছে পশু উৎসর্গ করতেন।
তাঁর বাবা মনঃশির মতো তিনিও সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা যা মন্দ, তাই করলেন। আমোন, মনঃশির তৈরি করা সব প্রতিমার পুজো করতেন ও সেগুলির কাছে নৈবেদ্যও উৎসর্গ করতেন।
23 ২৩ আর তিনি তাঁর বাবা মনঃশির মত সদাপ্রভুর সামনে নিজেকে নত করেন নি; পরিবর্তে, আমোন পাপ করতেই থাকলেন।
কিন্তু তাঁর বাবা মনঃশি যেভাবে নিজেকে সদাপ্রভুর কাছে নত করলেন, তিনি কিন্তু তা করেননি; আমোন তাঁর অপরাধ বাড়িয়েই গেলেন।
24 ২৪ আমোনের দাসেরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাঁর নিজের বাড়ীতেই তাঁকে খুন করল।
আমোনের কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাঁর রাজপ্রাসাদেই তাঁকে হত্যা করল।
25 ২৫ কিন্তু যারা রাজা আমোনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল দেশের লোকেরা তাদের সবাইকে মেরে ফেলল এবং তারা তাঁর ছেলে যোশিয়কে তাঁর জায়গায় রাজা করল।
তখন দেশের প্রজারা সেইসব লোককে হত্যা করল, যারা রাজা আমোনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল, এবং তারা তাঁর স্থানে তাঁর ছেলে যোশিয়কে রাজা করল।

< বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড 33 >