< যাত্রাপুস্তক 34 >

1 সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “প্রথম দুটির মতো আরও দুটি পাথরের ফলক খোদাই করো, এবং তুমি যে ফলকগুলি ভেঙে ফেলেছিলে, সেগুলিতে যা যা লেখা ছিল আমি এগুলিতেও সেসব কথা লিখে দেব। 2 সকালবেলায় তৈরি থেকো, ও পরে সীনয় পর্বতে উঠে এসো। সেই পর্বতের চূড়ায় সেখানে আমার কাছে উপস্থিত হোয়ো। 3 কেউ যেন তোমার সাথে না আসে বা সেই পর্বতে কোথাও যেন কাউকে দেখা না যায়; এমনকি সেই পর্বতের সামনে মেষপাল ও পশুপালও যেন না চরে।” 4 অতএব মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে প্রথম দুটি ফলকের মতো আরও দুটি পাথরের ফলক খোদাই করলেন এবং খুব সকালবেলায় সীনয় পর্বতে উঠে গেলেন; এবং তিনি সেই পাথরের ফলক দুটিও হাতে করে তুলে নিয়ে গেলেন। 5 তখন সদাপ্রভু মেঘে নিচে নেমে এলেন এবং মোশির সাথে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে, সদাপ্রভু—তাঁর এই নাম ঘোষণা করলেন। 6 আর তিনি একথা ঘোষণা করতে করতে মোশির সামনে দিয়ে পার হয়ে গেলেন, “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, তিনি করুণাময় ও অনুগ্রহকারী ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর, প্রেম ও বিশ্বস্ততায় সমৃদ্ধ, 7 হাজার হাজার জনের প্রতি প্রেম প্রদর্শনকারী, এবং দুষ্টতা, বিদ্রোহ ও পাপ ক্ষমাকারী। তবুও অপরাধীকে শাস্তি না দিয়ে তিনি ছেড়ে দেন না; তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্ম পর্যন্ত তিনি বাবা-মার পাপের জন্য তাদের সন্তানদের ও নাতি-নাতনিদের শাস্তি দেন।” 8 মোশি তৎক্ষণাৎ মাটিতে মাথা নত করে আরাধনা করলেন। 9 “হে প্রভু,” তিনি বললেন, “আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পেয়ে থাকি, তবে প্রভু যেন আমাদের সাথে যান। এরা যদিও একগুঁয়ে লোক, তাও আমাদের দুষ্টতা ও আমাদের পাপ ক্ষমা করো, এবং আমাদের তোমার উত্তরাধিকার করে নাও।” 10 তখন সদাপ্রভু বললেন: “আমি তোমার সঙ্গে এক নিয়ম স্থির করছি। তোমার সব লোকজনের সামনে আমি এমন সব আশ্চর্য কাজ করব যা সমগ্র পৃথিবীতে কোনও জাতির মধ্যে আগে কখনও করা হয়নি। যেসব লোকজনের মধ্যে তুমি বসবাস করছ, তারা দেখবে আমি, সদাপ্রভু তোমার জন্য যে কাজ করব, তা কতই না অসাধারণ। 11 আজ আমি তোমাকে যে আদেশ দিচ্ছি, তা পালন কোরো। আমি তোমার সামনে থেকে ইমোরীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের তাড়িয়ে দেব। 12 সাবধান, যে দেশে তুমি যাচ্ছ, সেখানে বসবাসকারী লোকদের সঙ্গে কোনও চুক্তি কোরো না, তা না হলে তারা তোমাদের মধ্যে এক ফাঁদ হয়ে যাবে। 13 তাদের বেদিগুলি ভেঙে দিয়ো, তাদের পবিত্র পাথরগুলি চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়ো ও তাদের আশেরা-খুঁটিগুলি কেটে নামিয়ে দিয়ো। 14 অন্য আর কোনও দেবতার আরাধনা কোরো না, কারণ যাঁর নাম ঈর্ষাপরায়ণ, সেই সদাপ্রভু ঈর্ষান্বিত ঈশ্বর। 15 “সাবধান, সেই দেশে বসবাসকারী লোকদের সঙ্গে চুক্তি কোরো না; কারণ তারা যখন তাদের দেবতাদের কাছে বেশ্যাবৃত্তি করবে ও তাদের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করবে, তখন তারা তোমাকে আমন্ত্রণ জানাবে ও তুমি তাদের বলি দেওয়া প্রসাদ খেয়ে ফেলবে। 16 আর তুমি যখন তোমার ছেলেদের জন্য স্ত্রীরূপে তাদের মেয়েদের মধ্যে কয়েকজনকে মনোনীত করবে এবং সেই মেয়েরা তাদের দেবতাদের কাছে বেশ্যাবৃত্তি করবে, তখন তারা তোমার ছেলেদেরও একই কাজ করতে বাধ্য করবে। 17 “কোনও প্রতিমা তৈরি কোরো না। 18 “খামিরবিহীন রুটির উৎসব পালন কোরো। তোমাকে দেওয়া আদেশানুসারে, সাত দিন খামিরবিহীন রুটি খেয়ো। আবীব মাসের নির্দিষ্ট সময়ে এরকম কোরো, কারণ সেই মাসেই তুমি মিশর থেকে বের হয়ে এসেছিলে। 19 “প্রত্যেকটি গর্ভের প্রথম সন্তানটি আমার, এবং তোমার গৃহপালিত পশুপালের প্রথমজাত সব মদ্দাও আমার, তা সে গোপাল বা মেষপাল, যাই হোক না কেন। 20 প্রথমজাত গাধাকে এক মেষশাবক দিয়ে মুক্ত কোরো, কিন্তু যদি তা মুক্ত না করো, তবে সেটির ঘাড় ভেঙে দিয়ো। তোমার সব প্রথমজাত ছেলেকে মুক্ত কোরো। “কেউ যেন খালি হাতে আমার সামনে উপস্থিত না হয়। 21 “ছয় দিন তুমি পরিশ্রম কোরো, কিন্তু সপ্তম দিন বিশ্রাম নিয়ো; এমনকি চাষ করার ও ফসল কাটার সময়েও তোমাকে বিশ্রাম নিতে হবে। 22 “কাটা গমের অগ্রিমাংশ নিয়ে সাত সপ্তাহের উৎসব, এবং বছর ঘুরে এলে ফল সংগ্রহের উৎসবও পালন কোরো। 23 বছরে তিনবার তোমাদের সব পুরুষকে ইস্রায়েলের ঈশ্বর, সার্বভৌম সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হতে হবে। 24 আমি তোমার সামনে থেকে জাতিদের তাড়িয়ে দেব এবং তোমার এলাকা সম্প্রসারিত করব, এবং তুমি যখন বছরে তিনবার তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হতে যাবে, তখন কেউ তোমার জমিজায়গার উপর লোভ করবে না। 25 “খামিরযুক্ত কোনো কিছু সমেত আমার উদ্দেশে বলির রক্ত উৎসর্গ কোরো না, এবং নিস্তারপর্বীয় উৎসবের কোনও নৈবেদ্য সকাল পর্যন্ত পড়ে থাকতে দিয়ো না। 26 “তোমার জমির সেরা প্রথম ফলটি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহে নিয়ে এসো। “ছাগ-শিশুকে তার মায়ের দুধে রান্না কোরো না।” 27 পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “এসব কথা লিখে ফেলো, কারণ এই কথাগুলির আধারে আমি তোমার সাথে ও ইস্রায়েলের সাথে এক নিয়ম স্থির করেছি।” 28 রুটি না খেয়ে ও জলপান না করে মোশি সেখানে চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত সদাপ্রভুর সাথে ছিলেন। আর সেই ফলকের উপর তিনি নিয়মের সেই কথাগুলি—দশাজ্ঞাটি লিখলেন। 29 মোশি যখন বিধিনিয়মের সেই দুটি ফলক হাতে নিয়ে সীনয় পর্বত থেকে নেমে এলেন, তখন তিনি জানতেই পারেননি যে যেহেতু তিনি সদাপ্রভুর সাথে কথা বলেছিলেন তাই তাঁর মুখটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। 30 হারোণ ও ইস্রায়েলীরা সবাই যখন মোশিকে দেখেছিল, তখন তাঁর মুখটি উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল, এবং তারা তাঁর কাছে আসতে ভয় পেল। 31 কিন্তু মোশি তাঁদের ডাক দিলেন; অতএব হারোণ ও সমাজের নেতারা সবাই তাঁর কাছে ফিরে এলেন, এবং মোশি তাঁদের সাথে কথা বললেন। 32 পরে ইস্রায়েলীরা সবাই তাঁর কাছে এল, এবং সদাপ্রভু সীনয় পর্বতে তাঁকে যেসব আদেশ দিয়েছিলেন তা তিনি তাদের জানালেন। 33 মোশি তাদের কাছে সব কথা বলে শেষ করার পর, তিনি তাঁর মুখে একটি আবরণ দিলেন। 34 কিন্তু যখনই তিনি সদাপ্রভুর সাথে কথা বলার জন্য তাঁর উপস্থিতিতে প্রবেশ করতেন, বের হয়ে না আসা পর্যন্ত তিনি সেই আবরণ সরিয়ে রাখতেন। আর যখনই তিনি বাইরে বেরিয়ে এসে ইস্রায়েলীদের বলতেন তাঁকে কী কী আদেশ দেওয়া হয়েছে, 35 তখনই তারা দেখত যে তাঁর মুখ উজ্জ্বল হয়ে আছে। তখন মোশি যতক্ষণ না সদাপ্রভুর সাথে কথা বলার জন্য ভিতরে যেতেন ততক্ষণ তাঁর মুখে একটি আবরণ দিয়ে রাখতেন।

< যাত্রাপুস্তক 34 >