< প্রথম রাজাবলি 19 >

1 এলিয় যা যা করেছেন এবং কেমন করে তরোয়াল দিয়ে সমস্ত ভাববাদীদের মেরে ফেলেছেন তা সবই আহাব ঈষেবলকে বললেন।
ইত্যবসরে এলিয় যা যা করলেন এবং কীভাবে তিনি ভাববাদীদের সবাইকে তরোয়াল দিয়ে হত্যা করলেন, সেসব কথা আহাব ঈষেবলকে বলে দিলেন।
2 তাতে ঈষেবল লোক দিয়ে এলিয়কে বলে পাঠালেন, “কাল এই দিনের র মধ্যে তোমার প্রাণের দশা যদি তাদের এক জনের মত না করি, তবে দেবতারা যেন আমাকে শাস্তি দেন আর তা ভীষণভাবেই দেন।”
তাই ঈষেবল এলিয়ের কাছে একথা বলার জন্য একজন দূত পাঠালেন, “আগামীকাল এই সময়ের মধ্যে আমি যদি তোমার দশা সেই ভাববাদীদের একজনের মতোও না করি, তবে যেন দেবদেবীরা আমাকে কঠোর থেকে কঠোরতর দণ্ড দেন।”
3 এলিয় তা দেখে উঠলেন এবং প্রাণ বাঁচাবার জন্য পালিয়ে গেলেন। তিনি যিহূদা এলাকার বের-শেবাতে পৌঁছে তাঁর চাকরকে সেখানে রাখলেন,
এলিয় ভয় পেয়ে গেলেন এবং প্রাণ বাঁচাতে তিনি দৌড় লাগালেন। যিহূদার বের-শেবায় পৌঁছে তিনি তাঁর দাসকে সেখানে রেখে
4 কিন্তু তিনি নিজে মরু এলাকার মধ্যে একদিনের র পথ গিয়ে একটা রোতম গাছের নীচে বসলেন এবং নিজের মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করলেন। তিনি বললেন, “হে সদাপ্রভু, এই যথেষ্ট, এখন তুমি আমার প্রাণ নাও; কারণ আমি তো আমার পূর্বপুরুষদের চেয়ে উত্তর নই।”
নিজে একদিনের পথ পাড়ি দিয়ে মরুপ্রান্তরে চলে গেলেন। একটি খেংরা ঝোপের কাছে এসে, সেটির তলায় বসে তিনি নিজের মৃত্যু কামনা করে প্রার্থনা করলেন। “হে সদাপ্রভু, যথেষ্ট হয়েছে,” তিনি বললেন। “আমার জীবন নিয়ে নাও; আমার পূর্বপুরুষদের চেয়ে আমি কোনোমতেই ভালো নই।”
5 তারপর তিনি এক রোতম গাছের তলায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। হঠাত একজন স্বর্গদূত তাঁকে ছুঁয়ে বললেন, “ওঠ, খাও।”
এই বলে তিনি খেংরা ঝোপের তলায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ করে একজন স্বর্গদূত তাঁকে স্পর্শ করে বলে উঠেছিলেন, “উঠে পড়ো ও খেয়ে নাও।”
6 তিনি চেয়ে দেখলেন; তাঁর মাথার কাছে গরম পাথরে সেঁকা একখানা রুটি ও এক পাত্র জল রয়েছে। তা খেয়ে তিনি আবার শুয়ে পড়লেন।
তিনি চারপাশে তাকিয়েছিলেন, আর দেখতে পেয়েছিলেন যে তাঁর মাথার কাছে গরম কয়লার আগুনে সেঁকা কয়েকটি রুটি ও এক বয়াম জল রাখা আছে। তিনি ভোজনপান করে আবার শুয়ে পড়েছিলেন।
7 সদাপ্রভুর দূত দ্বিতীয়বার এসে তাঁকে ছুঁয়ে বললেন, “ওঠ, খাও, কারণ তোমার শক্তি থেকেও তোমার পথ বেশি।”
সদাপ্রভুর দূত দ্বিতীয়বার ফিরে এসে তাঁকে স্পর্শ করে বললেন, “উঠে পড়ো ও খেয়ে নাও, কারণ এই যাত্রাটি তোমার পক্ষে বড়ো বেশি লম্বা হতে চলেছে।”
8 তাতে তিনি উঠে খেলেন। সেই খাবার খেয়ে শক্তিলাভ করে তিনি চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত হেঁটে ঈশ্বরের পাহাড় হোরেবে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
অতএব তিনি উঠে ভোজনপান করলেন। খাবার খেয়ে শক্তি লাভ করে তিনি সদাপ্রভুর পর্বত হোরেবে না পৌঁছানো পর্যন্ত চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত হেঁটে গেলেন।
9 সেখানে একটা গুহার মধ্যে ঢুকে তিনি রাতটা কাটালেন। তারপর, তাঁর কাছে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হল এবং তিনি তাকে বললেন, “এলিয়, তুমি এখানে কি করছ?”
সেখানে একটি গুহায় ঢুকে তিনি রাত কাটিয়েছিলেন। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য তাঁর কাছে এসেছিল: “এলিয়, তুমি এখানে কী করছ?”
10 ১০ এলিয় বললেন, “আমি বাহিনীদের সদাপ্রভুর পক্ষে খুবই আগ্রহী হয়েছি, কারণ ইস্রায়েলীয়েরা তোমার স্থাপন করা ব্যবস্থা ত্যাগ করেছে, তোমার সব বেদী ভেঙে ফেলেছে এবং তরোয়াল দিয়ে তোমার ভাববাদীদের মেরে ফেলেছে। কেবল আমিই বাকি আছি আর আমাকেও এখন তারা মেরে ফেলবার চেষ্টা করছে।”
তিনি উত্তর দিলেন, “আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য দারুণ উদ্যোগী হয়েছি। ইস্রায়েলীরা তোমার নিয়ম বাতিল করে দিয়েছে, তোমার যজ্ঞবেদিগুলি ভেঙে ফেলেছে, এবং তোমার ভাববাদীদের তরোয়াল দিয়ে হত্যা করেছে। একমাত্র আমিই অবশিষ্ট আছি, আর এখন তারা আমাকেও হত্যা করতে চাইছে।”
11 ১১ পরে তিনি বললেন, “তুমি বাইরে গিয়ে এই পর্বতের উপরে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়াও।” সদাপ্রভু ওখান দিয়ে যাবেন, আর তাঁর সামনে একটা ভীষণ শক্তিশালী বাতাস পর্বতগুলিকে চিরে দুই ভাগ করল এবং সব পাথর ভেঙে টুকরা টুকরা করল, কিন্তু সেই বাতাসের মধ্যে সদাপ্রভু ছিলেন না। সেই বাতাসের পরে একটা ভূমিকম্প হল, কিন্তু সেই ভূমিকম্পের মধ্যেও সদাপ্রভু ছিলেন না।
সদাপ্রভু বললেন, “পর্বতের উপর সদাপ্রভুর উপস্থিতিতে গিয়ে দাঁড়াও, কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই সদাপ্রভু ওখান দিয়ে পার হবেন।” পরে প্রচণ্ড শক্তিশালী বাতাসের এক ঝাপটায় সদাপ্রভুর সামনে পর্বতমালা বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং পাষাণ-পাথরগুলিও ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, কিন্তু সদাপ্রভু সেই বাতাসে ছিলেন না। বাতাস বয়ে যাওয়ার পর ভূমিকম্প হল, কিন্তু সদাপ্রভু সেই ভূমিকম্পেও ছিলেন না।
12 ১২ ভূমিকম্পের পরে দেখা দিল আগুন, কিন্তু সেই আগুনের মধ্যেও সদাপ্রভু ছিলেন না। সেই আগুনের পরে ফিস্‌ ফিস্‌ শব্দের মত সামান্য শব্দ শোনা গেল।
ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পর সেখানে আগুন জ্বলে উঠেছিল, কিন্তু সদাপ্রভু সেই আগুনেও ছিলেন না। আগুনের পর সেখানে মৃদুমন্দ ফিসফিসানির শব্দ শোনা গেল।
13 ১৩ এলিয় তা শুনে তাঁর গায়ের চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন এবং বাইরে গিয়ে গুহার মুখের কাছে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি এই কথা শুনলেন, “এলিয়, তুমি এখানে কি করছ?”
সেই শব্দ শুনে এলিয় নিজের আলখাল্লা দিয়ে মুখ ঢেকে বাইরে বের হয়ে গুহার মুখে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন এক কণ্ঠস্বর তাঁকে বলল, “এলিয়, তুমি এখানে কী করছ?”
14 ১৪ এলিয় বললেন, “আমি বাহিনীদের সদাপ্রভুর পক্ষে খুবই আগ্রহী হয়েছি, কারণ ইস্রায়েলীয়েরা তোমার স্থাপন করা ব্যবস্থা ত্যাগ করেছে, তোমার সব যজ্ঞবেদী ভেঙে ফেলেছে এবং তোমার ভাববাদীদের মেরে ফেলেছে। কেবল আমিই বাকি আছি আর আমাকেও এখন তারা মেরে ফেলবার চেষ্টা করছে।”
তিনি উত্তর দিলেন, “আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য দারুণ উদ্যোগী হয়েছি। ইস্রায়েলীরা তোমার নিয়ম বাতিল করে দিয়েছে, তোমার যজ্ঞবেদিগুলি ভেঙে ফেলেছে, এবং তোমার ভাববাদীদের তরোয়াল দিয়ে হত্যা করেছে। একমাত্র আমিই অবশিষ্ট আছি, আর এখন তারা আমাকেও হত্যা করতে চাইছে।”
15 ১৫ তখন সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “যাও, তুমি যে পথে এসেছ সেই পথে ফিরে গিয়ে দম্মেশকের মরু এলাকায় যাও। সেখানে পৌঁছে তুমি হসায়েলকে অরামের উপরে রাজপদে অভিষেক কর।
সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “যে পথ দিয়ে এসেছিলে, সেই পথ ধরেই দামাস্কাসের মরুভূমিতে চলে যাও। সেখানে পৌঁছে হসায়েলকে অরামের উপর রাজপদে অভিষিক্ত করো।
16 ১৬ এছাড়া নিম্‌শির ছেলে যেহূকে ইস্রায়েলের রাজার পদে অভিষেক কর, আর তোমার পদে ভাববাদী হওয়ার জন্য আবেলমহোলার শাফটের ছেলে ইলীশায়কে অভিষেক কর।
এছাড়াও, নিমশির ছেলে যেহূকে ইস্রায়েলের উপর রাজপদে অভিষিক্ত করো, এবং ভাববাদীরূপে তোমার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য আবেল-মহোলার অধিবাসী শাফটের ছেলে ইলীশায়কে অভিষিক্ত করো।
17 ১৭ হসায়েলের তলোয়ার যারা এড়িয়ে যাবে যেহূ তাদের মেরে ফেলবে আর যেহূর তলোয়ার যারা এড়িয়ে যাবে ইলীশায় তাদের মেরে ফেলবে।
যে কেউ হসায়েলের তরোয়ালের হাত থেকে রেহাই পাবে, যেহূ তাকে হত্যা করবে, আর যে কেউ যেহূর তরোয়ালের হাত থেকে রেহাই পাবে, ইলীশায় তাকে হত্যা করবে।
18 ১৮ কিন্তু ইস্রায়েলে আমি আমার জন্য সাত হাজার লোককে রেখে দেব যারা বাল দেবতার সামনে হাঁটু পাতেনি ও সেই সবার মুখ তাকে চুম্বনও করে নি।”
তবে ইস্রায়েলে আমি এমন 7,000 লোককে সংরক্ষিত করে রেখেছি, যারা বায়ালের কাছে মাথা নত করেনি ও তাকে চুমুও দেয়নি।”
19 ১৯ পরে তিনি সেখান থেকে চলে গিয়ে শাফটের ছেলে ইলীশায়ের দেখা পেলেন; সেই দিন তিনি বারো জোড়া বলদ দিয়ে জমি চাষ করছিলেন এবং তিনি নিজে শেষ জোড়ার সঙ্গে ছিলেন। এলিয় তাঁর কাছে গিয়ে নিজের গায়ের চাদরখানা তাঁর গায়ে ফেলে দিলেন।
অতএব সেখান থেকে গিয়ে এলিয় শাফটের ছেলে ইলীশায়কে খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি বারো জোড়া বলদ জোয়ালে জুড়ে জমি চাষ করছিলেন, আর তিনি স্বয়ং শেষ জোড়া বলদ দিয়ে হাল চালাচ্ছিলেন। এলিয় তাঁর কাছে গিয়ে নিজের আলখাল্লাটি তাঁর গায়ে ছুঁড়ে দিলেন।
20 ২০ ইলীশায় তখন তাঁর বলদ ফেলে এলিয়ের পিছনে পিছনে দৌড়ে গেলেন। ইলীশায় বললেন, “মিনতি করি, আমাকে আমার মা বাবাকে চুম্বন করে আসতে দিন। তারপর আমি আপনার সঙ্গে যাব।” উত্তরে এলিয় বললেন, “ফিরে যাও, কিন্তু আমি তোমার কি করলাম?”
ইলীশায় তখন তাঁর বলদগুলি ছেড়ে এলিয়ের কাছে দৌড়ে গেলেন। “আমাকে অনুমতি দিন, আমি আমার মা-বাবাকে চুমু দিয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি,” তিনি বললেন, “পরে আমি আপনার সাথে আসব।” “তুমি ফিরে যাও,” এলিয় উত্তর দিলেন। “আমি তোমার প্রতি কী করেছি?”
21 ২১ পরে ইলীশায় তাঁকে ছেড়ে ফিরে গেলেন। তিনি তাঁর বলদ জোড়া নিয়ে বলি দিলেন এবং যোঁয়ালির কাঠ দিয়ে মাংস রান্না করে লোকদের দিলেন আর লোকেরা তা খেল। তারপর তিনি এলিয়ের সঙ্গে যাবার জন্য বের হলেন এবং তাঁর সেবাকারী হলেন।
অতএব ইলীশায় তাঁকে ছেড়ে ফিরে গেলেন। তিনি তাঁর হালের বলদগুলি নিয়ে সেগুলি বধ করলেন। তিনি লাঙল-জোয়ালের কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে মাংস রান্না করলেন ও লোকজনকে দিলেন ও তারা তা খেয়েছিল। পরে তিনি এলিয়ের অনুগামী হয়ে, তাঁর দাস হয়ে গেলেন।

< প্রথম রাজাবলি 19 >