< শমূয়েলের প্রথম বই 4 >

1 শমূয়েলের বাক্য সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে উপস্থিত হলো। পরে ইস্রায়েল যুদ্ধের জন্য পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে বের হয়ে এবন্‌-এষরে শিবির স্থাপন করল এবং পলেষ্টীয়েরা অফেকে শিবির স্থাপন করল।
আর শমূয়েলের বাক্য সব ইস্রায়েলীর কাছে পৌঁছে গেল। ইস্রায়েলীরা তখন ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করল। ইস্রায়েলীরা এবন-এষরে সৈন্যদলের শিবির স্থাপন করল, এবং ফিলিস্তিনীরা অফেকে তাদের শিবির স্থাপন করল।
2 আর পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সৈন্য সাজাল; যখন যুদ্ধ বেধে গেল, তখন ইস্রায়েল পলেষ্টীয়দের সামনে আহত হল; তারা ঐ যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের মধ্যে প্রায় চার হাজার লোককে মেরে ফেলল।
ইস্রায়েলের সঙ্গে সম্মুখসমরে নামার জন্য ফিলিস্তিনীরা তাদের সৈন্যদল সাজিয়েছিল, এবং যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইস্রায়েল ফিলিস্তিনীদের কাছে পরাজিত হল। যুদ্ধক্ষেত্রে ফিলিস্তিনীরা তাদের প্রায় 4,000 সৈন্যকে হত্যা করল।
3 পরে লোকেরা শিবিরে প্রবেশ করলে ইস্রায়েলের প্রাচীনেরা বললেন, “সদাপ্রভু আজ পলেষ্টীয়দের সামনে কেন আমাদেরকে আঘাত করলেন? এস, আমরা শীলো থেকে আমাদের কাছে সদাপ্রভুর নিয়ম সিন্দুকটি নিয়ে আসি, যেন তা (নিয়ম সিন্দুক টি) আমাদের মধ্য এসে শত্রুদের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।”
সৈনিকরা শিবিরে ফিরে আসার পর ইস্রায়েলের প্রাচীনেরা তাদের প্রশ্ন করলেন, “সদাপ্রভু কেন ফিলিস্তিনীদের সামনে আজ আমাদের পরাজিত হতে দিলেন? এসো, শীলো থেকে আমরা সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকটি নিয়ে আসি, যেন তিনি আমাদের সঙ্গে সঙ্গে যান এবং শত্রুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেন।”
4 সেইজন্য লোকেরা শীলোতে দূত পাঠিয়ে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যিনি দুই করূবের মাঝখানে থাকেন, তাঁর নিয়ম সিন্দুক সেখান থেকে নিয়ে এল। তখন এলির দুই ছেলে, হফ্‌নি ও পীনহস, সেই জায়গায় ঈশ্বরের নিয়ম সিন্দুকের সঙ্গে ছিল।
অতএব লোকেরা কয়েকজনকে শীলোতে পাঠিয়ে দিল, এবং তারা সেই সর্বশক্তিমান সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকটি ফিরিয়ে নিয়ে এল, যিনি করূবদ্বয়ের মধ্যে বিরাজমান। এলির দুই ছেলে, হফনি ও পীনহস, ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুকের সঙ্গে সেখানে ছিল।
5 পরে সদাপ্রভুর নিয়ম সিন্দুকটি শিবিরে উপস্থিত হলে সমস্ত ইস্রায়েল এমন জোরে চিৎকার করে উঠল যে, পৃথিবী কাঁপতে লাগল।
সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক যখন সৈন্যশিবিরে এল, ইস্রায়েলীরা সবাই এত জোরে চিৎকার করে উঠল যে ধরাতল কেঁপে উঠেছিল।
6 তখন পলেষ্টীয়েরা ঐ চিৎকার শুনে জিজ্ঞাসা করল, “ইব্রীয়দের শিবিরে এত আওয়াজ হচ্ছে কেন?” পরে তারা বুঝলো, সদাপ্রভুর নিয়ম সিন্দুক শিবিরে এসেছে।
কোলাহল শুনে, ফিলিস্তিনীরা প্রশ্ন করল, “হিব্রুদের শিবিরে এত চিৎকার শোনা যাচ্ছে কেন?” ফিলিস্তিনীরা যখন জানতে পারল যে সদাপ্রভুর সিন্দুক শিবিরে এসেছে,
7 তখন পলেষ্টীয়েরা ভয় পেয়ে বলল, “শিবিরে ঈশ্বর এসেছেন।” আরও বলল, “হায়, হায়! এর আগে তো কখনও এমন হয়নি।
তখন তারা ভয় পেয়ে গেল। “শিবিরে একজন দেবতা এসে পড়েছেন,” তারা বলল। “আরে না! এর আগে এমনটি কখনও ঘটেনি।
8 হায়, হায়, এই শক্তিশালী দেবতাদের হাত থেকে আমাদের কে রক্ষা করবে? এরা সেই দেবতা, যাঁরা মরু এলাকায় নানা রকমের আঘাতে মিশরীয়দের হত্যা করেছিলেন।
আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেল! এইসব শক্তিশালী দেবতার হাত থেকে কে আমাদের রক্ষা করবে? তারা সেইসব দেবতা, যারা মরুপ্রান্তরে সব ধরনের উপদ্রব দিয়ে মিশরীয়দের আঘাত করেছিলেন।
9 হে পলেষ্টীয়েরা, বলবান হও, পুরুষত্ব দেখাও; ঐ ইব্রীয়েরা যেমন তোমাদের দাস হল, তেমনি তোমরা যেন তাদের দাস না হও; পুরুষত্ব দেখাও, যুদ্ধ কর।”
ফিলিস্তিনীরা, শক্তপোক্ত হও! পুরুষত্ব দেখাও, তা না হলে হিব্রুরা যেভাবে তোমাদের বশীভূত হয়েছিল, তোমরাও তাদের বশীভূত হয়ে পড়বে। পুরুষের মতো যুদ্ধ করো!”
10 ১০ তখন পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করলেন এবং ইস্রায়েল আহত হয়ে প্রত্যেকজন নিজের নিজের তাঁবুতে পালিয়ে গেল। আর অনেককে হত্যা করা হল, কারণ ইস্রায়েলের মধ্য ত্রিশ হাজার পদাতিক সৈন্য মারা পড়ল।
অতএব ফিলিস্তিনীরা যুদ্ধ করল, আর ইস্রায়েলীরা পরাজিত হয়ে প্রত্যেকে নিজের নিজের তাঁবুতে ফিরে গেল। হত্যালীলা চরম শিখরে পৌঁছাল; ইস্রায়েল 30,000 পদাতিক সৈন্য হারাল।
11 ১১ আর ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুরা নিয়ে গেল এবং এলির দুই ছেলে, হফ্‌নি ও পীনহস, মারা পড়ল।
সদাপ্রভুর সিন্দুকটি শত্রুদের হস্তগত হল, এবং এলির দুই ছেলে, হফনি ও পীনহস মারা গেল।
12 ১২ তখন বিন্যামীনের একজন লোক সৈন্যদলের মধ্য থেকে দৌড়ে গিয়ে সেই দিন শীলোতে উপস্থিত হল; তার পোশাক ছেঁড়া এবং মাথায় মাটি ছিল।
ঠিক সেদিনই বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত একজন লোক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছিন্নবস্ত্রে ও ধূলিধূসরিত মস্তকে শীলোতে পালিয়ে গেল।
13 ১৩ যখন সে আসছিল, দেখ, পথের পাশে এলি তাঁর আসনে বসে অপেক্ষা করছিলেন; কারণ তাঁর হৃদয় ঈশ্বরের সিন্দুকের জন্য থরথর করে কাঁপছিল। পরে সেই লোকটি শহরে উপস্থিত হয়ে ঐ সংবাদ দিলে শহরের সব লোক কাঁদতে লাগলো।
সে যখন সেখানে পৌঁছাল, এলি তখন পথের ধারে তাঁর আসনে বসে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, কারণ ঈশ্বরের সিন্দুকের জন্য তাঁর অন্তর ব্যাকুল হয়েছিল। যখন সেই লোকটি নগরে প্রবেশ করে যা যা ঘটেছিল, তা সবিস্তারে বলে শোনাল, তখন গোটা নগরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল।
14 ১৪ আর এলি সেই কান্নার আওয়াজ শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই কোলাহলের কারণ কি?” তখন সেই লোকটি তাড়াতাড়ি গিয়ে এলিকে খবর দিল।
এলি সেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, “এত গোলমাল হচ্ছে কেন?” লোকটি তৎক্ষণাৎ এলির কাছে দৌড়ে গেল।
15 ১৫ ঐ দিনের এলির আটানব্বই বছর বয়স ছিল এবং দৃষ্টিশক্তি কম হওয়াতে দেখতে পেতেন না।
তাঁর বয়স তখন আটানব্বই বছর এবং তাঁর দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়ায় তিনি দেখতেও পাচ্ছিলেন না।
16 ১৬ সেই ব্যক্তি এলিকে বলল, “আমি সৈন্যদল থেকে এসেছি, আজই সৈন্যদল থেকে পালিয়ে এসেছি।” এলি জিজ্ঞাসা করলেন, “বাছা, খবর কি?”
লোকটি এলিকে বলল, “আমি এইমাত্র যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এসেছি; আজই আমি সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।” এলি জিজ্ঞাসা করলেন, “বাছা, কী হয়েছে?”
17 ১৭ যে সংবাদ এনেছিল, সে উত্তর দিল, “ইস্রায়েল পলেষ্টীয়দের সামনে থেকে পালিয়ে গেছে, আর অনেক লোক মারা পড়েছে, আপনার দুই ছেলে হফ্‌নি ও পীনহসও মারা গেছে এবং ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুরা নিয়ে গেছে।”
সংবাদবাহক লোকটি উত্তর দিল, “ইস্রায়েল ফিলিস্তিনীদের সামনে থেকে পালিয়ে গিয়েছে, এবং সৈন্যদল ভারী ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া আপনার দুই ছেলে, হফনি ও পীনহসও মারা গিয়েছে, এবং ঈশ্বরের সিন্দুকও শত্রুদের করায়ত্ত হয়েছে।”
18 ১৮ তখন সে ঈশ্বরের সিন্দুকের নাম করার সঙ্গে সঙ্গেই এলি ফটকের পাশে তাঁর আসন থেকে পিছন দিকে পড়ে গেলেন এবং তাঁর ঘাড় ভেঙে গেল, তিনি মারা গেলেন, কারণ তিনি বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর শরীর ভারী ছিল। তিনি চল্লিশ বছর ইস্রায়েলীয়দের বিচার করেছিলেন।
সে ঈশ্বরের সিন্দুকের কথা বলামাত্র, এলি দরজার পাশেই তাঁর আসন থেকে পিছন দিকে উল্টে পড়ে গেলেন। তাঁর ঘাড় ভেঙে গেল এবং তিনি মারা গেলেন, কারণ তাঁর বয়স হয়েছিল, ও তাঁর শরীরও ভারী ছিল। তিনি চল্লিশ বছর ধরে ইস্রায়েলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
19 ১৯ তখন তাঁর ছেলের বৌ, পীনহসের স্ত্রী, গর্ভবতী ছিল, প্রসবের দিন ও ঘনিয়ে এসেছিল; ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের হাতে চলে গেছে এবং তার শ্বশুর ও স্বামী মারা গেছেন, এই খবর শুনে সে নত হয়ে প্রসব করল; কারণ প্রসব-বেদনা হঠাৎ উপস্থিত হল।
তাঁর পুত্রবধূ, তথা পীনহসের স্ত্রী, গর্ভবতী ছিল ও তার প্রসবকালও ঘনিয়ে এসেছিল। ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের করায়ত্ত হয়েছে এবং তার শ্বশুরমশাই ও স্বামী মারা গিয়েছেন, এই খবর শুনে তার প্রসববেদনা শুরু হল ও সে এক সন্তানের জন্ম দিল, কিন্তু প্রসববেদনায় সে অবসন্ন হয়ে পড়েছিল।
20 ২০ তখন তার মৃত্যুর দিনের যে স্ত্রীলোকেরা কাছে দাঁড়িয়েছিল, তারা বলল, “ভয় নেই, তোমার ছেলে হয়েছে।” কিন্তু সে কোন উত্তরই দিল না, কোন কথায় মনোযোগও দিল না।
সে যখন মারা যাচ্ছিল, তার শুশ্রুষাকারী স্ত্রীলোকেরা বলল, “হতাশ হোয়ো না; তুমি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছ।” কিন্তু সে উত্তর দেয়নি বা তাদের কথায় মনোযোগও দেয়নি।
21 ২১ পরে সে ছেলেটির নাম ঈখাবোদ [হীনপ্রতাপ] রেখে বলল, “ইস্রায়েলের থেকে গৌরব চলে গেল,” কারণ ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের হাতে চলে গেছে এবং তার শ্বশুর ও স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল।
সে এই বলে ছেলেটির নাম ঈখাবোদ রেখেছিল যে, “ইস্রায়েল থেকে প্রতাপ চলে গিয়েছে,” যেহেতু ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের করায়ত্ত হয়েছে এবং তার শ্বশুরমশাই ও স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।
22 ২২ সে বলল, “ইস্রায়েল থেকে গৌরব চলে গেল, কারণ ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের হাতে চলে গেছে।”
সে বলল, “ইস্রায়েল থেকে প্রতাপ চলে গিয়েছে, কারণ ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের করায়ত্ত হয়েছে।”

< শমূয়েলের প্রথম বই 4 >