< শমূয়েলের প্রথম বই 28 >

1 সেই দিনের পলেষ্টীয়রা ইস্রায়েলের সঙ্গে সংগ্রাম করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধের জন্য নিজেদের সৈন্যদল সংগ্রহ করল। আর আখীশ দায়ূদকে বললেন, “নিশ্চয় জানবে, তোমাকে ও তোমার লোকদেরকে সৈন্যদলে যুক্ত করে আমার সঙ্গে যেতে হবে।”
তখন ফিলিস্তিনীরা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সৈন্যদল একত্রিত করল। আখীশ দাউদকে বললেন, “তোমার নিশ্চয় জানা আছে যে তোমাকে তোমার দলবল সমেত আমার সৈন্যদলের সঙ্গে যোগ দিতে হবে।”
2 দায়ূদ আখীশকে বললেন, “ভাল, আপনার এই দাস কি করতে পারে, তা আপনি জানতে পারেন।” আখীশ দায়ূদকে বললেন, “ভাল, আমি তোমাকে সারাজীবন মাথা রক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করব।”
দাউদ বললেন, “আপনি নিজেই দেখতে পাবেন, আপনার দাস ঠিক কী করতে পারে।” আখীশ উত্তর দিলেন, “ঠিক আছে, আমি আজীবন তোমাকে আমার দেহরক্ষী করে রাখব।”
3 তখন শমূয়েল মারা গিয়েছিলেন এবং সমস্ত ইস্রায়েল তাঁর জন্য শোক করেছিল এবং রামায়, তাঁর নিজের নগরে, তাকে কবর দিয়েছিল। আর শৌল ভূতুড়ে ও গুণীদেরকে দেশ থেকে দূর করে দিয়েছিলেন।
শমূয়েল মারা গিয়েছিলেন, আর ইস্রায়েলীরা সবাই তাঁর জন্য শোকপ্রকাশ করে তাঁকে তাঁর নিজের নগর রামায় কবর দিয়েছিলেন। শৌল দেশ থেকে প্রেতমাধ্যম ও গুনিনদের দূর করে দিলেন।
4 পরে পলেষ্টীয়রা জড়ো হল এবং এসে শূনেমে শিবির স্থাপন করল, আর শৌল সমস্ত ইস্রায়েলকে জড়ো করে গিলবোয়ে শিবির স্থাপন করলেন।
ফিলিস্তিনীরা একত্রিত হয়ে শূনেমে সৈন্যশিবির স্থাপন করল, অন্যদিকে শৌল ইস্রায়েলীদের একত্রিত করে গিলবোয়ে সৈন্যশিবির স্থাপন করলেন।
5 কিন্তু শৌল পলেষ্টীয়দের সৈন্য দেখে ভয় পেলেন, তার খুব হৃদয় কেঁপে উঠল।
ফিলিস্তিনীদের সৈন্যদল দেখে শৌল ভয় পেয়ে গেলেন; তাঁর অন্তর আতঙ্কে ভরে গেল।
6 তখন শৌল সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু সদাপ্রভু তাকে উত্তর দিলেন না; স্বপ্ন দিয়েও না, ঊরীম দিয়েও না, ভাববাদীদের দিয়েও না।
তিনি সদাপ্রভুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সদাপ্রভু স্বপ্ন বা ঊরীম বা ভাববাদীদের মাধ্যমে তাঁকে উত্তর দেননি।
7 তখন শৌল নিজের দাসদেরকে বললেন, “আমার জন্য একটি ভূতুড়ে স্ত্রীলোকের খোঁজ কর; আমি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করব।” তার দাসরা বলল, “দেখুন, ঐনদোরে একটি ভূতুড়ে স্ত্রী লোক আছে।”
তখন শৌল তাঁর পরিচারকদের বললেন, “এমন একজন মহিলাকে খুঁজে নিয়ে এসো, যে একজন প্রেতমাধ্যম, যেন আমি তার কাছে গিয়ে একটু খোঁজখবর নিতে পারি।” তারা বলল, “ঐনদোরে এমন একজন মহিলা আছে।”
8 তখন শৌল ছদ্মবেশ ধরলেন, অন্য বস্ত্র পরলেন ও দুই জন পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং রাতে সেই স্ত্রী লোকটার কাছে এসে বললেন, “অনুরোধ করি, তুমি আমার জন্য ভূতের দ্বারা মন্ত্র পড়ে, যার নাম আমি তোমাকে বলব, তাকে উঠিয়ে আন।”
অতএব শৌল ছদ্মবেশ ধারণ করে, সাধারণ কাপড় পরে রাতের অন্ধকারে দুজন লোককে সঙ্গে নিয়ে সেই মহিলাটির কাছে গেলেন। তিনি বললেন, “আমার জন্য একটি প্রেতমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করো ও যাঁর নাম বলছি তাঁকে ডেকে আনো।”
9 সেই স্ত্রী লোক তাকে বলল, “দেখ, শৌল যা করেছেন, তিনি যে ভূতুড়েদেরকে ও গুণীদেরকে দেশের মধ্যে থেকে উচ্ছিন্ন করেছেন, তা তুমি জানো; অতএব আমাকে হত্যা করতে আমার প্রাণের বিরুদ্ধে কেন ফাঁদ পাতছ?”
কিন্তু মহিলাটি তাঁকে বলল, “আপনি তো জানেনই শৌল কী করেছেন। তিনি প্রেতমাধ্যম ও গুনিনদের দেশ থেকে বের করে দিয়েছেন। তবে কেন আপনি আমাকে মেরে ফেলার জন্য ফাঁদ পাতছেন?”
10 ১০ তখন শৌল তার কাছে সদাপ্রভুর দিব্যি করে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি, এজন্য তোমার উপরে দোষ আসবে না।”
শৌল সদাপ্রভুর নামে শপথ করে তাকে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি, এজন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে না।”
11 ১১ তখন সেই স্ত্রী লোক জিজ্ঞাসা করল, “আমি তোমার কাছে কাকে উঠিয়ে আনব?” তিনি বললেন, “শমূয়েলকে উঠিয়ে আন।”
তখন মহিলাটি প্রশ্ন করল, “আপনার জন্য আমি কাকে ডেকে আনব?” “শমূয়েলকে ডেকে আনো,” তিনি বললেন।
12 ১২ পরে সেই স্ত্রী লোক শমূয়েলকে দেখতে পেয়ে উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগল; আর সেই স্ত্রী লোক শৌলকে বলল, “আপনি কেন আমাকে প্রতারণা করলেন? আপনি শৌল।”
মহিলাটি শমূয়েলকে দেখতে পেয়ে জোর গলায় চিৎকার করে শৌলকে বলল, “আপনি কেন আমার সঙ্গে ছলনা করলেন? আপনি তো শৌল!”
13 ১৩ রাজা তাকে বললেন, “ভয় নেই; তুমি কি দেখছ?” স্ত্রী লোকটা শৌলকে বলল, “আমি দেখছি, দেবতা ভূমি থেকে উঠে আসছেন।”
রাজামশাই তাকে বললেন, “ভয় পেওনা। বলো তুমি কী দেখছ?” মহিলাটি বলল, “আমি এক ভুতুড়ে চেহারা দেখতে পাচ্ছি, যিনি ভূতল থেকে উঠে আসছেন।”
14 ১৪ শৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “তার আকার কেমন?” সে বলল, “একজন বৃদ্ধ উঠছেন, তিনি পোশাকে আবৃত।” তাতে শৌল বুঝতে পারলেন, তিনি শমূয়েল, আর মাথা নত করে ভূমিতে নীচু হয়ে প্রার্থনা করলেন।
“তিনি কার মতো দেখতে?” তিনি প্রশ্ন করলেন। “লম্বা আলখাল্লা পরে একজন বৃদ্ধ মানুষ এগিয়ে আসছেন,” মহিলাটি বলল। তখন শৌল বুঝতে পারলেন যে তিনি শমূয়েল, এবং তিনি মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন।
15 ১৫ পরে শমূয়েল শৌলকে বললেন, “কি জন্য আমাকে উঠিয়ে কষ্ট দিলে?” শৌল বললেন, “আমি মহা সঙ্কটে পড়েছি, পলেষ্টীয়রা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, ঈশ্বরও আমাকে ত্যাগ করেছেন, আমাকে আর উত্তর দেন না, ভাববাদীদের মাধ্যমেও না, স্বপ্ন দিয়েও না। অতএব আমার যা কর্তব্য, তা আমাকে জানানোর জন্য আপনাকে ডাকলাম।”
শমূয়েল শৌলকে বললেন, “আমাকে তুলে এনে তুমি কেন আমাকে বিরক্ত করলে?” “আমি খুব বিপদে পড়েছি,” শৌল বললেন। “ফিলিস্তিনীরা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, আর ঈশ্বরও আমাকে ছেড়ে গিয়েছেন। তিনি আর আমার ডাকে সাড়া দেন না, ভাববাদীদের দ্বারাও নয় বা স্বপ্নের দ্বারাও নয়। তাই আমি আপনাকে ডেকে এনেছি যেন আপনি বলে দেন, আমাকে কী করতে হবে।”
16 ১৬ শমূয়েল বললেন, “যখন সদাপ্রভু তোমাকে ত্যাগ করে তোমার বিপক্ষ হয়েছেন, তখন আমাকে কেন জিজ্ঞাসা কর?
শমূয়েল বললেন, “সদাপ্রভুই যখন তোমাকে ছেড়ে গিয়েছেন ও তোমার শত্রু হয়ে গিয়েছেন তখন আর আমার পরামর্শ চাইছ কেন?
17 ১৭ সদাপ্রভু আমার মাধ্যমে যেমন বলেছেন, সেই রকম আপনার জন্য করলেন; ফলতঃ সদাপ্রভু তোমার হাত থেকে রাজ্য টেনে ছিঁড়েছেন ও তোমার প্রতিবাসী, দায়ূদকে দিয়েছেন।
আমার মাধ্যমে সদাপ্রভু আগে থেকে যা বলে দিয়েছিলেন তাই করেছেন। সদাপ্রভু তোমার হাত থেকে রাজ্যটি কেড়ে নিয়ে তোমার প্রতিবেশীদের মধ্যে একজনের—দাউদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
18 ১৮ যেহেতু তুমি সদাপ্রভুর রবে কান দেওনি এবং অমালেকের প্রতি তার প্রচণ্ড রাগ সফল করনি, এই জন্য আজ সদাপ্রভু এইরকম করলেন।
যেহেতু তুমি সদাপ্রভুর বাধ্য হওনি বা অমালেকীয়দের বিরুদ্ধে তাঁর প্রচণ্ড ক্রোধ সম্পাদন করোনি, তাই সদাপ্রভু আজ তোমার প্রতি এরকমটি করেছেন।
19 ১৯ আর সদাপ্রভু তোমার সঙ্গে ইস্রায়েলকেও পলেষ্টীয়দের হাতে সমর্পণ করবেন। কাল তোমার ও তোমার পুত্ররা আমার সঙ্গী হবে; আর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সৈন্যদলকেও পলেষ্টীয়দের হাতে সমর্পণ করবেন।”
সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে ও তোমাকেও ফিলিস্তিনীদের হাতে সঁপে দেবেন এবং আগামীকাল তুমি ও তোমার ছেলেরা আমার সঙ্গে থাকবে। সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সৈন্যদলকেও ফিলিস্তিনীদের হাতে সঁপে দেবেন।”
20 ২০ শৌল তখনই ভূমিতে লম্বা হয়ে পড়লেন; শমূয়েলের কথায় তিনি খুব ভয় পেলেন এবং সমস্ত দিন-রাত অনাহারে থাকাতে তিনি শক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন।
শমূয়েলের কথা শুনে শৌল ভয় পেয়ে তৎক্ষণাৎ সটান মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে গেলেন। তাঁর শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেল, কারণ সারা দিনরাত তিনি কিছুই খাননি।
21 ২১ পরে সেই স্ত্রী লোক শৌলের কাছে এসে তাকে খুবই চিন্তিত দেখে, বললেন, “দেখুন, আপনার দাসী আমি আপনার কথা রেখেছি, আপনি আমাকে যা বলেছিলেন, প্রাণ হাতে করে আপনার সেই কথা রেখেছি।
সেই মহিলাটি শৌলের কাছে এসে যখন দেখল তিনি খুব বিচলিত হয়ে পড়েছেন, তখন সে বলল, “দেখুন, আপনার দাসী আপনার বাধ্য হয়েছে। আমি প্রাণ হাতে নিয়ে আপনি আমাকে যা করতে বলেছিলেন তাই করেছি।
22 ২২ অতএব অনুরোধ করি, এখন আপনিও এই দাসীর কথা রাখুন; আমি আপনার সামনে কিছু খাবার রাখি, আপনি ভোজন করুন, তা হলে পথে চলবার দিন শক্তি পাবেন।”
এখন দয়া করে আপনার দাসীর কথা শুনুন ও আপনাকে কিছু খাবার দিতে দিন যেন সেই খাবার খেয়ে আপনি ফিরে যাওয়ার শক্তি লাভ করেন।”
23 ২৩ কিন্তু তিনি অসম্মত হয়ে বললেন, “আমি ভোজন করব না,” তবুও তার দাসরা ও সেই স্ত্রী লোকটি আগ্রহ করে অনুরোধ করলে তিনি তাদের কথা শুনে ভূমি থেকে উঠে খাটে বসলেন।
তিনি রাজি না হয়ে বললেন, “আমি খাব না।” কিন্তু তাঁর লোকজনও মহিলাটির সঙ্গে মিলিতভাবে তাঁকে পীড়াপীড়ি করল, ও তিনি তাদের কথা শুনেছিলেন। তিনি মাটি থেকে উঠে খাটে গিয়ে বসেছিলেন।
24 ২৪ তখন সেই স্ত্রী লোকের গৃহে একটা মোটাসোটা গোবত্স ছিল, আর সে তাড়াতাড়ি সেটি মারল এবং সূজী নিয়ে ঠেসে তাড়ীশূন্য রুটি তৈরী করল।
মহিলাটির গোয়ালঘরে একটি হৃষ্টপুষ্ট বাছুর ছিল, যেটি সে তক্ষুনি বধ করল। সে কিছুটা ময়দা মেখে খামিরবিহীন কয়েকটি রুটি বানাল।
25 ২৫ পরে শৌলের ও তার দাসদের সামনে তা আনল, আর তারা ভোজন করলেন; পরে সেই রাতে উঠে চলে গেলেন।
পরে সে সেগুলি শৌল ও তাঁর লোকজনের সামনে এনে রেখেছিল, ও তাঁরা ভোজনপান করলেন। রাত থাকতে থাকতেই তাঁরা উঠে চলে গেলেন।

< শমূয়েলের প্রথম বই 28 >