< শমূয়েলের প্রথম বই 19 >

1 পরে শৌল তাঁর ছেলে যোনাথনকে ও সমস্ত কর্মচারীদের বললেন যেন তারা দায়ূদকে মেরে ফেলে। কিন্তু দায়ূদের প্রতি শৌলের ছেলে যোনাথনের খুব টান ছিল।
শৌল তাঁর ছেলে যোনাথন ও সব কর্মকর্তাকে বললেন যেন তারা দাউদকে হত্যা করেন। কিন্তু যোনাথন দাউদকে খুব পছন্দ করতেন
2 যোনাথন দায়ূদকে বললেন, “আমার বাবা শৌল তোমাকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করছেন। শোন, তুমি কাল সকালে সাবধানে থেকো। একটা গোপন জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে থেকো।
তাই তিনি তাঁকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, “আমার বাবা শৌল তোমাকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছেন। কাল সকালে তুমি একটু সাবধানে থেকো; গোপন এক স্থানে গিয়ে তুমি লুকিয়ে থেকো।
3 তুমি যে মাঠে থাকবে, আমি আমার বাবাকে নিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়াব। আর যদি তেমন কিছু জানতে পারি তা তোমাকে জানাব।”
তুমি যেখানে থাকবে আমিও আমার বাবার সঙ্গে সেখানে গিয়ে দাঁড়াব। তোমার বিষয়ে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলব ও আমি যা জানতে পারব তা তোমাকে বলে দেব।”
4 যোনাথন তাঁর বাবা শৌলের কাছে দায়ূদের সুনাম করে বললেন, “মহারাজ, আপনার দাস দায়ূদের বিরুদ্ধে আপনি কোন পাপ করবেন না। সে তো আপনার বিরুদ্ধে কোন পাপ করে নি, বরং সে যা করেছে তাতে আপনার অনেক উপকার হয়েছে।
যোনাথন তাঁর বাবা শৌলের কাছে দাউদের প্রশংসা করে বললেন, “মহারাজ, আপনার দাস দাউদের প্রতি কোনও অন্যায় করবেন না; সে তো আপনার বিরুদ্ধে কোনও অন্যায় করেনি, আর সে যা যা করেছে তাতে বরং আপনি উপকৃতই হয়েছেন।
5 সে তার প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেই পলেষ্টীয়কে মেরে ফেলেছে, আর সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলকে মহাজয় দান করেছেন; আপনি তো তা দেখে খুশী হয়েছিলেন। তবে এখন আপনি অকারণে দায়ূদকে মেরে ফেলে কেন একজন নির্দোষ লোকের রক্তপাত করে তার বিরুদ্ধে পাপ করবেন?”
সেই ফিলিস্তিনীকে হত্যা করার সময় সে প্রাণের ঝুঁকিও নিয়ে ফেলেছিল। গোটা ইস্রায়েল জাতির জন্য সদাপ্রভু এক মহাবিজয় ছিনিয়ে এনেছেন, এবং আপনি তা দেখে খুশিও হয়েছিলেন। অকারণে দাউদের মতো নিরপরাধ একজনকে হত্যা করার মতো অপকর্ম আপনি কেন করতে যাচ্ছেন?”
6 তখন শৌল যোনাথনের কথা শুনে শপথ করে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য তাকে মেরে ফেলা হবে না।”
শৌল যোনাথনের কথা শুনে এই শপথ নিয়ে বসলেন: “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি, দাউদকে হত্যা করা হবে না।”
7 পরে যোনাথন দায়ূদকে ডেকে তাঁকে সমস্ত কথা জানালেন। তিনি তাঁকে শৌলের কাছে নিয়ে গেলেন এবং দায়ূদ আগের মতই শৌলের কাছে থাকলেন।
অতএব যা যা কথা হল, যোনাথন দাউদকে ডেকে এনে সেসব তাঁকে বলে শোনালেন। তিনি দাউদকে শৌলের কাছে নিয়ে এলেন, এবং আগের মতোই তিনি শৌলের সঙ্গে থাকতে শুরু করলেন।
8 তারপর আবার যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল তখন দায়ূদ বের হয়ে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। তিনি তাদের অনেক লোককে মেরে ফেললেন এবং তারা তাঁর সামনে থেকে পালিয়ে গেল।
আরেকবার যুদ্ধ শুরু হল, এবং দাউদ গিয়ে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন। তিনি এত জোরে তাদের আঘাত করলেন যে তারা তাঁর সামনে থেকে পালিয়ে গেল।
9 পরে সদাপ্রভুর কাছ থেকে একটা মন্দ আত্মা শৌলের উপর আসল। শৌল তখন তাঁর ঘরে বসে ছিলেন এবং তাঁর হাতে একটা বর্শা ছিল, আর দায়ূদ বীণা বাজাচ্ছিলেন।
কিন্তু শৌল যখন হাতে বর্শা নিয়ে বাড়িতে বসেছিলেন, তখন সদাপ্রভুর কাছ থেকে একটি মন্দ আত্মা তাঁর উপর নেমে এল। দাউদ তখন বীণা বাজাচ্ছিলেন,
10 ১০ এমন দিন শৌল বর্শা দিয়ে দায়ূদকে দেয়ালে গেঁথে ফেলবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তিনি শৌলের সামনে থেকে সরে গেলেন বলে বর্শাটা দেয়ালে ঢুকে গেল এবং সেই রাতে দায়ূদ পালিয়ে রক্ষা পেলেন।
শৌল তাঁকে বর্শা দিয়ে দেওয়ালে গেঁথে ফেলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু শৌল যখন দেওয়ালের দিকে বর্শা ছুঁড়লেন, তখন দাউদ তাঁর হাত এড়িয়ে সরে গেলেন। সেরাতে দাউদ পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেন।
11 ১১ দায়ূদের উপর নজর রাখবার জন্য শৌল তাঁর বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দিলেন যাতে পরের দিন সকালে তাঁকে মেরে ফেলা যায়। কিন্তু দায়ূদের স্ত্রী মীখল তাঁকে সব কিছু জানিয়ে বললেন, “আজ রাতে তুমি যদি প্রাণ নিয়ে না পালাও তবে কালই তুমি মারা পড়বে।”
দাউদের উপর নজর রাখার জন্য শৌল তাঁর বাড়িতে লোক পাঠালেন, যেন সকালেই তাঁকে হত্যা করতে পারেন। কিন্তু দাউদের স্ত্রী মীখল তাঁকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, “আজ রাতেই যদি তুমি প্রাণ বাঁচিয়ে না পালাও তবে কাল তুমি নিহত হবে।”
12 ১২ আর মীখল দায়ূদকে জানলা দিয়ে নীচে নামিয়ে দিলেন আর তিনি পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পেলেন।
অতএব মীখল দাউদকে জানালা দিয়ে নিচে নামিয়ে দিলেন, এবং তিনি পালিয়ে রক্ষা পেলেন।
13 ১৩ মীখল তখন পারিবারিক দেবমূর্তিগুলো নিয়ে বিছানায় রাখলেন এবং বিছানার মাথার দিকে দিলেন ছাগলের লোমের একটা বালিশ; তারপর সেগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন।
পরে মীখল একটি প্রতিমা নিয়ে সেটিকে বিছানায় শুইয়ে, কাপড়চোপড় দিয়ে ঢেকে রেখে মাথার দিকে কিছুটা ছাগলের লোম রেখে দিলেন।
14 ১৪ দায়ূদকে ধরবার জন্য শৌল লোক পাঠালে মীখল বললেন, “উনি অসুস্থ।”
দাউদকে বন্দি করার জন্য শৌল যখন লোক পাঠালেন, মীখল বললেন, “উনি অসুস্থ।”
15 ১৫ এই খবর শুনে শৌল দায়ূদকে দেখবার জন্য সেই লোকদেরই আবার পাঠালেন এবং বলে দিলেন, “দায়ূদকে খাট শুদ্ধই নিয়ে এস; আমি তাকে মেরে ফেলব।”
পরে আবার শৌল দাউদকে দেখার জন্য লোক পাঠিয়ে তাদের বলে দিলেন, “ওকে খাট সমেত আমার কাছে নিয়ে এসো যেন আমি ওকে হত্যা করতে পারি।”
16 ১৬ লোকগুলো ঘরে ঢুকে বিছানার উপর সেই দেবমূর্তিগুলো এবং বিছানার মাথার দিকে ছাগলের লোমের বালিশটা দেখতে পেল।
কিন্তু লোকেরা ঘরে ঢুকে দেখল, বিছানার উপর প্রতিমা রাখা আছে, ও মাথার দিকে কিছুটা ছাগলের লোম রাখা আছে।
17 ১৭ পরে শৌল মীখলকে বললেন, “তুমি কেন এই ভাবে আমাকে ঠকালে? তুমি আমার শত্রুকে ছেড়ে দেওয়াতে সে পালিয়ে গেছে।” মীখল তাঁকে বললেন, “তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে যেতে দাও৷ আমি কেন শুধু শুধু তোমাকে খুন করব’?”
শৌল মীখলকে বললেন, “তুমি কেন আমাকে এভাবে ঠকালে ও আমার শত্রুকে পালিয়ে যেতে দিলে?” মীখল তাঁকে বললেন, “সে আমাকে বলল, ‘আমাকে যেতে দাও। আমি কেন তোমায় হত্যা করব?’”
18 ১৮ এদিকে দায়ূদ পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচালেন। তিনি রামায় শমূয়েলের কাছে গেলেন এবং শৌল তাঁর উপর যা যা করেছেন তা সবই তাঁকে জানালেন। এর পর তিনি ও শমূয়েল গিয়ে নায়োতে বাস করতে লাগলেন।
দাউদ পালিয়ে নিজের প্রাণরক্ষা করার পর রামায় শমূয়েলের কাছে গেলেন ও শৌল তাঁর প্রতি যা যা করেছিলেন সেসব বলে শোনালেন। পরে তিনি ও শমূয়েল নায়োতে গিয়ে সেখানেই বসবাস করলেন।
19 ১৯ পরে কেউ শৌলকে বলল, “দেখুন দায়ূদ রামার নায়োতে আছেন।”
শৌলের কাছে খবর এল: “দাউদ রামাতে অবস্থিত নায়োতে আছে”
20 ২০ তখন দায়ূদকে ধরে আনবার জন্য তিনি লোক পাঠিয়ে দিলেন। সেই লোকেরা গিয়ে দেখল শমূয়েলের অধীনে একদল ভাববাদী যারা ভাববানী বলেন। ঈশ্বরের আত্মা যখন শৌলের লোকদের উপরেও আসলেন তখন তারাও ভাববানী বলতে লাগল।
তাই তিনি তাঁকে বন্দি করে আনার জন্য লোক পাঠালেন। কিন্তু যখন তারা দেখল একদল ভাববাদী ভাববাণী বলছেন, ও শমূয়েল দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন ঈশ্বরের আত্মা শৌলের লোকজনের উপর নেমে এলেন, ও তারাও ভাববাণী বলল।
21 ২১ শৌলকে সেই খবর জানানো হলে তিনি আরও লোক পাঠালেন কিন্তু তারাও গিয়ে ভাববানী প্রচার করতে লাগল। পরে শৌল তৃতীয় বার লোক পাঠালেন আর তারাও গিয়ে ভাববানী প্রচার করতে লাগল।
শৌলকে সেকথা বলা হল, এবং তিনি আরও লোকজন পাঠালেন, ও তারাও ভাববাণী বলল। শৌল তৃতীয়বার লোক পাঠালেন, আর তারাও ভাববাণী বলল।
22 ২২ শেষে শৌল নিজেই রামায় গেলেন এবং সেখূতে জল জমা করে রাখবার যে বড় জায়গা ছিল সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “শমূয়েল আর দায়ূদ কোথায়?” একজন বলল, “তাঁরা রামার নায়োতে আছেন।” তখন শৌল রামার নায়োতে গেলেন৷
শেষ পর্যন্ত, তিনি নিজেই রামার উদ্দেশে রওনা হয়ে সেখুতে অবস্থিত সেই বড়ো কুয়োটির কাছে পৌঁছে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “শমূয়েল ও দাউদ কোথায়?” “রামাতে অবস্থিত নায়োতে,” তারা বলল।
23 ২৩ আর ঈশ্বরের আত্মা তাঁর উপরেও এলে তিনি রামার নায়োত উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত ভাববাণী বললেন।
অতএব শৌল রামাতে অবস্থিত নায়োতে চলে গেলেন। কিন্তু ঈশ্বরের আত্মা তাঁর উপরেও নেমে এলেন, এবং যতক্ষণ না তিনি নায়োতে পৌঁছালেন, সারা রাস্তায় তিনি ভাববাণী বলে গেলেন।
24 ২৪ আর তিনিও তাঁর পোশাক খুলে ফেলে শমূয়েলের সামনে ভাববাণী বলতে লাগলেন। তিনি সারা দিন ও সারা রাত কাপড়-চোপড় ছাড়াই পড়ে রইলেন। সেইজন্যই লোকে বলে, “শৌলও কি তবে ভাববাদীদের মধ্যে একজন?”
তিনি পোশাক খুলে ফেললেন, ও শমূয়েলের উপস্থিতিতে তিনিও ভাববাণী বললেন। তিনি সারাদিন ও সারারাত উলঙ্গ হয়েই ছিলেন। এজন্যই লোকেরা বলে, “শৌলও কি ভাববাদীদের মধ্যে একজন?”

< শমূয়েলের প্রথম বই 19 >