< প্রথম রাজাবলি 7 >

1 শলোমন নিজের রাজবাড়ীটা তৈরী করতে তেরো বছর নিয়েছিলেন এবং তিনি তার বাড়ি তৈরী করা শেষ করলেন।
তাঁর প্রাসাদের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করতে অবশ্য শলোমনের তেরো বছর লেগে গেল।
2 তিনি লেবাননের বনের রাজবাড়িটি তৈরী করেছিলেন। এই ঘরটা একশো হাত লম্বা, পঞ্চাশ হাত চওড়া ও ত্রিশ হাত উঁচু ছিল। এরস কাঠের চার সারি থামের উপর এরস কাঠের ছেঁটে নেওয়া কড়িকাঠগুলি বসানো ছিল।
লেবাননের অরণ্যে যে প্রাসাদটি তিনি নির্মাণ করলেন, সেটি দৈর্ঘ্যে ছিল প্রায় 45 মিটার, প্রস্থে প্রায় 23 মিটার ও উচ্চতায় 14 মিটার, এবং দেবদারু কাঠে তৈরি চারটি থাম দেবদারু কাঠেই তৈরি পরিচ্ছন্ন কড়িকাঠগুলি ধরে রেখেছিল।
3 থামের উপর বসানো কড়িকাঠগুলির উপরে এরস কাঠ দিয়ে ছাদ দেওয়া হল; এক এক সারিতে পনেরোটা করে পঁয়তাল্লিশটা কড়িকাঠ ছিল।
কড়িকাঠের উপরের ছাদ তৈরি হল দেবদারু কাঠে এবং কড়িকাঠগুলি থামের উপর বসানো ছিল—এক এক সারিতে পনেরোটি করে মোট পঁয়তাল্লিশটি কড়িকাঠ ছিল।
4 ঘরের চারপাশের দেয়ালে মুখোমুখি তিন সারি জানলা দেওয়া হল।
সেটির জানালাগুলি উপরের দিকে মুখোমুখি তিন তিনটি করে রাখা হল।
5 সমস্ত দরজা ও থামগুলো ছিল চার কোণা কড়িকাঠের; জানলাগুলো তিন সারিতে মুখোমুখি করে তৈরী করা হয়েছিল।
সব দরজায় আয়তাকার চৌকাঠ ছিল; সামনের দিকে মুখোমুখি সেগুলি তিন তিনটি করে রাখা হল।
6 সেখানে একটি স্তম্ভশ্রেণী ছিল যেটি লম্বায় পঞ্চাশ হাত আর চওড়ায় ত্রিশ হাত। তার সামনে ছিল একটা ছাদ দেওয়া বারান্দা, আর সেই ছাদ কতগুলো থামের উপর বসানো ছিল।
তিনি প্রায় 23 মিটার লম্বা ও 14 মিটার চওড়া এক স্তম্ভসারি তৈরি করলেন। সেটির সামনের দিকে একটি দ্বারমণ্ডপ ছিল, এবং সেটির সামনের দিকে ছিল কয়েকটি থাম ও একটি ঝুলবারান্দা।
7 সিংহাসনের বড় ঘরে তিনি বিচার করবেন, বিচার করবার জন্য এই ঘরটা তৈরী করা হল। ঘরের দেয়াল নীচ থেকে উপর পর্যন্ত তিনি এরস কাঠ দিয়ে ঢেকে দিলেন।
তিনি সিংহাসন-দরবার, সেই বিচার-দরবারটি তৈরি করলেন, যেখানে বসে তিনি বিচার করতে যাচ্ছিলেন। সেটি তিনি মেঝে থেকে ছাদের ভিতর দিক পর্যন্ত দেবদারু কাঠ দিয়ে ঢেকে দিলেন।
8 যে ঘরে তিনি বাস করবেন সেটা বিচারের ঘরের পিছনে একই রকম তৈরী করলেন। ফরৌণের যে মেয়েকে তিনি বিয়ে করেছিলেন তাঁর জন্য সেই রকম করেই আর একটা ঘর তৈরী করলেন।
যে প্রাসাদে তিনি থাকতে যাচ্ছিলেন, সেটি সেই একই নকশা অনুসারে বিচার-দরবারের পিছন দিকে তৈরি করা হল। শলোমন যাঁকে বিয়ে করলেন, ফরৌণের সেই মেয়ের জন্যও তিনি এই দরবারটির মতো একটি প্রাসাদ তৈরি করলেন।
9 রাজবাড়ীর বড় উঠান এবং সমস্ত দালানগুলোর ভিত্তি থেকে ওপর পর্যন্ত সবই ঠিক মাপে কাটা দামী পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। সেই পাথরগুলো করাত দিয়ে সমান করে কেটে নেওয়া হয়েছিল।
এইসব ভবন, বাইরে থেকে শুরু করে বড়ো প্রাঙ্গণ পর্যন্ত, এবং ভিত্তি থেকে ছাঁচা পর্যন্ত, মাপ করে কাটা ও ভিতর ও বাইরের দিকে মসৃণ করা উন্নত মানের পাথরের চাঙড় দিয়ে তৈরি করা হল।
10 ১০ দালানগুলোর ভিত্তি গাঁথা হয়েছিল বড় বড় দামী পাথর দিয়ে। সেগুলোর কোনো কোনোটা ছিল দশ হাত আবার কোনো কোনোটা আট হাত।
ভীত গাঁথা হল উন্নত মানের বড়ো বড়ো পাথর দিয়ে, যার কোনো কোনোটির মাপ ছিল প্রায় 4.5 মিটার, আবার কোনো কোনোটির মাপ ছিল প্রায় 3.6 মিটার।
11 ১১ ভিত্তির পাথরগুলোর উপর ছিল ঠিক মাপে কাটা দামী পাথর ও এরস কাঠ।
উপরেও ছিল মাপ করে কাটা উন্নত মানের পাথর ও দেবদারু কাঠের কড়িকাঠ।
12 ১২ বারান্দা সুদ্ধ সদাপ্রভুর ঘরের ভিতরের উঠানের মতই রাজবাড়ীর বড় উঠানের চারপাশের দেয়াল সুন্দর করে কাটা তিন সারি পাথর ও এরস গাছের এক সারি মোটা কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল।
বড়ো প্রাঙ্গণটি ঘেরা ছিল তিন সারি পরিচ্ছন্ন পাথর ও দেবদারু কাঠের এক সারি পরিচ্ছন্ন কড়িকাঠ দিয়ে তৈরি এক প্রাচীর দিয়ে, ঠিক যেভাবে দ্বারমণ্ডপ সমেত সদাপ্রভুর মন্দিরের ভিতরদিকের প্রাঙ্গণটি তৈরি হল।
13 ১৩ রাজা শলোমন সোরে লোক পাঠিয়ে হীরমকে আনালেন।
রাজা শলোমন লোক পাঠিয়ে সোর থেকে সেই হূরমকে আনিয়েছিলেন,
14 ১৪ তিনি নপ্তালি গোষ্ঠীর বিধবার পুত্র এবং তাঁর বাবা ছিলেন সোরের লোক। হীরম ব্রোঞ্জের কারিগর ছিলেন। হীরম ব্রোঞ্জের সমস্ত রকম কাজ জানতেন এবং সেই কাজে তিনি খুব পাকা ছিলেন। তিনি রাজা শলোমনের কাছে আসলেন এবং তাঁকে যে সব কাজ দেওয়া হল তা করলেন।
যাঁর মা নপ্তালি গোষ্ঠীভুক্ত এক বিধবা ছিলেন এবং তাঁর বাবা সোরে বসবাসকারী ব্রোঞ্জের কাজে দক্ষ এক শিল্পী ছিলেন। ব্রোঞ্জের সব ধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে হূরম প্রজ্ঞা, জ্ঞানবুদ্ধিতে পরিপূর্ণ ছিলেন। তিনি রাজা শলোমনের কাছে এলেন ও তাঁর নিরূপিত সব কাজ করলেন।
15 ১৫ হীরম ব্রোঞ্জের দুটি থাম তৈরী করলেন। তার প্রত্যেকটি লম্বায় ছিল আঠারো হাত আর পরিধিতে বারো হাত।
তিনি ব্রোঞ্জের দুটি থাম ছাঁচে ঢেলে তৈরি করলেন, প্রত্যেকটির উচ্চতা ছিল প্রায় 8.1 মিটার ও পরিধি ছিল প্রায় 5.4 মিটার।
16 ১৬ সেই দুটি থামের উপরে দেবার জন্য তিনি ব্রোঞ্জ ছাঁচে ফেলে দুটি মাথা তৈরী করলেন। মাথা দুটির প্রত্যেকটি পাঁচ হাত করে উঁচু ছিল।
এছাড়াও থামের মাথায় রাখার জন্য তিনি ছাঁচে ফেলে ব্রোঞ্জের দুটি স্তম্ভশীর্ষ তৈরি করলেন; প্রত্যেকটি স্তম্ভশীর্ষ উচ্চতায় প্রায় 2.3 মিটার করে ছিল।
17 ১৭ স্তম্ভের উপরে অবস্থিত সে মাথার জন্য জালি কাজের জাল ও শিকলের কাজের পাকান দড়ি ছিল; এক মাথার জন্য সাতটা, অন্য মাথার জন্যও সাতটা।
থামগুলির মাথায় রাখা স্তম্ভশীর্ষগুলি সাজানো হল পরস্পরছেদী জালের মতো বিন্যাসিত একত্রে গাঁথা শিকল দিয়ে, ও প্রত্যেকটি স্তম্ভশীর্ষে ছিল সাতটি করে শিকল।
18 ১৮ তাই হীরম পাকানো সাতটা শিকল আর দুই সারি ব্রোঞ্জের ডালিম ফল তৈরী করলেন।
থামের মাথায় রাখা স্তম্ভশীর্ষগুলি সাজানোর জন্য প্রত্যেকটি পরস্পরছেদী জাল ঘিরে দুই দুই সারি করে তিনি ডালিম বানিয়ে দিলেন। প্রত্যেকটি স্তম্ভশীর্ষের জন্য তিনি একই কাজ করলেন।
19 ১৯ থামের উপরকার মাথা দুটির উপরের চার হাত ছিল লিলি ফুলের আকারের।
দ্বারমণ্ডপে থামগুলির মাথায় রাখা স্তম্ভশীর্ষগুলি লিলিফুলের মতো দেখতে হল, ও সেগুলির উচ্চতা ছিল প্রায় 1.8 মিটার করে।
20 ২০ মাথার নীচের অংশটা গোলাকার ছিল। সেই গোলাকার অংশের চারপাশে শিকলগুলো লাগানো ছিল। প্রত্যেকটি মাথার চারপাশে শিকলের সঙ্গে সারি সারি করে দুশো ডালিম ফল লাগানো ছিল।
দুটি থামেরই স্তম্ভশীর্ষে, পরস্পরছেদী জালের পাশে থাকা সরাকৃতি অংশের উপরে চারদিকে সারবাঁধা 200-টি করে ডালিম ছিল।
21 ২১ হীরম সেই দুইটি ব্রোঞ্জের থাম উপাসনা ঘরের বারান্দায় স্থাপন করলেন। ডান দিকে যেটা রাখলেন তার নাম দেওয়া হল যাখীন যার মানে “যিনি স্থাপন করেন” এবং বাম দিকে যেটা রাখলেন তার নাম দেওয়া হল বোয়স যার মানে “তাঁর মধ্যেই শক্তি”।
মন্দিরের দ্বারমণ্ডপে তিনি থামগুলি তৈরি করলেন। দক্ষিণ দিকের থামটির নাম তিনি দিলেন যাখীন এবং উত্তর দিকের থামটির নাম দিলেন বোয়স।
22 ২২ লিলি ফুলের আকারের ব্রোঞ্জের মাথা দুটি সেই থাম দুটির উপরে বসানো ছিল। এই ভাবে সেই থাম তৈরীর কাজ শেষ করা হল।
উপর দিকের স্তম্ভশীর্ষগুলি লিলিফুলের মতো দেখতে হল। আর এভাবেই থামের কাজ সম্পূর্ণ হল।
23 ২৩ তারপর হীরম ব্রোঞ্জের ছাঁচে ঢেলে জল রাখবার জন্য একটা গোল বিরাট পাত্র তৈরী করলেন। পাত্রটার এক দিক থেকে সোজাসুজি অন্য দিকের মাপ ছিল দশ হাত, গভীরতা পাঁচ হাত এবং বেড়ের চারপাশের মাপ ত্রিশ হাত।
ধাতু ছাঁচে ঢেলে তিনি গোলাকার এমন এক সমুদ্রপাত্র তৈরি করলেন, যা মাপে এক কিনারা থেকে অন্য কিনারা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে হল প্রায় 4.6 মিটার ও উচ্চতায় হল প্রায় 2.3 মিটার। সেটি ঘিরে মাপা হলে, তা প্রায় 13.8 মিটার হল।
24 ২৪ পাত্রটার মুখের বাইরের কিনারার নীচে প্রতি হাত জায়গায় দশটা করে দুই সারি পিতলের হাতল লাগানো ছিল। বিরাটাকায় পাত্রটি তৈরী করার দিন ই এগুলি লাগানো হয়।
কিনারার নিচে, সেটি ঘিরে ছিল প্রতি মিটারে কুড়িটি করে লাউ আকৃতির কয়েকটি ফল। সমুদ্রপাত্রের সাথেই লাউ আকৃতির ফলগুলি এক টুকরোতে দুই দুই সারি করে ছাঁচে ঢেলে তৈরি করা হল।
25 ২৫ পাত্রটা বারোটা ব্রোঞ্জের গরুর পিঠের উপর বসানো ছিল। সেগুলোর তিনটা উত্তরমুখী, তিনটা পশ্চিমমুখী, তিনটা দক্ষিণমুখী ও তিনটা পূর্বমূখী ছিল এবং তাদের পিছনগুলো ছিল ভিতরের দিকে।
সমুদ্রপাত্রটি বারোটি বলদের উপর দাঁড় করানো ছিল। সেগুলির মধ্যে তিনটি উত্তর দিকে, তিনটি পশ্চিমদিকে, তিনটি দক্ষিণ দিকে ও তিনটি পূর্বদিকে মুখ করে ছিল। সমুদ্রপাত্রটি সেগুলির উপরেই ভর দিয়েছিল, এবং সেগুলির শরীরের পিছনের অংশগুলি কেন্দ্রস্থলের দিকে রাখা ছিল।
26 ২৬ পাত্রটা ছিল চার আঙ্গুল পুরু। তার মুখটা একটা বাটির মুখের মত ছিল এবং লিলি ফুলের পাপড়ির মত ছিল। তাতে 2,000 বালতি জল ধরত।
সেটি প্রায় 7.5 সেন্টিমিটার পুরু ছিল, এবং সেটির কিনারা ছিল একটি পেয়ালার কিনারার মতো, লিলিফুলের মতো। সেটির ধারণক্ষমতা ছিল 2,000 বাত।
27 ২৭ হীরম ব্রোঞ্জের দশটা বেদির মত জিনিস তৈরী করলেন। সেগুলোর প্রত্যেকটি চার হাত লম্বা, চার হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু ছিল।
এছাড়াও তিনি ব্রোঞ্জের দশটি সরণযোগ্য তাক তৈরি করলেন; প্রত্যেকটি প্রায় 1.8 মিটার লম্বা, প্রায় 1.8 মিটার চওড়া ও প্রায় 1.4 মিটার উঁচু।
28 ২৮ বেদির চারপাশের ব্রোঞ্জের পাত কাঠামোর মধ্যে বসানো ছিল।
এভাবেই তাকগুলি তৈরি করা হল: সেগুলিতে কিনারাযুক্ত খুপি ছিল, যেগুলি খাড়া খুঁটির সাথে জুড়ে দেওয়া হল।
29 ২৯ সেই পাতগুলোর উপরে সিংহ, গরু ও করূবের মূর্ত্তি ছিল এবং উপরের কাঠামোর সঙ্গে লাগানো একটা গামলা বসাবার আসন ছিল, সিংহ ও গরুর নীচে ফুলের মত নক্‌শা করা ছিল।
খাড়া খুঁটিগুলির মাঝে থাকা খুপিগুলিতে সিংহ, বলদ ও করূবের আকৃতি খোদাই করা ছিল—আর খাড়া খুঁটিগুলিতেও তা ছিল। সিংহ ও বলদের উপরে ও নিচে পিটানো পাতের মালা গাঁথা ছিল।
30 ৩০ প্রত্যেকটি বেদিতে ব্রোঞ্জের চক্র সুদ্ধ ব্রোঞ্জের চারটা চাকা ছিল। গামলা বসাবার জন্য চার কোণায় ব্রোঞ্জের চারটা অবলম্বন ছিল। সেগুলোতেও ফুলের মত নকশা করা ছিল।
প্রত্যেকটি তাকে ব্রোঞ্জের চারটি করে চাকা ও ব্রোঞ্জেরই চক্রদণ্ড ছিল, এবং প্রত্যেকটিতে চারটি করে খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে থাকা এক-একটি করে গামলা জাতীয় পাত্র ছিল, যেগুলির প্রতিটি দিকে ছাঁচে ঢেলে মালা গেঁথে দেওয়া হল।
31 ৩১ গামলা বসাবার আসনের মধ্যে একটা গোলাকার ফাঁকা জায়গা ছিল। সেই ফাঁকা জায়গাটার এক দিক থেকে সোজাসুজি অন্য দিকের মাপ হল দেড় হাত। সেই ফাঁকা জায়গার চারদিকে খোদাই করা কারুকাজ ছিল। গামলাটা সেই ফাঁকা জায়গার মধ্যে বসানো হলে পর আসন থেকে গামলাটার উচ্চতা হল এক হাত। বাক্সের পাতগুলো গোল ছিল না, চৌকো ছিল।
তাকের ভিতরদিকে একটি ফাঁক ছিল যেখানে প্রায় পঁয়তাল্লিশ সেন্টিমিটার পুরু গোলাকার একটি খাঁচা ছিল। এই ফাঁকটি ছিল গোল, ও এটির ভিতের কাজ সমেত এটি মাপে ছিল প্রায় আটষট্টি সেন্টিমিটার। সেটির ফাঁক ঘিরে করা হল খোদাইয়ের কাজ। তাকের খুপিগুলি গোল নয়, কিন্তু চৌকো ছিল।
32 ৩২ পাতগুলোর নীচে চারটা চাকা ছিল আর চাকার অক্ষদন্ডগুলো বাক্সের সঙ্গে লাগানো ছিল। প্রত্যেকটি চাকা দেড় হাত উঁচু ছিল।
চারটি চাকা রাখা ছিল খুপিগুলির নিচে, এবং চাকাগুলির চক্রদণ্ডগুলি তাকের সাথে জুড়ে দেওয়া হল। প্রত্যেকটি চাকার ব্যাস ছিল প্রায় আটষট্টি সেন্টিমিটার করে।
33 ৩৩ চাকাগুলো রথের চাকার মত ছিল; অক্ষদন্ড, চাকার বেড়, শিক ও মধ্যের নাভি সবই ছাঁচে ঢালাই করা ধাতু ছিল।
চাকাগুলি, রথের চাকার মতো করে তৈরি করা হল; চক্রদণ্ড, চক্রবেড়, চাকার পাখি ও চক্রনাভিগুলি সব ছাঁচে ঢেলে ধাতু দিয়ে তৈরি করা হল।
34 ৩৪ প্রত্যেকটি বাক্সের চার কোণায় চারটা অবলম্বন লাগানো ছিল।
প্রত্যেকটি তাকে চারটি করে হাতল ছিল, তাক থেকে এক-একটি হাতল এক এক প্রান্তে বের হয়েছিল।
35 ৩৫ বেদির উপরে পিতল দিয়ে তৈরী আধ হাত উঁচু একটা গোলাকার জিনিস ছিল। এই গোলাকার জিনিসটা বেদির সঙ্গেই তৈরী করা হয়েছিল।
তাকের মাথায় প্রায় তেইশ সেন্টিমিটার গভীর গোলাকার একটি বেড়ী ছিল। খুঁটি ও খুপিগুলি তাকের মাথায় জুড়ে দেওয়া হল।
36 ৩৬ সেই গোলাকার জিনিসের বাইরের দিকে ভাগে ভাগে করূব, সিংহ ও খেজুর গাছ খোদাই করা হয়েছিল। প্রতিটি ভাগের ফাঁকে অবলম্বন ছিল, আর সেই অবলম্বনের উপরে তৈরী করা ছিল ফুলের মত নক্‌শা।
যেখানে যেখানে ফাঁকা স্থান ছিল, খুঁটি ও খুপিগুলির গায়ে চারদিক ঘিরে গাঁথা মালা সমেত তিনি করূব, সিংহ ও খেজুর গাছের আকৃতি খোদাই করে দিলেন।
37 ৩৭ এইভাবেই তিনি দশটা বেদি তৈরী করলেন। সেগুলো একই ছাঁচে ঢালা হয়েছিল এবং আয়তন ও আকারে একই রকম ছিল।
এভাবেই তিনি দশটি তাক তৈরি করলেন। সবকটি একই ছাঁচে ঢালাই করা হল এবং মাপে ও আকারে সেগুলি একইরকম হল।
38 ৩৮ তিনি প্রত্যেকটি বেদির জন্য একটা করে ব্রোঞ্জের দশটা গামলা তৈরী করলেন। প্রত্যেকটি গামলার বেড় ছিল চার হাত এবং তাতে চল্লিশ বাৎ আনুমাণিক আটশো আশি বালতি জল ধরত। ঐ দশটি বেদির মধ্যে এক একটি বেদির ওপরে এক একটি গামলা থাকত।
পরে তিনি হাত ধোয়ার জন্য ব্রোঞ্জের দশটি গামলা জাতীয় পাত্র তৈরি করলেন, যার প্রত্যেকটিতে চল্লিশ বাত করে জল ধরে রাখা যেত এবং আড়াআড়িভাবে মাপে সেগুলি প্রায় 1.8 মিটার করে ছিল, ও এক-একটি পাত্র সেই দশটি তাকের এক একটির উপর রাখা হল।
39 ৩৯ তিনি উপাসনা ঘরের দক্ষিণ দিকে পাঁচটা এবং উত্তর দিকে পাঁচটা বাক্স রাখলেন; আর দক্ষিণ পূর্ব কোণায় রাখলেন সেই বিরাট পাত্রটা।
তিনি পাঁচটি তাক মন্দিরের দক্ষিণ দিকে এবং পাঁচটি উত্তর দিকে রেখেছিলেন। তিনি সমুদ্রপাত্রটি মন্দিরের দক্ষিণ দিকে, একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে এনে রেখেছিলেন।
40 ৪০ এছাড়া তিনি অন্যান্য পাত্র, বড় হাতা ও বাটি তৈরী করলেন। এই ভাবে রাজা শলোমনের জন্য হীরম সদাপ্রভুর ঘরের যে যে কাজ আরম্ভ করেছিলেন তা শেষ করলেন। সেগুলো হল:
এছাড়াও তিনি আরও কয়েকটি পাত্র, বেলচা ও জল ছিটানোর বাটিও তৈরি করলেন। অতএব সদাপ্রভুর মন্দিরে রাজা শলোমনের জন্য হূরম যা যা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তা সম্পূর্ণ করলেন:
41 ৪১ দুটো থাম, থামের উপরকার গোলাকার দুটো বাটির মতো জিনিস ছিল, সেই বাটির উপরটা সাজাবার জন্য দুই সারি কারুকাজ করা জালির ঢাকনা ছিল;
দুটি স্তম্ভ; স্তম্ভের উপরে বসানোর জন্য গামলার আকারবিশিষ্ট দুটি স্তম্ভশীর্ষ; স্তম্ভের উপরে বসানো গামলার আকারবিশিষ্ট দুটি স্তম্ভশীর্ষ সাজিয়ে তোলার জন্য দুই সারি পরস্পরছেদী জাল;
42 ৪২ সেই জালিকার্য্যের জন্য চারশো ডালিম থামের উপরকার বাটির গোলাকার অংশটা সাজাবার জন্য প্রত্যেক সারি জালিকার্য্যের জন্য দুই সারি ডালিম;
দুই সারি পরস্পরছেদী জালের জন্য 400 ডালিম (স্তম্ভগুলির উপরে বসানো গামলার আকারবিশিষ্ট স্তম্ভশীর্ষ সাজিয়ে তোলার কাজে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি পরস্পরছেদী জালের জন্য দুই সারি করে ডালিম);
43 ৪৩ দশটা বেদি ও বেদির ওপরে দশটা গামলা;
হাত ধোয়ার দশটি পাত্র সমেত দশটি তাক;
44 ৪৪ বিরাট পাত্র ও তার নীচের বারোটা গরু তৈরী করছিলেন;
সমুদ্রপাত্র ও সেটির নিচে থাকা বারোটি বলদ;
45 ৪৫ পাত্র, বড় হাতা ও বাটি। হীরম যে সব জিনিস রাজা শলোমনের নির্দেশে সদাপ্রভুর ঘরের জন্য তৈরী করেছিলেন সেগুলো ছিল চক্‌চকে পিতলের।
অন্যান্য পাত্র, বেলচা ও কয়েকটি জল ছিটানোর বাটি। সদাপ্রভুর মন্দিরের জন্য শলোমনের হয়ে হূরম যা যা তৈরি করলেন, সেসবই তৈরি হল পালিশ করা ব্রোঞ্জ দিয়ে।
46 ৪৬ যর্দ্দনের সমভূমিতে সুক্কোৎ ও সর্ত্তনের মাঝামাঝি এক জায়গায় রাজা এই সব জিনিস মাটির ছাঁচে ফেলে তৈরী করিয়েছিলেন।
জর্ডন-সমভূমিতে সুক্কোৎ ও সর্তনের মাঝামাঝি এক স্থানে মাটির ছাঁচে করে রাজা সেগুলি ঢালাই করিয়েছিলেন।
47 ৪৭ জিনিসগুলোর সংখ্যা এত বেশী ছিল যে, শলোমন সেগুলো ওজন করেননি কারণ তার ওজন বেশি ভারী ছিল; সেইজন্য পিতলের পরিমাণ জানা যায় নি।
সেসব জিনিস পরিমাণে এত বেশি ছিল যে শলোমন সেগুলি ওজন না করেই রেখে দিলেন; ব্রোঞ্জের ওজন ঠিক করা যায়নি।
48 ৪৮ সদাপ্রভুর ঘরের যে সব জিনিসপত্র শলোমন তৈরী করিয়েছিলেন সেগুলো হল: সোনার বেদী, দর্শন রুটি রাখবার টেবিল;
সদাপ্রভুর মন্দিরে যেসব আসবাবপত্রাদি ছিল, শলোমন সেগুলিও তৈরি করিয়েছিলেন: সোনার যজ্ঞবেদি; দর্শন-রুটি রাখার জন্য সোনার টেবিল;
49 ৪৯ খাঁটি সোনার বাতিদান সেগুলো ছিল মহাপবিত্র স্থানের সামনে, ডানে পাঁচটা ও বাঁয়ে পাঁচটা; সোনার ফুল, বাতি এবং চিম্‌টা;
খাঁটি সোনার দীপাধার (অভ্যন্তরীণ পবিত্রস্থানের সামনে পাঁচটি ডানদিকে ও পাঁচটি বাঁদিকে); সোনার ফুলসজ্জা এবং প্রদীপ ও চিমটে;
50 ৫০ খাঁটি সোনার পেয়ালা, সলতে পরিষ্কার করবার চিমটা, বাটি, চামচ ও আগুন রাখবার পাত্র; ভিতরের কামরার, অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানের দরজার জন্য এবং উপাসনা ঘরের প্রধান কামরার দরজার জন্য সোনার কবজা।
হাত ধোয়ার খাঁটি সোনার পাত্র, পলতে ছাঁটবার যন্ত্র, জল ছিটানোর বাটি, থালা ও ধুনুচি; এবং একদম ভিতরের ঘরের দরজাগুলির, মহাপবিত্র স্থানের, ও এছাড়াও মন্দিরের মূল ঘরের দরজাগুলির জন্য সোনার কব্জা।
51 ৫১ এই ভাবে রাজা শলোমন সদাপ্রভুর ঘরের সমস্ত কাজ শেষ করলেন। তারপর তিনি তাঁর বাবা দায়ূদ যে সব জিনিস সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন সেগুলো নিয়ে আসলেন। সেগুলো ছিল সোনা, রূপা এবং বিভিন্ন পাত্র। সেগুলো তিনি সদাপ্রভুর ঘরের ধনভান্ডারে রেখে দিলেন।
সদাপ্রভুর মন্দিরের জন্য রাজা শলোমনের করা সব কাজ সমাপ্ত হয়ে যাওয়ার পর তিনি তাঁর বাবা দাউদের উৎসর্গ করা জিনিসপত্র—রুপো ও সোনা এবং সব আসবাবপত্রাদি—সেখানে নিয়ে এলেন এবং সদাপ্রভুর মন্দিরের কোষাগারে সেগুলি রেখে দিলেন।

< প্রথম রাজাবলি 7 >