< প্রথম রাজাবলি 20 >

1 অরামের রাজা বিনহদদ তাঁর সমস্ত সৈন্য জড়ো করলেন। তিনি বত্রিশজন রাজা ও অনেক ঘোড়া আর রথ সঙ্গে নিয়ে শমরিয়া আক্রমণ করবার জন্য ঘেরাও করলেন এবং যুদ্ধ করলেন। 2 তিনি কয়েকজন লোককে শহরে পাঠিয়ে ইস্রায়েলের রাজা আহাবকে এই কথা জানালেন, “বিনহদদ বলছেন, 3 ‘তোমার সোনা ও তোমার রূপা আমার, আর তোমার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের মধ্যে যারা ভালো, তারা আমার’।” 4 উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনার কথা ঠিক। আমি এবং আমার সব কিছুই আপনার।” 5 পরে দূতেরা আহাবের কাছে আবার এসে বলল, “বিনহদদ বলছেন, ‘তোমার সোনা রূপা, স্ত্রীদের ও ছেলে মেয়েদের যে আমাকে দিতে হবে আমি লোক পাঠিয়ে বলে দিয়েছিলাম। 6 কিন্তু আগামী কাল এই দিনের আমার দাসদেরকে আমি তোমার কাছে পাঠাব। তারা আপনার রাজবাড়ী ও আপনার কর্মচারীদের বাড়িতে খোঁজ করবে এবং যে সমস্ত জিনিস আপনার চোখে মূল্যবান তা সবই নিয়ে আসবে।’” 7 তখন ইস্রায়েলের রাজা দেশের সমস্ত প্রাচীনদের ডেকে বললেন, “অনুরোধ করি, বিবেচনা করে দেখ, এই লোকটি শুধু ক্ষতি করবার চেষ্টা করছে, কারণ সে যখন আমার স্ত্রীদের ও ছেলে মেয়েদের এবং সোনা রূপার জন্য আদেশ পাঠালে আমি তা দিতে অস্বীকার করিনি।” 8 সব প্রাচীনরা এবং সমস্ত লোকেরা তাঁকে বলল, “আপনি শুনবেন না কিম্বা রাজি হবেন না।” 9 তখন আহাব বিনহদদের দূতদেরকে বললেন, “আমার প্রভু মহারাজকে বলবে যে, তাঁর প্রথম দাবি অনুসারে আমি সবই করব, কিন্তু এই কাজ করতে পারব না।” পরে দূতেরা তখন সেই খবর নিয়ে বিনহদদের কাছে চলে গেল। 10 ১০ তখন বিনহদদ আহাবের কাছে এই সংবাদ পাঠালেন, “আমার অনুসরণকারী সব লোককে এক এক মুঠো করে দেবার মত ধূলোও যদি শমরিয়াতে থেকে যায় তাহলে দেবতারা যেন আমাকে শাস্তি দেন আর তা ভীষণভাবেই দেন।” 11 ১১ তাতে উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “তাঁকে বলবে, ‘যে লোক যুদ্ধের সজ্জা পরে, সে সজ্জা খুলে রাখা লোকের মত গর্ব না করুক’।” 12 ১২ বিনহদদের কাছে এই খবর গিয়ে যখন পৌঁছাল তখন তিনি ও অন্যান্য রাজারা তাঁদের তাঁবুতে পান করছিলেন। তিনি তাঁর লোকদের আদেশ দিলেন, “যুদ্ধের জন্য তোমরা তৈরী হও।” কাজেই তারা শহরটা আক্রমণ করবার জন্য তৈরী হল। 13 ১৩ এর মধ্যে ইস্রায়েলের রাজা আহাবের কাছে একজন ভাববাদী এসে এই কথা ঘোষণা করলেন, “সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি ঐ বিশাল সৈন্যবাহিনীকে দেখতে পাচ্ছ কি? আজই আমি ওদের তোমার হাতে তুলে দেব আর তখন তুমি জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু’।” 14 ১৪ আহাব বললেন, “কিন্তু কাকে দিয়ে তিনি তা করাবেন?” ভাববাদী উত্তরে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন যে, বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্ত্তাদের অধীনে যে যুবক সৈন্যেরা আছে তারাই তা করবে।” আহাব জিজ্ঞাসা করলেন, “যুদ্ধটা শুরু করবে কে?” উত্তরে ভাববাদী বললেন, “আপনিই করবেন।” 15 ১৫ আহাব এই কথা শুনে বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্ত্তাদের অধীন যুবক সৈন্যদের জড়ো করলেন। তাতে তারা মোট দুশো বত্রিশজন হল। তারপর তিনি সব ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের জড়ো করলে পর সাত হাজার সৈন্য হল। 16 ১৬ তারা দুপুর বেলায় বেরিয়ে পড়ল। বিনহদদ ও তাঁর সঙ্গে যুক্ত বত্রিশজন রাজা তাদের তাঁবুর মধ্যে পান করে মাতাল হয়েছিলেন। 17 ১৭ রাজ্যপালদের সেই যুবকরা বাইরে গেল; সেই দিন বিনহদদ খোঁজ নেবার জন্য লোক পাঠিয়ে দিলে তারা তাঁকে খবর দিল, “শমরিয়া থেকে লোকেরা এগিয়ে এসেছে।” 18 ১৮ তিনি বললেন, “তারা সন্ধির জন্য এসে থাকলে তাদের জীবন্ত ধরবে, আবার যুদ্ধের জন্য এসে থাকলেও তাদের জীবন্ত ধরবে।” 19 ১৯ এর মধ্যে ওরা অর্থাৎ রাজ্যপালদের সেই যুবকরা ও তাদের পিছনে আসা সৈন্যদল শহর থেকে বের হল। 20 ২০ তারা প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের বাধাদানকারীকে মেরে ফেলল। তা দেখে অরামীয়েরা পালিয়ে গেল আর ইস্রায়েলীয়েরা তাদের পিছনে তাড়া করল এবং অরামের রাজা বিনহদদ তাঁর কয়েকজন ঘোড়সওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে করে পালিয়ে গেলেন। 21 ২১ পরে ইস্রায়েলের রাজা বের হয়ে তাদের ঘোড়া ও রথ সব ধ্বংস করে দিলেন এবং প্রচুর অরামীয়দের হত্যা করলেন। 22 ২২ পরে ঐ ভাববাদী ইস্রায়েলের রাজার কাছে এসে বললেন, “আপনার শক্তি বাড়ান এবং কি করতে হবে তা ভেবে দেখুন, কারণ আগামী বছর আসলে অরামের রাজা আপনাকে আবার আক্রমণ করবেন।” 23 ২৩ আর অরামের রাজার দাসেরা তাঁকে বলল, “ওদের দেবতাগুলো পাহাড়ের দেবতা, তাই আমাদের চেয়ে ওরা বেশী শক্তিশালী। কিন্তু আমরা যদি সমভূমিতে ওদের সঙ্গে যুদ্ধ করি তবে নিশ্চয়ই আমরা ওদের চেয়ে শক্তিশালী হব। 24 ২৪ আপনি এই কাজ করুন, রাজাদের সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় সেনাপতিদের নিযুক্ত করুন। 25 ২৫ আর আপনার নিজের যত সৈন্য, যত ঘোড়া ও রথ নষ্ট হয়েছে, তত সৈন্য, তত ঘোড়া ও রথ সংগ্রহ করুন; তাহলে আমরা সমভূমিতে ইস্রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারব। তখন নিশ্চয়ই আমরা তাদের চেয়ে শক্তিশালী হব।” তিনি তাদের কথায় রাজি হয়ে সেইমতই কাজ করলেন। 26 ২৬ পরের বছর আসলে বিনহদদ অরামীয়দেরকে জড়ো করে নিয়ে ইস্রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্য অফেকে গেলেন। 27 ২৭ এদিকে ইস্রায়েলীয়দের জড়ো করা হল। তাদের খাবার জোগান দেবার ব্যবস্থা করা হলে পর তারাও অরামীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্য বেরিয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা অরামীয়দের সামনের দিকে দুটি ছাগলের পালের মত ছাউনি ফেলল। কিন্তু অরামীয়েরা গোটা দেশটা জুড়ে থাকল। 28 ২৮ তখন ঈশ্বরের একজন লোক এসে ইস্রায়েলের রাজাকে বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘অরামীয়েরা বলেছে, সদাপ্রভু পাহাড়ের ঈশ্বর, উপত্যকার ঈশ্বর নন; সেইজন্য আমি এই বিরাট সৈন্যদলকে তোমার হাতে তুলে দেব, আর এতে তোমরা জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু’।” 29 ২৯ আর সাত দিন পর্যন্ত তারা একে অন্যের সামনাসামনি ছাউনি ফেলে থাকল, তারপর সপ্তম দিনের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা এক দিনের ই এক লক্ষ অরামীয় পদাতিক সৈন্য মেরে ফেলল। 30 ৩০ বাদবাকী সৈন্যেরা অফেকে পালিয়ে গেল আর সেখানে তাদের সাতাশ হাজার সৈন্যের উপরে দেয়াল ধসে পড়ল। আর বিনহদদ সেখানে পালিয়ে গিয়ে বাড়ীর ভিতরের একটা কামরায় লুকিয়ে থাকলো। 31 ৩১ পরে তাঁর দাসেরা তাঁকে বলল, “দেখুন, আমরা শুনেছি যে, ইস্রায়েলের রাজারা দয়ালু। চলুন, আমরা কোমরে চট পরে আর মাথায় দড়ি বেঁধে ইস্রায়েলের রাজার কাছে যাই। হয়তো তিনি আপনার প্রাণ রক্ষা করবেন।” 32 ৩২ পরে তাঁরা কোমরে চট পরে ও মাথায় দড়ি বেঁধে ইস্রায়েলের রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “তোমার দাস বিনহদদ বলছেন যে, ‘অনুরোধ করি, আমার প্রাণ রক্ষা করুন’।” রাজা বললেন, “তিনি কি এখনও বেঁচে আছেন? তিনি আমার ভাই।” 33 ৩৩ সেই লোকেরা এটাকে ভাল লক্ষণ মনে করে তাড়াতাড়ি করে তাঁর কথা বুঝতে পেরে বলল, “হ্যাঁ, বিনহদদ নিশ্চয়ই আপনার ভাই।” রাজা বললেন, “আপনারা গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসুন।” বিনহদদ বের হয়ে আসলে পর আহাব তাঁকে তাঁর রথে তুলে নিলেন। 34 ৩৪ বিনহদদ বললেন, “তোমার বাবার কাছ থেকে আমার বাবা যে সব গ্রাম নিয়ে নিয়েছেন আমি সেগুলো আপনাকে ফিরিয়ে দেব। আমার বাবা যেমন শমরিয়াতে বাজার বসিয়েছিলেন তেমনি আপনিও দম্মেশকের বিভিন্ন জায়গায় বাজার বসাতে পারবেন।” আহাব বললেন, “একটা সন্ধি করে আপনাকে আমি ছেড়ে দেব।” এই বলে তিনি বিনহদদের সঙ্গে একটা সন্ধি করে তাঁকে ছেড়ে দিলেন। 35 ৩৫ সদাপ্রভুর আদেশে শিষ্য ভাববাদীদের মধ্যে একজন তাঁর সঙ্গীকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত কর।” কিন্তু লোকটি আঘাত করতে রাজি হল না। 36 ৩৬ তখন সেই ভাববাদী তাঁকে বললেন, “তুমি সদাপ্রভুর কথার বাধ্য হলে না বলে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা সিংহ তোমাকে মেরে ফেলবে।” লোকটি চলে যাওয়ার পরেই একটা সিংহ তাকে দেখতে পেয়ে মেরে ফেলল। 37 ৩৭ সেই ভাববাদী আর একজন লোককে দেখতে পেয়ে তাকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত কর।” লোকটি তাঁকে আঘাত করে ক্ষত করল। 38 ৩৮ তারপর সেই ভাববাদী রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাজার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। তিনি তাঁর মাথায় কাপড় বেঁধে তা চোখের উপরে নামিয়ে এনে নিজের পরিচয় গোপন করলেন। 39 ৩৯ রাজা ঐ পথে যাওয়ার দিন সেই ভাববাদী কেঁদে তাঁকে বললেন, “আপনার দাস আমি যুদ্ধের মাঝখানে গিয়েছিলাম। তখন একজন লোক একজন বন্দীকে আমার কাছে এনে বলল, ‘এই লোকটাকে পাহারা দিয়ে রাখ। যদি সে হারিয়ে যায় তবে তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ নেওয়া হবে, আর তা না হলে ঊনচল্লিশ কেজি রূপা দিতে হবে।’ 40 ৪০ কিন্তু আপনার দাস আমি এদিকে ওদিকে ব্যস্ত ছিলাম, এর মধ্যে সে কোথায় চলে গেছে।” তখন ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “ঐ শাস্তিই তোমার হবে। তুমি নিজের মুখেই তা বলেছ।” 41 ৪১ তখন সেই ভাববাদী তাড়াতাড়ি চোখের উপর থেকে মাথার কাপড়টা সরিয়ে ফেললেন আর ইস্রায়েলের রাজা তাঁকে ভাববাদীদের একজন বলে চিনতে পারলেন। 42 ৪২ সেই ভাববাদী রাজাকে বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমি যে লোককে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন করেছিলাম তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছ। কাজেই তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ আর তার লোকদের বদলে তোমার লোকদের প্রাণ যাবে।’” 43 ৪৩ এতে ইস্রায়েলের রাজা বিষন্ন ও বিরক্ত হয়ে তাঁর নিজের বাড়িতে চলে গেলেন ও পরে তিনি শমরিয়াতে পৌঁছালেন।

< প্রথম রাজাবলি 20 >