< বংশাবলির প্রথম খণ্ড 17 >

1 নিজের বাড়িতে বাস করবার দিন একদিন দায়ূদ ভাববাদী নাথনকে বললেন, “আমি এখন এরস কাঠের ঘরে বাস করছি কিন্তু সদাপ্রভুর নিয়ম সিন্দুকটি রয়েছে একটা তাঁবুর মধ্যে।”
দাউদ তাঁর রাজপ্রাসাদে স্থির হয়ে বসার পর ভাববাদী নাথনকে বললেন, “দেখুন, আমি তো দেবদারু কাঠে তৈরি বাড়িতে বসবাস করছি, অথচ সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকটি একটি তাঁবুর মধ্যেই রাখা আছে।”
2 উত্তরে নাথন দায়ূদকে বললেন, “আপনার মনে যা আছে আপনি তাই করুন; কারণ ঈশ্বর আপনার সঙ্গে আছেন।”
নাথন দাউদকে উত্তর দিলেন, “আপনার মনে যা কিছু আছে, আপনি তাই করুন, কারণ ঈশ্বর আপনার সাথেই আছেন।”
3 সেই রাতে ঈশ্বরের বাক্য নাথনের কাছে উপস্থিত হলো; তিনি বললেন,
কিন্তু সেরাতে ঈশ্বরের বাক্য নাথনের কাছে এসে উপস্থিত হল, ঈশ্বর বললেন:
4 “তুমি গিয়ে আমার দাস দায়ূদকে বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার থাকবার ঘর তুমি তৈরী করবে না।
“তুমি যাও ও আমার দাস দাউদকে গিয়ে বলো, ‘সদাপ্রভু একথাই বলেন: আমার বসবাসের জন্য যে একটি গৃহ নির্মাণ করবে, সে তুমি নও।
5 মিশর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে আনবার দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোনো ঘরে বাস করিনি। এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে, এক বাসস্থান থেকে অন্য বাসস্থানে গিয়েছি।
যেদিন আমি ইস্রায়েলকে মিশর থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলাম, সেদিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমি কোনো বাড়িতে বসবাস করিনি। আমি এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে, এক বাসস্থান থেকে অন্য বাসস্থানে ঘুরে বেড়িয়েছি।
6 যে সব নেতাদের উপর আমি আমার লোকদের পালন করবার ভার দিয়েছিলাম, বিভিন্ন জায়গায় ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ঘুরে বেড়াবার দিন আমি সেই নেতাদের কি কোনো দিন বলেছি যে, তারা কেন আমার জন্য এরস কাঠের ঘর তৈরী করে নি?’
ইস্রায়েলীদের সবাইকে সাথে নিয়ে আমি যেখানে যেখানে গিয়েছি, সেখানে কোথাও কি যাদের আমি আমার প্রজাদের লালনপালন করার আদেশ দিয়েছিলাম, সেই নেতাদের মধ্যে কাউকে কখনও বললাম, “তোমরা কেন আমার জন্য দেবদারু কাঠের এক গৃহ নির্মাণ করে দাওনি?”’
7 “এখন তুমি আমার দাস দায়ূদকে বল যে, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্ত্তা হবার জন্য আমিই তোমাকে পশু চরাবার মাঠ থেকে, ভেড়ার পালের পিছন থেকে নিয়ে এসেছি।
“তবে এখন, আমার দাস দাউদকে বলো, ‘সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু একথাই বলেন: আমি তোমাকে পশুচারণভূমি থেকে, তুমি যখন মেষের পাল চরাচ্ছিলে, তখন সেখান থেকেই তুলে এনেছিলাম, এবং তোমাকে আমার প্রজা ইস্রায়েলের উপর শাসনকর্তারূপে নিযুক্ত করলাম।
8 তুমি যে সব জায়গায় গিয়েছ আমিও সেখানে তোমার সঙ্গে গিয়েছি এবং তোমার সামনে থেকে তোমার সমস্ত শত্রুদের শেষ করে দিয়েছি। আমি তোমার নাম পৃথিবীর মহান লোকদের নামের মত বিখ্যাত করব।
তুমি যেখানে যেখানে গিয়েছ, আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে থেকেছি, এবং তোমার সামনে আসা সব শত্রুকে আমি উচ্ছেদ করেছি। এখন আমি তোমার নাম পৃথিবীর মহাপুরুষদের মতোই করব।
9 আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের জন্য আমি একটা জায়গা ঠিক করে সেখানেই গাছের মত তাদের লাগিয়ে দেব যাতে তারা নিজেদের জায়গায় শান্তিতে বাস করতে পারে
আমার প্রজা ইস্রায়েলের জন্য আমি এক স্থান জোগাব ও তাদের সেখানে বসতি করে দেব, যেন তারা তাদের নিজস্ব ঘরবাড়ি পায় ও আর কখনও যেন তাদের উপদ্রুত হতে না হয়। দুষ্ট লোকজন আর কখনও তাদের অত্যাচার করবে না, যেমনটি তারা শুরু করল
10 ১০ এবং আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের উপর শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করবার পর থেকে দুষ্ট লোকেরা তাদের উপর যে অত্যাচার করে আসছে তারা যেন আর তা করতে না পারে। আমি তোমার সব শত্রুদেরও দমন করব। আমি আরও বলছি যে, আমি সদাপ্রভু তোমার বংশকে গড়ে তুলব।
এবং যখন থেকে আমার প্রজা ইস্রায়েলের উপর আমি নেতাদের নিযুক্ত করে এসেছি, তখন থেকে শুরু করে এযাবৎ যেভাবে তারা তা করে আসছে। আমি তোমার সব শত্রুকে সংযত করেও রাখব। “‘আমি তোমার কাছে ঘোষণা করে দিচ্ছি যে সদাপ্রভুই তোমার জন্য এক কুল গড়ে দেবেন:
11 ১১ তোমার আয়ু শেষ হলে পর যখন তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবে তখন আমি তোমার জায়গায় তোমার বংশের এক জনকে, তোমার নিজের বংশধরদেরকে বসাব এবং তার রাজ্য স্থির রাখব।
তোমার আয়ু শেষ হয়ে যাওয়ার পর ও যখন তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য চলে যাবে, তখন তোমার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য আমি তোমার এমন এক বংশধরকে উৎপন্ন করব, যে হবে তোমার আপন ছেলেদের মধ্যে একজন, এবং আমি তার রাজ্য সুস্থিরও করব।
12 ১২ তোমার সেই ছেলেই আমার জন্য একটা ঘর তৈরী করবে, আর তার সিংহাসন আমি চিরকাল স্থায়ী করব।
সেই হবে এমন একজন যে আমার জন্য একটি ভবন তৈরি করবে, ও আমি তার সিংহাসন চিরস্থায়ী করব।
13 ১৩ আমি তার বাবা আর সে হবে আমার ছেলে। আমার ভালবাসা আমি কখনও তার উপর থেকে তুলে নেব না, যেমন করে আমি তুলে নিয়েছিলাম তোমার আগে যে ছিল তার উপর থেকে।
আমি তার বাবা হব, ও সে আমার ছেলে হবে। যেভাবে আমি তোমার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে আমার প্রেম-ভালোবাসা সরিয়ে নিয়েছিলাম, আমি আর কখনও সেভাবে তার কাছ থেকে তা সরিয়ে নেব না।
14 ১৪ আমার ঘরের ও আমার রাজ্যের উপরে আমি তাকে চিরকাল স্থির রাখব এবং তার সিংহাসন চিরস্থায়ী হবে’।”
আমার ভবনের ও আমার রাজ্যের উপর চিরকালের জন্য আমি তাকে বসাব; তার সিংহাসন চিরস্থায়ী হবে।’”
15 ১৫ এই দর্শনের সমস্ত কথা নাথন দায়ূদকে বললেন।
সম্পূর্ণ এই প্রত্যাদেশের সব কথা নাথন দাউদকে জানিয়েছিলেন।
16 ১৬ এই সব কথা শুনে রাজা দায়ূদ তাঁবুর ভিতরে গেলেন এবং সদাপ্রভুর সামনে বসে বললেন, হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমিই বা কি, আর আমার বংশই বা কি যে, তুমি আমাকে এত দূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছ?
পরে রাজা দাউদ ভিতরে সদাপ্রভুর সামনে গিয়ে বসেছিলেন, ও বললেন: “হে সার্বভৌম সদাপ্রভু, আমি কে, আর আমার পরিবারই বা কী, যে তুমি আমাকে এত দূর নিয়ে এসেছ?
17 ১৭ আর হে ঈশ্বর, এটাও তোমার চোখে যথেষ্ট হয়নি; এর সঙ্গে তোমার দাসের বংশের ভবিষ্যতের কথাও তুমি বলেছ। হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমি যেন একজন মহান লোক সেই চোখেই তুমি আমাকে দেখেছ।
আর তোমার দৃষ্টিতে এও যদি যথেষ্ট বলে মনে হয়নি, হে আমার ঈশ্বর, তুমি তোমার এই দাসের পরিবারের ভবিষ্যতের বিষয়েও তো বলে দিয়েছ। তুমি, হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, এভাবে আমার দিকে চোখ তুলে চেয়েছ, যেন আমি মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চপদস্থ একজন।
18 ১৮ তোমার দাসের প্রতি যে সম্মান দেখালে তাতে আমি তোমার কাছে আর বেশী কি বলতে পারি? তুমি তো তোমার দাসকে জান।
“তোমার এই দাসকে তুমি যে সম্মান দিলে, তার জন্য দাউদ তোমাকে আর কী-ই বা বলতে পারে? কারণ তুমি তো তোমার এই দাসকে জানো,
19 ১৯ হে সদাপ্রভু, তোমার দাসের জন্য তোমার ইচ্ছা অনুসারে এই মহৎ কাজ তুমি করেছ আর তোমার দাসকে তা জানিয়েছ।
হে সদাপ্রভু। তোমার এই দাসের সুবিধার্থে ও তোমার ইচ্ছানুসারেই তুমি এই মহান কাজটি করেছ ও এসব বড়ো বড়ো প্রতিজ্ঞা অবগত করেছ।
20 ২০ হে সদাপ্রভু, তোমার মত আর কেউ নেই এবং তুমি ছাড়া কোনো ঈশ্বর নেই; আমরা নিজের কানেই এই কথা শুনেছি।
“হে সদাপ্রভু, তোমার মতো আর কেউ নেই, এবং তুমি ছাড়া ঈশ্বর আর কেউ নেই, যেমনটি আমরা নিজের কানেই শুনেছি।
21 ২১ তোমার ইস্রায়েল জাতির মত পৃথিবীতে আর কোনো জাতি নেই, যাকে তুমি তোমার নিজের লোক করবার জন্য মুক্ত করেছ। তুমি তাদের মিশর দেশ থেকে মুক্ত করে তাদের সামনে থেকে অন্যান্য জাতিদের দূর করে দিয়েছ। তোমার নিজের গৌরব প্রকাশের জন্য মহৎ ও ভয়ঙ্কর কাজের মধ্য দিয়ে তুমি তা করেছ।
তোমার প্রজা ইস্রায়েলের মতো আর কে আছে—পৃথিবীতে বিরাজমান একমাত্র জাতি, যাদের তাঁর নিজস্ব প্রজা করার জন্য তাদের ঈশ্বর স্বয়ং তাদের মুক্ত করতে গেলেন, ও নিজের জন্য এক নাম প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, তথা তোমার প্রজাদের সামনে থেকে বিভিন্ন জাতি ও তাদের দেবদেবীদের উৎখাত করার দ্বারা মহৎ ও বিস্ময়কর আশ্চর্য সব কাজ করে যাদের তুমি মিশর থেকে মুক্ত করলে?
22 ২২ তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের তুমি নিজের উদ্দেশ্যে চিরকাল তোমার নিজের লোক করেছ, আর তুমি, হে সদাপ্রভু, তুমি তাদের ঈশ্বর হয়েছ।
তোমার প্রজা ইস্রায়েলকে তুমি চিরতরে একেবারে তোমার নিজস্ব করে নিয়েছ, এবং হে সদাপ্রভু, তুমি তাদের ঈশ্বর হয়ে গিয়েছ।
23 ২৩ এখন হে সদাপ্রভু, আমার ও আমার বংশের বিষয়ে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছ তা চিরকাল রক্ষা কর। তোমার প্রতিজ্ঞা অনুসারেই তা কর।
“আর এখন, হে সদাপ্রভু, তোমার দাসের ও তার কুলের বিষয়ে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করলে, তা যেন চিরতরে প্রতিষ্ঠিত হয়। তোমার প্রতিজ্ঞানুসারেই তুমি তা করো,
24 ২৪ এতে আমার বংশ স্থায়ী হবে এবং চিরকাল তোমার গৌরব হবে। তখন লোকে বলবে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর, সত্যিই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর! আর তোমার দাস দায়ূদের বংশ তোমার সামনে স্থির থাকবে।
যেন তা প্রতিষ্ঠিত হয় ও তোমার নাম চিরতরে মহান হয়ে যায়। তখনই লোকেরা বলবে, ‘সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের উপর বিরাজমান ঈশ্বর, তিনিই ইস্রায়েলের ঈশ্বর!’ আর তোমার দাস দাউদের কুল তোমার সামনে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
25 ২৫ হে আমার ঈশ্বর, তুমিই আমার কাছে এই বিষয় প্রকাশ করে বলেছ যে, তুমি আমার মধ্য দিয়ে একটা বংশ গড়ে তুলবে। তাই তোমার কাছে এই প্রার্থনা করতে আমার মনে সাহস হয়েছে।
“হে আমার ঈশ্বর, তুমি তোমার দাসের কাছে প্রকাশিত করে দিয়েছিলে যে তুমি তার জন্য এক কুল গড়ে তুলবে। তাইতো তোমার দাস তোমার কাছে এই প্রার্থনা করার সাহস পেয়েছে।
26 ২৬ হে সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর। এই মঙ্গলের প্রতিজ্ঞা তুমিই তোমার দাসের কাছে করেছ।
হে সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর! তোমার দাসের কাছে তুমিই এইসব উত্তম বিষয়ের প্রতিজ্ঞা করলে।
27 ২৭ আমার বংশকে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করেছ যাতে এই বংশ চিরকাল তোমার সামনে থাকে; কারণ, হে সদাপ্রভু তুমিই আশীর্বাদ করেছ এবং তাই তা চিরকালের জন্য আশীর্বাদযুক্ত।
এখন তুমি যখন তোমার এই দাসের কুলকে খুশিমনে আশীর্বাদ করেছ, তখন তোমার দৃষ্টিতে যেন তা চিরকাল বজায় থাকে; কারণ তুমিই, হে সদাপ্রভু, সেই কুলকে আশীর্বাদ করেছ, ও সেটি চিরকালের জন্য আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই থাকবে।”

< বংশাবলির প্রথম খণ্ড 17 >