< বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড 31 >

1 পর্বের সব কিছু শেষ হবার পরে সেখানে উপস্থিত ইস্রায়েলীয়েরা বের হয়ে যিহূদার শহরগুলোতে গিয়ে পূজার পাথরগুলো, আশেরা মুর্ত্তিগুলো, পূজার উঁচু জায়গা ও বেদীগুলো একেবারে ধ্বংস করে দিল। তারা যিহূদা, বিন্যামীন, ইফ্রয়িম ও মনঃশি-গোষ্ঠীর সমস্ত এলাকায় একই কাজ করল যতক্ষণ না তারা এই সব ধ্বংস করলো। পরে ইস্রায়েলীয়েরা গ্রামে ও শহরে নিজের নিজের জায়গায় ফিরে গেল।
এসব কিছু সমাপ্ত হয়ে যাওয়ার পর, সেখানে উপস্থিত ইস্রায়েলীরা যিহূদার নগরগুলিতে গিয়ে সেখানকার দেবতাদের উদ্দেশে নিবেদিত পাথরগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ও আশেরার খুঁটিগুলি কেটে নামিয়েছিল। যিহূদা ও বিন্যামীন, এবং ইফ্রয়িম ও মনঃশির সর্বত্র প্রতিমাপূজার উঁচু উঁচু স্থান ও বেদিগুলি তারা ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেগুলি সব পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলার পর ইস্রায়েলীরা তাদের নিজের নিজের নগরে ও নিজেদের বিষয়সম্পত্তির কাছে ফিরে গেল।
2 আর হিস্কীয় উপাসনার জন্য হোম উৎসর্গ ও মঙ্গলের জন্য উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার জন্য, সেবা কাজের জন্য এবং ঈশ্বরের ঘরে ধন্যবাদ ও প্রশংসা গান করবার জন্য হিষ্কিয় যাজক ও লেবীয়দের প্রত্যেকের কাজ অনুসারে তাদের বিভিন্ন দলকে নিযুক্ত করলেন।
হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করার, পরিচর্যা করার, সদাপ্রভুর বাসস্থানের দরজায় দাঁড়িয়ে ধন্যবাদ দেওয়ার ও প্রশংসা করার জন্য হিষ্কিয় যাজক ও লেবীয়দের প্রত্যেককে, যাজকের ও লেবীয়ের করণীয় দায়িত্ব অনুসারে, কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত করে দিলেন।
3 সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় যেমন লেখা আছে সেইমত সকাল ও সন্ধ্যার হোম উৎসর্গের জন্য এবং বিশ্রামবার, অমাবস্যা এবং নির্দিষ্ট পর্বের দিন কার হোম উৎসর্গের জন্য রাজা তাঁর নিজের সম্পত্তি থেকে দান করলেন।
সদাপ্রভুর বিধানে লেখা নিয়মানুসারে সকাল-সন্ধ্যার হোমবলির এবং সাব্বাথবারে, অমাবস্যায় ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া উৎসবের দিনগুলিতে উৎসর্গ করার উপযোগী হোমবলির জন্য রাজা নিজের বিষয়সম্পত্তি থেকে দান দিলেন।
4 যাজক ও লেবীয়েরা যাতে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা পালন করবার ব্যাপারে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে মনোযোগী হতে পারেন সেইজন্য তাঁদের পাওনা অংশ দিতে তিনি যিরূশালেমে বসবাসকারী লোকদের আদেশ দিলেন।
জেরুশালেমে বসবাসকারী লোকজনকে তিনি আদেশ দিলেন, সদাপ্রভুর বিধানসংক্রান্ত বিষয়ে যাজক ও লেবীয়েরা যেন নিজেদের লিপ্ত রাখতে পারেন, তাই তাদের প্রাপ্য অংশ যেন তারা তাদের দিয়ে দেন।
5 এই আদেশ বের হবার সঙ্গে সঙ্গে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের ফসল, নতুন আঙ্গুর রস, তেল ও মধুর প্রথম অংশ এবং ক্ষেতে আর যা কিছু জন্মায় তারও প্রথম অংশ প্রচুর পরিমাণে দান করল। এছাড়া তারা সব কিছুর দশ ভাগের একভাগ আনল এবং তা পরিমাণে অনেক হল।
যেই না সেই আদেশ জারি হল, ইস্রায়েলীরা অকাতরে তাদের শস্যের নবান্ন, নতুন দ্রাক্ষারস, জলপাই তেল ও মধু এবং ক্ষেতের সব উৎপন্ন দ্রব্য এনে দিয়েছিল। অনেক বেশি পরিমাণে তারা সবকিছুর দশমাংশ নিয়ে এসেছিল।
6 ইস্রায়েল ও যিহূদার যে সব লোক যিহূদার গ্রাম ও শহরগুলোতে বাস করত তারাও তাদের গরু, মেষ ও ছাগলের দশ ভাগের এক ভাগ আনল এবং তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা জিনিসের দশ ভাগের একভাগ এনে কতগুলো স্তূপ করল।
যিহূদার নগরগুলিতে বসবাসকারী ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকজন তাদের গরু-ছাগলের পাল ও মেষের পাল থেকেও দশমাংশ এনেছিল এবং তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত পবিত্র জিনিসপত্রের দশমাংশও এনে গাদা করে দিয়েছিল।
7 তৃতীয় মাসে এই স্তূপ করতে শুরু করে তারা সপ্তম মাসে শেষ করল।
তৃতীয় মাসে তারা এরকম করতে শুরু করল এবং সপ্তম মাসে শেষ করল।
8 হিষ্কিয় ও তাঁর নেতাবর্গ এসে সেই স্তূপগুলো দেখে সদাপ্রভুর গৌরব করলেন এবং তাঁর লোকেরা ইস্রায়েলীয়দের প্রশংসা করলেন।
হিষ্কিয় ও তাঁর কর্মকর্তারা যখন এসে জিনিসপত্রের সেই গাদা দেখেছিলেন, তারা সদাপ্রভুর প্রশংসা করলেন ও তাঁর প্রজা ইস্রায়েলকে আশীর্বাদ দিলেন।
9 হিষ্কিয় সেই স্তূপগুলোর বিষয়ে যাজক এবং লেবীয়দের জিজ্ঞাসা করলেন।
হিষ্কিয়, যাজক ও লেবীয়দের সেই গাদার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন;
10 ১০ এতে সাদোকের বংশের অসরিয় নামে প্রধান যাজক উত্তর করে বললেন, “সদাপ্রভুর ঘরের জন্য লোকেরা যখন তাদের দান আনতে শুরু করল তখন থেকে আমরা যেমন যথেষ্ট খাবার খেয়েছি তেমনি বাড়তিও রয়েছে প্রচুর, কারণ সদাপ্রভু তাঁর লোকদের আশীর্বাদ করেছেন, তাই এই সমস্ত জিনিস প্রচুর বেঁচে গেছে।”
এবং সাদোকের বংশোদ্ভূত প্রধান যাজক অসরিয় উত্তর দিলেন, “যেদিন থেকে লোকেরা সদাপ্রভুর মন্দিরে তাদের দান আনতে শুরু করল, আমরা যথেষ্ট খাবার খেতে পেয়েছি এবং প্রচুর খাবার বেঁচেও গিয়েছে, কারণ সদাপ্রভু তাঁর প্রজাদের আশীর্বাদ করেছেন, ও এত কিছু বেঁচে গিয়েছে।”
11 ১১ পরে তখন হিষ্কিয় সদাপ্রভুর ঘরে কতগুলো ভান্ডার ঘর তৈরী করবার আদেশ দিলেন এবং সেগুলো তারা তৈরী করল।
সদাপ্রভুর মন্দিরে হিষ্কিয় কয়েকটি ভাঁড়ারঘর তৈরি করার আদেশ দিলেন, এবং তা করা হল।
12 ১২ তারপর লোকেরা উপহার, সব জিনিসের দশ ভাগের এক ভাগ ও সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা জিনিস বিশ্বস্তভাবে ভান্ডার ঘরে আনল। কনানিয় নামে একজন লেবীয় লোক তাদের উপরে ছিল এই সব জিনিসের দেখাশোনার ভার ও পরিচারক ছিল আর তাঁর ভাই শিমিয়ি তাঁর সাহায্যকারী পরিচারক ছিল।
পরে তারা নিষ্ঠাসহকারে দান, দশমাংশ ও উৎসর্গীকৃত জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিল। লেবীয় কনানিয়কে এইসব জিনিসপত্র দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক করে দেওয়া হল, এবং তাঁর ভাই শিমিয়ি পদাধিকারবলে তাঁর ঠিক নিচেই ছিলেন।
13 ১৩ কনানিয় এবং তাঁর ভাই শিমিয়ির অধীনে রাজা হিষ্কিয় ও সদাপ্রভুর ঘরের প্রধান কর্মচারী অসরিয়ের আদেশে যিহীয়েল, অসসিয়, নহৎ, অসাহেল, যিরীমোৎ, যোষাবদ, ইলীয়েল, যিস্মখিয়, মাহৎ ও বনায় তদারক করবার ভার পেল।
যিহীয়েল, অসসিয়, নহৎ, অসাহেল, যিরীমোৎ, যোষাবদ, ইলীয়েল, যিষ্মখিয়, মাহৎ ও বনায় কনানিয় ও তাঁর ভাই শিমিয়ির সহকারী ছিলেন। এরা সবাই, রাজা হিষ্কিয় ও ঈশ্বরের মন্দিরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা অসরিয়ের দ্বারা কাজে নিযুক্ত হলেন।
14 ১৪ লোকদের নিজেদের ইচ্ছায় দেওয়া উৎসর্গের জিনিসের ভার ছিল পূর্ব দিকের দরজার রক্ষী লেবীয় যিম্নার ছেলে কোরির উপরে। সদাপ্রভুকে দেওয়া সব উপহার ও মহাপবিত্র জিনিস ভাগ বা বন্টন করে দেবার ভারও তাঁর উপর ছিল।
যিম্নার ছেলে লেবীয় কোরিকে, যিনি আবার পূর্বদিকের দরজার রক্ষীও ছিলেন, ঈশ্বরকে দেওয়া স্বেচ্ছাদানগুলি দেখাশোনা করার, সদাপ্রভুর কাছে আনা দানসামগ্রী ও উৎসর্গীকৃত উপহারগুলি বিলি করার দায়িত্ব দেওয়া হল।
15 ১৫ যাজকদের শহর গুলোতে তাঁদের বিভিন্ন দল অনুসারে বয়সে ছোট বা বড় ভাই, দরকারী ও অদরকারী উভয়ই তাঁদের সংগী যাজকদের ঠিকভাবে ভাগ করে দেবার জন্য কোরির অধীনে এদন, বিন্যামীন, যেশূয়, শময়িয়, অমরিয় ও শখনিয় বিশ্বস্তভাবে কাজ করতেন।
এদন, মিনিয়ামীন, যেশূয়, শময়িয়, অমরিয় ও শখনিয় নিষ্ঠাসহকারে যাজকদের নগরগুলিতে থেকে কোরির কাজে সাহায্য করতেন, এবং বড়ো বা ছোটো, তাদের সমগোত্রীয় যাজকদের বিভাগ অনুসারে, তাদের কাছে তাদের প্রাপ্য বিলি করে দিতেন।
16 ১৬ এছাড়া বিভিন্ন দল অনুসারে যে সব যাজকেরা নিজেদের প্রতিদিনের র কর্তব্য পালন করবার জন্য সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকতেন তাদের নিজেদের সেবা কাজের জন্য। এঁরা ছিলেন তিন বছর ও তার বেশী বয়সের পুরুষ যাঁদের নাম যাজকদের বংশ তালিকায় লেখা ছিল।
এছাড়াও, তিন বছর বা তার বেশি বয়সের যেসব পুরুষের নাম বংশানুক্রমিক তালিকাতে ছিল—যারা তাদের দায়িত্ব ও বিভাগ অনুসারে তাদের বিভিন্ন কাজকর্মের দৈনন্দিন দায়িত্ব পালন করার জন্য সদাপ্রভুর মন্দিরে প্রবেশ করতেন, তাদেরও প্রাপ্য তারা বিলি করে দিতেন।
17 ১৭ বংশ তালিকায় যাজকদের নাম পিতৃপুরুষদের বংশ অনুসারে লেখা হয়েছিল এবং কুড়ি বছর ও তার বেশী বয়সের লেবীয়দের নাম দায়িত্ব ও বিভিন্ন দলের ভাগ অনুযায়ী লেখা হয়েছিল।
এক-একটি বংশ ধরে ধরে বংশানুক্রমিক তালিকায় নথিভুক্ত যাজকদের ও একইরকম ভাবে, কুড়ি বছর বা তার বেশি বয়সের লেবীয়দের প্রাপ্যও তারা তাদের দায়িত্ব ও বিভাগ অনুসারে বিলি করে দিতেন।
18 ১৮ এছাড়া তাঁদের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের, অর্থাৎ গোটা সমাজের নাম বংশ তালিকা করা হয়েছিল, কারণ যাজক ও লেবীয়েরা বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের কাজ অনুযায়ী পবিত্রতায় নিজেদের আলাদা করেছিলেন।
এইসব বংশানুক্রমিক তালিকায় সমগ্র সমাজের যত শিশু, স্ত্রী, এবং ছেলেমেয়ের নাম নথিভুক্ত করা ছিল, তাদের সবাইকে তারা যুক্ত করলেন। কারণ ঈশ্বরের উদ্দেশে নিজেদের উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে তারা নিষ্ঠাবান ছিলেন।
19 ১৯ কারণ যে যাজকেরা, অর্থাৎ হারোণের যে বংশধরেরা তাঁদের শহরের ও গ্রামের চারি পাশের ক্ষেতের জমিতে বাস করতেন তাঁদের খাবারের ভাগ দেবার জন্য প্রত্যেক শহরে কয়েকজন লোকের নাম উল্লেখ করে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁরা প্রত্যেক যাজককে এবং বংশ তালিকায় লেখা প্রত্যেক লেবীয়কে খাবারের ভাগ দিতেন।
যারা নিজেদের নগরের বা অন্যান্য নগরের আশেপাশে অবস্থিত ক্ষেতজমিতে বসবাস করতেন, হারোণের বংশধর, সেইসব যাজকের মধ্যে থেকে প্রত্যেকজন পুরুষের ও যাদের নাম লেবীয়দের বংশাবলিতে নথিভুক্ত করে রাখা হল, তাদের প্রাপ্য তাদের কাছে বিলি করে দেওয়ার জন্য নাম ধরে ধরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হল।
20 ২০ হিষ্কিয় যিহূদার সব জায়গায় এই কাজ করলেন। তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল, ন্যায্য এবং সত্য তিনি তাই সব করলেন।
যিহূদার সব স্থানে হিষ্কিয় এরকমই করলেন, তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা যা ভালো ও নির্ভরযোগ্য, তাই করলেন।
21 ২১ ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলবার জন্য ঈশ্বরের ঘরের কাজে, ব্যবস্থায় এবং আদেশ পালন করবার ব্যাপারে তিনি যে কাজই শুরু করলেন তা সমস্ত হৃদয় দিয়ে করলেন, আর সেইজন্য তিনি সফল হলেন।
ঈশ্বরের মন্দিরের পরিচর্যায় এবং বিধান ও আদেশের প্রতি বাধ্যতা দেখিয়ে তিনি যা যা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সবেতেই তিনি তাঁর ঈশ্বরের অন্বেষণ করলেন এবং মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে কাজ করলেন। আর তাই তিনি সফলও হলেন।

< বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড 31 >