প্রথম রাজাবলি 11
1 ১ রাজা শলোমন ফরৌণের মেয়েকে ছাড়া আরও অনেক বিদেশী স্ত্রীলোকদের ভালবাসতেন। তারা জাতিতে ছিল মোয়াবীয়, অম্মোনীয়, ইদোমীয়, সীদোনীয় ও হিত্তীয়।
রাজা শলোমন অবশ্য ফরৌণের মেয়ের পাশাপাশি আরও অনেক বিদেশিনীকে—মোয়াবীয়া, অম্মোনীয়া, ইদোমীয়া, সীদোনীয়া ও হিত্তীয়াকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন।
2 ২ তারা সেই সব জাতি থেকে এসেছিল যাদের সম্বন্ধে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন, “তোমরা তাদের বিয়ে করবে না, কারণ তারা নিশ্চয়ই তোমাদের মন তাদের দেব দেবতাদের দিকে আকর্ষিত করবে।” কিন্তু শলোমন এইসব স্ত্রীলোকদের ভালবাসতেন।
তারা সেইসব জাতিভুক্ত মহিলা ছিল, যাদের সম্বন্ধে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীদের বলে দিলেন, “তোমরা অসবর্ণমতে এদের বিয়ে কোরো না, কারণ তারা নিঃসন্দেহে তোমাদের অন্তর তাদের দেবদেবীদের দিকে সরিয়ে দেবে।” তবুও শলোমন তাদের প্রতি প্রেমাসক্ত হয়েই থেকে গেলেন।
3 ৩ তাঁর সাতশো স্ত্রী ছিল, যারা ছিল রাজপরিবারের মেয়ে; এছাড়া তাঁর তিনশো উপস্ত্রী ছিল। তাঁর স্ত্রীরা তাঁকে বিপথে নিয়ে গিয়েছিল।
রাজপরিবারে জন্মেছিল, এরকম সাতশো জন হল তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর উপপত্নীর সংখ্যা ছিল তিনশো জন, এবং তাঁর স্ত্রীরাই তাঁকে বিপথে পরিচালিত করল।
4 ৪ শলোমনের বুড়ো বয়সে তাঁর স্ত্রীরা তাঁর মন অন্য দেব দেবতাদের দিকে আকর্ষিত করেছিল। তার ফলে তাঁর বাবা দায়ূদের মত তাঁর হৃদয় তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিতে পূর্ণ ছিল না।
শলোমন বয়সে বৃদ্ধ হতে না হতেই, তাঁর স্ত্রীরা তাঁর অন্তর অন্যান্য দেবদেবীদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল, এবং তাঁর অন্তর আর তাঁর বাবা দাউদের মতো তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি পুরোপুরি একাগ্র থাকেনি।
তিনি সীদোনীয়দের দেবী অষ্টারোতের ও অম্মোনীয়দের ঘৃণ্য দেবতা মোলকের অনুগামী হলেন।
6 ৬ সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ শলোমন তাই করলেন। তাঁর বাবা দায়ূদ যেমন সদাপ্রভুকে সম্পূর্ণভাবে ভক্তি করতেন তিনি তেমন করতেন না।
এইভাবে শলোমন সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ কাজ করলেন; তিনি তাঁর বাবা দাউদের মতো পুরোপুরি সদাপ্রভুর অনুগামী হননি।
7 ৭ সেই দিন শলোমন যিরূশালেমের পূর্ব দিকের পাহাড়ের উপরে তিনি মোয়াবের জঘন্য দেবতা কমোশ ও অম্মোনীয়দের জঘন্য দেবতা মোলকের উদ্দেশ্যে উঁচু জায়গা তৈরী করলেন।
জেরুশালেমের পূর্বদিকে অবস্থিত একটি পাহাড়ে শলোমন মোয়াবের ঘৃণ্য দেবতা কমোশের ও অম্মোনীয়দের ঘৃণ্য দেবতা মোলকের জন্য উঁচু পূজাবেদি তৈরি করলেন।
8 ৮ তাঁর সমস্ত বিদেশী স্ত্রী যারা নিজের নিজের দেবতাদের উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালাত ও পশু বলি দিত তাদের সকলের জন্য তিনি তাই করলেন।
তিনি তাঁর সেই বিদেশিনী স্ত্রীদের জন্যও এমনটি করে দিলেন, যারা তাদের দেবদেবীদের উদ্দেশে ধূপ পোড়াতো ও বলি উৎসর্গ করত।
9 ৯ এতে সদাপ্রভু শলোমনের উপরে ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন, কারণ যিনি তাঁর কাছে দুবার নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন সেই ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিক থেকে তাঁর মন ফিরে গিয়েছিল।
সদাপ্রভু শলোমনের উপর ক্রুদ্ধ হলেন, কারণ তাঁর অন্তর ইস্রায়েলের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিক থেকে দূরে সরে গেল, যিনি দু-দুবার তাঁকে দর্শন দিলেন।
10 ১০ তিনি অন্য দেব দেবতাদের পিছনে যেতে তাঁকে মানা করেছিলেন কিন্তু শলোমন সদাপ্রভুর আদেশ পালন করেননি।
যদিও সদাপ্রভু শলোমনকে অন্যান্য দেবদেবীদের অনুগামী হতে মানা করলেন, তবুও তিনি সদাপ্রভুর আদেশ পালন করেননি।
11 ১১ কাজেই সদাপ্রভু শলোমনকে বললেন, “তোমার এই ব্যবহারের জন্য এবং আমার দেওয়া ব্যবস্থা ও নিয়ম অমান্য করবার জন্য আমি অবশ্যই তোমার কাছ থেকে রাজ্য ছিঁড়ে নিয়ে তোমার কর্মচারীকে দেব।
তাই সদাপ্রভু শলোমনকে বললেন, “যেহেতু এই তোমার মনোভাব এবং তুমি আমার আদেশমতো আমার নিয়মকানুন ও আমার বিধিবিধান পালন করোনি, তাই আমি অবশ্যই তোমার হাত থেকে রাজ্যটি ছিনিয়ে নিয়ে সেটি তোমার অধীনস্থ একজনের হাতে তুলে দেব।
12 ১২ তবে তোমার বাবা দায়ূদের কথা মনে করে তোমার জীবনকালে আমি তা করব না, কিন্তু তোমার ছেলের হাত থেকে আমি তা ছিঁড়ে নেব।
তবে, তোমার বাবা দাউদের খাতিরে আমি তোমার জীবনকালে এমনটি করব না। আমি তোমার ছেলের হাত থেকে সেটি ছিনিয়ে নেব।
13 ১৩ অবশ্য রাজ্যের সবটা আমি তার কাছ থেকে ছিঁড়ে নেব না, কিন্তু আমার দাস দায়ূদের কথা এবং আমার বেছে নেওয়া যিরূশালেমের কথা মনে করে একটা গোষ্ঠী আমি তোমার ছেলেকে দেব।”
তবুও আমি গোটা রাজ্য তার হাত থেকে ছিনিয়ে নেব না, কিন্তু আমার দাস দাউদের খাতিরে ও আমার মনোনীত জেরুশালেমের খাতিরে আমি তাকে একটি বংশ দেব।”
14 ১৪ এর পর সদাপ্রভু শলোমনের বিরুদ্ধে ইদোমীয় হদদকে শত্রু হিসাবে দাঁড় করালেন। ইদোমের রাজবংশে তার জন্ম হয়েছিল।
পরে সদাপ্রভু ইদোমের রাজপরিবার থেকে ইদোমীয় হদদকে শলোমনের বিরুদ্ধে এক প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
15 ১৫ দায়ূদ যখন ইদোম দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন তখন তাঁর সেনাপতি যোয়াব মৃত লোকদের কবর দেবার জন্য ইদোমে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকবার দিন তিনি ইদোমীয় সব পুরুষ লোককে মেরে ফেলেছিলেন।
ইতিপূর্বে দাউদ যখন ইদোমীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন, তখন সৈন্যদলের সেনাপতি যোয়াব মৃত মানুষদের কবর দিতে গিয়ে ইদোমে সব পুরুষমানুষকে মেরে ফেলেছিলেন।
16 ১৬ যোয়াব ও ইস্রায়েলের সব সৈন্যেরা ছয় মাস ইদোমে ছিলেন এবং সেখানকার সব পুরুষ লোককে মেরে ফেলেছিলেন।
যোয়াব ও ইস্রায়েলীরা সবাই ইদোমে সব পুরুষমানুষকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত ছয় মাস ধরে সেখানেই থেকে গেলেন।
17 ১৭ কিন্তু হদদ তার বাবার কয়েকজন ইদোমীয় কর্মচারীর সঙ্গে মিশরে পালিয়ে গিয়েছিল। সেই দিন সে ছোট ছিল।
কিন্তু হদদ তাঁর বাবার সেবক, কয়েকজন ইদোমীয় কর্মকর্তার সঙ্গে মিশরে পালিয়ে গেলেন, আর তখন তিনি একদম ছেলেমানুষ ছিলেন।
18 ১৮ তারা মিদিয়ন থেকে রওনা হয়ে পারণে গিয়েছিল এবং পরে সেখান থেকে কিছু লোক নিয়ে তারা মিশরের রাজা ফরৌণের কাছে গিয়েছিল। ফরৌণ হদদকে বাড়ি, জায়গা জমি ও খাবার দিয়েছিলেন।
তারা মিদিয়ন থেকে যাত্রা শুরু করে পারণে গিয়ে পৌঁছেছিলেন। পরে পারণ থেকে লোকজন সংগ্রহ করে তারা মিশরে, সেখানকার রাজা ফরৌণের কাছে পৌঁছে গেলেন। তিনি হদদকে জমি-বাড়ি দিলেন ও খাবারেরও জোগান দিলেন।
19 ১৯ ফরৌণ হদদের উপর এত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে, ফরৌণের স্ত্রী রাণী তহ্পনেষের বোনের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছিলেন।
ফরৌণ হদদের উপর এত সন্তুষ্ট হলেন যে তিনি নিজের স্ত্রী, রানি তহপনেষের বোনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিলেন।
20 ২০ তহ্পনেষের বোনের গর্ভে হদদের একটি ছেলের জন্ম হয়েছিল; সেই ছেলের নাম ছিল গনুবৎ। তহ্পনেষ ছেলেটিকে রাজবাড়ীতে রাখলেন এবং সেখানেই সে মায়ের দুধ খাওয়া ছাড়ল। গনুবৎ সেখানে ফরৌণের ছেলে মেয়েদের সঙ্গেই থাকত।
তহপনেষের বোন হদদের জন্য এক ছেলেসন্তান জন্ম দিলেন, যার নাম গনুবৎ। তহপনেষ তাকে রাজপ্রাসাদেই বড়ো করে তুলেছিলেন। সেখানে গনুবৎ ফরৌণের আপন ছেলেমেয়েদের সাথেই বসবাস করত।
21 ২১ মিশরে থাকতেই হদদ শুনল যে, দায়ূদকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে কবর দেওয়া হয়েছে এবং সেনাপতি যোয়াবও মারা গেছেন। তখন হদদ ফরৌণকে বলল, “এবার আমাকে যেতে দিন যাতে আমি আমার নিজের দেশে ফিরে যেতে পারি।”
মিশরে থাকতে থাকতেই হদদ শুনতে পেয়েছিলেন যে দাউদ তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে চিরবিশ্রামে শায়িত হয়েছেন এবং সৈন্যদলের সেনাপতি যোয়াবও মারা গিয়েছেন। তখন হদদ ফরৌণকে বললেন, “আমাকে যেতে দিন, আমি যেন আমার নিজের দেশে ফিরে যেতে পারি।”
22 ২২ ফরৌণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে তোমার কিসের অভাব হয়েছে যে, তুমি নিজের দেশে ফিরে যেতে চাইছ?” উত্তরে হদদ বলল, “কিছুরই অভাব হয়নি, কিন্তু তবুও আমাকে যেতে দিন।”
“এখানে তোমার কীসের অভাব হচ্ছে যে তুমি তোমার নিজের দেশে ফিরে যেতে চাইছ?” ফরৌণ জিজ্ঞাসা করলেন। “কোনও অভাব নেই,” হদদ উত্তর দিলেন, “কিন্তু তাও আমাকে যেতে দিন!”
23 ২৩ শলোমনের বিরুদ্ধে ঈশ্বর আর একজন শত্রু দাঁড় করালেন। সে হল ইলিয়াদার ছেলে রষোণ। সে তার মনিব সোবার রাজা হদদেষরের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
ঈশ্বর শলোমনের বিরুদ্ধে আরও একজন প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি ইলিয়াদার ছেলে সেই রষোণ, যিনি তাঁর মনিব, সোবার রাজা হদদেষরের কাছ থেকে পালিয়ে গেলেন।
24 ২৪ দায়ূদ যখন সোবার সৈন্যদের মেরে ফেলেছিলেন তখন রষোণ কিছু লোক জোগাড় করে নিয়ে একটা লুটেরা দল তৈরী করে তার নেতা হয়ে বসল। এই লোকেরা দম্মেশক দখল করে সেখানে রাজত্ব করতে লাগল।
দাউদ যখন সোবার সৈন্যদল ধ্বংস করলেন, রষোণ তখন তাঁর চারপাশে একদল লোক জুটিয়ে তাদের নেতা হয়ে গেলেন; তারা দামাস্কাসে গিয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করলেন ও সেখানকার নিয়ন্ত্রণভার হাতে তুলে নিয়েছিলেন।
25 ২৫ শলোমন যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন রষোণ ইস্রায়েলের সঙ্গে শত্রুতা করেছিল আর সেই দিন হদদও ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে কাজ করছিল। ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে একটা শত্রুভাব নিয়ে রষোণ অরাম দেশে রাজত্ব করত।
শলোমন যতদিন বেঁচেছিলেন, হদদের দ্বারা উৎপন্ন অসুবিধার পাশাপাশি রষোণও ইস্রায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েই ছিলেন। অতএব রষোণ অরামে রাজত্ব করছিলেন ও তিনি ইস্রায়েলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন।
26 ২৬ নবাটের ছেলে যারবিয়ামও রাজা শলোমনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। তিনি ছিলেন শলোমনের কর্মচারী, সরেদা গ্রামের একজন ইফ্রয়িমীয় লোক। তাঁর মায়ের নাম ছিল সরূয়া; তিনি বিধবা ছিলেন।
এছাড়া, নবাটের ছেলে, সরেদার অধিবাসী ইফ্রয়িমীয় যারবিয়ামও রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। তিনি ছিলেন শলোমনের কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন। তাঁর মায়ের নাম সরূয়া, ও তিনি এক বিধবা মহিলা ছিলেন।
27 ২৭ রাজার বিরুদ্ধে যারবিয়ামের বিদ্রোহের একটা কারণ ছিল। যে দিন শলোমন মিল্লো তৈরী করছিলেন এবং তাঁর বাবা দায়ূদের শহরের দেয়ালের ভাঙ্গা অংশ মেরামত করছিলেন,
তিনি কীভাবে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হলেন, তার বিবরণ এইরকম: শলোমন কয়েকটি উঁচু চাতাল তৈরি করলেন ও তাঁর বাবা দাউদের নামাঙ্কিত নগরের প্রাচীরের ফাটল সারিয়েছিলেন।
28 ২৮ সেই দিন যারবিয়াম সেখানে কাজ করছিলেন এবং তাঁর কাজের বেশ সুনাম ছিল। শলোমন যখন দেখলেন যে, যুবকটি বেশ কাজের লোক তখন তিনি তাঁকে যোষেফের বংশের সমস্ত মজুরদের দেখাশোনার ভার দিলেন।
ইত্যবসরে যারবিয়াম সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন একজন লোক ছিলেন, এবং শলোমন যখন দেখেছিলেন সেই যুবকটি কত ভালোভাবে তাঁর কাজকর্ম করছিলেন, তখন তিনি তাঁর হাতে যোষেফের বংশভুক্ত সমগ্র মজুরদলের দায়িত্ব সঁপে দিলেন।
29 ২৯ সেই দিন যারবিয়াম এক দিন যিরূশালেমের বাইরে গেলেন। পথে তাঁর সঙ্গে শীলোর ভাববাদী অহিয়ের দেখা হল। অহিয়ের গায়ে ছিল একটা নতুন চাদর। পথে তাঁরা দুজন ছাড়া আর কেউ ছিল না।
সেই সময় একদিন যখন যারবিয়াম জেরুশালেমের বাইরে যাচ্ছিলেন, তখন পথে শীলো থেকে আসা ভাববাদী অহিয়র সঙ্গে তাঁর দেখা হল। অহিয়র পরনে ছিল নতুন এক ঢিলা আলখাল্লা। সেই গ্রামাঞ্চলে তারা দুজন একাই ছিলেন,
আর অহিয় নিজের পরনে থাকা নতুন আলখাল্লাটি নিয়ে সেটি বারো টুকরো করে ফেলেছিলেন।
31 ৩১ তারপর তিনি যারবিয়ামকে বললেন, “দশটা টুকরো তুমি তুলে নাও, কারণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে বলছেন, ‘দেখ, আমি শলোমনের হাত থেকে রাজ্যটা ছিঁড়ে নেব এবং তোমাকে দশটা গোষ্ঠীর ভার দেব।
পরে তিনি যারবিয়ামকে বললেন, “নিজের জন্য তুমি দশটি টুকরো তুলে নাও, কারণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘দেখো, আমি শলোমনের হাত থেকে রাজ্যটি ছিনিয়ে নিয়ে তোমাকে দশটি বংশ দিতে যাচ্ছি।
32 ৩২ কিন্তু আমার দাস দায়ূদের জন্য ও ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর এলাকা থেকে আমার বেছে নেওয়া যিরূশালেমের জন্য কেবল একটা গোষ্ঠী শলোমনের হাতে থাকবে।
কিন্তু আমার দাস দাউদের খাতিরে ও যে জেরুশালেম নগরটি আমি ইস্রায়েলের সব বংশের মধ্যে থেকে মনোনীত করে রেখেছি, সেটির খাতিরে তার হাতে একটি বংশ থাকবে।
33 ৩৩ আমি এটা করব, কারণ সেই দশ গোষ্ঠী আমাকে ত্যাগ করে সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরতের, মোয়াবের দেবতা কমোশের ও অম্মোনীয়দের দেবতা মিলকমের পূজা করেছে। শলোমনের বাবা দায়ূদ যেমন করতেন তারা তেমন করে নি। তারা আমার পথে চলেনি, আমার চোখে যা ঠিক তা করে নি এবং আমার নিয়ম ও নির্দেশ পালন করে নি।
আমি এরকম করব, কারণ তারা আমাকে পরিত্যাগ করেছে এবং সীদোনীয়দের দেবী অষ্টারোতের, মোয়াবীয়দের দেবতা কমোশের ও অম্মোনীয়দের দেবতা মোলকের পূজার্চনা করেছে, তথা আমার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়ে চলেনি, বা আমার দৃষ্টিতে যা ভালো তা করেননি, অথবা শলোমনের বাবা দাউদ যেভাবে আমার বিধিবিধান ও নিয়মকানুন পালন করত, তারা সেভাবে তা করেননি।
34 ৩৪ তবুও আমি শলোমনের হাত থেকে গোটা রাজ্যটা নিয়ে নেব না। আমার দাস দায়ূদ, যাকে আমি বেছে নিয়েছিলাম এবং যে আমার আদেশ ও নিয়ম পালন করত, তার জন্যই আমি শলোমনকে সারা জীবনের জন্য রাজপদে রাখব।
“‘কিন্তু আমি শলোমনের হাত থেকে গোটা রাজ্যটি ছিনিয়ে নেব না; যাকে আমি মনোনীত করলাম এবং যে আমার আদেশ ও বিধিবিধান পালন করে গিয়েছে, আমার দাস সেই দাউদের খাতিরেই আমি তাকে সারা জীবনের জন্য শাসনকর্তা করেছি।
আমি তার ছেলের হাত থেকে রাজ্যটি ছিনিয়ে নিয়ে তোমাকে দশটি বংশ দেব।
36 ৩৬ আমার বাসস্থান হিসাবে বেছে নেওয়া যিরূশালেম শহরে যেন আমার সামনে আমার দাস দায়ূদের একটা প্রদীপ থাকে সেইজন্য আমি তার ছেলেকে একটা গোষ্ঠীর ভার দেব।
আমি তার ছেলেকে একটি বংশ দেব, যেন সেই জেরুশালেমে সবসময় আমার দাস দাউদের এক প্রদীপ জ্বলতে থাকে, যে নগরে আমার নাম বজায় রাখার জন্য আমি সেটি মনোনীত করেছি।
37 ৩৭ কিন্তু আমি তোমাকেই ইস্রায়েলের উপর রাজা করব আর তুমি তোমার প্রাণের সমস্ত ইচ্ছা অনুসারে রাজত্ব করবে।
অবশ্য, তোমার ক্ষেত্রে আমি বলছি, আমি তোমাকে গ্রহণ করব, ও তোমার মনোবাঞ্ছানুসারে তুমি সবকিছুর উপর শাসন চালাবে; তুমি ইস্রায়েলের উপর রাজা হবে।
38 ৩৮ যদি তুমি আমার আদেশ অনুসারে কাজ কর এবং আমার পথে চল আর আমার দাস দায়ূদের মত আমার নিয়ম ও আদেশ পালন করে আমার চোখে যা ঠিক তাই কর তবে আমি তোমার সঙ্গে থাকব। আমি দায়ূদের মতই তোমার বংশে রাজপদ স্থায়ী করব এবং তোমার হাতে ইস্রায়েলকে দেব।
তুমি যদি আমার দাস দাউদের মতো আমার আদেশানুসারে সবকিছু করো ও আমার প্রতি বাধ্য হয়ে চলো এবং আমার বিধিবিধানের ও আদেশের বাধ্য হয়ে আমার দৃষ্টিতে যা যা ভালো, তাই করো, তবে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকব। আমি তোমার জন্য এমন এক স্থায়ী রাজবংশ গড়ে তুলব, যেমনটি আমি দাউদের জন্য গড়ে তুলেছিলাম এবং ইস্রায়েলকে আমি তোমার হাতেই তুলে দেব।
এই কারণে আমি দাউদের বংশধরদের অবনত করব, কিন্তু চিরকালের জন্য নয়।’”
40 ৪০ সেইজন্য শলোমন যারবিয়ামকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তিনি মিশরের রাজা শীশকের কাছে পালিয়ে গেলেন এবং শলোমনের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকলেন।
শলোমন যারবিয়ামকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু যারবিয়াম মিশরে, রাজা শীশকের কাছে পালিয়ে গেলেন, এবং শলোমনের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থেকে গেলেন।
41 ৪১ রাজত্বের বাকি ঘটনার কথা, অর্থাৎ তাঁর কাজ ও জ্ঞানের কথা শলোমনের রাজত্বের ইতিহাসের বইয়ে কি লেখা নেই?
শলোমনের রাজত্বকালের অন্যান্য সব ঘটনা—তিনি যা যা করলেন ও যে প্রজ্ঞা দেখিয়েছিলেন—সেসব কি শলোমনের ইতিহাস-গ্রন্থে লেখা নেই?
শলোমন জেরুশালেমে সমগ্র ইস্রায়েলের উপর চল্লিশ বছর রাজত্ব করলেন।
43 ৪৩ তারপর তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে নিদ্রায় গেলেন। তাঁকে তাঁর বাবা দায়ূদের শহরে কবর দেওয়া হল। তারপর তাঁর ছেলে রহবিয়াম তাঁর জায়গায় রাজা হলেন।
পরে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের সাথে চিরবিশ্রামে শায়িত হলেন এবং তাঁকে তাঁর বাবা দাউদের নগরেই কবর দেওয়া হল। তাঁর ছেলে রহবিয়াম রাজারূপে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন।
